শুকতারা
"""""""""""""
যখন আমি খেলার ছলে শিব গড়ে পূজো করতাম,
যখন আমার সোনাঝুঁরি ফুলের মতো
হলুদ বয়স ছিল,
মায়ের কোলে শুয়ে শুয়ে শুনতাম-- সুখ তারার হাজার গল্প।
ভাবতাম,--অাকাশের ভিতরে এক নক্ষত্রখচিত ইমারতে তার বাস!
মনে হতো--সেই প্রাসাদের প্রতিটি দ্বারে-
ঋষীকন্যারা অতিথিদের আপ্যায়নে সদা ব্যস্ত!
মনে হতো--শ্বেত পদ্মের মতো ফুটন্ত তার রুপ!
অঙ্গে বিবিধ অলঙ্কার সমাবেশে
সুখের চুড়ায় একটি শিশির বিন্দু।
প্রভাতের পর্দা সরিয়ে সূর্য দামাল হল--
সূর্যের সাথে সাথে আমিও বড় হলাম।
আমি কখনো ভাবিনি, এতো দূর থেকে সে আমায় অতৃপ্তনয়নে লক্ষ্য করতো।
তারপর, একদিন আমি তার প্রেমে পড়লাম।
আমি রহস্য উন্মোচন করে দেখতে চাই--
সে সত্যিই সুখতারা কিনা!
পুষ্পের ন্যায় কোমল হৃদয়পথ খোলা দেখে
তার অন্তরে প্রবেশ করলাম!
স্তরে স্তরে সাজানো ছায়াপথের ন্যায় এক অপূর্ব সোপান
প্রতিটি সোপানে তারার ফুলদানি!
এক অনির্বচনীয় স্পর্শের লোভে
আমি আরো তার নিকটে গেলাম!
স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে যেন আমার অন্তর
তীরবৎ বেগে কেঁপে উঠল!
বজ্রেবেগে দু'হাত পিছিয়ে মনে হল--
এসব কি! সোপান ও ফুলদানি রুপে কি সব ব্যথা!
মনে হল,--এ ব্যথা তো আমার!
আরেকটা সোপান স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে যেন--
সে সোপান ঝড়ের বেগে চিৎকার করে উঠল- -
আমি আর সহ্য করতে না পেরে-- বাইরে বেরিয়ে এসে
ওকে বললাম-- এই যন্ত্রণা--এই চিৎকার--
তুমি কোথায় পেয়েছ?
এই যন্ত্রণ যে আমার--এই চিৎকার যে আমার- - -
প্রতিরাত এরা যে আমাকে নিয়ে খেলা করে- - -
সত্যি করে বলতো, এতোদিন ধরে আমি
তোমাকেই কি খুঁজে ফিরছিলাম!
তুমিও কি একি ভাবে আমাকে খুঁজছিলে?
আমি যদি চিনতে নাই-ই পেরেছি--
তুমি তো আমায় চিনেছিলে! তবে
কেন সেদিন আমার খোঁপায় ঝরে পড়নি!
তুমি পৃথিবীতে দাগকেটে যেতে চেয়েছ না!
কে তোমার এতো দয়া চায়?
কে তোমার এতো দান চায়?
আমি তো মিথ্যে আঁকড়ে বেশ বেঁচেছিলাম- -
কেন আমাকে ঋণী করে দিলে- -
কেন আমায় এভাবে খুন করলে- -
কেন আমায় এভাবে খু- - -
এখন আর সেই সোনাঝুঁরি ফুলের হলুদ বয়স নেই
এখন আর খেলার ছলে শিব গড়িনা!
এখন শুধু শিবের মূর্তি আঁকি--ছিঁড়ে খাওয়া শরীরের ভাঁজে ভাঁজে!
বুকের যে মাংসপিণ্ডদ্বয়ে জগৎ পালিত হয়
সেখানে লকলক করে ওঠে ক্ষুধার্ত সাপের জিভ!
ছোবলে ছোবলে জর্জরিত হয়ে আসে--
অসহায়ার নারীত্ব!
হেরে যাওয়া নিঃস্ব-রিক্ত নারীর সতীত্ব বিষ মেখে পড়ে থাকে সারারাত!।
তীব্র দহন জ্বালায় নরকসমুদ্র সাঁতরাতে সাঁতরাতে ভোর খুঁজি
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে--
আমি বাঁচতে চাই! বাঁচতে চাই! বাঁচতে চা- -
এই চিৎকারই তো শুনেছি--ঐ সোপান---ঐ ফুলদানি স্পর্শ করে!
এবার বল-- কে তোমার কাছে এতো অনুগ্রহ চেয়েছে?
কে তোমার কাছে এতো প্রেম চেয়েছে?
কে বলেছিল আমাকে সত্য শেখাতে?
আমি মিথ্যে আঁকড়ে বেশ তো বেঁচেছিলাম!
তুমি মহানুভব হতে চেয়েছ না!
তুমি সবার প্রিয় পরম হতে চেয়েছ না!
তাই কি আমার মধ্যে তোমাকে ছোঁওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে উঠছে?
আমি জানি, তুমি আমার মধ্যে অমরত্ব চেয়েছ!
তাই হবে----প্রিয় তাই হবে!
ঐ নরকসমুদ্রে সাঁতার কাটতে কাটতে যবে-
রক্ত-রস-যন্ত্রণায় আমার ডুবন্ত দেহই---
তোমার হাতেই তুলে দিয়ে যাবে
যুগ-যুগান্তরের অমরত্ব- -
------------------------