google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re পুস্তক-আলোচনা ।। পুস্তক : 'অগ্নিশিখা ক্ষুদিরাম' ।। লেখক : নিখিল মিত্র ঠাকুর ।। আলোচক : অরবিন্দ পুরকাইত - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

পুস্তক-আলোচনা ।। পুস্তক : 'অগ্নিশিখা ক্ষুদিরাম' ।। লেখক : নিখিল মিত্র ঠাকুর ।। আলোচক : অরবিন্দ পুরকাইত



ক্ষুদিরাম-কথা

অরবিন্দ পুরকাইত 



নিখিল মিত্র ঠাকুরের 'অগ্নিশিখা ক্ষুদিরাম' উপন্যাসটি পড়ে ভাল লাগল।
     মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন হবিবপুর গ্রামে ত্রৈলোক্যনাথ বসু ও লক্ষ্মীপ্রিয়ার তিন কন্যা— অপরূপা, সরোজিনী আর ননীবালা। পরপর দুই পুত্রসন্তানের মৃত্যুর পরে তৃতীয় পুত্রসন্তানের যাতে কোনো অমঙ্গল না হয়, সন্তানের উপর নিজের সব লৌকিক অধিকার ত্যাগ করে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বড় মেয়ে অপরূপার হাতে দায়িত্ব তুলে দেন লক্ষ্মীপ্রিয়া এই সন্তানটির— খুদের (আগের বানান ক্ষুদ) বিনিময়ে কেনা বলে যাঁর নাম ক্ষুদিরাম।
     শৈশবে-মাতৃহীন ক্ষুদিরামের ছোটবেলা থেকে ছন্নছাড়া জীবন, দিদির বাড়িতে কোনও গতিকে কিছুদিন কাটানো, ইংরেজ সরকারে চাকুরে ভগ্নীপতির বাধ্যবাধকতা, দিদি অপরূপার অসহায়তা, তার মধ্যে ভাগ্নে ললিতের সঙ্গে ভালোবাসার একটা নিবিড় সম্পর্ক এবং আরো দু-একজন সমবয়সি বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, আর্ত মানুষের সেবা থেকে ক্রমশ দেশ-কালের পরিস্থিতির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা, সহপাঠী ফণীভূষণ ঘোষের কাছে বিদেশি জিনিসের তুলনায় খারাপ দেখতে হলেও দেশি জিনিস বেশি শ্রেয় বলে প্রথম শোনা, বিদেশিদের অত্যাচার-অবিচারের স্বরূপ উপলব্ধি করে ছোটবেলা থেকে দেশকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা-প্রস্তুতি ইত্যাদি এই পুস্তকে বেশ বিশদভাবেই এসেছে। সরাসরি নিজ হাতে শাস্তির ভার তুলে নেওয়ার দৃষ্টান্ত, পরবর্তীকালে দেশের স্বাধীনতাকাঙ্ক্ষী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ এবং অত্যাচারী শাসককে হত্যার দায়িত্ব পাওয়া, সেই দায়িত্ব পালনের পর্বে এবং সে দায়িত্ব ভুলভাবে প্রয়োগ এবং তার বিচারপর্বে একই সঙ্গে তাঁর স্বদেশবাসীর স্বার্থপরতা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং উদারতা, সহমর্মিতা, অসহায়তা ইত্যাদির সাক্ষী হলেন কিশোর ক্ষুদিরাম। বিচারপর্ব এবং শাস্তিদান পর্বে দেশবাসীর আগ্রহ আলোড়ন ফেলে দিল।
     একটা চালু কথা আছে, ক্ষুদিরাম বনে যাওয়া। এটা যদি এই বোঝাতে বলা হয় যে ক্ষুদিরাম কিছু না বুঝে নিজের জীবন শেষ করে ফেলেছে তবে পাড়া-প্রতিবেশী থেকে তাঁর দেশপ্রেমের সূচনা, দেশের পরাধীনতার বোধ তৈরি হওয়া, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে খাঁটি ক্রোধ, শাসক-নিকেশে বদ্ধপরিকর হওয়া এবং তার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা, পূর্বেও ইংরেজ-পেটানো ইত্যাদি বিবেচনার মধ্যে রাখতে হয়।
     অত্যাচারী শাসক কিংসফোর্ডের হত্যার জায়গায় ভুল করে বোমা নিক্ষেপ করা হয় দুই নিরপরাধ স্ত্রীলোককে। ধরা পড়ে ক্ষুদিরাম সরল স্বীকারোক্তি করেন হত্যাপ্রচেষ্টার এবং ব্যথা পান দুই নিরপরাধিণীকে হত্যা করে ফেলার জন্য। উপেন্দ্রনাথ সেন, কালিদাস বসু, সতীশবাবুর মতো খ্যাতনামা আইনজীবীরা ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ড রদ করার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করেন। ক্ষুদিরামকে বুঝিয়ে এমনকি বড়লাটের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন পর্যন্ত করাতে রাজি করান তাঁরা। কিন্তু শীঘ্র প্রাণদণ্ড স্থিরই করে রেখেছিল শাসক ইংরেজ, বিচাপর্বটা নিছক নিয়মমাফিক ছিল।
     উপন্যাস বলে উল্লেখ না থাকলে বইটিকে অনায়াসে ক্ষুদিরামের জীবনী-রূপ প্রবন্ধগ্রন্থ বলতে বাধা ছিল না। লেখকোক্ত 'ঐতিহাসিক উপন্যাস' হিসাবে বইটিতে আরও কিছু মাত্রা যুক্ত হতে পারত। পুরো বৃত্তান্ত বলতে গেলে লেখকেরই বয়ানে। পাত্রপাত্রীর বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া, পাত্রপাত্রীর সংলাপ ইত্যাদি প্রয়োজনমতো এসেছে ঠিকই, কিন্তু তা সম্পূর্ণত লেখক নিয়ন্ত্রিত। স্বয়ং পাত্রপাত্রীকে, বিশেষত এখানে এই উপন্যাসের নায়ক বিপ্লবী বীর ক্ষুদিরামকে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে ঠেলে দেওয়া, তাঁর অনুভব-অনুভূতির মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও মোকাবিলা আরও বেশি কাঙ্ক্ষিত ছিল; অর্থাৎ বলার কথা, লেখক নিজে যা যা বলছেন তার বেশ কিছু অংশ স্থান-কাল-পাত্রকে সরাসরি পরস্পরের মধ্যে দিয়ে দেখায় উপন্যাস হিসাবে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলত বইটিকে। ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনায় ঔপন্যাসিকের কোনও অভিপ্রায় থাকে অনেকসময়, সেই অভিপ্রায় মোতাবেক প্রয়োজনে কাল, পরিবেশ ইত্যাদির উপযোগী করে ঐতিহাসিক চরিত্রের বাইরেও একাধিক চরিত্র সৃষ্ট করতে পারেন তিনি।
     ক্ষুদিরামের আবক্ষ মর্মরমূর্তির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধনে জহরলাল নেহরুর অস্বীকৃতি সংক্রান্ত উদ্ধৃতি দিয়ে উপন্যাসটি শেষ হচ্ছে, এটা ভাল দৃষ্টান্ত নয়। উদ্ধৃতি যত উপযুক্তই হোক না কেন, উপন্যাস হোক বা জীবনীগ্রন্থ— উপসংহার টানবেন বা শেষ কথা বলবেন স্বয়ং রচনাকারই। এখানে তবু খানিক মানানসই হতে পারত তাঁর উদ্ধৃত পীতাম্বর দাসের সুবিখ্যাত 'একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি' গানটি দিয়ে শেষ করলে।
     সহায়ক বইপত্রের উল্লেখ করতে ভোলেননি লেখক। অন্তর্জাল থেকে গৃহীত প্রচ্ছদ যথাযথ।

পুস্তকের নাম : অগ্নিশিখা ক্ষুদিরাম
লেখকের নাম : নিখিল মিত্র ঠাকুর
প্রকাশকের নাম : এভেনেল প্রেস
প্রকাশকাল  : সেপ্টেম্বর ২০২৩
মূল্য : ২০০ টাকা

===================

অরবিন্দ পুরকাইত 
গ্রাম ও ডাক — গোকর্ণী 
থানা — মগরাহাট 
জেলা — দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন