Featured Post
গল্প ।। সর্বনাশ ।। সান্ত্বনা চ্যাটার্জি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সর্বনাশ
সান্ত্বনা চ্যাটার্জি
ছাতে সন্ধ্যার আলো ছায়াতে জলের ট্যাঙ্কের আড়ালে বসে গালে ঠাস ঠাস চড় মারছিল টাকু।।না শুধু গালেনয় নিজের সর্বাঙ্গে সজোরে চপেটাঘাত করতে করতে মশাদের বংশ ধ্বংস করছিল।
দুস শালা! কি গেরো, কেন যে ছাই চিঠিটা লিখতে গেলাম।
চিঠির সংগে মশার কি সম্পর্ক এটাই ভাবছেন তো! আছে মশাই ঘোরোতর সম্পর্ক আছে।
টাকু ওরফে বুড়ো ওরফে আমাদের পাগলাদা আমাদের পাডাতুত দাদা। ভালো নাম একটা আছে কিন্তুঅব্যবহারে সেটিতে মরচে ধরে গেছে।স্কুলে তার নাম ছিল অবিনাশ রায় , কার্যত সেই পোশাকি নামটি পদবী সহপ্রায় অবলুপ্ত বলা চলে।অকালে টাক দেখা দেওয়াতে বন্ধুরা টাকু নামেই ডাকত।বুড়ো তার মায়ের আদরেরডাক আর পাড়াতুতো যত ভাই যেমন আমাদের সবাকার পাগলাদা।।
পাগলাদা লেখা পড়ায় মন্দ ছিল না শুনেছিলাম ।কিন্তু তার একটি ভীষণ বদ অভ্যাস ছিল অতিরিক্ত লেখাতাও আবার কাল্পনিক অনুমান নির্ভর।।
উদাহরণ হিসাবে একটা ঘটনা বেছে নেওয়া যায় ।একদিন টিফিনের পরে ক্লাস এইট বির দরজার গায়ে সাঁটাকাগজ দেখা দিল 'ধুমপান হইতে সাবধান।টিফিন টাইমে যে বা যে সব ছাত্র করিডোরে ধোঁয়া ছাড়ো তারাসাবধান।।'
চিরকুট দেখে ছাত্ররা ভয়ানক চ্যাঁচামিচি শুরু করে দিল ।অঙ্কের সার বিধান বাবু এসে সবাই কে ধমকে বললেন
'এখানে এত চ্যাঁচামিচি কেন, বেল বেজে গেছে শোনো নি। যাও যে যার যায়গায় বসো গিয়ে।'
তার পর চ্যাঁচামিচির কারন জানতে পেরে তিনি তো রেগে আগুন।সর্বনাশ এদিকে এস, সর্বনাশ তারশিক্ষককুলের দেওয়া নাম।পাগলাদা বীর দর্পে এগিয়ে আসলে বললেন 'এ সব কেন লিখেছ? '
স্যার সত্যি বলছি টিফিনের সময় এখানে কেউ মাঝে মাঝেই ধুমপান করে, আমি গন্ধ পেয়েছি।
বটে, কারুকে দেখেছ কি ?
না তবে অনুমান করতে পারি, মনে হয় বিমল, কারন বিমল তো টিফিন টাইমেও ক্লাসে বসে থাকে।।
বিমল তো খেপে গিয়ে তেড়ে আসে -ব্যাটা পাগল কোথাকার মারব এখানে পডবি গিয়ে বাগানে…
চুউউউপ সবাই….যে যার যায়গায় গিয়ে বসো।আর সর্বনাশ তুমি কাল বাড়ি থেকে বাবার চিঠি নিয়ে আসবে।
কি চিঠি স্যার।
আমি কম্প্লেন লেটার লিখে দেব তার উত্তর।।
পরে জানা যায় টিফিন টাইমে স্কুলের জমাদার আর দারোয়ান ওখানে হাত ধুতে আসে আর গল্প গুজব করে।তাঁরাই হয় তো…..
এরকম নানান অপকর্মের ইতিহাস আছে পাগলাদার সারা জীবন স্কুলে, কলেজে কোথায় নয়। কিন্তু দুটো চড়চাপড় ছাড়া বিশেষ শাস্তি পেতে হয় নি। পাগল বলেই হয়তো।
কিন্তু আজ যা হয়েছে তা শুধু সর্বনাশ নয় মহা সর্বনাশ। পাগলাদা বিকম পাশ করে ছ মাস যাবত ঘরে বসে, কোনও চাকরি পায়নি এখন ও।নিজের ঘরে বসে গান শোনে বা পাড়ার চায়ের দোকানে বসে আমাদের নানা গল্পশোনায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় ।আমাদের পাড়ায় এখন ও বেশী বাড়ি হয় নি লোকজন কম। পাগলাদারবাবা বড কন্ট্রাকটার বিল্ডিং মেটিরিয়াল নিয়ে কাজ। নিজেদের দুতলা বাড়ি পাশের জমি ফাঁকা পরে আছে, তারপরের জমিটায় একটি তিনতলা ফ্ল্যাট বাড়ি ।সে বাড়ির দোতলায় ফ্ল্যাটে নতুন ভারাটিয়া এসেছে। সোমনাথচৌধুরি ও পরিবার। স্ত্রী দুই পুত্র এবং এক মেয়ে। মেয়েটা চোখে পরার মতন সুন্দরী।কলেজে পড়ে রক্ষনশীলপরিবার। পাগলাদা রাস্তায় আসতে যেতে মেয়েটিকে দেখেছে এবং মুগ্ধ হয়েছে।
পাড়ার বন্ধুদের কাছে জানতে চায় ওদের পরিচয় । টুটলুদা এমন সুযোগ ছাড়তে পারল না। বলে সে কি, তুইজানিস না?
কি জানি না।
গৌরি মানে চৌধুরিদের মেয়ে তোর প্রেমে পাগল।
কি যাতা বলছিস।
হ্যাঁ রে আমার ছোটো বোন ডলির কাছে শুনেছি রোজ নাকি তোর কথা জিজ্ঞাসা করে।
ডলি কে চিনল কি করে।
গৌরি তো ডলির স্কুলের বন্ধু।
এই ভাবে কিছু দিন ধরে পাগলাদার মাথাটা আজব কল্পনায় ভরিয়ে দেয়।
গৌরি তোকে ছাড়া কারুকে বিয়ে করবে না। বাবা দাদা রা জোর করে বাড়িতে আটকে রেখেছে যাতে তোর কাছেযেতে না পারে। ওর বিয়ের ঠিক হয়েছে অন্যত্র এবার সে আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে।।
পাগলাদার মাথায় সেই চিঠির ভুত চেপে বসল।
কল্পনায় কতবার যে শুভ দৃষ্টি হয়েছে, মালা বদল হয়েছে , ব্যাস ঐ পর্যন্ত বাসর অব্দি যাবার সাহস হয়নি।
সে সপ্তাহে মুখ্য মন্ত্রীর কার্যালয় একটি আবেদন জমা পরল এই মর্মে, আমরা দুটি প্রাপ্ত বয়স্ক প্রেমিক প্রেমিকা, বিবাহে ইচ্ছুক। মেয়েটির বাড়ির লোক তার অন্যত্র বিবাহের ব্যবস্থা করেছে। এ বিবাহ হলে মেয়েটা আত্মহত্যাকরবে জানিয়েছে। আমরা অসহায়। দয়া করে সাহায্য করুন।
নাম ঠিকানা দেওয়া হয়েছে দুজনেরই।
সেখান থেকে কালিঘাট থানায় ফোন এসেছে, চিঠির কপি পাঠালাম ই- মেলে একটু খোঁজ করে দেখুন।
তার পরে তো সর্বনাশের মাথায় বাড়ি। পুলিশ এসেছে পাড়ায় খোঁজ নিয়ে আগে মেয়ের বাডি গেছে। টুটলুদাএক ছুটে পাগলাদার বাডি । কি করেছিস আমরা তো ঠাট্টা ইয়ার্কি করছিলাম। এখন যে পুলিশ এসে গেছে, এক্ষুনি গা ঢাকা দে।।মেয়ের বাড়ি সবাই খেপে বোম্।পাগলাদার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া।
সেই থেকে টাকু ছাতে জলের ট্যাঙ্কের আড়ালে বসে মশার কামড় আর নিজের চর খাচ্ছে।।
টুটুলুদা অবশ্য আশ্বাস দিয়ে গেছে তারা ব্যাপারটা সামলে নেবে।
কিন্তু পারবে কি!
===========
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন