প্রবন্ধ
বঞ্চিত শ্রমিক শ্রেণী
শ্যামল হুদাতী
প্রতিবছর ১লা মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। এই দিনটি সারা বিশ্বে শ্রমিকদের কাছে এক গৌরবময় বা উজ্জ্বল দিন।
৮ ঘণ্টা কাজের দাবি এবং অন্য দাবিতে ১৮৮৬ সালে ১লা মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে প্রায় তিন লক্ষ্য শ্রমিকরা ওই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পুলিশের ওপর এক অজ্ঞাতনামা বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। শ্রমিকদের আত্মত্যাগ স্মরণ রেখেই ১লা মে দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমেরিকা থেকে ধীরে ধীরে চীন রাশিয়া ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মে দিবসের তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠাতা পায় শ্রমিকদের আট ঘন্টা কাজ করার দাবি।
১৯২৩ সালে ভারতে প্রথম চেন্নাইয়ে মে দিবস পালন করা হয়।
১৯৪৮ সালে থেকে সরকারিভাবে ভারতে সারা বিশ্বের শ্রমজীবীদের মর্যাদা পেতে ১লা মে বাধ্যতামূলক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয় ।
এখন বিশ্বে প্রায় ৮৫টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে একটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়।
করোনা পরিস্থিতি জেরে মানুষের জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনি বদলে গিয়েছে কর্মস্থলে কাজের পদ্ধতি। আমাদের দেশে কিছু কিছু প্রদেশে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের বদলে ১২ ঘন্টা কাজের দিকে এগাতে চাইছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকরা চাকরির যাওয়ার আশঙ্কায় কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় কাটাতে হয়। যার সুযোগ নেয় মালিক পক্ষ। তবে সংগঠিত ক্ষেত্রে মোটামুটি দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। কিন্তু ক্রমশ সেই পরিস্থিতিও বদল হতে চলেছে।
১২ই এপ্রিল তামিলনাড়ু বিধানসভায় ফ্যাক্টরিস সংশোধন আইন ২০২৩ পাশ হয়। সেই আইনে দৈনিক কাজের সময় ৮ থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করা হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দল এতে আপত্তি জানায়।
কেন্দ্রের নতুন শ্রমবিধি কোম্পানিগুলিতে তাদের কর্মীদের সপ্তাহের পাঁচের বদলে চার দিন কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। এটি কার্যকর করার অর্থ দিনে ১২ ঘন্টা কাজ, সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা। করোনা পরিস্থিতির জন্য ২০২০ সালের মে মাসে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ,গুজরাট, মধ্য প্রদেশ,গোয়া উত্তরাখন্ড, অসম, পাঞ্জাব হরিয়ানা এবং হিমাচল প্রদেশ শ্রম আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করেছিল, এতে দৈনিক কাজের সময় সংশোধন করে ১২ঘন্টা করার কথা হয়।
বেশ কিছু উন্নত দেশে ইদানিং দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যদি কোন শ্রমিক আট ঘন্টার বদলে ১২ ঘন্টা শিফটে কাজ করে এবং সপ্তাহের মোট ৪৮ ঘন্টা কাজ করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে সপ্তাহে চার দিন কাজ করলেই চলবে। সে ক্ষেত্রে তিন দিন তারা ছুটি পাবে। সপ্তাহে ৪দিন অফিসে আসতে হলে সেই কর্মীর যাতায়াত অন্যান্য খরচ ও কমবে।
এখন আটের বদলে দিনে ১২ ঘন্টা কাজ করলে শারীরিক দিক থেকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম আদৌ কতটা পাওয়া যাবে, সেটা অবশ্য ভেবে দেখার দরকার। অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করতে গিয়ে শরীর ভেঙ্গে গেলে শ্রমিক বা কর্মীর পক্ষে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা সম্ভব হবে তো? ৮ ঘন্টা কাজ করার দাবী যখন উঠেছিল তখন বলা হয়েছিল বাকি সময় বিশ্রাম নেওয়া বা বাড়ি অন্যান্য কাজ করার কথা। এটা শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার হরণের চেষ্টা নয়তো?
---------------------------------
শ্যামল হুদাতী
৩৫৭/১/১৩/১, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড
কলকাতা - ৭০০০৬৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন