গাছ-ভূত
(সত্য-সিম্মি সিরিজ)
আলাপন রায় চৌধুরী
১
সত্য সেদিন হেডকোয়ার্টার থেকে ফিরে দেখলো যে সিম্মি কাজ করছে; তখনকার মতো ওকে ডিস্টার্ব না করে কিছুক্ষন পরে সিম্মির কাজ শেষ হওয়ার পর সত্য কথা-বার্তা শুরু করলো। ও হঠাৎ বলে উঠল, 'এরম কত যে জায়গা আছে যেখানে মানুষের যাওয়ার বাধা না থাকলেও মানুষ যায় না!'
'আঞ্জানা ডার্ ক্যায়া? আই মিন, ওই অজানা ভয়।' কাজ করতে করতে বলল সিম্মি।
'না, ওই দেশ-বিদেশের ফরবিডেন প্লেসেস্ আর কী।'
'ওহ, যেখানে গেলে কোনও অজানা অভিশাপ বা হিংস্র ক্রিপ্টিডের শিকার হয় মানুষ!'
'জন্তু-জানোয়ারও যায় না যেখানে– মানুষ তো দূরের কথা, এরম গল্প তো শুনেছ নিশ্চয়ই।'
'হ্যাঁ, শুনেছি। সিক্সথ সেন্স দিয়ে বোঝে হয়তো ওরা। অনেক ভূতিয়া কেল্লা টেল্লাতেও তো নাকি এরম হয়!'
'হুম্, সন্ধ্যার আগে সব প্রাণী সেই জায়গা ত্যাগ করে– এরম গল্প শুনেছি আমিও।'
'গল্প না ঘটনা?'
'ঘটনা না রটনা, তা জানি না। তাই আপাতত গল্প হিসাবেই ধরি।'
'ওকে।' বলে দুটো কাঁধ একটু উপরের দিকে তুলল সিম্মি। মনে হল সত্য কোন দিকে যাচ্ছে সেটা ঠাওর করতে পারেনি ও।
'পর্ মুদ্দা কুছ অউর হ্যায়!'
'এবার লাইনে এসো ক্যাপ্টেন।'
'উত্তর ভারতের একটা জায়গা– ওখানে নাকি গাছ ভূতের আবির্ভাব হয়েছে।'
'গাছ ভূত?'
'হ্যাঁ, রেয়ার্ হলেও এর কিছু গল্প ছোটবেলায় শুনেছি।'
'কীরম গাছ? কার্নিভোরাস? মানুষ খায়?'
'না, ম্যান-ইটার্ ঠিক না। তবে কাজ-কর্ম সেরমই।'
'মানুষ মারে?'
'না, মানে আমি যে কেস্গুলো শুনেছি, সেখানে মানুষ মারেনি, তবে অ্যাটাক্ বা স্টক করেছে লোককে।'
'বাব্বা! এ তো প্রেডেটরি! তবে ভূত কেন?'
'ওই যে, বুঝতেই তো পারছ, এরম তো ন্যাচারালি দেখা যায় না!'
'আচ্ছা, আনএক্সপ্লেনড্ মানেই সেটা ভূত। অপ্রাকৃতিক।'
'হুম্... অতিপ্রাকৃতিক! আচ্ছা, তুমি কোনওদিন কিছু শোনোনি এই ব্যাপারে?'
'তুমি যেরম বললে সেরম ধরণের শুনিনি।'
'ওহ, তো?'
'ওই যে গাছে আত্মা থাকে। সেই আত্মা রাতে ভিক্টিমদের ডাকে। ভিক্টিম বলতে যারা ওই গাছের ইন্ফ্লুয়েন্সে অপমৃত্যুতে মারা যায়, তারা আর কি। এরম ঘটনা শুনেছি।'
'আচ্ছা আচ্ছা, এটা আলাদা কেস্ হয়তো। অনেকটা নিশির ডাকের মতো।'
'নিশির ডাকটা কী?'
'এটা শোনোনি আগে?'
'নাহ্, মনে পড়ছে না।'
'ওই যে হিপ্নোটিক ট্রান্স- সেই রাজস্থানের প্রভাবল্লীর পিশাচ।'
'ওহ আচ্ছা, অকাল্ট হিপ্নোটিস্ম!'
'হ্যাঁ, তবে এই ক্ষেত্রে যে এন্টিটি এই ট্রান্স বা ভ্রমের ঘোর তৈরি করে, সে মানুষ না আত্মা তা বোঝা মুস্কিল।'
'তো সেই ডাকের দ্বারা প্রভাবিত হলে ওই রাজস্থানের রাজ-পরিবারের লোকদের মতোই মারা যায় সবাই?'
'হ্যাঁ, রাতের বেলায় সেই ডাকে সম্মোহিত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই মৃত্যু। এর'ম মনে করা হয় আর কী।'
'হুম্, বুঝলাম। গাছের ক্ষেত্রে অবশ্য এক্টোপ্লাস্ম বা বিদেহী আত্মা হয়তো গাছেই ভর করে বা বাস করে।'
'হ্যাঁ, এই জন্যই নিম গাছ নাকি বাড়ির আশেপাশে রাখতে নেই।'
'কেন নিম গাছে কী?'
'ওতে নাকি ভূতরা জল্দি বাসা বানায়।'
'হা হা, তাই নাকি? নিম তো এমনিতে খুব ইউস্ফুল। তো ভূতেদের ক্ষেত্রেও যে নিম ইউস্ফুল, তা জানতাম না!'
'হুম্, নিম গাছ নিয়েও একটা-দুটো ঘটনা শুনেছি।'
'আচ্ছা, নিম গাছ হোক বা অন্য গাছ, যাদের রাশি হালকা তাদের কি ভূত টার্গেট করে বা তাদের ওপর ভর করে?'
'এটা আমিও শুনেছি। এটাও একটা ব্যাপার!'
'হ্যাঁ, কারণ আমি যে গাছগুলোর কথা বলছি সেগুলো নিম ছিল না।'
'গাছের প্রাণ আছে। তাহলে কি গাছেরও স্পিরিট্ বা এক্টোপ্লাস্ম হয়?' কিছুটা মনে-মনেই কথাগুলো বলল সত্য।
সিম্মি সেটা শুনতে পেয়ে বলল, 'স্পিরিট্ থাকলেও তারা নিশ্চয়ই মানুষের মতো কথা বলতে পারবে না!'
সত্য কিছু একটা ভাবার ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
সিম্মি এই নীরবতা ভঙ্গ করে জিজ্ঞেস করল, 'যাই হোক, কেস্টা কী বলো তো? কোনও ক্রিপ্টিড-এর গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে!'
'হ্যাঁ, কী বললে?' সত্য একটু অন্যমনস্ক ছিল।
'কী ভাবছিলে?'
'না, ইয়ে, ভাবছিলাম যে এই যে ডাক শুনতে পাওয়া- এটা হয়তো কিছু-কিছু ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক। আবার সম্নোলিস্ম-ও হতে পারে।'
'একবার তো এক গ্রামে– বাংলার বীরভূম না বর্ধমানে, কোথায় যেন সেই একটা গাছকে সবাই হন্টেড মনে করছিল, না ওই ডাক শুনতে পাচ্ছিল...'
'আর যুক্তিবাদীরা বলেছিল যে ওটা মাস হিস্টেরিয়া। কিন্তু গ্রামবাসীরা তা মানতে নারাজ ছিল। মনে পড়েছে কেস্টা।'
'ইয়েস, ওহি!'
'এরম ধরণের খবর অবশ্য মাঝে-মধ্যেই নিউস চ্যানেলে দেখায়!'
'তো আমাদের গাছ ভূতের কেস্টা কীরম?'
'আমাদেরটা ওরম কথা-বলা গাছ বা আত্মা ভর করা গাছ না।'
'ওহ আচ্ছা, এরম কথা-বলা গাছের কথা তো আমারা পুরোনো গল্পতেও পাই।'
'মানে ইয়ে প্রাচীন সাহিত্যের কথা বলছ?'
'হুম্ হুম্...'
'সেটা হয়তো পার্সনিফিকেশন। পশু-পাখিরাও যেমন কথা বলে গল্পে; বাস্তবে না বললেও...।'
'বা ওদের ভাষা হয়তো সেই যুগের মাটির কাছে থাকা মানুষেরা বুঝত।'
'হুম্, হয়তো দুটোর কম্বিনেশন। বা সিচুয়েশন অনুযায়ী চরিত্রগুলো কে কী ভাবতে পারে, বা বলতে পারে, সেটা মাথায় রেখে সেই অনুযায়ী হয়তো গল্পগুলো সাজানো হয়েছিল।'
'মানে ওই জন্তু-জানোয়ার বা গাছ চরিত্রগুলো?'
'ইয়াপ্। আর, গাছের পুজোও অনেক প্রাচীন।'
'কিছু-কিছু গাছকে, নাকি সব...?'
'হয়তো সব, ঠিক জানি না... এই ধরো ঋগ্বেদ- সেখানে কত প্রকৃতি-ভিত্তিক দেব-দেবী!'
'ইউ মিন আসপেক্টস অফ নেচার?'
'হাঁ, ওটাই। এরকম পৃথিবীর অন্যান্ন কালচারেও পাওয়া যায়।'
'এটা কি ভয় থেকে, না ভক্তি থেকে?'
'মানুষ তখন গাছকে পবিত্র মনে করত।'
'মনে হয় এটাও জানত যে গাছেরও প্রাণ আছে।'
'হ্যাঁ হতে পারে; গাছের উপকারিতা তো অনেক।'
'শস্য, তারপর মেডিসিন্, ফল-মূল-সবজি...'
'অক্সিজেন-এর ব্যাপারটা তাদের জানা ছিল কি না সেটাই প্রশ্ন!'
'বা ইকোলজি-তে তাদের ভূমিকা...'
'ইয়েপ্। তখনকার মানুষ হয়তো তাদের পরিবেশকে একটা জীবন্ত এনটিটি বলে মানত!'
'আই সি! আমার নানীদের দেশের বাড়ির কাছে এখনো এরম ট্রাইব আছে- চিত্রল উপত্যকায়।'
'তুমি গল্প শুনেছে? তোমার নানীর উপজাতির থেকে আলাদা ওরা?'
'ইয়েস, আমি যতদূর জানি ওরা নানীদের মতো পাঠান উপজাতি গোষ্ঠীর অংশ নয়।'
'আচ্ছা, এবার... আমাদের ব্যাপারটা ক্রিপ্টিড্ না মিস্আইডেন্টিফিকেশন, কী জানি!'
'দেখা যাবে। আগে কেস্ কী সেটা তো বলো।'
'ওহ, হ্যাঁ... বলছি।' এই বলে সত্য উঠে গিয়ে ঘরের জানালাটা ঠিক করে লাগানো আছে কিনা সেটা একবার দেখে নিল। তারপর ও আবার কথা শুরু করল।
'রিপোর্ট অনুযায়ী একজন লোক মারা গেছে রিসেন্টলি।'
'গাছ হিপনোটাইস্ করেছে নাকি?'
'না, জন্তু-জানোয়ারও মারা গেছে।'
'তো গাছ মেরেছে?'
'হ্যাঁ, একজন সার্ভাইভার তাই বলেছে।'
'কী সার্ভাইভার? ট্রি অ্যাটাক্?'
'হ্যাঁ। ট্রি অ্যাটাক্ই বটে!'
'কিন্তু বাকি সবাইকে গাছই মেরেছে?'
'অনুমান করা হয়েছে, তবে তা নিশ্চিত না।'
'আচ্ছা, কোনও ক্রিপ্টিড্, বা তোমার কথায় 'মিস্আইডেন্টিফিকেশন'-ও হতে পারে।'
'হুম্, একদম পারে। তবে খট্কা লাগছে এই জায়গায় যে বডিগুলোকে মিউটিলেট্ করা হয়েছে।'
'ওহ বাবা! এটা ক্যাট্ল বা হিউম্যান মিউটিলেশন-এর কেস্ নাকি?'
'এই অ্যাঙ্গেল্টাও আছে বৈকী! বিকৃত, ক্ষত-বিক্ষত পশু আর মানুষের দেহ...'
'তার মধ্যে গাছ কোথা থেকে চলে এল!'
'কী জানি দুটো ব্যাপার রিলেটেড্ কি না...'
'দেখো, বিদেশে এরম মিউটিলেশন-এর কেস্গুলো তো আনাইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অব্জেক্ট-এর সাথে জড়িত বলে আই-উইটনেস্রা বলে থাকে।'
'এসব ক্ষেত্রে প্রতাখ্যদর্শীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়।'
'তুমি কিন্তু আমার সাথে থেকে-থেকে আগের থেকে ভালো বাংলা বালো এখন!'
সত্যর এই কথায় ওরা দু-জনেই একটু হাসলো; তারপর সত্য বললো, 'তবে এই ট্রি অ্যাটাক্ আর মিউটিলেশন-এর ব্যাপার দুটো রিলেটেড কিনা সেটাই আমাদের আগে জানতে হবে বুঝলে!'
'জায়গাটা প্যারানরমাল হটস্পট হলে আনরিলেটেড হওয়া অসম্ভব না।'
'সেটাও ঠিক... প্যারানরমাল আক্টিভিটি হটস্পট-গুলোতে তো বিভিন্ন ধরণের কান্ড-কারখানা হয় বলে শোনা যায়!'
'পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তো এই হটস্পট পাওয়াও গেছে যেখানে বিভিন্ন রকমের প্যারানরমাল আক্টিভিটি-র প্রমাণ পাওয়া যায়, তার আভাস পাওয়া যায়, বা তা লক্ষ্য করা যায়!'
হ্যাঁ, বৈচিত্রময় সব ঘটনা ঘটে সেখানে- কখনো ভূত, আবার কখনো ইউ.এফ.ও...'
'কখনো ইয়েতি, তো কখনো ওই মিউটিলেশন- সব একই জায়গায়- ওই হটস্পটের মধ্যেই!'
'বিশেষ করে এই ইউ.এফ.ও. আর মিউটিলেশন সংক্রান্ত হটস্পট মার্কিন মুলুকের অনেক প্রদেশেই পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।'
'আর ইংল্যান্ড-কানাডার মতো দেশেও।'
'ইয়াপ, ওগুলোও! যতদূর মনে পড়ছে, দক্ষিন আমেরিকাতেও।'
'অস্ট্রেলিয়াতেও এক-আধটা আছে বোধ হয়।'
সত্য মনে করার চেষ্টা করলো; সিম্মি সেই ফাঁকে বললো, 'আচ্ছা বলো, মিউটিলেশন-গুলো কি সার্জিকাল প্রিসিশন-এ করা? সুক্ষ কাজ, নাকি এলোমেলো?'
'সেটা জানি না। ওখানে গিয়ে রিপোর্ট দেখে জানতে হবে।'
'ওকে, তো এবার কোন দিকে যাচ্ছি আমরা?'
'এবার উত্তর প্রদেশের উত্তর ভাগে যাওয়া হচ্ছে।'
'ন্যাশনাল পার্ক বা স্যাংচুয়ারি এলাকা?'
'না, তবে তাও রিমোট জায়গা হবে বলেই মনে হয়।'
'মিউটিলেশন প্রসঙ্গে ফিরি– এর কারণ কী?'
'দেখো, কিছু কেসেস্ ন্যাচারাল- তার সাদামাটা ব্যাখ্যা আছে।'
'না, রেশনাল এক্সপ্লানেশান আছে যেগুলোর, সেগুলোর কথা বলছিনা।'
'কিছু অব্যাখ্যাত- আনএক্সপ্লেনড্...'
'ওই আনএক্সপ্লেনড্ কেস্গুলোর কথাই বলছি।'
'এটারও কোনও কনভিন্সিং ব্যাখ্যা নেই এখনও– কেউ বলে এলিয়েনরা নাকি অরগ্যান হারভেস্টিং করে বা ওদের এক্সপেরিমেন্ট-এ কাজে লাগায়।'
'একবার একটা কেস্ হয়েছিল না আমেরিকায়– একজন দেখেছিল বলে ক্লেম করেছিল, মরুভূমিতে।'
'হুম্, একজনকে ইউ.এফ.ও. অপহরণ করে ওই লোকটার চোখের সামনে। তার দু'দিন বাদে অ্যাব্ডাক্টেড লোকটার বডি পাওয়া যায়– মিউটিলেটেড, সাম অর্গ্যানস্ রিমুভ্ড।'
'হুম্, ভেরি স্ট্রেঞ্জ ইন্ডিড, ইফ ট্রু!'
'এছাড়া বহু লোক তো ক্লেম করেই যে তাদের এলিয়েনরা নিয়ে গেছিল নিজেদের স্পেস্শিপে। এর কিছু-কিছু হয়তো পাবলিসিটি স্টান্ট্!'
'বাকি যদি অথেন্টিক্ও হয়, তাও গাছ-ভূত এখানে কোথা থেকে আসছে?'
সিম্মি কথাগুলো এমনভাবে বলল যে সত্য হেসে উঠল। সিম্মিও হাসল।
সিম্মি আবার কথা বলতে শুরু করল, 'এলিয়েনরা যে তাদের ওপর এক্সপেরিমেন্ট করেছে, এটা অনেকে দাবি করেছে। তাই না?'
'হ্যাঁ, আর এটা ওই সার্জিকাল প্রিসিশন-এ অ্যানিম্যাল্ মিউটিলেশন, অর্গ্যান হার্ভেস্টিং আর এলিয়েন এক্সপেরিমেন্ট কে এক সুতোয় গাঁথে।'
'এই যে, অর্গান হার্ভেস্টিং, এলিয়েন, লিজার্ড ম্যান বা সরীসৃপ মানব, অমুক-তমুক, এই কথাগুলো বাজারে ভাসছে, এগুলো কি শুধুই কোনো উর্বর মস্তিস্কের কল্পনা, বড়-সড় গুল, বা কোনো পাগলের খেয়াল, নাকি এর পিছনে সামান্য হলেও হলেও সত্যতা আছে?'
'ইউ.এফ.ও. নিয়ে যারা গোপন তথ্য জানে বলে দাবি করে, বা সেগুলো ফাঁস করে, তাদের সব কথা সত্যি কিনা জানিনা...'
'ইউ.এফ.ও. হুইসেলব্লোয়াররা?'
সত্য ঘাড় নেড়ে বললো, 'পশ্চিমে ওই নামেই ডাকা হয় তাদের।' তারপর একটু চুপ করে থেকে আবার মুখ খুললো ও, 'তবে সবটা না হলেও, যা রটে তার কিছু তো সত্যি বটে!'
'দেয়ার ইস নো স্মোক উইদাউট ফায়ার।'
'সাহি পাকড়ে। হেডকোয়ার্টারে যা ডেটা রয়েছে, সেগুলো ঘেঁটেও আমার তা-ই মনে হয়েছে!'
'আচ্ছা আমরা যেখানে যাবো ওটা কি ট্রাইবাল্ বেল্ট্? এনি আইডিয়া?'
'না মনে হয়। এমনি গ্রাম। উপজাতি গ্রাম নয়।'
'আচ্ছা, ট্রাইবাল্ হলে টোটেম এর কথা ভাবছিলাম, বা কোনও টোটেমিক এন্টিটি।'
'ট্রাইবাল্ এলাকা না হলেও গ্রামদেবতা বা লোকদেবতা থাকতেই পারে। কেন?'
'ওই যে গাছ-ভূত!'
'ওহ আচ্ছা।'
'প্যাক করা শুরু করি সব।'
'হ্যাঁ, পরশু বেরোব। উত্তরাখণ্ড-এর সীমানা থেকে খুব দূর না।'
'ওহ, হিমালয়ান বেল্ট্?'
'না ঠিক তা না। প্রপার হিমালয় দূর আছে। তবে ওই আর কী...'
'নেপাল বর্ডার-এ ইউ.এফ.ও. আসতে পারলে আর এখানেই বা আসতে অসুবিধা কোথায়!''
'এটাও নেপাল বর্ডারই, বুঝলে!'
'ওহ তাহলে তো কেস্ জমে গেছে বস্!'
'সেই। হিমালয়-এর কাছাকাছি ইউ.এফ.ও. অ্যাক্টিভিটি বেশি। আর অ্যাকচুয়াল হিমালয় তো একদম হটস্পট!'
'ইন্ডিয়া তে ইউ.এফ.ও. এনকাউন্টার বেড়ে গেছে সাম্প্রতিককালে।'
'বা আজকাল রিপোর্ট হচ্ছে বেশি। আগে রিপোর্ট হত কম হয়তো।'
'ইয়ে ভি হো সাক্তা হ্যায়। সবার ফোন-এ ভিডিও ক্যামেরা থাকাতেও সুবিধা হয়েছে।'
'যা বলেছ!'
'কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সত্য আবার বলল, 'একটা ড্রোন নেব কিনা ভাবছি। এটা যদিও ময়দানি এলাকা, যা দেখলাম। চম্পারণ-এর জঙ্গল নয়।'
'ময়দান হলে তো কভার নেওয়া মুশকিল। বাই দ্য ওয়ে, বিল্লুর কেস্টা মনে আছে?'
'কোন কেস্টা? ও তো অনেক কিছুই বলে।'
'ওই যে, ওই যেটা বলেছিল সেটাও ময়দানি এলাকাই ছিল। দৈত্য, দৈত্য!'
'ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ, সেই দমনপুরের আলেয়া! খুব আগ্রহ ছিল একবার ওখানে যাওয়ার।'
২
রওনা হওয়ার আগে সত্য হেডকোয়ার্টার থেকে ঘুরে এলো- সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র নিয়ে নিলো ও; এর পাশাপাশি ডেটাবেস-টা ঘেঁটে সত্য দেখে নিলো যে ভারতের অন্য কোথাও কোনো একইরকম কেস রিপোর্টেড হয়েছে কিনা। কিন্তু কোনো কাজের রেকর্ড অন্ততঃ সেখান থেকে পাওয়া গেল না।
শ্রবস্তি জেলার ভিঙ্গা শহর থেকে আরও অনেকটা উত্তরে তেরাই অঞ্চলে অবস্থিত ছোট টাউন কৌশলপুর। সেখান থেকেই যেতে হয় নেপাল বর্ডার-ঘেঁষা গ্রামগুলোতে– এগুলো সেই গ্রাম যেখানে মিউটিলেশনের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এর মধ্যেই একটা গ্রামে একজন প্রত্যক্ষদর্শীরও বাড়ি। সেরম কোনও হোটেল না থাকায় বাধ্য হয়ে সত্যরা সার্কিট হাউসে উঠল। যদিও খাতায়-কলমে ওরা দু'জন সরকারি কর্মচারী নয়, তাও রহস্যময়ভাবে সার্কিট হাউসে থাকার অনুমতি পেয়ে গেল ওরা। যাক গে, থাক সে কথা।
টাউন-এর পুলিশ স্টেশনের ও.সি.-র সাথে কথা বলে সত্য যা জানতে পারল তা হল এই যে– মিউটিলেশন-এর কয়েকটা কেস্ মানুষের কীর্তি। তবে বাকিগুলোর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যে মানুষরা মারা গেছে তাদের অটোপ্সি রিপোর্ট দেখল সত্য। কয়েকটা যেমন খুনের কেস্, বাকিগুলোর কারণ অজ্ঞাত। ক্রাইম সিনের ছবিও ছিল কিছু- সেগুলো ও দেখলো সত্য।
ওদিকে পুলিশের একজন লোক সাদা পোশাকে সিম্মির সাথে গেল ভেটেরিনারি হস্পিটালে। সেখানে সে সব রিপোর্টগুলো দেখার ব্যাবস্থা করে দিল। পুলিশের লোক সাথে থাকায় সিম্মির পুলিশের ডাক্তারের ভেগটাও খাটাতে অসুবিধা হল না– সেটাই আপাতত তার নতুন পরিচয়। সিম্মি হস্পিটালে রাখা মিউটিলেশনের শিকার হওয়া জন্তুদের রিপোর্টগুলো দেখে তার একটা করে কপিও সংগ্রহ করে নিলো। সত্যও তাই করল। দু'জনেই একটা জিনিস লক্ষ্য করল– গত কিছু বছরে ঘটনাগুলো বেড়ে গেছে।
সেদিন রাতে ওরা অটোপ্সি রিপোর্টগুলো খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পড়ল আর তার থেকে কিছু-কিছু পয়েন্ট নোট করে রাখল। এ-দিনটা মিউটিলেশন নিয়ে কাটল। পরের দিন গাছ-ভূতের ব্যাপারটা ধরবে ওরা। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে দেখা করার কথা কাল– পুলিশের সাথে সেরমই কথা হয়ে আছে। কাল পাশের গ্রামগুলো স্ক্যান করতে হবে। গ্রামের বাকিদের সাথেও একটু কথা-বার্তা বলার ইচ্ছা আছে ওদের।
৩
পরদিন প্রথম যে গ্রামটায় গেল সিম্মিরা, সেটা হল প্রত্যক্ষদর্শীর গ্রাম– মানে গাছ ভূতের আক্রমণ থেকে যে অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছিল বলে দাবি করেছে, তার গ্রাম। কালকের ওই সাদা পোশাকের পুলিশের লোকটি আজও ছিল ওদের সাথে। গ্রামের লোকদের সাথে সত্য-সিম্মির পরিচয় করিয়ে দিয়ে ফিরে গেল সে।
প্রত্যক্ষদর্শী লোকটির নাম মঙ্গল; পেশায় ক্ষেত-মজুর। আতঙ্ক তার তখনও কাটেনি, আর তার সাথে কথা বলে স্বাভাবিকভাবেই যাবতীয় সব তথ্য বিস্তারিতভাবে নোট করে নিল ওরা। অন্ধকার রাতে চাঁদ আর লন্ঠনের আলোতে ওই তথাকথিত গাছ-ভূতকে যেটুকু দেখেছে লোকটা, তার ওপর ভিত্তি করে গ্রামের একটা বাচ্চা একটা ছবিও এঁকেছে সেই ভূতের। সেইটা দেখার পর সেটার একটা ছবি তুলে নিল সিম্মি। গ্রামের আরও কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলল ওরা, তবে বিশেষ লাভ হল না। ওদের এটা মনে হল যে সবাই একটু ভয় পেয়ে আছে, হয়তো ওই গাছ-ভূতের জন্যই। যাক গে, কাজ সেরে সত্য আর সিম্মি বিদায় নিল। গ্রাম থেকে বাস-রাস্তাও অনেকটা দূর। সেই বাস-রাস্তার কিছুটা আবার কাঁচা; টাউনের দিকের ভাগটা অবশ্য পিচের। তবে এই রাস্তায় বাস সার্ভিস ভাল নয়।
রাস্তা অবধি যাওয়ার পথে সত্য বলে উঠল, 'টোটেম বা লোকদেবতার প্রতি বিশ্বাসের কথা বলেছিলে না তুমি?'
'হ্যাঁ হ্যাঁ, আর সেই বিশ্বাস থেকে যদি মিসআইডেন্টিফিকেশন হয় আর কী!'
'তা হতে পারে, কারণ লোকদেবতা হোক বা অপদেবতা, অনেক সময় এইসব বিশ্বাস মানুষের ভীতি থেকেও তৈরি হয়। আর কোনও অঘটন ঘটলে আমরা হিউম্যানরা সেই ভীতিকে তার সাথে মিলিয়ে ফেলি।'
'ইয়েস, দ্যাট্স দ্য পয়েন্ট!'
'এখানের কালচারের ব্যাপারেও একটু দেখতে হবে নেট থেকে। এমনি কোনও মন্দির-টন্দির এই মুহূর্তে চোখে পড়ছে না।'
'কাল পাশের গ্রামটায় যাব, বুঝলে! দেখি লোকাল কালচারের ব্যাপারে সলিড কিছু জানা যায় কি না।'
'ওকে, দুপুরে তাহলে যেখানে গাছ-ভূতের সাইটিং-টা হয়েছে বলল, সেখানটায় যাব।'
সিম্মি মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
'অদ্ভুত কেস্! কেস্ কি একটাই নাকি দুটো! নাকি কোনও কেস্ই নেই?' সিম্মি এইসব ভাবতে-ভাবতে সত্যর সাথে লাঞ্চের জন্য ফিরে এলো।
৪
লাঞ্চ সেরে আবার ফিরে এলো ওরা। এবার এলো শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে। এখানে বিরাট খোলা ময়দান– দুটো গ্রামের মাঝে স্বমহিমায় তরাই! এই বিরাট মাঠ ধরে উত্তরে এগোলেই নেপাল। মঙ্গল এখান দিয়েই ফিরছিল সেই রাতে। তখনই সে ভূতের কবলে পড়ে বলে তার দাবি।
'সেই তেপান্তরের মাঠ– বিল্লু যেমনটা বলেছিল ওর গল্পে!' সিম্মি বলে উঠল।
'হ্যাঁ, দেখো কতদূর গেছে বোঝা যাচ্ছে না, সত্যি!'
মাঠ পরিদর্শন করতে-করতে ওরা পশ্চিম দিকে এগোতে লাগল। একটু এগোতেই একটা ঝোপ মতো চোখে পড়ল। আর একটু এগোতেই বোঝা গেল ওটা ঝোপ না, একটা বাগান মতো। এই বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে এই জায়গায় দুম্ করে কিছু গাছ আর কিছু ঝোপ মিলে একটা বাগান তৈরি করেছে। মঙ্গলের কথা অনুযায়ী এখানেই ওকে গাছ-ভূত ধরার চেষ্টা করেছিল; তাড়া করেছিল– সম্ভবত ওই বাগান থেকেই বেরোয় ভূতটা। সত্য বাগানে ঢুকতে যাচ্ছিল– সিম্মি ওর কাঁধে হাত দিয়ে ওকে আটকে বলল, 'সাবধানে ঢোকো।'
'আশা করছি চিন্তা নেই কারণ এখনও রাত হয়নি।'
'তাও...'
'ওকে সোলজার, ইউ ওয়াচ মাই ব্যাক অ্যান্ড আই উইল ওয়াচ ইওরস।'
বাগানের মধ্যে অবশ্য অস্বাভাবিক কিছুই পেল না ওরা। এমনকি, মঙ্গলের বর্ণনা অনুযায়ী ভুতুড়ে গাছটা যেরম ছিল, সেরম কোনও গাছই ওদের চোখে পড়ল না ওখানে।
বাগান থেকে বেরিয়ে এসে সত্য বলল, 'এমন কী হতে পারে যে গাছটা নিশাচর!'
'নিশাচর?'
'নক্টারনাল।'
'ওহো, আচ্ছা আচ্ছা। মানে নক্টারনাল কার্নিভোরাস্ ট্রি?'
'হ্যাঁ, কিন্তু মঙ্গলের কথা যদি ঠিক হয় তাহলে ধরতে হয় যে এটাই ফার্স্ট এনকাউন্টার। তবে, উম্ম্, গাছটা হঠাৎ এলো কোথা থেকে?'
'মিউটেন্ট স্পিশিস হতে পারে কি?'
'মিউটেন্ট হলেও কীভাবে হল মিউটেশন-টা?'
'অথবা...' আকাশের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো সিম্মি।
'হ্যাঁ, ওই সম্ভাবনাটা তো থাকছেই।'
'অ্যানিম্যাল মিউটিলেশন-গুলোও যখন এই মাঠেই হয়েছে, তখন ওই রাক্ষুসে গাছ বা এলিয়েন যাই হোক ওটা, সেটা এই মাঠেই শিকার করে। এটাই হয়তো ওর হান্টিং গ্রাউন্ড!'
'ও... ওই কেসগুলোও রাতেই হয়েছে যা পড়লাম আর শুনলাম।'
'হুম্..., রাতে আপাতত এদিকে কেউ আসছে না তো?'
'জিজ্ঞেস করা হয়নি ও.সি-কে। তবে গ্রামে কথা তাড়াতাড়ি ছড়ায়। তাই মনে হয় না...'
'এখানে রাতে আসতে হবে আমাদের।'
'হ্যাঁ, প্রস্তুতি নিয়ে আসব। দেখি, কাল মিউটিলেশন নিয়ে দুই গ্রামেই একটু কথা বলব আমরা।'
'আর গাছ ভূতটাও খুঁটিয়ে...'
'হুম্ম্…'
'রেকর্ড অনুযায়ী এটাই ফার্স্ট সাইটিং। কিন্তু সেটা তো নাও হতে পারে।'
'ঠিক। ঠিকই।'
'তুমি একটু ও.সি-কে বলো যাতে লোককে বারণ করে দেয় এদিকে আসতে।'
'ইয়েস, ঠিক বলেছ। অবশ্যই।'
আলো কমে আসছিল। তাই আসতে-আসতে সার্কিট হাউসে ফেরার জন্য রওনা হল ওরা। বাস-রাস্তা অবধি আসার পথে সত্য বলল, 'একটা ব্যাপার ভাবছি– মিউটিলেশন-গুলো যেভাবে হয়েছে তাতে কোনও ক্রিপ্টিড বা মিউটেন্ট-এর কাজ বলে মনে হয় না। এ যেন পাকা হাতের কাজ! কোনো জন্তু-জানোয়ারের কম্ম নয়!'
'হ্যাঁ, ওই খুবলে খাওয়া বা আঁচড়ে এলোপাথাড়িভাবে মাংস ছিঁড়ে নেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।'
'কোনও মিউটেন্ট বা ক্রিপ্টিড হলে কি এরম সুনিপুনভাবে কাজটা করতে পারে? আমার তো জানা নেই অন্তত সেরম কেস্!'
'ওহ, ভালো কথা, কোনও প মার্ক বা ওই টাইপের কিছু কি পাওয়া গেছে?'
'নাহ্, যায়নি। আর এই অঞ্চলে সেরম হিংস্র প্রাণীও নেই।'
'পুলিশ কি দেখেছে ঠিক করে?'
'জানি না। হয়তো দেখেনি। পুলিশকে বিশ্বাস নেই; তবে রিপোর্টে অন্তত কোনও উল্লেখ নেই ওরম কিছুর।'
'আমাদের তো রিপোর্টই সম্বল!' একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল সিম্মি।
এরম সব কথা হচ্ছিল। তারপর বাস-রাস্তা দেখা গেল। সেদিকে এগোতে-এগোতে সিম্মি বলল, 'বিদেশে যেমন কিছু ক্ষেত্রে স্যাটানিক কাল্ট-গুলো জড়িত ছিল এইসব মিউটিলেশন-গুলোর পিছনে। তাই না?'
'হুম্ হুম্, কিছু-কিছু ক্ষেত্রে।'
'তো নেপালের দিকে তো বলি প্রথা আছে; তন্ত্র চর্চাও হয় তো। এখানের ব্যাপার অবশ্য জানি না।'
'তুমি কি ইমপ্লাই করছ যে...'
'এগুলোর কিছু-কিছু বা সবকটা তান্ত্রিক বা কাপালিকদের অর্গ্যান বা ব্লাড অফারিং-এর কেস্ কিনা। তান্ত্রিক ক্রিয়ায় অনেক সময়ে রক্ত বা দেহাংশ দেয় না?'
'ওই জাতীয় কোনো ক্রিয়া..., মানে রিচুয়াল মার্ডার হলে এত শার্প কাজ হত কি? সেটাও প্রশ্ন!'
'কী জানি!'
'ও.সি.-কে একবার জিজ্ঞেস করব।'
'এখন ফিরে যাবে?'
'হ্যাঁ, এখনই ফিরব তো। কেন?'
'হ্যাঁ হ্যাঁ, না, বলছি যে এখন ফিরে থানায় যাবে?'
'ওহ হ্যাঁ, দেখি যদি ও.সি. সাহেবকে পাওয়া যায়।'
'এক যদি ঝাঁপ ফেলে চলে না গিয়ে থাকেন।'
'হুম্, কাল কত তাড়াতাড়ি সব শুন্শান্ হয়ে গেছিল। সন্ধ্যা নামতেই যেন কেমন শ্মশানের মতো!'
'স্থানীয় কালচারের ব্যাপারে যদি কিছু আলো দেখাতে পারেন উনি!' একটু আনমনা হয়ে কথাগুলো বলল সিম্মি।
'উম্ম্, আমিও সেটাই ভাবছিলাম আজ খাওয়ার সময়ে।'
বাস-রাস্তার কাছে এসে ওরা দেখল যে শেষ বাসের জন্য আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। তাই কাজের কথা আলোচনা করা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখল ওরা। বাস এল কিছুক্ষণ পর। দিনের শেষ বাস ধরে কৌশলপুরে ফিরে এল ওরা।
৫
'সত্য থানা থেকে ফেরার পর সিম্মি বলল, 'আমি একটু ভারী খেয়েছি এসে। রাতে সেরম কিছু খাবো না। তুমি ডিনার করে নিও।'
'ওকে ডার্লিং! আগে ফ্রেশ হয়ে নি একটু।'
ও ফ্রেশ হয়ে আসার পর সিম্মি জিজ্ঞেস করল, 'পেলে ওনাকে?'
'হ্যাঁ, সৌভাগ্যক্রমে!'
'আমি একটা কথা ভাবলাম– যে জন্তুরা মারা গেছে, তারা কি ফার্ম অ্যানিম্যালস্ না স্ট্রে অ্যানিম্যালাস্?'
'পোষা নয়, স্ট্রে বা হারিয়ে যাওয়া, পালিয়ে যাওয়া অ্যানিম্যালস্। ও.সি. কথায়-কথায় তাই বললেন। তাও কাল একবার গ্রামের মানুষদের জিজ্ঞেস করব।'
'ওকে, তাহলে হয়তো জন্তুগুলো ওই মাঠে ঘুরছিল রাতের বেলায়।'
'কোয়াইট্ পসিব্ল! আচ্ছা যাই, হেব্বি খিদে পেয়েছে!'
৬
সত্য খেয়ে আসার পর দেখল সিম্মি ডায়েট-বিস্কুট খাচ্ছে। সত্যকে ঢুকতে দেখে সিম্মি বসতে বলল ওকে। তারপর জিজ্ঞেস করল, 'এবার বলো, এখানের কালচারের ব্যাপারে কোনও সূত্র পেলে?'
'হুম্, তবে ব্যাপার হল এই যে, উনি বললেন যে এখানে ওই টুকটাক তন্ত্র বা পশু বলির ব্যাপার মাঝে-সাঝে হলেও সেটা মূল স্রোতের বাইরে, বুঝলে।'
'মানে এখানে পশু বলি কমন নয়।'
'হ্যাঁ, খুব কমই হয়ে থাকে।'
'বিহারের চম্পারণের সেই থারুদের সাথে নেপালের থারুদের কালচারে মিল আছে। এখানে সেটা নেই তাহলে।'
'হয়তো নেই। বর্ডারের ওদিকের কালচারের কথা জানি না অবশ্য। জিজ্ঞেস করিনি।'
'দেখি নেট-এ যদি কিছু পাই।'
'তাও যেরম নিখুঁতভাবে অর্গ্যান-গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে বা বের করা হয়েছে, এটা কোনও কাপালিক বা জন্তু-জানোয়ারের কাজ নয়।'
'জানোয়ারের কাজ তো নয়ই। জন্তু-জানোয়াররা অনেক কিছুতে নিপুণ হলেও অন্তত কোনও স্ক্যাভেঞ্জার ওরম পরিপাটি করে মাংস খায় বলে তো জানি না।'
' স্ক্যাভেঞ্জার অথবা প্রেডেটর...'
'যে বা যা-ই করে থাকুক, অস্বাভাবিকরকম নিখুঁত কাজ তার, বা তাদের!'
'ওটাই ভাবাচ্ছে! মাংসাশী বা হিংস্র প্রাণী না হলে কি হতে পারে? মানুষ না ভিনগ্রহী, নাকি রাক্ষুসে গাছ?' কিছুটা মনে-মনেই প্রশ্নটা করলো সত্য।
'নাকি সম্পূর্ণ আলাদা কিছু...? আরও একটু কথা-বার্তা বলি। কাল আমি প্রথম গ্রামে যাই, তুমি দ্বিতীয়টায় যাও। নাকি?'
'না, ভাবছি একসাথেই দুটোতে যাই আমরা। কী বলো? তাহলে বেশি লোকের সাথে এক-একবারে ইন্টের্যাক্ট করে নেওয়া যাবে।'
'ওকে, কুল! যত বেশি ডেটা তত বেশি চান্স...।'
সিম্মির গালটা হঠাৎ টিপে দিল সত্য। সিম্মি হেসে বলল, 'হঠাৎ কী হল?'
'বাহবা দিলাম! তুমি এখন আমায় ছাড়াই চলতে পারো। হয়তো একদিন সুযোগ এসে যাবে একলা চলার।'
'ইয়েহ্ তো হোনা হি থা! সিনিয়র হয়ে গেলে আই উইল মিস্ ইউ, সত্য!'
'আচ্ছা আপাতত তো একসাথে থাকা যাক!' এই বলে দুষ্টু হেসে সত্য যোগ করল, 'আই মিন, একসাথে কাজ করা যাক।'
সিম্মিও মুচকি হাসল। তারপর চোখের ইশারায় কিছু কথা বলল ওরা। এরপর আবার কাজে ফিরল দু'জনে– বর্ডারের ওপারে নেপালের যে এলাকা তার কালচারের ব্যাপারে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে একটু পড়াশুনা করল ওরা। দুটো এলাকার মধ্যে যে একটা সাংস্কৃতিক সামঞ্জস্য আছে, সেটা চোখে পড়ল ওদের।
সত্য বলল, 'নেপালের এই এলাকায় তন্ত্র বা বলি প্রথার অতো চল নেই দেখছি।'
'বর্ডারের ওপার থেকে কেউ এসেও কিছু করে যাবে না কজ্ অ্যানিম্যাল স্যাক্রিফাইসের অ্যাংগলটা খাটছে না ইন দ্যাট কেস্।'
'রিচুয়াল মার্ডার যে নয় এগুলো এটা শুরু থেকেই আমার মনে হচ্ছে! তাই পশু বলি হবেনা হয়তো... উমম, এক যদি না...'
'এক যদি না কি?'
'লোকাল কালচারে ব্যাপারটা নেই ঠিকই! কিন্তু কেউ তো আলাদা করেও করতে পারে- মানে ধরো কোনো তান্ত্রিক বা ওরম কেউ...'
'হুম, দ্যাটস আ পসিবিলিটি!'
'বিক্ষিপ্ত কেস আর কি!'
'কি ক্ষিপ্ত?'
'এক্সেপশন। লোকাল কালচারের এক্সেপশন তো থাকতেই পারে- সব জায়গায়ই আছে।'
'ওকে! এই থিওরিটা মাথায় রইলো। আর যদি সেটা বাদ দিয়ে দেখি তাহলে নেপালের ওই অংশে কৌশলপুরের লোকাল কালচারটাই ওদেরও কালচার।'
'ইয়াহ্, এক জায়গায় লিখেছিল ওদের আর এদের কালচারাল অ্যাফিনিটির কথা। কোন জায়গাটায় যেন পড়লাম।' বলে সত্য খুঁজতে লাগল লাইনটা। তারপর লাইনটা পেতেই সিম্মিকে দেখিয়ে বলল, 'এই যে এই সাইট্টার সেকেন্ড লাস্ট প্যারা– ওপারের তরাই অঞ্চলের কালচারের মতোই যে এদিকের কালচার, মানে এই ইন্ডিয়ার সাইড-এর এলাকাগুলোর কালচার, সেটা লিখেছে। আমাদের ওখানকার বসিরহাট আর বাংলাদেশের খুলনার মতো!'
'লাহৌর আর অমৃতসরের মতোও!'
'আচ্ছা!'
'পরোক্ষভাবেও এখান থেকে এইটা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে বলি-টলি হয় না সেরম এই বেল্ট্টায়।'
'বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব হতে পারে এটা। শ্রবস্তি জেলার মধ্যে পড়ছে তো। তাই হয়তো বলি-টলি হয়না।'
নিশুতি রাতে শোয়ার পর সিম্মি খোলা জানালা দিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিল। সত্যও সিম্মির গায়ের ওপর একটা হাত রেখে আকাশটাই দেখছিল। যদিও সেই আকাশে আস্বাভাবিক কিছু ছিল না– অন্তত ও যতক্ষণ তাকিয়েছিল। সিম্মিও তার হাতটা ধরে রেখেছিল। এটাই ওদের স্টার গেজিং! ওই রহস্যময় কালো আকাশ অন্বেষণ করাতেই যেন লুকিয়ে আছে ওদের আনন্দ, ওদের শান্তি! একসময়ে দু'জনে হাত-ধরাধরি করেই ঘুমিয়ে পড়ল।
৭
পরের দিন ওরা গেল দ্বিতীয় গ্রামটায়– সেখানেও সেই সাদা পোশাকের পুলিশটিই ওদের নিয়ে গেল, আর গ্রামের মোড়লদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ফিরে এলো। কয়েকজন প্রথমে একটু গোঁ-গোঁ করলেও ওপর থেকে চাপ পড়তে পারে শুনে তারা চুপ করে গেল। ওদের এখানে আসার উদ্দেশ্য এখান থেকে অ্যানিম্যাল মিউটিলেশনের ব্যাপারে জানা। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আশায় এসেছিল ওরা। কিন্তু গ্রামের লোকদের সাথে কথা বলে বিশেষ সুবিধা হল না। তাই ন্তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাহত হলো ওরা- বিশেষ করে যখন ওরা দেখল যে গ্রামের লোকরা মুখে কুলুপ এঁটেছে– কিছু জানা থাকলেও, তাদের হাব-ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে কোনও অজ্ঞাত কারণে তারা সেটা প্রকাশ করতে চায় না!
হতাশ হয়ে বাস-রাস্তার দিকে ফেরার পথে সত্য বলল, 'একেবারে খালি হাতে ফিরতে হবে জানতাম না!'
'সবাই কেমন যেন ডরে রয়েছে!'
'দেবতার অভিশাপের ভয়ে কি?'
'দেবতা না অপদেবতা?'
'ওই হলো আর কি!'
'সেটাই চিন্তা করছি।'
'দেবতার অভিশাপ হলে ঠিক আছে। দুষ্টচক্র হলেই মুস্কিল।'
যেখানে বাস এসে দাঁড়াবে, সেখানে একজন লোক চাদর মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার কাছাকাছি এসে যাওয়ায় ওরা তখনকার মতো চুপ করে গেল।
তার পাশে গিয়ে বাসের অপেক্ষায় ওরা দাঁড়াতেই চাদর মুড়ি দেওয়া লোকটা আঞ্চলিক হিন্দিতে বলে উঠল, 'আপনারা শহর থেকে এসেছেন তো মাঠের ভূতের ব্যাপারটার কিনারা করতে?'
একটু চমকে উঠল ওরা দু'জনেই। লোকটি বলে চলল, 'ভয় পাবেন না। আমি আপনাদের ক্ষতি করব না, সাহায্যই করব।'
সত্য জিজ্ঞেস করল, 'কিন্তু আপনি জানলেন কী করে?'
'আমি কাল ওই গ্রামের একজনের থেকে শুনলাম। আপনারা গেছিলেন কাল ওদিকটায়।'
সত্য আর সিম্মি একবার একে-অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। ওরা কিছু বলার আগে লোকটি বলল, 'তা এখন কতদূর যাচ্ছেন আপনারা?'
'কেন বলুন তো?' কৌতূহলের সাথে বলল সিম্মি।
চট করে একটু এদিক-ওদিক দেখে নিয়ে লোকটি বলল, 'আসলে আমি আপনাদের যা বলতে চাই, তা এখান থেকে দূরে গিয়ে বলাই শ্রেয়।'
'আমরা এখন পাশের গ্রামে যাব।' সত্য বলল।
'ঠিক আছে, চলুন। ওখানে পৌঁছে আপনারা গ্রামে ঢোকার আগে আমি আপনাদের কিছু কথা বলতে চাই, ওই মাঠের ভূতের ব্যাপারে।'
সত্য বাসে ওঠার আগে লোকটিকে বলে দিল যাতে সেই বাসে ওঠার পর লোকটি ওদের থেকে আলাদা দাঁড়ায় বা বসে, যাতে অন্য লোকজন সন্দেহ না করে যে তারা একসাথে আছে।
বাস এলো; ওরা তিনজনে উঠল। রাস্তার একদিকে ক্ষেত আর একদিকে সেই দিগন্ত-বিস্তৃত মাঠ। সেই রাস্তা ধরেই হেলতে-দুলতে বাস এগিয়ে চলল।
বাস থেকে নামার পর বড় রাস্তা থেকে একটু দূরে একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়িয়ে কথা-বার্তা শুরু করল ওরা।
'আপনাদের নিশ্চয়ই ওরা কিছু বলেনি!'
'কারা? আপনার গ্রামের লোকেরা? নাহ্!' সত্য বলল।
'জানতাম আমি। ভূত ওরা দেখেছে এক-আধ জন। সবাই জানেও সেটা মোটামুটি। কিন্তু ওরা কিছু বলবে না।'
'কেন?' একটু বিরক্ত হয়েই বলে উঠল সিম্মি।
'ওরা ভয় পায়! ভাবে অমঙ্গল হবে, ক্ষতি হবে।'
'হুম্, আমাদেরও তাই মনে হয়েছে।' সিম্মি বলল।
'যাক গে!' বলে সত্যের দিকে ফিরে লোকটি বলল, 'আমার নাম গোপাল; আমি দুধ বেচি, বাবু।'
সত্য আর্জি করল, 'তাহলে এবার বলুন গোপালজি...'
এরপর লোকটি যা বলতে শুরু করল তা শুনে নিজেদের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না সিম্মিরা; শুধু হাঁ করে শুনে চলল।
'আমি ছোট ছিলাম। সেই ৩০-৩৫ বছর আগের কথা ধরুন। আমায় তখন কেউ বিশ্বাস করেনি। তবে পরে যখন আরও ঘটনা ঘটল, তখন করল সবাই!'
সত্য বলল, 'তারপরে, মানে আপনার আগে এরম কিছু হয়নি এখানে?'
'আমার অন্তত জানা নেই।' বললেন গোপালজি।
'আচ্ছা, ঠিক কী হয়েছিল আপনার সাথে?' জিজ্ঞেস করল সত্য।
'হ্যাঁ, তো আমাদের একটা গরু পাওয়া যাচ্ছিল না– কোথ্থাও না! কোথায় গেছিল কে জানে! সেই রাতে আমরা ওই অভিশপ্ত মাঠটায় গেলাম গরুটা খুঁজতে। আমি আর বাবা। তখন কে জানত...!'
সিম্মি নিজের অজান্তেই বলে ফেলল, 'তারপর?'
'তখন ওই মাঠটার বদনাম ছিল না। তা গরুটা ফিরল, কিন্তু আমার বাবা আর ফিরল না। আজও বলতে গেলে কীরম যেন লাগে– ওই মাঠটার অনেকটা ভেতরে গেলে দেখবেন একটা বাগান পড়বে। খুঁজতে-খুঁজতে ওই বাগানটার কাছে পৌঁছতেই হঠাৎ ওখান থেকে বেরিয়ে এল একটা বিরাট বড় পোকা– দানবাকৃতি একটা পোকা।'
'তাও কত বড় হবে?' কৌতূহলী চোখে জিজ্ঞেস করল সত্য।
'এই ধরুন দো-তলা বাড়ি সমান!'
'এত বড় পোকা?' সিম্মি একটু জোরে বলে উঠল।
'হ্যাঁ!'
'আচ্ছা পোকাটার একটা ডেস্ক্রিপ্শন, ইয়ে মানে বর্ণনা দিতে পারবেন?'
সত্যর প্রশ্নে পোকাটার একটা বর্ণনা দিলেন গোপালজি– তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। আজও পোকাটার চেহারাটা পরিষ্কার মনে আছে ওনার! আজও আতঙ্কের সেই দৃশ্যগুলো তার স্মৃতিতে তাজা– চোখের সামনে একে-একে সব ভেসে উঠল আর উনি বলে চললেন পরপর। সিম্মি শুনতে-শুনতে সব নোট করে নিল প্যাডের পাতায়।
পোকার বর্ণনা দেওয়ার পর উনি বললেন, 'লম্বা আর শক্তিশালী পোকাটা আমার বাবাকে তার লম্বা হাত দিয়ে চেপে ধরল। আমি সব দেখলাম চোখের সামনে– চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলাম না! পোকাটা বাবাকে নিয়ে আকাশের দিকে উঠে গেল; বা উড়ে গেল বলাটাই ভালো। হঠাৎ আকাশে একটা উজ্জ্বল আলো দেখা গেল কিছুক্ষণের জন্য! ব্যাস, তারপর সব আগের মতো। কোথায় কী? জানেন, আজও বাবার সেই অসহায় আর্তচিৎকার কানে বাজে আমার!'
গোপালজির বাবার শেষ পরিণতি কী হয়েছিল সেটা ভালোভাবে অনুমান করতে পেরে চুপ করে ছিল সত্য আর সিম্মি। একটু থেমে গোপালজি ভাঙ্গা-ভাঙ্গা গলায় বললেন, 'কয়েকদিন পর বাবার দেহটা পাওয়া গেল মাঠের পূর্ব প্রান্তে, নেপালের দিকে। মাংস খুবলে খেয়েছিল ওই ভূতটা। উফ্ফ্...!'
'আমি..., আমরা এটা জেনে সত্যি খুব দুঃখিত, গোপালজি!' গোপালজির পিঠে একটা হাত রেখে বলল সত্য।
'আর কী হবে বলুন। অনেকদিন তো হল!' নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললেন গোপালজি।
'হ্যাঁ, সত্যি খারাপ লাগল জেনে আমাদের!' সহানুভূতির স্বরে এবার সিম্মি বলল।
গোপালজি বলে চললেন, 'আপনারা সবাইকে জিজ্ঞেস করেছেন এই ব্যাপারে। ভাবলাম আমায় বিশ্বাস করবেন; তাই এতদিন পর সেই দুঃখের রাতটার কথা মনে করছি! সে আমি ভুলতে পারিনি, আর ভুলবোও না!'
সিম্মি বলল, 'ব্যাপারটা জেনে আমাদেরও খারাপ লাগলো, গোপালজি!'
'আচ্ছা, আর আস্বাভাবিক কিছু দেখেছেন কখনও?' সত্য জিজ্ঞেস করল।
'নাহ্, তবে গ্রামের লোকরা আলো দেখেছে আকাশে।'
সত্য প্রশ্ন করল, 'ওই মাঠের ওপরের আকাশে?'
'হ্যাঁ, ওখানে।'
'আপনি যেরম আলো দেখেছিলেন সেরম?'
'বলতে পারব না, বাবু। তাদের মুখে শুনে তো সেরমই মনে হয়েছে!'
'আরও কোনও মানুষ কি এই পোকা ভূতের শিকার হয়েছে?' জিজ্ঞেস করল সত্য।
'খুব বেশি না হলেও কিছু মানুষ মারা গেছে– ওই খুবলে-খাওয়া দেহ পাওয়া গেছে কয়েকবার। জন্তু-জানোয়ার মরেছে অনেক। রাতে মাঠে গেলেই হল!'
এবার সিম্মি জিজ্ঞেস করল, 'ওদেরও খুবলে খায় ওই পোকা?'
এর উত্তরে মাথা নেড়ে হ্যাঁ-সূচক ভঙ্গিতে জবাব দিলেন গোপালজি। তারপর আরও কিছু কথা বলার পর উনি বললেন, 'আমায় একটু কাজে যেতে হবে। তাই অনুমতি নিচ্ছি এখন।'
'অনেক ধন্যবাদ! আপনার থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।' সত্য বলল।
'আর হ্যাঁ, আমি মুখ খুলেছি জানলে ওরা আমার পেছনে পড়ে যাবে– গ্রাম-ছাড়া করবে আমায়!' তাই আমার কথা কাউকে বলবেন না দয়া করে!'
'আপনি এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।' স্মিত হেসে বলল সত্য।
সিম্মি জিজ্ঞেস করল, 'কোনও দরকার হলে আপনাকে যোগাযোগ করব কীভাবে?'
'আপনারা কৌশলপুর বাস-স্ট্যান্ডের উল্টোদিকে মিঠাইয়ের দোকানটায় আমার খোঁজ করবেন। ওরা আমার খবর দিয়ে দেবে।'
৮
সত্যরা ওইদিন ব্যাক-প্যাক করে লাঞ্চ নিয়েই বেরিয়েছিল। গোপালজি চলে যাওয়ার পর মাটিতে লম্বা-করে শোওয়ানো একটা গাছের গুঁড়ির ওপর বসে লাঞ্চটা সেরে নিল ওরা। সারতে-সারতে কিছু কথা বলছিল দু'জনে ।
'বেচারা গোপালজি, ইস! বিরাট চাইল্ডহুড ট্রমা!'
'হুম্, বেঘোরে মারা গেলেন ওনার বাবা। ঘটনাটা শুনে মনে হল ওনার ক্লোজ্ এন্কাউন্টার হয়েছে!'
'আমিও বেরোতে পারছি না ঘটনাটা থেকে। এটাকে কি ক্লোজ্ এন্কাউন্টার অফ্ দ্য থার্ড কাইন্ড বলা চলে?'
'থার্ড কাইন্ড আর ফার্স্ট কাইন্ডের ব্লেন্ড মনে হচ্ছে। ওই পোকাটা কী, তার ওপর নির্ভর করছে।'
'ব্যাপারগুলো দুর্ভাগ্যজনক! এরমভাবেও মৃত্যু আসে, আসতে পারে!'
'সেই! কাল লাঞ্চটা আনলে আরও কিছুক্ষণ কথা বলা যেত ওই গ্রামে।' সত্য খাবার মুখে দিতে-দিতে বলল।
'যাক্, আজ সে চিন্তা নেই। তবে লাভ হত কি?'
'কেন বলো তো?'
'ওই গ্রামের লোকের হাবভাব দেখলে না?'
'হুম্!'
'কালকে গাছ-ভূতের ব্যাপারে আর কেউ কিছু বলল না এই গ্রামে। সত্যি কি আর কেউ কিছুই দেখেনি কোনওদিন?'
'তাহলে কি ওরাও ভয়েতেই চুপ করে আছে?'
'আজও চুপ থাকলে বুঝতে হবে সেটাই।'
'আচ্ছা শীতলা দেবীর নাম শুনেছ?' হঠাৎ বলে উঠল সত্য।
'না তো, উম্, মনে পড়ছে না! কে উনি?'
'মহামারীর দেবী। এমনিতে মহামারীর প্রকোপ থেকে বাঁচতে পুজো করাটা আমাদের স্টেটেও আন্কমন ছিল না।'
'মানে এই ক্ষেত্রেও মানুষের মনের ভয় থেকেই জন্ম!'
'এক্স্যাটলি! এই গ্রামগুলোয় যদিও ভয়টা আছে, কিন্তু গাছ-ভূত বা পোকা- ভূতের মন্দির-টন্দির নেই।'
'কিন্তু হতে কতক্ষণ?'
সত্য খাবার চিবোতে চিবোতে তাতে সায় দিল।
সিম্মি আরও বলল, 'আবার দ্যাখো, এখানে সবার বাড়িতেই মোটামুটি জন্তু-জানোয়ার আছে।'
'গবাদি পশুর কথা বলছ?'
'ক্যাট্ল, ক্যাট্ল।' একটু হেসে বলল সত্য।
'ওহ আচ্ছা, ইয়েস, ক্যাট্ল-এর কথা বলছি। আর জন্তু মানেই জীবিকা– গবাদি পশু আর কী। গ্রামবাসীরা হয়তো এটা ভাবছে যে অলক্ষণে কথা বললে যদি অবশগুন্ হয়! ওই গবাদি পশুদের যদি কোনোরকম ক্ষতি হয়...'
'আবার এটাও ঠিক যে খুব বেশি না হলেও মানুষও মারা গেছে কিন্তু। শুধু পশু না। মানুষের ক্ষেত্রেও অবশগুন্ হতে পারে। এই ব্যাপারটাও আছে। এভাবেই অনেক কাল্ট বা সাব-কাল্ট এর জন্ম হয়েছে হয়তো এক-এক কালে।'
'তবে একটা ব্যাপার ভাবো– একদিকে গাছ-ভূত, আর একদিকে পোকা! এ তো নিশ্চিত হটস্পট!'
'হুম্, একেবারেই। তবে আমি আর একটা কথাও ভাবছি...'
'কী কথা?'
একজনকে সাইকেল নিয়ে ওদের দিকে আসতে দেখে সত্য একটু চুপ করল। সাইকেলের লোকটি যেন একটু অবাক হয়েই ওদের দেখতে-দেখতে ওদের পাশ দিয়ে গিয়ে বাস-রাস্তায় উঠে গেল। সত্য আবার মুখ খুলল, 'মিসআইডেন্টিফিকেশন-এর ফলে যদি ভুল হয়ে থাকে– হয়তো গাছ-ভূত আর পোকা-ভূত একই জিনিস!'
'দু'জনের ডেস্ক্রিপ্শন-এ যে মিল আছে তা আমিও খেয়াল করেছি।'
'আর হয়তো এটা সম্পূর্ণ একটা আলাদা জিনিস। মঙ্গলজি বা গোপালজি কেউই হয়তো বুঝতে পারেনি সেটা!'
'একদম! পসিবল্। দেখা যাক!'
'তবে ওই ভূত বা যাই হোক ওটা, ওটার মডেলটা একই। মানে যদি ইউ.এফ.ও. হয়।'
'এলিয়েনদের কীর্তি না বিদেশী শক্তির হাত, নাকি অন্য কোনও ফেনোমেনন্, বা প্রকৃতির আশ্চর্য!'
'হয় ওটাই ইউ.এফ.ও.-টা, বা ওটা একটা ক্রাফ্ট, কি রোবট হবে। মাদারশিপটা হয়তো ওপরে ছিল- ওই আকাশে বা মহাকাশে– তার আলো হয়তো সেই রাতে আকাশে দেখেছিল গোপালজি।'
'মাদারশিপ থেকে বেরিয়ে আসা ক্রাফ্ট হলে এটা ক্লোজ্ এন্কাউন্টার অফ দ্য থার্ড কাইন্ড-ই। মডেলও হয়তো একই!'
'বা হয়তো মাদারশিপ না হয়ে ওটা ওয়ার্মহোল-এর আলো– যেটা দিয়ে ইউ.এফ.ও.-টা চলে গেছিল তাদের গ্রহে বা অন্য কোনও ডাইমেনশনে; বা পৃথিবীতেই কোনও সেফ্ লোকেশনে ফিরে গেছিল ওয়ার্মহোল-এর সাহায্যে।'
'ইউ.এফ.ও. কিন্তু খুব ফাস্ট বেরিয়ে যেতে পারে– এটা বারবার দেখা গেছে। তাই ভ্যানিশ না হলেও খুব দ্রুত ওই মাঠের ওপর থেকে আকাশ পথে বেরিয়ে গিয়ে থাকতে পারে ওটা।'
'ওহ, ওই মডেলের ব্যাপারে কী বলছিলে?'
'বলছিলাম যে ৩০ বছরের গ্যাপ-এও দু'জন আই-উইটনেস্ হয় একই মডেল দেখল, বা একই রকমের মডেল দেখল।'
'এগুলোর মাস্-প্রোডাকশন হতে পারে, বা একটা ক্রাফ্টই হয়তো যায় সর্বত্র পালা করে-করে।'
'অন্য হটস্পট-গুলোতে যে সাইটিংস্-গুলো হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে একটু পড়লে হয়তো বোঝা যাবে।'
'হ্যাঁ গো। যাচাই করিয়ে নিতে হবে, বুঝলে– আই-উইটনেস্-দেরও। আমরা তো শুধু অনুমান করছি।'
খাওয়া সেরে উঠে জল খেয়ে ওরা আবার গ্রামের দিকে এগোল।
৯
গ্রামে লোকজনের সাথে অ্যানিম্যাল মিউটিলেশনের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে সিম্মিরা সবাইকে জিজ্ঞেস করল যে তারা আশেপাশের পরিবেশে কোনও আস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছে কিনা। তাতে কয়েকজন আকাশে রহস্যময় আলো দেখার কথাটা উল্লেখ করল। এতে গোপালজির বয়ান আরও বল পেল। গ্রাম থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে আসার পথে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে ওরা দু'জন আবার আলোচনায় মগ্ন হল। সত্য চিন্তিতভাবে বলে উঠল, 'এলিয়েন হোক বা যা-ই হোক...'
'যাই হোক বলতে কী হোক?'
'মানে, জানোই তো, এরম মনে করা হয় যে ইউ.এফ.ও. মানুষের তৈরি করা হতে পারে– মানে ক্লাসিফায়েড ইনভেনশন- আম-জনতার থেকে গোপন রাখা হয়েছে।'
'আবার আমেরিকার তথাকথিত রহস্যময় কেন্দ্র এরিয়া-৫১-এ বিভিন্ন গোপন এক্সপেরিমেন্ট চলে বলে শোনা যায়! সেখানে নাকি এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল-দের..., মানে এলিয়েন-দের থেকে বাজেয়াপ্ত করা একটা ক্রাফ্ট আছে- ওটা ক্র্যাশ করেছিলো সে-দেশের মরুভূমিতে; তাই ওটার নাগাল পাওয়া যায়! সেখান থেকে নাকি সেটা মার্কিন মিলিটারির সাহায্যে এরিয়া-৫১-এ নিয়ে আসা হয়। এলিয়েন-দের সেই ক্রাফ্ট-টাকে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার করে প্রথম ইউ.এফ.ও. বানানো হয়ে থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হয়।'
'অর্থাৎ, ওই মেশিন এলিয়েন-দের অনুপ্রেরণায় মানুষের সৃষ্টি! এসব যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছে বলে খবর।'
'ইয়াপ!'
'হিটলারও নাকি ইউ.এফ.ও. বানিয়েছিল– অনেকে ওখানেও এলিয়েন-দের হাত দেখে।'
'ওগুলো গল্প হতে পারে– হিটলার বড় ব্যক্তিত্ব বলে তাকে সর্বত্র টেনে আনা! গল্প বানানো...। বড়-বড় লোকজনের সাথে, সে হিরো হোক বা ভিলেন, তাদের সাথে এরকম কিংবদন্তি জুড়ে যায়- বিক্রম-বেতালের গল্পের মতো!'
'ফ্যান ফিক্শন-এর মতো কেস!'
'হা হা! হ্যাঁ, সেরকমই আর কি।'
'হতে পারে, তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ইউ.এফ.ও.-র বেশ কিছু রিপোর্ট আছে বটে– খোদ আর্মির লোকদের থেকে পাওয়া। যুযুধান দু'পক্ষই রিপোর্ট করেছে। আর্মি-নেভি-এয়ারফোর্স সবাই দেখেছে! তবে কোনও পক্ষই তার দায়িত্ব নেয়নি। ইতালির মুসোলিনি নাকি অনুসন্ধানও করার চেষ্টা করেছিল। 'ফু ফাইটার' বলা হয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আর্মির লোকদের দেখা ইউ.এফ.ও.-গুলোকে।'
'তার মানে অন্য দেশও পাঠিয়ে থাকতে পারে।'
'উড়িয়ে দেওয়া যায় না ব্যাপারটা। আবার সত্যি-সত্যি এলিয়েন-দের কীর্তিও হতে পারে!'
'ফু ফাইটারের ব্যাপারটা আমার জানা ছিল না।'
'৫০-এর দশকের ইউ.এফ.ও. যুগেরও আগের ঘটনা এসব।'
'বাই দ্য ওয়ে, বিল্লুর কেস্টা মনে আছে?'
'কোন কেস্টা? বিল্লু তো অনেক কিছুই বলে।'
'ওই যে, ওই যেটা বলেছিলে সেটাও ময়দানি এলাকায় ছিল। দৈত্য, দৈত্য!'
'ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ, সেই দমনপুরের আলেয়া! খুব আগ্রহ ছিল একবার ওখানে যাওয়ার।'
'আকাশে আলো দেখতে পাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু সব জায়গায় কমন। সেবার বিহারেও যেমন...'
'এলিয়েন-রা হয়তো লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার জন্যই প্রত্যন্ত জায়গা খোঁজে– এই তল্লাটেও লোক খুব কম।'
'ফাঁদ পাতা যাক তাহলে একটা!'
'ফাঁদ বলতে কি রাতে মাঠে যাবে?'
'হ্যাঁ, ফাঁদ পেতে ঘাপটি মেরে থাকব।'
'ফাঁদ মানে ঠিক কীরম? জালের মধ্যে ইউ.এফ.ও. ধরবে নাকি?' ইয়ার্কির সুরে বলল সত্য।
'পাগল! ফাঁদ বলতে তুমি বললে না তখন যে ব্যাপারটা যাচাই করতে হবে। ইউ.এফ.ও. না অন্য কিছু, আসলে কী, সেটা যাচাই করতে হবে তো।'
'আচ্ছা!' বলে এদিক-ওদিক একবার তাকিয়ে নিয়ে সত্য ফিস্ ফিস্ করে বলল, 'রিপোর্ট লেখার জন্য।'
'ইয়াহ্!'
'ফাঁদের জন্য তো টোপ লাগবে।'
'টোপ নিয়েই যাব। যদিও...' বলে একটু থামল সিম্মি।
'কী হল?'
'ধরো যদি কিছুই না পাওয়া যায়, সেটাই ভাবছি।'
'তাহলে আর কী করা যাবে? আমাদের লোয়ার লিমিট এক সপ্তাহ, আর আপার লিমিট দুই, অ্যাস্ ইউজুয়াল।'
'তার মধ্যে কিছু না হলে এখানে ট্রান্সফার নিয়ে নেব আমি।'
'হা হা হা! তাহলে মিস্ট্রি-হান্টার-এর জায়গায় এবার ইউ.এফ.ও.-হান্টার সিমরান বাজওয়ার অবতারণ হবে।'
'এমনিতেও তো আজকাল আমরা ইউ.এফ.ও.- ই তাড়া করে বেড়াচ্ছি।'
'তা ঠিক...! বলছি গাছ-ভূত দেখার ফ্রিকোয়েন্সিটা বোঝা যাচ্ছে না। লোকে তো শর্ট-কাট নেওয়া ছাড়া ওদিকে যায় না– মঙ্গলজি যেমন। আর ছাড়া জন্তুরাও সেরম যায় না ওদিকে।'
'রোজ রাতে ওটার দর্শন হবে, এটা আশাও করছি না অবশ্য। দু-সপ্তাহের মধ্যে যেন হয়ে যায়!'
'একটা খড়ের গাদা বা ওরম কিছু তৈরি করতে হবে– ওটা আমাদের বাঙ্কার হবে।'
'হুম্, আর রাতে থাকলে নাইট ভিশন ক্যামেরা ছাড়াও ফ্ল্যাশ লাইট রাখতে হবে সাথে।'
'পুলিশের হেল্প নেব না। অন্ততঃ মাঠে ওদের থাকতে বলব না।'
'ঠিক বলেছ। ব্যাপারটা পাঁচ কান হলে মুস্কিল।'
'গাছ-ভূতকে দৌড়ে যখন মঙ্গলজি হারাতে পেরেছে, তখন আমরাও পারব, হা হা!' বলে হাসতে লাগল সত্য।
'আর ব্যাক-আপ লাগলে মেন রোডে একটা জিপ আর কিছু পুলিশ মোতায়েন থাকলেই হবে।' বলল সিম্মি।
'সে নয় হল। তবে ব্যাপারটা আস্বাভাবিক। তাই না?'
'কোন ব্যাপার আবার?'
'এই যে, গাছ-ভূত বা যা-ই হোক, ওটা ওনাকে ধরতে পারল না!'
'দৌড়ে গাছ-ভূতকে হারানোর ব্যাপারটা আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না– বিশেষ করে এখন যখন অনেকটাই আন্দাজ করা গেছে যে গাছ-ভূতটা আদতে কী হতে পারে!'
'উম্ম্, কারণটা হয়তো আমি ধরতে পেরেছি, যদি লেগে যায় তো...'
'হয়তো মেশিন খারাপ ছিল। মানে আল্টিমেটলি মেশিন তো, সে ইউ.এফ.ও. হোক বা রোবট হোক! কী?'
'যান্ত্রিক গোলযোগের যুক্তিটা হতে পারে, আবার অন্য কোনও জন্তুও পেয়ে গিয়ে থাকতে পারে।'
'ওহ, একটা শিকার পেয়ে যাওয়ায় অন্য শিকার থেকে ফোকাস সরিয়ে নিয়েছে।'
'বরাব্র!'
'ওহ ইয়েস্, মঙ্গলজি যে ডেট বলেছিলেন তার কিছুদিন বাদেই তো আর একটা অ্যানিম্যাল মিউটিলেশন-এর ঘটনা সামনে আসে।'
'একদম ঠিক! ডেটটা মনে করো। ওই জন্তুটাই হয়তো মঙ্গলজিকে ওইদিন বাঁচিয়ে দিয়েছে; মানে সেই রাতে।'
'এদিকে গোপালজির অভিজ্ঞতায় ওই গাছ-ভূতই মিউটিলেশনের মূল। আমাদের এক্সপেরিমেন্ট সফল হলে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।'
১০
এদিনও শেষ বাস ধরে সন্ধ্যায় ফিরে এলো ওরা। তারপর রাতে প্রয়োজনীয় জিনিসের একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলল: গ্লাভস্, ফ্ল্যাশলাইট, নাইট-ভিশন বাইনকুলারস্, নাইট-ভিশন ক্যামেরা, কার্বলিক অ্যাসিড, থার্মাল ইমেজার, এইসব। কাল ওরা মাঠেই খোলা আকাশের তলায় রাত কাটাবে। আর প্রয়োজন হলে আরও কয়েকদিনও রাত কাটাতে হবে মাঠেই। সত্য ঠিক করল যে পরের দিন সকাল-সকাল গিয়ে ও.সি. সাহেবকে বলে সব ব্যাবস্থা করে নেবে। পরের দিন সত্য থানায় গিয়ে ও.সি. সাহেবের সাথে একান্তভাবে কথা বলল তাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে, আর তা সফল করার জন্য পুলিশের সাহায্য চাইল। সেই ব্যাপারে কথা হতে-হতে সত্য পিস্তল-এর প্রসঙ্গ তুললো আগেই এই নিয়ে সিম্মির সাথে কথা বলেই রেখেছিলো ও- যে রাতেরবেলায় মাঠে আত্মরক্ষার জন্যে পুলিশের থেকে একটা পিস্তল নিয়ে রাখবে ওরা।
ও.সি. মি. কুমার কৌতূহল-মেশানো গলায় বলে উঠলেন, 'আপনি চালাতে পারবেন?'
'হ্যাঁ, আমরা জানি। আমি জানি।' শান্ত গলায় বলল সত্য।
'ঠিক আছে। তবে কোনও গোলমাল যেন না হয়। একটাই পিস্তলের ব্যবস্থা করে দিতে পারব আমি।'
'আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন! জাস্ট ফর সেফ্টি ওটা সাথে রাখব।'
'ওকে।'
'আর একটা জিপের ব্যবস্থা করে দেবেন প্লিজ্।'
'জিপ? জিপ কেন?'
'ওই যে, রাতে ছেড়ে দিয়ে আসবে আমাদের।'
'ওহ আচ্ছা আচ্ছা। উস্কে লিয়ে!'
'হাঁ জি। অর বাই চান্স কোনও সমস্যা হলে রাত্রেই তো ফিরতে হবে। সকাল অবধি বাসের অপেক্ষা করতে পারব না।'
'ওকে, ফর এমারজেন্সি জিপটা রাখতে বলছেন?'
'সাহি সাম্ঝে আপ। মাঠের ধারে ওই যেখান থেকে বাগানের দিকটা কাছে হয়, সেখানে রাখলেই হবে। আমি দেখিয়ে দেব।'
'হুম্, তবে একটু লুকিয়ে রাখতে হবে। বুঝতেই তো পারছেন, লোকে দেখলে...'
'হ্যাঁ, বিল্কুল বুঝতে পারছি। আমি চাই না লোকে জানুক। আমি এটাও বলতাম আপনাকে। এই ব্যাপারটা একটু দেখবেন প্লিজ্ যাতে এটা পাঁচ কান না হয়।'
'আমার এই কেবিন থেকে লিক হবে না, আপ বেফিকার্ রাহিয়ে।'
'থ্যাংক ইউ! লোকালরা যেন খবর না পায়। তারা হয়তো ব্যাপারটা ভালোভাবে নাও নিতে পারে।'
'এমনিতে ওই মাঠে সেফ্ আপনারা। এক সাপ বা ইঁদুর ছাড়া কোনও চিন্তা নেই।'
'মানুষের চিন্তা নেই বলছেন?' একটু হেসে বলল সত্য।
'হ্যাঁ, এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছি– এক না-জেনে বা ভুল-করে ছাড়া কেউ কখনো যাবে না ওখানে।'
'হুম্, আর রিসেন্টলি যা হল তারপর ভয়টা নতুন করে জাঁকিয়ে বসেছে গ্রামে!'
'রহস্যটাই প্রধান চিন্তার বিষয়! ব্যাপারটা সল্ভ হলেই ভাল। অল দ্য ভেরি বেস্ট, মি. উপাধ্যায়।'
'থ্যাংকস্ এগেইন। ওহ ভালো কথা, একটা ছাগল বা ভেড়া লাগবে।'
'কেন? রান্না করে খাবেন নাকি?' এবার একটু হেসে কথাগুলো বললেন ও.সি. সাহেব।
'না না, ওটা আমাদের টোপ হবে।'
'টোপ?'
'ইয়েস্, যে কোনও রকম টোপ হলেই হবে। যদিও আমি অকারণে জন্তু-জানোয়ার মারার বিরুদ্ধে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে টোপ ছাড়া কাজ হবে না।'
'টোপ দিয়ে কী করবেন?'
'অ্যানিম্যাল মিউটিলেশন-এর কিনারা করতে ওটা দরকার হবে। আমি তার টাকা দিয়ে দেব রাতে আপনার পাঠানো পুলিশ কনস্টেবল-এর হাতে।'
'হুম্, ঠিক হ্যায় ফির। আমি একটা ছাগলের ব্যাবস্থা করে দেব। জিপে করেই নিয়ে যাবেন।'
'আর একটা ব্যাপার। এখানে কার্বলিক অ্যাসিড কোথায় পাওয়া যেতে পারে বলতে পারবেন?'
'কার্বলিক অ্যাসিড? অ্যাসিড আবার কেন?'
'এটা সাপ তাড়ানোর ওষুধ, মি. কুমার।'
'ওহ, ওই অ্যাসিড। এক কাজ করুন, বাজারে গিয়ে লালাজির দোকান বললে দেখিয়ে দেবে। ওখানে গিয়ে বললে ওরা হদিস দিতে পারবে। আর কিছু?'
'না না, থ্যাংকস আ লট্, মি. কুমার। তাহলে রাত ১১টার সময় জিপটা পাঠিয়ে দেবেন সার্কিট হাউসের সামনে, উইথ ছাগল অ্যান্ড পিস্তল।'
'ডান!' বলে হাত জোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে সত্যকে বিদায় জানালেন ও.সি.। সত্যও প্রতিনমস্কার জানাল।
সত্য কেবিন থেকে বেরোনোর আগে ও.সি. সাহেব অদ্ভুত সুর করে বললেন, 'রাতে সাবধানে যাবেন, মি. উপাধ্যায়!'
এটা শুভেচ্ছা না সতর্কতা সেটা সত্য বুঝতে পারল না। শুধু হ্যাঁ-সূচক ভঙ্গিতে মাথাটা নাড়িয়ে স্মিত হেসে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
১১
এখানকার ও.সি. সাহেব হয়তো হেঁয়ালি করে কথা বলা পছন্দ করেন, বা অপরাধিদের সামলাতে আর অপরাধের সাথে লড়তে-লড়তে হয়তো ওনার স্বভাবটাই ওরকম হয়ে গেছে। অথবা এর মধেই হয়তো বিনোদন খুঁজে পান তিনি! এটাও হতে পারে যে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বীরত্বের সাথে জটিল কেস সমাধান করার কৃতিত্বটা সত্যরা পেয়ে যেতে পারে বলে উনি একটু ঈর্ষা করছেন! এমনিতে, তার নিজের এলাকায় এসে বাইরের কেউ সর্দারি করুক, বা কৃতিত্ব নিয়ে চলে যাক, এইটা হয়তো কেউই মন থেকে ঠিক মেনে নিতে পারেনা! কারণ যা-ই হোক, দেশের সব জায়গার পুলিশই সত্য-সিম্মিকে সহযোগিতা করতে বাধ্য, সে হয় সত্যদের ওপরওয়ালার প্রভাবে নয়তো ওপরের চাপে। এই ব্যাপারে অবশ্য সত্য আমায় মুখ বন্ধ রাখতেই বলেছে– তাই আর কথা না বাড়িয়ে আসল প্রসঙ্গে ফিরি। তো এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। সেদিন রাতে মোটামুটি নির্দিষ্ট সময় মতোই টোপের ব্যবস্থা হয়ে গেল– ভেড়া নিয়ে একজন কনস্টেবল হাজির হল জিপ-সমেত; তাতে পুলিশের ড্রাইভারও ছিল। সত্য আর সিম্মি জিপগাড়িতে চেপে ঘুর-পথে তেপান্তরের মাঠের সামনে গিয়ে নামল। পাছে কেউ যদি ওদের ফলো করে বা সন্দেহ করে, তাই ঘুর-পথে ব্যবস্থা। বাগানের বেশি কাছে যাওয়া যাবে না। মোটামুটি যে জায়গাতে ঘাঁটি করবে বলে ওরা ঠিক করে রেখেছিল তার দিকে ভেড়াটাকে নিয়ে দু'জনে মিলে এগোতে লাগল। পথ অন্ধকার, কিন্তু টর্চ জ্বালালো না ওরা। কিছুটা অনুমান আর কিছুটা ফোনের আলোর সাহায্যে এগোতে-এগোতে সিম্মি বলল, 'ক্যামেরা লাগালেই যদি কাজ হয়ে যেত, তাহলে দিনের বেলায় সেট্ করে দিলেই হতো।'
'হা হা, সেই। এই মাঠে ক্যামেরা চুরি করতে অন্তত কেউ আসবে না!' বলল সত্য।
সিম্মিও একটু হেসে বলল, 'ভাগ্যিস কাদাটা লিমিটের মধ্যে আছে! তাও একেবারে নেই যে তা নয়। বৃষ্টি-টিষ্টি না এলেই ভালো!'
এই কথায় দু'জনেই হাসল। তারপর সিম্মি আবার বলল, 'যদি হাই-পাওয়ার ক্যামেরা থাকত আমাদের কাছে, তাহলে হয়তো আমাদের রাতে আসতে হতো না।'
'হ্যাঁ, হাই-পাওয়ার আর অটোমেটেড-ও। ওটাই তো প্রব্লেম।'
'একে তো অন্ধকারটা একটা ফ্যাক্টর।'
'তার ওপর ম্যানুয়ালি অপারেট করার ব্যাপারটা। এই ভূত বাবাজি তো আবার রাত ছাড়া দেখা দেন না।'
'সে তো মোটামুটি সব ভূতই!'
'হ্যাঁ, তবে দিনের বেলার কেস্ও তো আছে।'
'হুম্, তা ঠিক।'
'তবে একটা ব্যাপার, আমরা যা ভাবছি এই ভূত যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্যামেরাকেও অ্যাটাক করতে পারে– রেকর্ডিং হলে ফুটেজ থাকবে, আর ফুটেজ থাকা মানেই প্রমাণ। সেটা কি এলিয়েন-রা চাইবে?'
'ইয়েস্, ট্রু! তাই এখানে আমাদের উপস্থিতিটা জরুরি। ক্যামেরা যন্ত্র- তার থেকে আমাদের উপস্থিত বুদ্ধি আর সৃজনশীলতা বেশি!'
সিম্মি ভারি বাংলা কথাগুলো বুঝলো কিনা জানিনা, তবে মুখে কিছু বললো না। সত্য আবার মুখ খুললো, 'আজ পাবলিক ডোমেন-এ অসংখ্য ইউ.এফ.ও. ফুটেজ আছে।'
'কেউ একা দেখেছে, সেই ফুটেজও আছে...'
'আবার কিছু ক্ষেত্রে একই ইউ.এফ.ও.- কে অনেকে দেখেছে, সেই ফুটেজও আছে।'
'ইউ.এস.ও.-ও আছে। আনাইডেন্টিফায়েড সাবমার্জড অবজেক্ট...'
'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউ.এফ.ও.-র মতোই নাকি ইউ.এস.ও.-ও দেখা গেছিল!'
'আজকাল তো আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা বলে।'
'ইয়াহ্, আম্ব্রেলা টার্ম আর কি। ইউ.এ.পি.- তার মধ্যে ইউ.এফ.ও., ইউ.এস.ও., সবই পড়ছে।'
সিম্মি এতে একটু মাথা নাড়ল।
১২
নির্দিষ্ট জায়গাটা বাগানটা থেকে কিছুটা দূরে। এখানে একটু ঢিপি মতো আছে। তার আড়ালেই পোজিশান নিয়ে থাকবে ওরা। বাগান আর ঢিপির মাঝে থাকবে ভেড়াটা। সবকিছু গুছিয়ে-টুছিয়ে নিয়ে নজর রাখা শুরু করল ওরা। অদ্ভুত নিস্তব্ধ পরিবেশ– মাঝে-মাঝে শুধু ভেড়াটা যা একটু ডাকছে– এছাড়া কোনও শব্দ নেই। একটা থম্থমে ভাব– যেন কিছু একটা হবেই। একে-অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ অবধি অনুভব করতে পারছিল ওরা! কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার– সেদিন রাতে কিছু হল না। এমন কী বাকি সবকিছু একই থাকলেও তার পরের দু'দিনও কিছুই হল না। জানি না ওদের অবচেতনে বা অচেতনে একটু হতাশা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল কিনা!
চতুর্থ দিনও নিশুতি রাতে টোপটাকে নিয়ে হাজির হল ওরা। মাঠের পরিবেশ মোটামুটি একই ছিল। সত্যরা ঢিপির আড়ালে গা এলিয়ে দিয়ে চারিদিকে নজর রাখতে-রাখতে আলতো স্বরে কথা বলছিল। সত্য বলল, 'আমেরিকার পেন্টাগন ইউ.এফ.ও. নিয়ে যে রিপোর্টটা করেছে, সেটাও অমীমাংসিত আছে।'
সিম্মি বলল, 'জানি, আর অমীমাংসিত থাকবে যে সে তো জানা কথাই।'
'সেই...! কিন্তু আমাদেরও কি খালি হাতে ফিরতে হবে?'
'ভূত-প্রেতও তো সবসময় দেখা যায় না। আবার কেউ দেখতে পায়, কেউ পায় না।'
'অন্য ডাইমেনশনের জিনিস বলে হয়তো।'
'আর জর্জ ক্লার্কের কেস্টার ক্ষেত্রে তো আমরা দেখেইছি।'
'সত্যি, ওটা একটা পাথ-ব্রেকার ছিল বটে।'
'মি. ক্লার্ক পাহাড় থেকে পড়ে গিয়েও সভ্যতার উপকার করে গেছেন।'
'হ্যাঁ, তাও আবার ওনার নিজের অজান্তেই।'
'উম্..., প্রভাবল্লীতে আবার ডাইমেনশনের!'
সত্যকে দেখে মনে হল সিম্মির কথা শেষ হলে ও কিছু একটা বলত, কিন্তু তার আগেই বাগানের দিকটায় কীরম একটা যেন আলোড়ন শুরু হল! কেমন একটা মেঘের মতো জমতে শুরু করল। মেঘ বলব, ধোঁয়াশা বলব, নাকি কুয়াশা, জানি না– ওই দিকটা সেই চাদরে ঢেকে গেল! কিছুক্ষণ ধরেই অবশ্য পরিবেশে একটা পরিবর্তন হচ্ছিলই– তাপমাত্রাটা যেন একটু কমে গেছিল। সত্যরা সেটা খেয়াল করেছিল হয়তো, তবে সেটা প্রাকৃতিক নাকি অপ্রাকৃতিক কারণে সেটা হয়তো বোঝেনি ওরা কেউই। কুয়াশাটা বাগানের দিকটায় বেশি, কিন্তু ওদের চারিদিকেও সেটা ধিরে-ধিরে ছড়িয়ে পড়ল। ওরা সেটা শুরুতে খেয়াল করেনি কারণ ওদের নজর তখন অন্য দিকে। বাগানের দিকের পরিবেশের পরিবর্তনটা লক্ষ্য করে নাইট-ভিশন ক্যামেরাটা বাগানটার দিকে তাক করে সেটার ফোকাস বাড়াতে লাগল সিম্মি। একটু সময় লাগলেও সত্য নাইট-ভিশন বাইনকুলারে সেটা খেয়াল করতেই ফিস্ফিস্ করে বলল, 'হঠাৎ কেমন কুয়াশা মতো হয়ে গেল, দ্যাখো!'
সিম্মি কিছু বলার আগেই খেয়াল করল যে ধোঁয়াশা বা কুয়াশার মধেই যেন কয়েকটা আলো বা জ্বলজ্বলে কিছু ঝিকমিক করছে। সিম্মি ছবি তোলা আর ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করে দিল, আর ক্যামেরার ওপর পূর্ণ মনোযোগ বজায় রেখেই সত্যকে জিজ্ঞেস করল, 'তুমিও সেটাই দেখছ যেটা আমি দেখছি?'
'হুম্, সেই আলেয়া!'
আলোগুলো দেখা যাওয়ার পর কুয়াশার চাদরের মধ্যে থেকে যা বেরোল সেটা অবর্ণনীয়– এরম জিনিস পৃথিবীতে কোথাও তৈরি হয়েছে বা হয় কিনা সেটা আমার জানা নেই! সত্যিই এই 'পোকা' গাছের মতোই বড়– গাছের শাখার মতো তার হাত বা শাখা। হাতের মাথার দিকটা ধারালো, আর তা পোকার হাতের ধাঁচেই তৈরি। ইস্পাত-কঠিন তার ধূসর শরীর– দেখলে মনে হয় গল্পকথার প্রকাণ্ড রাক্ষুসে গাছ! তার মাথাটাও সেরমই– পোকার মাথাও হতে পারে, আবার মাংসাশী গাছেরও। এই মূর্তিকে দেখলে সাধারণ মানুষের তাকে চলমান গাছ বলে ভুল হতে পারে- যদিও এই গাছের কোন পাতা নেই; আছে শুধু কান্ড আর শাখা! আবার দৈত্যাকার পোকা ভেবেও ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়! বায়োলজি বইতে, ইন্টারনেটে, চিড়িয়াখানায়, মিউজিয়ামে বা প্রকৃতিতে দেখা যায় স্টিক-ইনসেক্ট-কে, যারা গাছের প্রশাখার মতো দেখতে বলে গাছের সাথেই ক্যামোফ্লাজ করে মিশে থাকে প্রকৃতির শিকারী পশুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য! এ এক অপার্থিব বিস্ময়ের সাক্ষী হচ্ছে সিম্মি আর সত্য!
সত্য ফিস্ফিস্ করে যেন নিজের মনেই বলল, 'এটা এলো কোথা থেকে হঠাৎ!'
সিম্মি অবশ্য সেটা শুনতে পেয়ে যতটা সম্ভব গলা নামিয়ে বলল, 'মাটির তলা থেকে তো মনে হয় না। ইউ.এফ.ও. থেকেই!'
সত্য আর কিছু বলল না। যা ঘটছে দু'জনেই প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করেই তা দেখে আর রেকর্ড করে চলেছিল। সেই বিকট মূর্তি বেঁধে রাখা ভেড়াটার দিকে হাতগুলো দোলাতে-দোলাতে এগিয়ে আসতে লাগল। ভেড়াটাও দেখতে পাচ্ছিল সব– সে আতঙ্কে প্রাণপণ চেষ্টা করছিল বাঁধন ছিঁড়ে পালানোর। এমন সময়ে হঠাৎ 'আমি এগোচ্ছি!' বলে সামনে ভেড়াটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করে সিম্মি লাফিয়ে আর গড়িয়ে এগিয়ে গেল ভেড়াটার কাছে।
সত্য এবার চিৎকার করে উঠল, 'কী করছ? গেট ব্যাক! আরে...!'
পোকা-ভূত ততক্ষণে সিম্মিকে দেখে ফেলেছে। এবার সে সিম্মির দিকে ঘুরল আর লম্বা হাত পা-গুলো দিয়ে তাকে ধরার চেষ্টা করল। বিপদ বুঝে সত্যও ঢিপির পিছন থেকে ঝাঁপ দিয়ে এগিয়ে এলো, আর গুলি করতে শুরু করল পোকা-ভূতকে। টিন বা ইস্পাতে গুলি লাগলে যেরম শব্দ হয় সেরম শব্দ করে গুলিগুলো তার গায়ে লাগতে লাগল– যদিও তাতে কোনও লাভ হল বলে মনে হল না। তবে হ্যাঁ, ভূতের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল সত্যর দিকে! ভূতের লম্বা হাতগুলো তখন দ্রুত ছোঁ-মারতে লাগল, আর ক্ষিপ্রভাবে তাকে ধরার চেষ্টা করতে লাগল। সত্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল ভূতের ধারালো হাত-দুটোকে ডজ করার। এই ফাঁকে সিম্মি ভেড়াটাকে খুলে কোলে তুলে নিল। তারপর 'ডান! কাম্! চলো।' বলে সত্যর উদ্দেশ্যে জোরে চিৎকার করে ভেড়াটাকে কোলে নিয়েই জোরে দৌড়তে শুরু করল ও। সত্যও জোরে একটা লাফ দিয়ে যতটা সম্ভব ভূতের নাগালের বাইরে গিয়ে দৌড়তে শুরু করল।
সেই ভূত ওদের পিছনে তাড়া করেছিল কিনা সেটা আর দেখার সুযোগ পায়নি ওরা। প্রাণপণে ছুটে কুয়াশার বেষ্টনী ভেদ করে মাঠ থেকে যত দ্রুত সম্ভব সেই বিশাল মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় পৌঁছনোর চেষ্টা করল ওরা- এত জোরে মনে হয় ওরা দু'জনে কোনোদিন দৌড়ায়নি! ছুটতে-ছুটতে আর হোঁচট খেতে-খেতে জিপ থেকে কিছুটা দূরে এসে হাঁপাতে-হাঁপাতে পিছন ঘুরে দেখল ওরা– কিন্তু কোথায় সেই ভূত, আর কোথায় সেই কুয়াশা! সবকিছু আবার স্বাভাবিক। কনস্টেবল আর ড্রাইভার জিপেই ছিল; এমার্জেন্সির কথা মাথায় রেখে সত্যরা প্রথম দিনই তাদের রেডি থাকতে বলে রেখেছিল, যাতে ওরা দু'জন মাঠে থাকাকালীন তারা দু'জন এদিক-ওদিক না যায়, বা নেশা-টেশা না করে। ড্রাইভারের চোখ লেগে গেলেও কনস্টেবলটি জেগেই ছিল। যদি গাছ-ভূত আবার দেখা দেয়- সেই আশঙ্কা করে ওরা আর সময় নষ্ট করল না। জিপে উঠে ফেরার রাস্তা ধরল। এমনিতেও ওদের কাজ হাসিল হয়ে গেছে।
১৩
সার্কিট হাউসে ফিরে স্বাভাবিক হয়ে দু'জনে ছাদে উঠল। তখনও অন্ধকার– সবাই ঘুমোচ্ছে।
কেউ তাদের কথা-বার্তা শুনছে না যে সেই ব্যাপারে দু'জনে নিশ্চিত হওয়ার পর সত্য গম্ভীর ভাবে বলল, 'অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিটা না নিলেই পারতে।'
সিম্মি স্বর নামিয়ে বলল, 'আসলে ওটা ইন্সটিঙ্কটিভ রিঅ্যাকশন ছিল। ভেড়াটা চোখের সামনে...'
সত্য হালকা বিরক্তি প্রকাশ করেই বলল, 'বুঝেছি সেটা, তবে ওরম পরিস্থিতিতে এরম করো না আর!'
সিম্মি শুধু বলল, 'ওকে ক্যাপ্টেন।'
'সবসময় সবকিছু করা যায় না, আমাদের।'
কিছুক্ষণ দু'জনেই চুপ করে থাকল। তারপর সত্য বলল, 'আওয়ার মিশন ইজ্ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যন আ লাইফ্–ইভেন ইফ ইট ইজ্ আওয়ার ওউন। জানো তো তুমি!'
আবার কিছুক্ষণ দু'জনেই চুপ। তারপর সত্যই মুখ খুলল, 'যাক্ গে', বুঝলে ব্যাপারটা?'
সিম্মি ওর দিকে মাথা না ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'কী ব্যাপার? এই অর্ডার না মানার?'
'না, এই পুরো ভিসিটেশনটা।'
'ওহ! ভাল ফুটেজ পেয়ে গেছি ঠিক ঠাক– যেটা দরকার ছিল! বডিটা মেটালিক্ ছিল, না?'
'তাই মনে হল। মেশিন।'
'প্রাণ নেই মনে হয়, রোবট বা সাইবর্গ বা ওরম কিছু।'
'আমার ধারণা কন্সাস্ এ.আই.। জাস্ট ধারণা। কী জানি কী প্রযুক্তি!'
'সেল্ফ-অ্যাওয়্যার এ.আই.?'
সত্য ব্যাপারটা চিন্তা করেছিল, তাই উত্তর দিতে দেরি হল। তার মধ্যেই সিম্মি বলল, 'চোখ ছিল বলে তো মনে হল না।'
'হুম্, হয়তো মোশান সেন্সর আছে!'
'বা হিট সিগ্নেচার ধরতে পারছিল।'
'ইউ.এফ.ও.-তে বসেও কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ওটাকে...'
'বা মাদারশিপ-এ বসেই!'
'বুঝলে আমরা কীভাবে বাঁচলাম?'
'রেঞ্জের বাইরে চলে আসার ফলে?'
'হ্যাঁ, রেঞ্জই বটে!'
'রেঞ্জই বটে বলতে?'
'আমার মনে হয় ইলেক্ট্রনিক কুয়াশার রেঞ্জ।'
'ইলেক্ট্রনিক ফগ! ব্রুস জার্নান?'
'ইয়েস্, ব্রুস জার্নান!'
সিম্মি কিছু বলল না। সত্য বলে চলল, 'ওনার রহস্যঘন বার্মুডা ট্রায়েঙ্গেলে যে অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল বলে উনি দাবি করেছিলেন, সেটাই আমাদের সাথে হয়ে গেল হয়তো! ওই ক্ষেত্রেও সেই ফগ- ইলেক্ট্রনিক কুয়াশা!'
'আরে ওয়াহ্! এটা তো...'
'আরে ওয়াহ্ বলছ! ধরতে পারলে ছিঁড়ে ফেলত একদম!'
'উই সারভাইভড অ্যানাদার ক্লোজ্ কল, অ্যানাদার ডে!'
সত্য হালকা হেসে বলল, 'বার্মুডা ট্রায়েঙ্গেল বা অ্যালাস্কা ট্রায়েঙ্গেল সারভাইভরদের মতো।'
'জাপানেও একটা আছে না?'
'হ্যাঁ, ডেভিলস ট্রায়েঙ্গেল না কি যেন...'
'ইলেক্ট্রনিক কুয়াশা মনে হয় স্পেস-টাইম ডিস্টর্শণ ঘটাতে বা ইন্টার-ডাইমেনশনাল পোর্টাল তৈরী করতে কাজে লাগে।'
'একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে।'
'তো এটাকে কী ট্রায়েঙ্গেল বলা যায়? ইউ.পি.-নেপাল ট্রায়েঙ্গেল?'
'হা হা হা, তা বলা যায়।'
'নান দ্য লেস্, ইট ইজ্ সাম্ এক্সপিরিয়েন্স টু রিমেম্বার!'
'উফ্, তা বটে! আওয়ার ফার্স্ট ডাইরেক্ট এনকাউন্টার!'
'কুয়াশাটাই নিশ্চিত ভাবে ক্যাটালিস্ট! আচ্ছা, ফ্লোরিডা না কোথায় একজন মহিলার সাথেও এরম হয়েছিল না?'
'হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক! বোট-এ ছিলেন উনি।'
'স্টেটস-এর কোনও একটা লেক-এ হয়েছিল।'
'ইয়াপ্, টাইম ওয়ার্প-ও হয়েছিল।'
'উনি দাবি করেছিলেন তাই।'
'ব্রুস-এর ক্ষেত্রেও একই…'
'প্লেন-এ দু-ঘণ্টা না ক'ঘণ্টার সফর মাত্র দশ মিনিটে অতিক্রম করেছিলেন! এরম কিছু।'
'হ্যাঁ, ওরমই কিছু। এই কনসেপ্ট-টা নিয়ে বেশ কয়েকটা বই লিখেছেন উনি।'
'এটা তো সত্তরের দশকের ঘটনা। তাই না?'
'ইয়াহ্, ইফ্ আই রিমেম্বার কারেক্টলি।'
'ওই তেপান্তরের মাঠটা একটা পোর্টাল।'
'ইন্টার- ডাইমেনশনাল বা ইন্টার-প্ল্যানেটারি।'
'বিল্লুর দমনপুরের মাঠটার মতোই।'
'ইন্টার-গ্যালাক্টিকও হতে পারে।'
'বা ক্লাসিফায়েড আর্থলি টেকনোলজি। হোয়াটেভার!'
'পৃথিবীরই জিনিস? এখানেই তৈরী?'
'হয়তো শত্রুদেশে!'
সত্য কিছু বলার আগেই আনমনাভাবে সিম্মি বলল, 'আচ্ছা বলি প্রথার উৎস কী?'
'এই নিয়ে তো নানা মুনির নানা মত। বলা মুস্কিল। তবে সারা পৃথিবী জুড়েই প্রাচীনকালে অ্যানিম্যাল স্যাক্রিফাইস্ প্রচলিত ছিল– অনেক ক্ষেত্রে নরবলিও।'
'নরবলি তো বেঙ্গলেও হত।'
'হ্যাঁ বেশ হত। ব্রিটিশ যুগ অবধি চলেছে বোধ হয়।'
'তো বলি কেন হত?'
'বেঙ্গলের ক্ষেত্রে বলছ?'
'না, ইন জেনারেল বলছি।'
'প্রকৃতিকে উৎসর্গ করা, ব্রহ্মাণ্ডকে উৎসর্গ করা। প্রকৃতিকে খুশি রাখা; প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচতে চাওয়া। এগুলোই কারণ বলে মনে করা হয় সাধারণত।'
'অ্যানসিয়েন্ট অ্যাস্ট্রনট থিওরিস্ট-রা..., মানে তুমি বাংলায় কী বলো যেন?'
'প্রাচীন নভশ্চরতাত্ত্বিক?'
'হ্যাঁ হ্যাঁ, ওনারা বলবেন যে প্রাচীনকালে মানবজাতির থেকে উন্নত ভিনগ্রহীরা বলি চাইত বলেই তাদের বশ্যতা স্বীকার-করা পৃথিবীর মানুষ এই প্রথার সৃষ্টি করেছিল তাদের মনিবদের প্রসন্ন রাখার জন্য।'
'আর আজও অ্যানিম্যাল মিউটিলেশনের মধ্যে দিয়ে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে?'
'কী জানি! দেবতা কি গ্রহান্তরের মানুষ?'
'বিখ্যাত বই! বিতর্কিতও। এই মিউটিলেশন রহস্য সল্ভ হলে হয়! মানে যেগুলো জেনুইন কেস্ সেগুলো।'
'হুম্, মানুষের ভুল...'
সিম্মি কথা শেষ করার আগেই সত্য বলল, 'বা প্রাকৃতিক মিউটিলেশন, বা পশু-মৃত্যু এবং তার শরীরের ক্ষয়প্রাপ্তিকে কল্পনার অথবা সেন্সেশনালিজ্ম-এর রঙ চড়িয়ে অলৌকিক বানানোর কেস্ নয়।'
সত্য যখন এটা বলছিল তখন সিম্মি পিছন ফিরে পূর্ব দিকটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সত্য কথা শেষ করার পর বলল, 'আচ্ছা তুমি মাঠে বসে টাইম দেখেছিলে?'
'নাহ্, খেয়াল পড়ছে না তো।'
'একবারও দেখোনি? এন্কাউন্টারের আগে?'
এবার সত্য কিছু না বলে শুধু ঠোঁটটা উল্টো করল।
দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরে সিম্মি বলল, 'ওই দেখো, পূব-আকাশটা!'
সত্য ইউ.এফ.ও., গাছবা পোকা-ভূত বা ওরম কিছুর আশঙ্কা করে দ্রুত পিছন ঘুরে দেখল আকাশে আলো ফুটছে– ভোর হচ্ছে!
সিম্মি সন্দিগ্ধ গলায় বলল, 'এত তাড়াতাড়ি তো ভোর হওয়ার কথা না!'
'হুম্, তার মানে নিশ্চয়ই টাইম ডিস্টরশন হয়েছে!'
'আমরাও টাইম র্যাপের শিকার হয়ে গেলাম।'
সত্য হালকা ইয়ার্কির সুরে বলল, 'তুমি কি বই লেখার কথা ভাবছ নাকি?'
'হ্যাঁ, লিখব না কেন?'
'হেব্বি চলবে কিন্তু!'
'তবে এখন নয়।'
সত্য কৌতুক করে বলল, 'তাহলে এখন কী হবে?'
সিম্মি সেটা ধরতে পেরে দুষ্টু হাসি-মেশানো মুখে বলল, 'ভেড়াটাকে ফেরত দেওয়া, বন্দুক ফেরত দেওয়া, রেকর্ডিংগুলো সামলে রাখা, রিপোর্টটা লিখে ফেলা।'
'আর?'
'আর? আর এই যে নেভার-বিফোর-সিন সূর্যোদয় দেখা!'
এই বলে দু'জনে হাত-ধরাধরি করে প্রসন্ন বদনে ভোরের আকাশের শোভা উপভোগ করতে লাগল।'
১৪
সেদিন কিছু ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে সত্য পুলিশ স্টেশনে গেল বাকি কাজ সেরে ফেলার জন্য, আর ও.সি. সাহেবকে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে একদম চুপ থাকার পরামর্শ দেওয়ার জন্য! ও.সি. অবশ্য মুখ খুললে সত্যদের থেকে তার নিজেরই অসুবিধা হত বেশি! সে যাই হোক, ও ফিরে এসে দেখল সিম্মি সার্কিট হাউসের বাগানের ফুলগুলো দেখছে। বাগানের মালি স্থানীয় লোক– সেও ছিল সেই বাগানেই; রাঁধুনির সাথে কথা বলছিল। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু আঞ্চলিক হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় তা হল এই– 'ভূতুড়ে মাঠ থেকে মাঝরাতে ভেসে এল গুলি চলার মতো শব্দ...!' ওদের দু'জনের কানে এলো তাদের দুজনের আলোচনা। দৃষ্টি আদান-প্রদান করে সিম্মির দিকে তাকিয়ে টুক্-করে চোখ মারল সত্য, আর সিম্মি তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা মুচকি হাসি হাসল!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন