অদ্ভুত ডাকাতি
অঞ্জনা মজুমদার
সকাল সকাল ব্যাঙ্কে এসেছেন সমরবাবু, রিটায়ার্ড মাস্টার মশাই, পেনশনের টাকা তুলতে। হঠাৎই তিনটে মুখোশ পরা লোক ঢুকে পড়ল ব্যাঙ্কে। হাতে সকলের পিস্তল। ছাদের দিকে তাক করে একটা গুলি ছুঁড়ল একজন।
-- সবাই হাত উচু করে দাড়িয়ে থাকুন। নড়লেই গুলি করব।
সবার সাথে সমরবাবুও হাত তুলতে চাইলেন। কিন্তু হাতে যে ভীষণ ব্যথা! তাঁর কাতর মুখ দেখে একজন মুখোশধারী কটমট করে তাকাল। সমরবাবু বললেন, বড্ড ব্যথা। হাত তুলতে পারি না। মুখোশধারী একটু নরম, ঠিক হ্যায়। হাত নীচে রাখিয়ে। ছাতা ফেক দিজিয়ে।
একজন তো ম্যানেজারের ঘরে বন্দুক হাতে ঢুকে পড়লো। একটু পরে ম্যানেজারের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে নিয়ে গেল।
হঠাৎই একটি ছেলে ডিগবাজি খেয়ে এক মুখোশধারীর হাতে ধাক্কা দিয়ে বন্দুক ফেলে দিল। আর একটি মেয়ে হ্যান্ড ব্যাগ দিয়ে অন্য মুখোশধারীর মাথায় মারল। বন্দুক হাত থেকে পড়ে গেল আর সে মাথা চেপে বসে পড়ল।
ক্যাশ কাউন্টারের মুখোশধারী পেছন ফিরে তাকাতেই ম্যানেজারবাবু আর ক্যাশিয়ার মিলে তার হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিলেন। ব্যাঙ্কের গার্ড দুজন তাড়াতাড়ি তিন মুখোশধারীকে বেঁধে ফেললেন।
ম্যানেজার পুলিশকে ফোন করলেন। পুলিশ অফিসার বললেন, এই প্রথম দেখলাম সাধারণ মানুষ ডাকাত ধরলেন কোনও রক্তপাত ছাড়াই।
ম্যানেজার বললেন, এই ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলার সাহস না থাকলে এটা সম্ভব হত না।
অফিসার হাত বাড়ালেন। তাকিয়েই বললেন,
তাই তো বলি এযে গোয়েন্দা বলরাম আর তার সহকারী বিদিশা! ভাগ্যে আপনারা ছিলেন।
ম্যানেজারবাবু বললেন, ওরা আমাদের গ্রাহক।
সমরবাবু বললেন, আমি একটা কথা বলবো?
অফিসার বললেন, নিশ্চয়ই বলবেন কাকাবাবু।
সমরবাবু এক মুখোশধারীকে দেখিয়ে বললেন, এই ছেলেটির হাতে বড্ড লেগেছে। বোধহয় হাতটা ভেঙেই গেছে।
অন্য কেউ কিছু বলার আগেই সেই মুখোশধারী মুখের ওপর থেকে মুখোশ সরিয়ে সমরবাবুর পায়ের কাছে বসে কেঁদে উঠল।
-- দাদু খুব ভালো। সত্যি সত্যিই বোধহয় আমার হাতটা ভেঙে গেছে। কলেজের পরীক্ষায় এই হাতে লিখতে পারবো না।
সমরবাবু দু'হাতে তাকে তুলে ধরলেন।
-- তুমি কলেজে পড়ো? এমন কাজ কেন করলে?
অফিসার বললেন, ভুল করলে শাস্তি পেতেই হবে। তবে ভালো পথে থাকলে ভালই হবে। অন্য একজন মুখোশ ধারী বলল, মায়ের অসুখের জন্য টাকার দরকার।
আর একজন বলল, বন্দুকগুলো আসলে খেলনা পিস্তল।
সবাই মাথা নিচু করে অফিসারের পিছনে পিছনে পুলিশের গাড়িতে গিয়ে উঠল।
ব্যাঙ্কের সব কাস্টমার আর কর্মচারী হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। একজন বললেন, এমন গোয়েন্দাও দেখিনি আর এমন ডাকাতের কথাও শুনিনি। একটা ছোট্ট মেয়ে মিনি মায়ের হাত ধরে ব্যাঙ্কে এসেছিল। সে হাততালি দিয়ে বলে উঠলো, আমি ডাকাত দেখেছি। কিন্তু তারা ডাকাতি করতে জানেনা।
সমরবাবু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ওরা হয়তো বাধ্য হয়ে ভুল করে ডাকাতি করতে এসেছিল। মিনির মা মাথা নাড়লেন।
==============
অঞ্জনা মজুমদার
এলোমেলো বাড়ি
চাঁদপুর পল্লি বাগান
পোঃ রাজবাড়ি কলোনি
কলকাতা ৭০০০৮১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন