google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re কয়েকটি কবিতা ।। মেশকাতুন নাহার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

কয়েকটি কবিতা ।। মেশকাতুন নাহার

নবপ্রভাত

কয়েকটি কবিতা  ✍️ মেশকাতুন নাহার 



১.

তন্দ্রালোকের চন্দ্র 


থমথমে এক মেঘের রাতে চমকে উঠি হঠাৎ, 
আকাশ থেকে চন্দ্রিমা যে ডাকছে ছলাৎ ছলাৎ 
হৃদয় অম্বর ভেসে গেলো দৈবাৎ আসা বৃষ্টি, 
শূন্য মনে ভাবাবেগে প্রণয় হলো সৃষ্টি।

বাতায়নে ডাকছি ওগো পুনর দেখবো বলে--
ঝড়ের কাছে আর্জি করি যাও না আজকে চলে--
নিশুতি রাত মেঘলা আকাশ হৃদয় স্পন্দন জাগে, 
চাঁপা ফুলের সতেজ ঘ্রাণে মন উড়ে যায় বাগে।

এমন ক্ষণে চঞ্চল মনে দখিন পবন দোলে,
তারার পানে এক গা ধূলো ক্ষেপণ করি খোলে।
দূর থেকে যে ভেসে আসছে জাদুকরী বাঁশি,
নিভে যাওয়া চাঁদটা জেগে দিলো মিষ্টি হাসি।

তন্দ্রার মাঝে স্বপ্নলোকে ইন্দ্রধনু ভাসে,
রঙিন বর্ণে সে যে আমার প্রাণের মাঝে হাসে।
প্রাতঃকালে কিরণ এসে খুশির জ্যোতি ভরে,
মনের আকাশ শুভ্র মেঘে ঝিকিমিকি করে।


২.

মুমূর্ষু স্বাধীনতা 


সময়ের স্রোতে ভেসে ভেসে অভিজ্ঞতা হলো বেশ,
নেই যে কোথাও একদণ্ড বিশুদ্ধতার পরিবেশ। 
বিষাক্ত কার্বন হৃদপিণ্ডটা তিলে তিলে করছে নিঃশেষ, 
ফুসফুস খুঁজে বেড়ায় নির্মল অক্সিজেন বিশেষ।

চিৎকার করে বাস্তবিক বলতে ইচ্ছে করে, 
কী শৃঙ্খলে বেঁধে রেখেছো আমায় কয়েদ ঘরে?
নিরংশু প্রাণটা প্রলম্বিত ফাঁসির রজ্জুবদ্ধে,
সঙ্কুচিত জীবদ্দশা দুলছে অন্তর্ধৃতি মরণ ক্ষণ যুদ্ধে।

শ্বাসরুদ্ধকর মুমূর্ষু এক উদ্রেক পরিস্থিতি 
কম্পাসে নির্ণয় করা যাবে না সেই বৃত্তচাপের পরিধি, 
পরিত্রাণে আর্জি করি প্রভু হয়তো দাও উৎক্রান্তি, 
নয়তো নিষ্কর্ষণ করো সমুদয় মনস্তাপ শ্রান্তি।

জ্ঞানেন্দ্রিয় স্বাধিকার লাভে চায় যে গণতন্ত্র, 
বিধ্বস্ত বিবেক বিদ্রোহী হয়ে বিলুপ্তি চায় স্বৈরতন্ত্র, 
উৎপীড়কের বিরুদ্ধে সংগ্রামে খুঁজে বেড়ায়  দাহন-যন্ত্র।
নিষ্কৃতি পেতে আশ্রয় খুঁজি, উপাসনার পড়ি রক্ষা মন্ত্র।

হা হা হা! আমার ইচ্ছেতেই তো দমিত হবে না বজ্র মেঘ,
মিনতি করলেই কী বদলে যাবে খরস্রোতা নদীর গতিবেগ?  
তবুও জীর্ণ ফুসফুস তল্লাশি করে সবুজের সমারোহ অলিগলি, 
চারা গাছটা দুর্দশা অতিক্রম করে ফোটাতে চায় কলি।



৩.

 রহস্যের তরঙ্গ অতিক্রম 


আমি পাড়ি দেবো হেঁটে দুর্গম সীমান্তে 
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠে বিস্তীর্ণ দিগন্তে। 
প্রজাপতির মতোই উড়ে ডানা মেলে, 
কখনো বা জোনাকির ন্যায় আলো জ্বেলে।

আমি তো ভ্রমণ করি নব্য আবিষ্কারে,
প্রদাহী আগ্নেয়গিরি রহস্য উদ্ধারে।
ভাবনার মহাশূন্যে খুঁজি চক্রাকারে, 
হ্যালীর ধূমকেতু কে রাতের আঁধারে।

আমাজন অভিযানে  বিশাল অরণ্যে,
অবিদিত প্রজাতির তত্ত্ব উন্মোচনে।
নৃগোষ্ঠী উন্নয়নের প্রচ্ছদ অঙ্গনে,
অভিলাষ ব্রাজিলীয় ভাষা চিত্রায়ণে। 

প্রশান্ত মহাসাগরে দুর্বোধ্য লহরে
নির্ভীক ডুবুরি হয়ে জলের ভিতরে, 
অজ্ঞাত প্রবাল রত্ন উৎপত্তি সন্ধানে 
মারিয়ানা দ্বীপান্তরে থাকবো নির্জনে।

অতর্কিত দুর্ঘটনা টুটে মেরুদণ্ড 
মর্মান্তিক বাণ বিদ্ধে চিত্ত হয় খণ্ড।
অভিঘাতে বহুবার সত্তা জরাগ্রস্ত, 
পুনঃপুন চেষ্টা করি হবো না পরাস্ত।

আকাঙ্ক্ষার জলযান অর্ণবে ভাসিয়ে
পাল তোলে শক্ত হাতে তরঙ্গ পেরিয়ে,
প্রচণ্ড বায়ুপ্রবাহ বিপত্তি ডিঙিয়ে 
আত্মবিশ্বাস যাবো যে গন্তব্যে পৌঁছিয়ে।



এলোমেলো উষ্ণতা 


তুমি যখনই কালবৈশাখী ঝড়,
আমার নিস্তব্ধ ধরণী করে নড়বড়,
তুমি যখনই নিরেট বজ্রপাত, আমি হতে চাইবো শীতল জলপ্রপাত। 

তুমি যখনই অদম্য কালো মেঘ, আমি দেখাবো এলোমেলো মিশ্র আবেগ
তুমি যখনই উষ্ণতায় ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, 
আমি তখনই হাওয়াই মিঠাই।

তুমি যখনই তেজস্বী সাইক্লোন আমি চাইবো এক গুচ্ছ ভালোবাসা লোন।
তুমি যখনই রুদ্ধদ্বার আমি মেনে নেব তোমারই কাছে হার।
তুমি যখনই এক নদী উত্তাপ, আমি খোলাচুলে দেবো তোমাতেই ঝাপ।

তুমি যখনই বৈরিতার বিবর্ণ সিন্ধু,আমি হবো অমত্ত বৃষ্টি বিন্দু।
তুমি যখনই অশান্ত প্রবল ধারা, আমি তখন নববর্ষের পুষ্পিত বসুন্ধরা।
তুমি যখনই ঘুর্ণিবায়ুর শনশন শব্দ, নব রূপে বারেবারে আমি  রঙ ছড়াবো সহস্রাব্দ।


৫.

জোয়ার ভাটার অট্টহাসি 


নদী! ওরে ওই নদী!
তুই কেন এতটা রাক্ষুসে ছিলি বল?
এই পথ দিয়ে যেতে যেতে, 
আমি তোকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে দেখে এসেছি... 

ছোট্ট বেলা থেকেই তোর পেটে শুধু ক্ষুধা আর ক্ষুধা...
কত কিছু যে খেয়েছিস তাঁর হিসেব কেউ কি রেখেছে কোনদিন? 

দেখেছি আমি এই তোরই গর্ভে হাঙর, কুমির, সরীসৃপ সহ
কত যে বিষাক্ত জীব রেখেছিস লুকিয়ে? 
সবই দেখেছি সবই দেখেছি... 

দেখেছি ঘুর্ণিঝড়ে কীভাবে গ্রাস করেছিস উপত্যকা 
দেখেছি তোর তান্ডবলীলায় শত রিক্তের পড়েছে ফোস্কা,
দেখেছি ঐ উপকূলীয় নিঃস্ব মানুষগুলোর নীরব শঙ্কা।।

কারো সুখের ঘর ভেঙেছিস, কারো বধূর হাসি নিয়েছিস, কারো যুবতী কন্যা,
কারো পুত্র কেড়েছিস ভাসিয়ে অঝোর বন্যায়...

সবই তো চেয়ে চেয়ে দেখেছি এতটা কাল --
নব নব স্বপ্নগুলো ধূলিসাৎ হয়েছে বিষাক্ত বর্জ্যে তোরই স্রোতে 
দেখেছি আমি শৈশব পেরিয়ে কৈশোর পেরিয়ে আজিকার মধ্যবয়সের দিনগুলোতে.. 

চৈত্রের দুপুরে দেখেছি তোর শুকনো কণ্ঠস্বর, 
হারানো সৌন্দর্যে কতটা ক্লান্ত, কতটা অনুর্বর! 
রূপোলী চাঁদের আলো যখন আর পড়ে না তোর গায়,
তখন তুই কতটা শ্রীহীন কতটা অসহায়... 
সবই দেখেছি সবই দেখেছি!! 

আজ তোর ভাঙনটা ঠিক একই পথে যেতে যেতে দেখেছি-
শূন্যতায় তোর বুক আজ ধূধূ বালুচর... 
হয়নি তা আজ আমার একটু ও দৃষ্টিগোচর।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন