google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ছোটোগল্পঃ তন্ময় সিংহ রায় - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯

ছোটোগল্পঃ তন্ময় সিংহ রায়




"তুমি আসবে বলে"      



চারিদিকে লোকজন হৈ-হুল্লোর, কানায় কানায় পূর্ণ ব্যস্ত একটা দ্বিতলবিশিষ্ট বাড়ি। রঙিন আলোর বৃষ্টিতে ভেজা সমস্ত বাড়িময়! এদিকে বাতাসে ভেসে আসছে স্নিগ্ধ সানাই-এর সুমধুর সুর....! বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার ও ফুলের মিশ্র গন্ধে ঘ্রাণ শক্তি সাময়িকভাবে হারাচ্ছে তার স্বাভাবিকত্ব...। কিরণ দেওয়া উজ্জ্বল গোলাপি, নীল-সাদা কাপড়ের অপূর্ব কারুকাজ...! মেঝেতে পাতা কার্পেট, তারই মধ্যে অপরুপ মায়াবী দৃষ্টি নিয়ে টুকটুকে লাল শাড়িটা পরে খোঁপায় জড়ানো জুঁই-রজনীগন্ধার বৃত্ত নিয়ে আবির্ভাব হলো তোমার সম্পূর্ণ শরীরটা!
 বন্ধুর একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা, ভীষণ গুরু দায়িত্বে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ছিলাম আমি কিন্তু সে বাঁধন হঠাৎ-ই যেন খোলা শুরু হলো। শত ব্যস্ততা সত্বেও কেমন যেন সাময়িক স্তব্ধ হয়ে গেছিলো আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তোমার শুভাগমনে!  আমার সমস্ত গুরুত্বগুলো পূর্ণভাবে মুহুর্তেই যেন তোমার অসম্ভব মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকর্ষিত হতে লাগলো। নির্ভুল অনুভবে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, হৃদস্পন্দন তার গতিকে বৃদ্ধি করেছে।........ নাঃ ভূল হচ্ছে!
কার আত্মীয়া বা স্পেশাল কেউ হবে ....  নিজেকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হল যখন পুনরায় অনুভব করললাম যে  হৃদস্পন্দন তার গতিকে তখনও স্বাভাবিক করেনি। মনের মধ্যে বাড়াবাড়ি স্বপ্নের জন্ম হতে লাগলো না জেনে বুঝেই, বুঝলাম মাধ্যাকর্ষণ শক্তি  একনিষ্ঠভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে সমগ্র মন জুড়ে!......... দায়িত্ব'পূর্ণ'-টা কখন যে শূণ্য হবে সে আশায় কাজগুলো অগোছালোভাবে কোনোরকমে সম্পন্ন করেই বেশ কিছু সময়ে পরে আবিষ্কার করলাম আমার বন্ধুর বোনের তুমি ছিলে বেষ্ট ফ্রেন্ড মাধবী। 
সুযোগ পেলেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কেন্দ্রে নিক্ষেপ দৃষ্টিটাকে, বুঝলাম সাড়া মিলছে! পুলকিত মনটা নিঃশব্দে হয়ে উঠছিল খুশি খুশি! ইতিবাচক ঈঙ্গিতের জোয়ারে সম্পূর্ণ ভাসিয়ে দিয়েছিলাম নিজের সমগ্র সত্তাকে! অবশেষে দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে ও পরে সৃষ্টি করলাম সংসার। বছর দুই-তিনের মধ্যেই আমাদের ছোট্ট সংসারে যোগ হলো আমাদের আদরের মানিক!
 অনেক ত্যাগ স্বীকার করে, নিজেদের বেশ কিছু স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করে ধীরে ধীরে পরম যত্নে ও স্নেহ মমতায় এবং আমার সাধারণ চাকরীর তিলে তিলে জমানো প্রায় সবটুকু দিয়ে আমাদের সোনা মানিককে উপযুক্ত পড়া-লেখায় করে তুললাম সমৃদ্ধশালী। তোমার জটিল রোগ যখন ধরা পড়লো তখন আমাদের সোনার ফাইনাল ইয়ার, চিকিৎসায় অযথা ব্যয় তুমি চাওনি।

আজ আমাদের মানিক অনেক নামকরা ডাক্তার, দেশ-বিদেশ জুড়ে তার খ্যাতি। কত সম্মান, কত অর্থ! দুটো গাড়িও কিনেছে সে। নানা ধরণের কোট-টাই আর জুতোয় তার আলমারী লাভ করেছে পূর্ণতা!
 "জানোতো আমাদের বউমা পুরো মেম..... আমাকে  যত্নের চেয়েও ছেলেদের মতন কাটা চুলগুলোয় তার প্রাধান্য বেশি। প্যান্ট-শার্ট তার ভীষণ প্রিয়! ঘোমটা জিনিসটা বৌমার সমাজে অস্বস্তিজনক এক ঘৃণ্য প্রথা!
 আমি ভালোই বুঝি, ওদের সোসাইটিতে আমি আজ দশ পয়সা! দামি দামি লোক আসে আমাদের সোনার কাছে। ওরা বলে নাকি, কোনো একদিন ঝড় জলের রাতে অসহায়ভাবে পড়ে থাকা এক বৃদ্ধকে বাড়িতে তুলে আশ্রয় দেয় আর সেই থেকেই আমি ওদের বাড়িতে পোষ্য আছি।
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো আমি কি বলছি? তোমার ওই  মুখটা আমি আজ আর দেখতে পাইনা ভালো, ওরা মোছেনা তোমার ছবিটাকে, মালা তো দুর। আজ প্রায় তেইশ বছর হলো তুমি চলে গেছো আমায় ফেলে। তুমি কি আর একবার আসবে আমার কাছে,  আসবে তুমি সেই মায়াবী দৃষ্টি নিয়ে? 
জানো মাধবী?... আমার শরীরটা খুব দুর্বল, চোখেও ভালো দেখিনা। শীর্ণ জীর্ণ শরীরে শীরা-ধমনী অনুভবে টের পাই। সমগ্র চুলে বোধহয় ক্লোরোফিলের অভাব! অন্তরের ভালোবাসা পাইনা অনেকদিন হয়ে গেছে গো! বউমাকে অনেকবার বলেছি নতুন একটা চশমার কথা, বৌমার সময় হয়না, নানা পার্টিতে ভীষণ ব্যস্ত সে। 
খোলা জানালায় আমি অস্পষ্ট অপলক দৃষ্টিতে অনুভবে দেখতে পাই তোমার সেই অপরুপ মায়াবী দৃষ্টি আর আমার দুর্বল চোখ থেকে ঝরে পড়ে বড় যন্ত্রণার অশ্রু! তুমি কি আসবে মাধবী আর একটি বার? 
আজ-ও আমার হৃদস্পন্দন তার গতিকে মাঝে মধ্যেই বৃদ্ধি করে। এই নিঃসঙ্গ জীবনে আর একবার তোমায় পেতে চাই। জানালায় প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত আমি তাকিয়ে থাকি বড়ো আশা নিয়ে.......... তুমি আসবে বলে!!"

    
----------------------------------------------------
Tanmoy Sinha Roy, Natunpally (east) Padmamadhu, P.O + P.S-Sonarpur, Kolkata-700150
8481963093(Whats App)
-----------------------------------------