google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re আগুনখেকো ছেলেটা ।। আশিস ভট্টাচার্য্য - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

আগুনখেকো ছেলেটা ।। আশিস ভট্টাচার্য্য

নবপ্রভাত

আগুনখেকো ছেলেটা                             

আশিস ভট্টাচার্য্য



বুকের মধ্যে জমে থাকা এক নদী কান্নায় ভেঙে পড়ল রমলা, রানাঘাট কলেজের জিএস। ইতিহাসে এম এর ছাত্রী এবং লাল দলে বড় নেতার বড় মেয়ে যেমন মেধাবী তেমন ডানপিটে। সে রূপসী ভালো আবৃত্তিকার এবং জনপ্রিয়। এমনিতে কঠোর এবং শৃঙ্খলা পরায়ণ রমলার হৃদয়ে আবেগ কম। আজ কিন্তু তার চোখের জল বাধা মানছে না। অতীতে সহজ জয় পেলেও গত বছর থেকে সবুজ দলের সাথে তীব্র লড়াই চলছে রমেন দত্ত নামে বিএসসির ছাত্র নেতা সেই দলের পান্ডা। তার চোখে মুখে কথায় তীব্র আকর্ষণ সে ফুটবল ক্রিকেট ম্যাচে কলেজ কে বারবার জিতিয়েছে। তার টানে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সবুজ দল অনেক ক্লাসেই জিতেছে অল্প আসনের পার্থক্যে রমলা জিএস। কতবার রমেন ইলেকশনে জেতার পর ছাত্র সংসদের দু-একটা মিটিং এর পর থেকে তার দিকে অন্য দৃষ্টি তৈরি হলো রমেনের। বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে রমেন তোমার রক্তপাত ভুলবেনাকো রানাঘাট। মনটা আরও চঞ্চল হলো ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা বন্ধ করে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে বিছানায় ঝাপালো রমলা। মনের দরজা দিয়ে ঢুকছে, গত দুবছরের অজস্র দৃশ্য, করিমপুর কলেজ কে দশ গোলে হারিয়েছিল রানাঘাট ওই ছেলেটা একা দিয়েছিল ছ ছটা গোল। কিংবা বর্ধমান রাজ কলেজের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করে কলেজ কে জিতিয়েছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের কি সুন্দর বোঝায় ঝলমলে টি শার্ট আর জিন্স পড়তো। পোশাক থেকে ভুরভুর করতো পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ। একটা হারিয়ে যাওয়া দলের ছাত্র সংগঠনকে প্রায় জিতিয়ে দিচ্ছিল একার দক্ষতায়। শিউলি, পম্পা, কাবেরী সবাই এক কথায় পাগল ওর জন্য। কিন্তু এক বর্ষার দুপুরে প্রায় ফাঁকা কলেজের বকুল গাছের নিচে ছেলেটা আচমকা তার কাছে প্রেম নিবেদন করে বসলো। তাড়াতাড়ি সরে গিয়েছিল রমলা এরপর দিন তার জন্মদিনে একটা বাচ্চা ছেলের মারফত। বিশাল ফুলের স্তবক পাঠিয়েছিল। বিরোধীদলের জুনিয়র একটা ছেলের সাথে মাখামাখি করার ইচ্ছা ছিল না রমলার দল বা বাবা মোটে প্রশ্রয় দেবেন না। কিন্তু ওই যে সুন্দর দেখতে ছেলেটা যার এখতিয়ার বোধ কম সে তো আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো পতঙ্গ। একদিন বিকেল বেলা রমলা বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে, আবার দূত মারফত এল রজনীগন্ধা গোলাপের স্তবক সঙ্গে অনুচিঠি।"আমাদের এই সম্পর্ক ফুলের মত সুগন্ধ ছড়াক"। ঘটনাগুলো নিজস্ব সার্কেলে জানিয়েছিল রমলা। সেখান থেকে পার্টির বড়দের কানে পৌঁছেছিল।


কলকাতায় স্যারের বাড়ি কোচিং নিত রমলা, ফেরার পথে এক সন্ধ্যায় আবিষ্কার করল ট্রেনে তার পাশের সিটেই রমেন। ইচ্ছাকৃত একটু ছোঁয়াছুঁয়ি করছে এটা সেটা আড্ডা দিতে মন্দ লাগছে না কিন্তু সেই সুযোগে বেশ কয়েকবার ওর কাঁধে হাত রেখেছে রমেন। ঘাড়ের কাছে পেয়েছে তার উষ্ণ নিঃশ্বাস নামার সময় তার কোমরে হাত দিয়ে নামতে সাহায্য করেছে। ইচ্ছে না থাকলেও ট্রেনের সিনক্রিয়েট করবে না বলে রমেনের অফার করা দিলখুশ আর বাদামতক্তি খেয়েছে সে, প্রতিজ্ঞা করেছে এই ছেলেকে ভবিষ্যতে দেখলেই সরে যাবে। কিন্তু ওই আগুন থেকে ছেলের কি লাজ লজ্জা আছে? যেখানে সেখানে প্রেমিকের মতো আচরণ করে কথা বলে। এরপর কিছুদিন কলেজের ক্লাস ছাত্র সংগঠনের মিটিং সোশ্যাল ফাংশন পাড়ার বিয়েবাড়ি সবকিছুই অনেকটা আবছা হয়ে গেল। ওই আগুনখেকো ছেলে তার প্রেম নিবেদনের জন্য বাচ্চা , বুড়ো কত প্রিয় জন নিয়োগ করেছে ঠিক নেই। কখন কে প্রেমের বার্তা বয়ে আনে বোঝা যায় না। পড়তে পড়তে রমনার গাল গলা কান গরম হয় রাগ অনুরাগের দ্বিধা মিশ্রিত উত্তেজনা হয়। ছোকরা কে বারবার নিষেধ করলেও শোনে না। একদিন তো নির্জনে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো, শরীরের আনাচে-কানাচে তার বলিষ্ঠ হাতের উত্তাপ অনুভব করল রমলা। তার শরীরের মহার্ঘ্য স্থানে কোন পুরুষের হাতের মুঠো যে শিহরণ জাগাবে তা আগে কোনদিন বোঝেনি সে। জীবনে প্রথম পুরুষের স্পর্শ তার নারী শরীরে ফুল ফোটার মতো হিল্লোল তৈরি করল। মনে হচ্ছে সাগরের ঢেউ আসছে আর ভাঙছে। ওই আগুন খেকো ছেলেটি তার মেয়েকে যেখানে সেখানে উত্যক্ত করে সে খবর পেয়েছেন রমলার বাবা সমীর পাল।


একদিন আচমকা কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হলো রমেন। গুন্ডারা তাকে প্রচন্ড পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে গেল, পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে বজ্রাহত রমলা তার কাঠিন্য খসে পড়েছে। ওই আগুনখেকো ছেলেটার জন্যে তার বুকের মধ্যে তৈরি হচ্ছে লক্ষ ঢেউ। ভালোবাসা কোন অপরাধ নয় , ভালবাসা রঙ চেনে না। তাহলে রমেনকে কেন চলে যেতে হল? সে যেমন মেয়ে হোক, যার মেয়ে হোক , যাই মতবাদ থাক, যে কোন পুরুষ তো তাকে প্রেম নিবেদন করতে পারে তার মধ্যে তো কোন অন্যায় নেই। জীবনে প্রথম পুরুষের বলিষ্ঠ স্পর্শ ভুলতে পারছে না রমলা, আরো ভুলতে পারছে না নোংরা ভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া হল। ওই আগুন খেকো ছেলেটি রমলার হৃদয়ে মস্তিষ্কে শিরায় শিরায় জায়গা করে নিয়েছে।

==============
আশিস ভট্টাচার্য্য
শান্তিপুর, নদীয়া


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন