google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re কাশফুলের উড়িবার ইচ্ছে শঙ্খচিলের দেশে ।। বিচিত্র কুমার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

কাশফুলের উড়িবার ইচ্ছে শঙ্খচিলের দেশে ।। বিচিত্র কুমার

নবপ্রভাত


প্রবন্ধ



কাশফুলের উড়িবার ইচ্ছে শঙ্খচিলের দেশে
বিচিত্র কুমার 



কাশফুল, শ্বেত-ধবল ফুলগুলো নদীর ধারে, মাঠের প্রান্তে বা নির্জন চরে অগণিত ছোট ছোট দলে গজিয়ে ওঠে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সাদা তুলার মতো নরম আর নীহারিকার মতো শুভ্র মেঘের সমাহার। প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি আমাদের মনে এক অদ্ভুত শান্তি এনে দেয়। কিন্তু কাশফুলের জীবন ও অস্তিত্বের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে গভীর এক জীবনদর্শন, যা আমাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ভাবলে বোঝা যায় যে, কাশফুলও এক অর্থে আমাদের জীবনচিত্রের মতোই এক প্রতিচ্ছবি। কাশফুলের স্বভাব, তাদের বেড়ে ওঠা, তাদের ক্ষণস্থায়ী জীবন এবং তাদের উড়িবার আকাঙ্ক্ষা—সবই আমাদের জীবনের এক অসামান্য শিক্ষা দেয়।


কাশফুলের জীবন শুরু হয় অতি ক্ষুদ্র একটি বীজ থেকে। প্রতিটি বীজের মধ্যে রয়েছে বিশাল এক সম্ভাবনা, যেটি হয়তো দিনের আলো পাবে, বৃষ্টির ছোঁয়া পাবে, অথবা হয়তো প্রকৃতির প্রতিকূলতার মুখে পড়বে। কিন্তু যেই বীজটি তার চারপাশের প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে, সেটিই জন্ম দেয় এক অপূর্ব কাশবনে। এখানেই কাশফুলের প্রথম জীবন শিক্ষা—সম্ভাবনা। জীবনের প্রতিটি মানুষও এক একটি সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। আমরা প্রত্যেকে এক একটি বীজ, যার মধ্যে অদম্য শক্তি লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেই শক্তিকে প্রকাশ করতে গেলে প্রয়োজন পরিবেশ, পরিস্থিতি, এবং একনিষ্ঠ চেষ্টার।


কাশফুল যখন বেড়ে ওঠে, তার চারপাশের জলহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে। জীবনের প্রথম ধাপটি ঠিক তেমনি। ছোটবেলা থেকে আমাদের বেড়ে ওঠা ঘটে আমাদের পরিবার, সমাজ, এবং সংস্কৃতির প্রভাবের মধ্যে। আমাদের শৈশব, কৈশোর, এবং তারুণ্যে যে মূল্যবোধ ও শিক্ষা আমরা পাই, সেটাই আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করে। যেমন কাশফুল নিজের শিকড়কে মাটির গভীরে প্রোথিত করে ধরে রাখে, তেমনি আমাদেরও শিকড় হলো আমাদের পরিচয়, আমাদের সংস্কৃতি, এবং আমাদের প্রাপ্ত শিক্ষা।


কাশফুলের পরিপূর্ণতা আসে শরতের হাওয়া লাগলে। তখন বাতাসে কাশফুলের নাচন, তার সাদা রঙের মাধুর্য আমাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু এই সৌন্দর্য খুব বেশি দিন টেকে না। কয়েকদিনের মধ্যেই সে শুকিয়ে যায়, হারিয়ে যায়। এখানেই জীবনের আরেকটি বড় শিক্ষা—ক্ষণস্থায়ীতা। কাশফুল যেমন তার পূর্ণতা পায় এবং দ্রুত হারায়, তেমনই আমাদের জীবনও এক সীমিত সময়ের জন্য।


এই স্বল্পস্থায়িত্বই আমাদের শেখায় জীবনকে কিভাবে উপভোগ করতে হয়। যেমন কাশফুল তার স্বল্পায়ুর মধ্যে তার সমস্ত সৌন্দর্য ঢেলে দেয় প্রকৃতির মাঝে, তেমনই আমাদেরও উচিত প্রতিটি মুহূর্তকে পূর্ণভাবে বাঁচা। জীবনে অনেক চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে হারিয়ে গিয়ে আমরা হয়তো ভুলে যাই যে, আমাদের সময়ও সীমিত। এই সীমিত সময়ের মধ্যেই আমাদের সৌন্দর্য, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের কাজগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে।


কাশফুলের উড়িবার ইচ্ছে এক ধরনের মুক্তির প্রতীক। শঙ্খ চিলের দেশে, অর্থাৎ যেখানে চিল মুক্তভাবে আকাশে ওড়ে, সেখানে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষা এক অর্থে স্বাধীনতা, মুক্তি, আর অজানাকে জানার ইচ্ছারই প্রকাশ। আমাদের জীবনেও এই আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেরই একটি স্বাধীনতা আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থাকে।


শঙ্খ চিলের দেশে কাশফুলের উড়বার ইচ্ছে সেই স্বপ্নেরই প্রতীক যা আমাদের সকলের মধ্যেই থাকে। জীবনের নানা বাঁধা, সীমাবদ্ধতা, দায়িত্বের বেড়াজাল পেরিয়ে আমরা সবাই কিছু না কিছু চাই। কারও হয়তো শান্তি খুঁজতে চাই, কারও সৃজনশীলতার মুক্তি, আবার কারও স্বাধীনভাবে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা। এই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমাদের জীবনের পথচলা গড়ে দেয়। আমরা বাধার মধ্যে দিয়েই সেই চূড়ান্ত স্বাধীনতার স্বাদ পাই।


কাশফুলের জীবনচক্র আমাদের শেখায় যে, জীবনের প্রতিটি ধাপেই আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবো। কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কঠিন পরিস্থিতি আসবে, কখনও আমাদের শিকড় কেঁপে উঠবে। কিন্তু আমাদের কাজ হবে শিকড়কে মজবুত করা এবং মাথা উঁচু করে বাঁচা। 


যেমন কাশফুল তার ক্ষণস্থায়ী জীবনে সমস্ত বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন দেখে উড়বার, তেমনই আমরাও আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারি। প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজের ক্ষমতা আর বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে নতুন নতুন পথ খুঁজে নিতে হয়। 


জীবনের আসল সুন্দর্য হলো এর অসম্পূর্ণতায়। যেমন কাশফুল কখনও তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না, তেমনি আমাদের জীবনের সমস্ত ইচ্ছা আর স্বপ্নও পূর্ণতা পায় না সবসময়। কিন্তু সেই অসম্পূর্ণতার মাঝেই রয়েছে প্রকৃত জীবনের রূপ।


কাশফুলের জীবন আমাদেরকে জীবনের গভীর এক উপলব্ধির পথে নিয়ে যায়। তার উড়িবার ইচ্ছে আমাদের শেখায় স্বপ্ন দেখতে, নতুনকে জানার জন্য জীবনকে উন্মুক্ত করতে। আমাদের জীবনেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আমাদের স্বাধীনতা খুঁজে নিতে হবে। আমাদের উচিত কাশফুলের মতো স্বল্পস্থায়ী জীবনকেও মাধুর্যময় করে তোলা, আমাদের শিকড়কে মজবুত করে উঁচু মাথায় বাঁচার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।


কাশফুলের উড়িবার ইচ্ছে আমাদের দেখায় জীবনকে কিভাবে উদযাপন করতে হয়, কিভাবে শিকড় ধরে রেখে মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতে হয়। এটি শুধু একটি ফুলের জীবন নয়, এটি আমাদের সকলের জীবনচিত্র। তাই, কাশফুলের জীবন দর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদেরও উচিত আমাদের জীবনকে কিভাবে পূর্ণতা দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টায় নিবেদিত থাকা।



==================


নামঃ বিচিত্র কুমার

গ্রামঃ খিহালী পশ্চিম পাড়া

পোস্টঃ আলতাফনগর

থানাঃ দুপচাঁচিয়া

জেলাঃ বগুড়া

দেশঃ বাংলাদেশ



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন