ফেসবুক
অঙ্কিতা পাল
নিপা এবছর একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ছে। বেশ সচ্ছল পরিবারের মেয়ে নিপা। ঠাকুরদা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক, বাবা ব্যাংকে চাকরি করেন ও মা হাসপাতালে সেবিকার কাজে নিযুক্ত । এবছর তার ১৮ বয়স পূর্ণ হলো তাই বাবা-মা জন্মদিনে শখ করে মেয়েকে মোবাইল ফোন উপহার দিলেন। মেয়ে ও এই উপহার পেয়ে খুব খুশি হলো। সে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে - থ্যাঙ্ক ইউ মাই ডিয়ার পাপ্পা অ্যান্ড মামি। এ ব্যাপারে তাঁর ঠাকুরদার কিছুটা আপত্তি ছিল, তিনি রাগ করেই বললেন - দেখ নিখিল এই বয়সে ছেলেপিলেদের ফোন দিস না এ বয়স টা খুব খারাপ, কখন কি বিপদ আপদ হয় কি জানি। তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন - থাক যা পারিস কর তোদের মেয়ে তোরাই বুঝবি।
সত্যিই ঠাকুরদার কথা অনুযায়ী এই মোবাইলটাই তার জীবনে একা দুর্বিষহ জিনিস হয়ে দাঁড়ালো,
নিপার এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় মোবাইলে নিমজ্জিত থাকে। সে সবসময় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, শেয়ারচ্যাট, টিক টক এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ঠাকুরদা সমরেশ বাবু এইসব একদমই পছন্দ করেন না তিনি ধমক দিয়ে নাতনিকে বোঝাতে চান - দিদিভাই সামনেই তোমার টেস্ট পরীক্ষা তুমি পড়াশোনা করো। পরে এগুলো করার অনেক সময় পাবে। নাতনি ঝাঝি মেরে বলে - চুপ করো সব সেকেলে মান্ধাতার অমলের লোকজন, ফোনের কিছু বোঝো নাকি তোমরা। আমি এবার এক্সামের সবার থেকে ভালো রেজাল্ট করব এই বলে মুখ বেঁকিয়ে চলে যায় নিপা। ঠাকুরদা দুঃখের সাথে বলেন - করলেই ভালো। এই বলে তিনি চলে যান।
এইভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়, হঠাৎ একদিন নিপা বিকেলে বাড়ির ছাদে বসে বসে ফোন দেখছে এমন সময় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে - তথাগত দত্ত। নামটি দেখে নিপার খুব পছন্দ হয় সে একাউন্টের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভালো করে দেখতে শুরু করে। একাউন্ট টা হলো; Name - Tathagata Dutta. Address - Alipur. Study - Surendra nath college. 2nd year Bengali honours Age - 20.
এইসব দেখে নিপা একাউন্ট টা অ্যাকসেপ্ট করে নেই এবং তাদের মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়। কথোপকথনের পর নিপা মনে করে তথাগত একজন সহৃদয়বান ব্যক্তি তাই সে তার পরিবার মানুষজন সবকথা ছেলেটিকে জানায়। ছেলেটিও সব কথা শুনে - তার জীবনের দুঃখ দুর্দশার কথা বলতে শুরু করে। দুজনেই কথা বলতে বলতে যেন একটি প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তারা দুজনেই দেখা করবার সিদ্ধান্ত নেয়...........
এর বেশ কিছুদিন পর নিপা ও তথাগত এর চাক্ষুষ সাক্ষাৎ হয়। দুজন দুজনকে পছন্দ করে ও বিবাহের সিদ্ধান্ত নেয়। এর কিছু মাস পর নিপা তথাগত সাথে পালিয়ে যায়। নিপার বাড়িতে হাহাকার পড়ে যায়,নিপা তথাগত বাড়িতে অনেক কিছু উপলব্ধি করে ও জানতে পারে, তথাগত আসলে তথাগত ই নয়। সে হলো পল্টু সরদার নিজের পরিচয় গোপন রেখে এক নয় একাধিক মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা উপার্জন করে; এটাই তার একমাত্র রোজগারের পথ।
নিপার এসব বুঝতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়, ততদিনে সে ও বাড়ি ফেরার আশায় ছটফট করতে থাকে। কিন্তু পল্টু ওরফে তথাগত তাকে একটি ঘরে বন্ধ করে রাখে।
এভাবে কিছু দুর্বিষহ দিন কেটে যায় নিপার জীবনে অনেক কষ্ট করে আইনের সাহায্য নিয়ে নিপার পরিবার তাকে উদ্ধার করে তাকে সসম্মানে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে এবং যায় পল্টু কে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হয়।
==========================
অঙ্কিতা পাল, ভাঙ্গড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন