হৃতগৌরব স্বাধীনতা
যবে দুটো ভাতের জন্য যৌবন খোয়াতে, গলদঘর্ম পরিশ্রম মজদুর ইঁট বোঝাই,
রাস্তা ঘাটে ধূলায় পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট সখ স্বাদ আহ্লাদ
পরের বাড়ি দাসত্ব ঝি খেটে,
পচে গলে যা হোক দেনা পাওনা জীবন
নিতে হবে না আর, বলবি আমরা স্বাধীন।।
অর্থনৈতিক চাপের বোঝা মরনসংকোচনের মতন
আপাদমস্তক টাকার গদির তলায় দমচাপা দীর্ঘশ্বাস
কালঘাম ছোটে বিষাক্ত দুধ কলায় পোষা কালসাপ
পাশবালিশের কোলে ঘাপটি ঘুমে
ছুঁতে চায় স্বপ্ন,
ঐ বিশাল আকাশকে হাতের মুঠোয় পেতে অভীষ্ট লক্ষ্যের উপর রাখবে হাত নির্দ্বিদ্ধায় সেদিন বলবি আমরা স্বাধীন।।
যবে মনুষ্যত্বের দর কড়ির দর থেকে হবে বেশি
লাখ গুনে মনন চিন্তন সব মাপকাঠি যাবে ডিঙিয়ে
কড়ির দরে বাছবিচার তাকে রেখে
কিংবা উচিত ও নৈব নৈব চ এর বাটখারায়, বসাবে না প্রতিজনকে
সেদিন বন্ধ হবে কেনাবেচা।
বিক্রীত হবে না আজন্মলালিত মূল্যবোধ অপমানে মাথা হেঁট
দেওয়ালে পিঠ ঠিকে
কানাকড়ির বহ্নিশিখার অটুট আস্ফালনে মধ্যবিত্ত টানাপোড়েন জীবন
পকেটে দশ টাকা,
চোখের সমুদ্রে বানভাসি উচ্ছাস লাখ টাকা স্বপ্ন কুঁকড়ে গুটিয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিকথা।
অক্ষম স্বামী সঠিক উপার্জনে,
মেটাতে পারে না চাহিদা প্রনয়াষ্পদের
লাখ ধিক্কার মুক্তির নিঃশ্বাস পেতে অপরাধবোধের আত্মগ্লানি খ্যাপায়
ছোটাছুটি ঘোড়দৌড়ের রেসকোর্স
পারতেই হবে কেন পারি না,
সেদিন কি বলবি আমরা স্বাধীন।।
দীর্ঘদিন সন্তানসম নিষ্পাপ হাসি
দিগন্তবিস্তৃত শস্য শ্যামলা, কচিকাচা তরুদল দুগ্ধধান শীষে যত্নের হাত লালিত শৈশব পিতৃত্বের সোহাগ ধন।
বর্ষাগমনে উচ্ছাসে বন্যা কবলিত মাঠ, ঘাট, পথসমুদ্র,
শস্যক্ষেত করালগ্রাসী অভিশাপে,
শুকায় ক্ষিধে পেটে টান অথৈ সংসার সমুদ্র। চোখে জল কম্পিত হাত,
বাজারের মানচিত্র উঠানামা পূর্বাভাস
বাড়ায় চিন্তার ভাঁজ কপালে
বুকের মড়াই অলক্ষ্মীর উল্টো চরন গোনে, তখন কি বলবি আমরা স্বাধীন।।
কুমারী কুঁচবরন কন্যা পাছাপেড়ে কালো চুল দুলছে
উড়ছে বসনাঞ্চলপ্রান্ত, বার হাত কাপড়েও ইজ্জত লুকাতে অক্ষম
অপদার্থের আদ্যাক্ষর শিক্ষিত সমাজ, সন্দেশখালি থেকে হস্তিনাপুর, দ্রৌপদী অসহায়
কাষ্ঠাগ্নিতে দগ্ধ সতী পুরুষের লালায়িত ভোগে লুব্ধক দৃষ্টি
বৃশ্চিক দংশন জ্বালা কলঙ্কভাগী
পরিত্যক্ত বোধে সীতার অগ্নিপরীক্ষা বারবার এই নিষ্ঠুর সমাজ
ভয়ে ভয়ে গুটিয়ে চলে পথে কুমারীর লালিত্য, যৌবন পরাধীন
সেদিন বলবি কি আমরা স্বাধীন।।
ঠান্ডায় যখন থরথর করে কাঁপছে পাতা নবহিল্লোলে
তোমরা যারা আরাম করে লেপ কাঁথার নীচে শুয়ে
স্টেশন চত্বরে ছেঁড়া কাপড়ে মুখ গুঁজে কাতারে কাতারে এমন না জানি কত রয়েছে পরিত্যক্ত
আনকোরা শৈশব পথশিশু হাত পেতে দাঁড়িয়ে
কিংবা পেটের ক্ষিধেয় বাধ্য শিশুশ্রম
আগামী স্বর্নালী প্রজন্ম, অন্ধকার কোনঠাসা এঁটো বাসন মাজে
ক্রেতা সামলায় কচি হাতে
স্লেটের হাতেখড়ি অভিশাপ, চায়ের ভাঁড় হাতে
তখন কি বলতে পারবে আমরা স্বাধীন বোধহয় না।।
বেকার অপদার্থ জীবন
যৌবনের আবর্জনা গঞ্জনা,
যীশুর মতন ক্ষতবিক্ষত লম্বা বর্শায় বিদীর্ন হৃদয়
অনিশ্চিত প্রত্যাশা সমুদ্রে টালমাটাল
পাবো তো পায়ের তলার শক্ত জমি
কান্ডারী অসহায়, করো তোমরা শুভবুদ্ধির জাগরন।
জীবনের সূর্য কে করো করাতলগত
পালিয়ে না গিয়ে লজ্জায় আত্মহননে নেশার আশ্রয়ে
সৎসাহসটুকু বুকে নিয়ে
তুলে ধরো দেশমাটিকে।
সেদিন হবে চঞ্চল অশ্বদৌড়ের মতন নবযৌবনের অগ্রদূত, আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত।।
সকলের প্রত্যাশা ঘাড়ে চেপে
শৈশবের হোঁচট খেতে বস্তাবোঝাই পিঠে
ঘরে ফিরতে থাকা এক নতুন শস্যদলের চাষ।
চিন্তিত মস্তিষ্কের তলানির দায়
শৈশব হারিয়ে ফেলা, ছেঁড়া ইতিহাসের পাতা চীৎকার স্বাধীনতা, স্বাধীনতা।
না বুঝতে পারার দাম চেয়ে দলিয়ে মাড়িয়ে শৈশব
এগলি ওগলি সাথীদের হাত ধরে ছোটাছুটি আশাতীত কল্পনা ধরাছোঁয়ার বাইরে
উজবুক লোভের অন্ধবলি উন্নীত শিখরে। করতে পারো অনেককিছু শিকড়সমেত উপড়ে গাছ
কচিকাচা লতাপাতা মুড়িয়ে কেটে দিতে
কিন্তু পারবে কি ফুল ফোটাতে
তার জন্য চাই একরাশ দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
আমরা হলাম নব কিশলয় কচিকাচা তরুর দল
উঠবো গজগজিয়ে তরতর করে
from basic to accomplishment
সবুর করো, ধৈয্য ধরো, ঠিক দেবো আমরা স্বর্ণযুগে পাড়ি।
তবে পাবো স্বাধীনতার মানে।।
=====================