চেনা প্রতিবেশী
(প্রথম পর্ব)
রান্নাঘরে ভাতের হাঁড়ি চাপিয়ে ইমন ঘরে এসে ঢুকে দেখে ত্রিহান জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে। হাতে ধরা খবরের কাগজটা পাখার হাওয়ায় উড়ছে অল্প অল্প।কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত মনে হলো ইমনের। আজ একটু আগে বাড়িওয়ালা এসেছিল। বিস্কুট খেতে খেতে হাসতে হাসতে ভাড়া বাড়াবার কথা বলে গেল সামনের মাস থেকে।
এরপর থেকে খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে ত্রিহানকে। ওর পাশে জানালার শিক ধরে আহির নিচের কোন কুকুরকে ডাকছে আর বলছে, 'এই কুকুল এদিকে আয় বিক্কুট খাবি আয়।'
-'শ্রেয়ান আপন মনে কি এত ভাবছো স্নানে যাবে না? নটা বেজে গেল যে। অফিস যাবে না?'
ইমনের ডাকে ত্রিহানের সহসা হুঁশ ফিরলো। চটপট উঠে পড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইমন আহিরের দিকে এগিয়ে গেল। দেখলো একটা লাল সাদা কুকুর ওপরে আহিরের দিকে তাকিয়ে অল্প অল্প লেজ নাড়ছে। ইমন বললো, 'তুই আবার ঐ কুকুরকে ডেকেছিস?'
- 'মা আমাকে একটা বিক্কুট দেবে আমি ওকে দেব? ও কুব ভালো।' ইমন যেতে যেতে বলে,
- 'আমার এখন অনেক কাজ রান্নাঘরে, তোর বাবা অফিস যাবেনা? তুই এসে নিয়ে যা।'
- 'এই কুকুল একটু দালা আমি একটা বিক্কুট আনছি তোর জন্ন। ' দৌড়ে বিস্কুট এনে দেখে কুকুরটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে আর এদিক ওদিক দেখছে। বিস্কুটটা ওর দিকে ছুঁড়ে বলে,
- 'এই নে খা।' কুকুরটা একটু এগিয়ে গিয়ে বিস্কুটটা শুঁকে ওপরে তাকালো, বোধহয় একটু কৃতজ্ঞতা জানাল আহিরকে। খাট থেকে বেডকভারটা ধরে ঝুলে নেমে পড়লো। সবসময় আহির এই ভাবেই ওঠা নামা করে। রান্নাঘরে ঢুকে বলে, ' মা আমার কিনে পেয়েচে।'
- 'বেশতো টেবিলে গিয়ে বস বাথরুম থেকে বাবা বেরোলেই তোমাদের একসাথে খাবারদেব। তোমাকে যে খাইয়ে দিতে হবে।'
ত্রিহান খেয়েদেয়ে অফিসে বেরিয়ে গেল। আহিরকেও খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিল। খেতে খেতে শ্রেয়ানের কথাগুলো তার মনে একটা নাড়া দিয়েছে। ত্রিহান খেতে খেতে বলেছে,
- 'দেখ আমরা দশ হাজার টাকা ভাড়ায় এই ফ্ল্যাটে এসেছিলাম। কিন্তু এগারো মাসের চ্যুক্তির দরুন দশ হাজার ভাড়াটা বেড়ে এগারো হাজার হলো। এবার সামনের মাস থেকে ভাড়া বেড়ে বারো হাজার একশ টাকা হচ্ছে। অর্থাৎ দুবছর হওয়ার দু মাস আগেই দু হাজার একশ টাকা
বেড়ে গেল। এ হারে বাড়তে থাকলে কোথায় যাব?
- 'ঠিকই তো, এমনিতেই সব জিনিস পত্রের দাম বেড়েই চলেছে। আহিরের বেবীফুড আর
ডায়াপারের দামও তো বেশ বাড়লো। কাজের মেয়েটিও মাইনেটা বেশ বাড়িয়ে নিল। সত্যি অবস্থাটা বেশ চিন্তার।'
- 'না এভাবে চলবে না। একটা ছোট খাটো ফ্ল্যাট যদি কিনতে পারতাম।'
- 'সেটা কি ভাবে সম্ভব?'
- 'দেখি ব্যাঙ্কের লোন নিয়ে সেটা সম্ভব কিনা।' চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছিলো ত্রিহান। শ্রেয়ান অফিসে বেরিয়ে যাবার পর ইমন আর কোন সময় নষ্ট করলো না। আহির ঘরের মেঝেয় বসে একমনে রাজ্যের খেলনা নামিয়ে খেলছে। টেবিলের সব এঁটো বাসনপত্র উঠিয়ে নিয়ে রান্নাঘরের সিঙ্কে নামিয়ে রেখে টেবিলটা মুছে ফেললো। ছোটখাটো কিছু জিনিস ও ধুয়ে ফেললো। কাজের মেয়েটি সকালে কাজ করে চলে গেছে। ভয়ে ইমন কিছু কিছু জিনিস নিজেই ধুয়ে নেয়। নাহতো নমিতা বলে, 'তোমরা আড়াই জন মানুষ এতো বাসন হয় কি করে বলতো?' তারপর আবার গ্যাস জ্বালিয়ে ডালটা বসিয়ে দিল। ডাল না হলে আহিরের খাওয়া মুস্কিল হয়। ত্রিহান তরকারি আর মাছ খেয়ে গেছে। কাজ সারা হয়ে যাওয়ার পর ইমন কিছুক্ষণ আহিরের সাথে সময় কাটায়। খেলতে খেলতে আহির খিল্ খিল করে হাসে। ইমনের খুব ভাল লাগে আহিরের এই হাসিটা। কিছুটা খেলে বলে, - 'এই রে অনেক বেলা গড়িয়ে গেল, চল এবার স্নান করিয়ে দি।' আহিরও বলে, - 'না না আর একতু খেল না মা। এই একতু খানি।'
- 'ঠিক আছে । কিন্তু এর পরে আর কিছু শুনবো না, স্নানের ঘরে ঢুকতেই হবে।'
আহিরকে স্নান করিয়ে খাইয়ে, অবশ্য আহিরকে খাওয়াতে একটু সময় লাগে। তারপর ওকে গল্প বলে বা গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। ঘুম পাড়িয়ে চটপট্ বাথরুমে ঢুকে কিছু কাচাকাচি করে স্নান করে কাচা কাপড় জামাগুলো বারান্দায় মেলে দিয়ে নিজে খেয়ে নিয়ে থালা বাসনগুলো সিন্কে রেখে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে ঢোকে। কাজগুলো
সে করে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি করা যায় অতি সন্তর্পনে যাতে আহিরেব ঘুম না ভাঙে।ঘরে ঢুকে একটু নিশ্চিন্ত বোধ করে। খবরের কাগজটা নিয়ে আহিরের পাশে একটু বসে তারপর শুয়ে শুয়ে কাগজ পড়তে পড়তে একসময় হাত থেকে কাগজ কখন পড়ে গিয়ে দুচোখের পাতা এক হয়ে যায়। অবশ্য আগে থেকেই তার খেয়াল থাকে যে কাগজটা যেন কখনো আহিরের গায়ে না পড়ে।
চলবে...
Address :-
----------------
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights,
Block-8, Flat-1B
Diamond Harbour Road,
Kolkata - 700104.
Mb: 9007139853.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন