দু'টি কবিতা ।। ইন্দ্রজিৎ নন্দী
'মৃগাঙ্ক' নামে ডাকো
এই শহর একবার যাকে হারিয়ে ফেলে মেঘেদের দূরতর প্রান্তে,
লোকালট্রেন চেপে আসে কুমড়োফুলরঙা কলেজছাত্রী, সঙ্গে মনখারাপও
হাওয়া দিলে ঝালমুড়ি কিংবা ন্যাপথলিনের গন্ধে যুবতী অভিমান বাড়ে,
তুমি শহরের যে প্রান্তে থাকো সেই অনুপম অগোছালো শহরের
পিঁয়াজ কাটা মাঝ-বরাবর আমি থাকি! দুটো অর্জুনপাতার যেটুকু স্পেস,যেটুকু ফাঁকি
আমাদের তারও কম, তুমি সিটে বসে বরং, আমি ক্লান্ত রাস্তা ফিরি বাদবাকি।
ধরো,দূরে কোথাও হরতাল হলো, ট্রেন যাবার রাস্তা বন্ধ, চাক্কা জ্যাম।
স্নিগ্ধতায় বললে : নেমো না ! দূরে প্ল্যাটফর্ম, সঙ্গে থাকো -গল্প করো বরং;
সেই থেকেই বন্ধু হলাম , পাশাপাশি দুটো শহর যেমনটা হয়;
চাষীদের কমে আসে ধানক্ষেত, পাতাদের কথা বলার সময় !
কথা শোনার সময় কমে এলে তুমি একবার সন্ধ্যা কে 'নির্বন্ধ' নামে ডাকো
দেখবে পাখি ফিরছে , সূর্য ডুবছে, আর উইন্ডোসিটে এসে বসেছে মন খারাপও..
তোমায় কাছে ডেকে বলবে :
আমায় 'মৃগাঙ্ক' নামে ডাকো...
আমায়.... 'চতুরঙ্গ' নামে ডাকো...
বাজারসংহিতা
যখন যখন মেঘ পেয়ে যেত তুমুল অস্তিত্ববিকেল,
বিকেল-ভিতরে সন্ধ্যা নামিয়ে ভেসে যেত
দু-চারটে মিনিবাস, পাঁচটা টোটো
হলুদ অটোর ভিতরে ঈশ্বর যেতেন
হলদিবন থেকে তুলে আনা কলমিশাক নিয়ে বাজারসম্মত!
বাজারের ভিতরে রোজ মেঘ বেচতে আসতো মেঘ!
ভেজাতো আলুপটল, ঘুমশস্য, নিমশস্য, চালতা ভাবাবেগ,
আর যা কিছু নিভৃতে ভেজানো যায়
ভেজানোর নিভৃতসহায়-গুমোট পেঁয়াজ কারখানা,
যেদিকে নদীবাঁধ সেদিকে আমাদের যাওয়া আঁশটেগন্ধে মানা
অথচ মাটির পুতুল বিক্রির চল আমাদের ছিল না
এই হলো, যখন পটলপাতার উপরে বৃষ্টি পড়লো মেঘভৈরবী,
আর,বিকেল ছুঁয়ে গেল বাজার বসতে আসা শুকনোমরদ নদী।
এখান থেকে কিছুটা দূরে যেখানে যাবে সেখানেও এক বাজার
আরো দূরেও বাজারের সবুজ হলুদ বেগুনি সদস্যসম্ভার
মেছোবাজারে দাঁড়িয়ে নাম ভুলে যাবে খাদ্যশস্যের মত শুধু,
বিক্রি হবে কুমড়োফুল, ঝিঙে, করমচা মেঘ, অনামী পাতার ধুঁদুল।
==================
ইন্দ্রজিৎ নন্দী
আরামবাগ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন