google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re সংকটের আলোকবর্তিকা রবীন্দ্রনাথ ।। পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

সংকটের আলোকবর্তিকা রবীন্দ্রনাথ ।। পাভেল আমান

নবপ্রভাত

সংকটের আলোকবর্তিকা রবীন্দ্রনাথ


জন্মের ১৬৪ বছর পরেও এখনো সমানভাবে বাঙালি মানসে প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি চেতনার জাগরণে প্রাত্যহিক দিনযাপনে প্রতিটি ক্ষণে তিনি এখনো তার সৃষ্টির সম্ভারে চরমভাবে বিরাজমান। বাঙালির প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ শুধুমাত্র সাহিত্য সৃষ্টির জগতে নয় মনুষ্যত্ব চেতনার বিকাশে সমাজ গঠনে বিশ্ব মানবতাবোধ সৃষ্টিতে সর্বোপরি পূর্ণাঙ্গ জীবন গড়তে তিনি ছিলেন অনন্য একটি প্রতিষ্ঠান তাকে ছাড়া বাঙালিরা একেবারেই দিশেহারা। আকাশভরা সূর্যতারা কিংবা বিশ্বভরা প্রাণের মতোই আপন সৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল সেই বিশ্বকবি। গানের সুরে, কবিতার পঙ্ক্তিমালায়, মানবিক ভাবনায় অথবা স্বদেশ চেতনায় হয়ে তিনি বাঙালীর নিত্যসহচর। সেই সুবাদে মানবিক দর্শনের আলোকরেখায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বাঙালীর মননে। সঙ্কটে-সংগ্রামে, আনন্দ-ভালবাসায় হয়েছেন অনুপ্রেরণার সঙ্গী। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চেতনার উজ্জ্বলতম বাতিঘর। একইসাথে দেশাত্মবোধ, ও মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথই আমাদেরকে দিতে পারেন সঠিক গন্তব্যের দিশা। দিচ্ছেনও, কিন্তু আমরা সেই পথ ও ভাবনার সাথে যথাযথ সংযোগ স্থাপন করতে পারছি না। আমরা রবীন্দ্রনাথকে স্পর্শ করতে পারছি না। আমাদের চেষ্টা করা উচিত তার ছায়াকে স্পর্শ করার। কেন-না, তার উচ্চতা আমাদের থেকে অনেক বেশি।রবীন্দ্রনাথ শুধুই পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ কিনা, তিনি শুধুই স্মৃতি আর উপলক্ষ্যের উদ্‌যাপনে মঞ্চজুড়ে উৎসব কিনা, বিষ্ণু দে বহু দশক আগে এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। আর, এই প্রশ্নের পথ ধরে এগোতে এগোতে বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, নয়া-উপনিবেশ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, বিশ্বায়ন, নয়া-ফ্যাসিবাদ, গণহত্যা, বিশ্বজোড়া মহামারী সমস্তই ঘটে গেছে।বাঙালির সব সমস্যা-সংকটে তার গান, কবিতা জুগিয়েছে সাহস ও প্রেরণা। সবকিছু ছাপিয়ে আছে তার শান্তি, কল্যাণ ও বোধের প্রতি সুগভীর প্রত্যয় ও নিরন্তর কামনা। একেই তিনি নানা রূপে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার বহুমাত্রিক সৃজনকর্মে।বিস্ময়কর প্রতিভার বিচ্ছুরণে নিজেকে কবিগুরু  থেকে বিশ্বকবিতে পরিণত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির চিন্তা-মনন-অনুভূতির এমন  কোনো ক্ষেত্র নেই  যেখানে  তার সৃষ্টিশীলতার  ছোঁয়া পড়েনি। আপন সৃষ্টির নির্যাসে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে ধাবিত করেছেন জাতির মননকে।

বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতি বিনির্মাণের অগ্রপথিক এই কবি। তাই জন্মের দেড়শ' বছর পরও শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখাতেই দীপ্তিমান বিশ্বকবি। আজও তার সৃষ্টিসমগ্র ভাবনার বীজ বুনে দেয় সাহিত্য ও শিল্প অনুরাগীর হৃদয়ের গহিনে। আর এই সৃষ্টি দিয়েই বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে জাতীয়তার গন্ডি  পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতার সীমানায় পৌঁছে দিয়েছেন এই কবি। আনন্দ-বেদনা কিংবা সংকটে বার বার বাঙালির সহায় হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সুবাদে বলা যায়, যখন চারপাশে শুধুই অন্ধকার তখন পথের দিশারী হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ।অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থার রূপকার রবীন্দ্রনাথ আজও বাঙালিকে  দেখান পথের নিশানা।  সেই বাস্তবতায় রবীন্দ্র সংস্কৃতির বহু ধারা ও সৃজনে স্নাত হওয়ার মাঝেই দীপ্যমান বাঙালির অগ্রযাত্রা ও বিকশিত হওয়ার সাধনা।বাঙালীর প্রত্যয়ী যাত্রাপথের সকল বাঁকেই রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি বিরাজমান। বাঙালির প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণের সঙ্গে মিশে আছেন তিনি। বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা ও চেতনার এক অনন্য বাতিঘর রবীন্দ্রনাথ। বাঙালির গান, কবিতা, গল্প, নাটক, চিত্রকলা, বিজ্ঞানমনস্কতা, লোকসাহিত্য চর্চা কিংবা ভাষাবিজ্ঞান কোথায় ছিলেন না তিনি? মহাসমুদ্রের মতো বিশাল ও বিস্তৃত পরিসরের সৃষ্টির আলোয় আলোকিত করেছেন বাঙালির মনন, চিন্তা-চেতনা ও ভাবনার ভুবনকে। আর রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ব্রিটিশ আমলে নানাভাবে ভারতীয় মধ্যবিত্তের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন স্বাধীনতার স্পৃহা। শুধুমাত্র জন্ম দিবস পালনের মধ্যে দিয়েই রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করা নয় তাকে সারা জীবন আমাদের স্মরণ করতে হবে তার বিপুল সৃষ্টির সম্ভারে ব্যক্তি সত্তা সর্বোপরি আদর্শের পরতে পরতে। আজকে চারিদিকে যখন বিদ্বেষ বিভাজন হিংসা অস্থিরতা অসহিষ্ণুতা মানুষের অবিশ্বাস অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ ভেঙে পড়ছে আজন্ম লালিত সম্প্রীতি সৌহার্দ্য সংহতি সমন্বয় ভাবনা ঠিক সেই মুহূর্তেই আমাদের আরও বেশি একাত্ম হতে সমস্ত ধর্মীয় চেতনা মননে রেখে বহুমাত্রিক ভাবনাকে পাথেয় করে পারস্পরিক সৌহার্দের ভাতৃত্বের বন্ধনকে অটুট করে রবীন্দ্রনাথের জীবনাদর্শের যথাযথ অনুসরণ ও পালনের মধ্যে দিয়ে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিটি বাঙালি জীবনের মনে প্রানে সর্বত্র প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয় হয়ে উঠুক। তিনি যে পথ আমাদের দেখিয়েছেন যে চেতনা বোধ সৃষ্টি করেছেন যে ভাবনাকে জাগিয়ে তুলেছেন মানবতার আহবানে সাড়া দিয়ে সেই অভিমুখেই তার আদর্শকে মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে বাঙালিরা এগিয়ে চলুক সম্মুখে। সেখানেই নিহিত আছে বাঙালি জাতিসত্তার শেকড়। 

রচনা -পাভেল আমান -হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন