বধূবরণ
তোমার শরীরের আশটে গন্ধে আমার ঘুম আসে না। তোমার সারা গায়ে ঘামের দুর্ঘন্ধে গা ঘিনঘিন করে। আঙুলে তরকারির দাগ,মনে করিয়ে দেয় তুমি একজন রাঁধুনি। আমার মনের ঘরের মল্লিকা নও। তোমার মেঘ বরন চুলে সেই সুগন্ধ আর নেই। আছে তেলের ভ্যাপসা গন্ধ।
চেয়ে দেখেছ,নিজের দেখে একবার। কি হাল করেছ শরীরের?
চোখের কোণে কালি। আধ পাকা চুল।কাছে এলেই আমার গা গুলায়।
পারি না সারা রাত তোমার কাছে থাকতে । একটু আদর করতে। কাছে টেনে নিতে। সংসারে, সবার কথা ভাবতে ভাবতে আমাকেই দুরে ঠেলে দিয়েছ। কোনো দিন আমার কথা ভাবো নি। আমি কি চাই? খোঁজ রাখো নি? যখন ই বলতে চেয়েছি আমার চাওয়া পাওয়ার কথা। ছেলেটা কেঁদে উঠেছে "মা " বলে। তাকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুমিয়ে পড়েছ অচৈতন্য হয়ে।আর ঘুম ভাঙে নি। অফিস যাবার সময় আমার চাওয়া পাওয়া গুলো তলিয়ে গেছে তোমার বুকের খাঁজে।
কথা গুলো একটানা বলে গেল বছর ৫০এর পুরুষ অখিলেশ।
পাশে দাঁড়িয়ে তখন তাঁর ৪৫বছরের জীবন সঙ্গিনী।তিন সন্তানের মা জ্যোতি।
যেমন নাম,তেমন ই ছিল তাঁর গুন
বিরাট সংসারের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে আজ সে নিঃস্ব। চুপচাপ শুনে গেল স্বামীর মনভর্তি নালিশ। যার মধ্যে ভালোবাসার লেশ পর্যন্ত নেই। কোনো প্রতিবাদ করল না জ্যোতি।
দু-বার কন্যা সন্তান হবার পর কিছুতেই তাকে অপারেশন করা হলো না । কারন বংশের আলো জ্বালাতে চায় একটা ছেলে।
তাই মেনে নিয়েছিল জ্যোতি। স্বামী- শ্বশুরের আবদার রাখতে আবার পোয়াতী। ঠাকুর দেবতা দৈব্য মন্ত্রপূত চরণামৃত পান করেছে অনায়াসে। যে যা বলেছে একটা ছেলে পেতে তাই করেছে। নিজের কথা ভাবে নি কিন্তু সংসার কে দেখবে? দুটো মেয়ের দেখাশোনা করে স্বামী শ্বশুরের সেবা করে নিজের খেয়াল রাখার সময় ই ছিল না।
অখিলেশ কোনো দিন বলে নি জ্যোতিকে, নিজের খেয়াল রাখতে। ছেলে পাওয়ার আশায় বুঁদ হয়ে ছিল।
দূর্বল শরীরে জ্যোতির, দশমাস পরে একটা ফুটফুটে ছেলে হলো। খুব খুশি বাড়িসুদ্ধ সবাই। দূর্বলতার জন্য ডাক্তার বাবু লাইগ্রেশন করতে পারল না।
অখিলেশ দিনের পর দিন একা একা থাকতে থাকতে অসহ্য হয়ে উঠলো। একমাস যেতে না যেতে একদিন জ্যোতির সম্মুখে কামনার দাবী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নিজের সকল সুখ পেতে জ্যোতিকে কাছে টেনে নিল।
এক দূর্বল মুহুর্তে, গভীর মিলনে একাকার দুটো শরীর দুটো মন।
কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার প্রজেটিভ সিগন্যাল দেখালো।
লজ্জায় মরে যায় জ্যোতি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে সন্তান নষ্ট করার মতো জঘন্য অপরাধ করতে বাধ্য হলো।
জ্যোতির জীবন -মরন সমস্যা দেখা দিল। ডাক্তার কোনো মতে সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দিল জ্যোতিকে।
কিন্তু সাবধান করে দিল, দুজনের এরকম মিলন এই মুহুর্তে সম্ভব নয়। আবার এমন কিছু হলে আর বাঁচানো যাবে না জ্যোতিকে।
সেই থেকে ই জ্যোতি আর অখিলেশ খুব সাবধানী। একাকীত্ব গ্রাস করল অখিলেশকে। জ্যোতি সব বুঝে ও ছেলে মেয়েদের স্বামী শ্বশুর নিয়ে সংসারে ডুবে গেল।
শুরু হলো অখিলেশের নতুন জীবন।
অখিলেশ খুঁজে পেয়েছে আর এক নারীকে। আর এক মনের সাথী কে।যে ভুলিয়ে দিতে পারে সকল যন্ত্রনা। মুছে দিতে পারে কপালের ঘাম। ভরিয়ে দিতে পারে সকল কামনা বাসনা।
এক ই বাসের যাত্রী নন্দিনী রায়। এক ই পথের সাথী। যার স্বামী আছে, ভালোবাসা নেই। ঘর একটা আছে,থাকার মতো মনের মানুষ নেই। সে ঘরে নেই আলো নেই খুশির ঝলক।
কবেই ছেড়ে চলে গেছে অর্ধ পাগল মাতাল স্বামী। রেখে গেছে নির্যাতনের প্রতীক একটা দশ বছরের মেয়েকে।
অখিলেশকে পেয়ে নতুন করে জীবন ফেরে পেল। নতুন এক মানুষ নতুন সংসার।
একদিন দাবী করে বসলো, তাকে স্ত্রীর মর্যাদায় মর্যাদা দিতে হবে। দিতে হবে সামাজিক স্বীকৃতি।
নইলে পরকীয়া প্রেমের জোয়ারে নিজেকে কলূষতা করতে পারবে না।
এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে অখিলেশ, জ্যোতির কাছে এসে উপস্থিত।
আজ তার মনে শুধু নন্দিনী। জ্যোতির কোনো স্থান নেই।
জ্যোতি সব মেনে নিল। ১৭ বছর একসাথে সংসার খেলার পরে মেনে নিল স্বামীর ইচ্ছে কে।
হাসি মুখে সাজিয়ে দিল নিজের স্বামীকে। বিয়ের সেই পাঞ্জাবীটা পরিয়ে দিল। পায়ে কলাপুরী। সারা শরীরে পারফিউমের গন্ধে উন্মাদ হয়ে গেল।
যাও,তাঁকে ঘরে আনো নববধূ সাজে।
বধুবরন করে গৃহে আনো। তোমার খুশিতেই আমার সুখ। তোমার জন্য ই আমার বেঁচে থাকা।
আমি তোমার নতুন সংসারের সারথি হয়ে থেকে যাবো দুজনের মাঝখানে।
আসছে মা দূর্গা বাপেরবড়ি বেড়াতে। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে জ্যোতি নিজেকে সঁপে দিল দেবীর চরণে।