অণুগল্প ।। সুমন্ত কুন্ডু - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Saturday, October 19, 2019

অণুগল্প ।। সুমন্ত কুন্ডু



অসহায় 


তিনজন লোক মাঝরাস্তায় পথ আটকে দাঁড়ালো অবনীশের তখন সন্ধের অন্ধকার ঘন হতে শুরু করেছে । নিঝুম রাস্তায় স্ট্রীটলাইটের আলোগুলো নীরবে সময়ের সঙ্গে সময় গুনে গুনে সময় কাটাচ্ছে । অবনীশ ভয় পেল ! লোকগুলোর মধ্যে একজন কর্কশ গলায় বলল 'যা আছে এক্ষুনি বের করে দে' । অবনীশ থমকাল । অফিসফেরতা মধ্যম মাপের কর্মচারির কাছে যতটুকু যা থাকে তার বেশি কিছুই নেই । একটা লম্বা হ্যান্ডেল দেওয়া কালো ব্যাগ । তাতে কিছু কাগজপত্র, লোণের ফাইল, টিফিন বক্স, ভাঁজ করা ছাতা আর টুকিটাকি নিতান্তই সাধারণ কিছু বস্তু । হাতে রেডিয়াম দেওয়া সস্তা হাতঘড়ি, পকেটে পার্স আছে বটে কিন্তু তাতে সব মিলিয়ে সওয়া তিনশোর বেশি হবে না । তবু অবনীশ ভয় পেললোক তিনটে আরও এগিয়ে এলো, প্রায় ওকে ধরে ফেলবে এবার পালিয়ে যাওয়ার পথ নেই, দু'পাশেই দেওয়ালতাতে লাল, সবুজ, গেরুয়া রঙে আঁকা, ফুল-ঘাস-হাত-হাতুড়ির ছবি দেওয়াল-লিখন নয় যেন সমাজের ললাট-লিখন ।
            আবার হুংকার 'যা আছে সব দে, পালাবার পথ নেই'। সত্যিই নেই, অবনীশ জানে পালিয়ে বেশিদূর যাওয়া যায় না । ঘরে বউ, সমত্ত মেয়ে, উঠতি ছেলে – পালিয়ে যাবে কোথায় ? আগন্তুকরা আরও কাছে এগিয়ে এলো ওর । ওদের ছায়া মিলেমিশে বিকট আকার নিয়ে ঘিরে ফেলল অবনীশকে অবনীশের মুখচেনা । রাস্তায় রাস্তায় এদেরই ছবি, ভোটের সময় এদেরই দেখা যায় মা-বাপের ভূমিকায় । এরাই সরকার, এরাই বিরোধী, এরাই কানুন, এরাই নিয়তি । এরা ঘরে থান কাপড় পাঠাতে পারে, মেয়ের মুখে অ্যাসিড দিতে পারে, ছেলের পেট বরাবর চাকু চালিয়ে ফেড়ে ফেলতে পারে । এদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো রাস্তা পি ডবলু ডি এখনও বানায়নি কিম্বা বানালেও অবনীশ সে পথে যাওয়ার মতো সাহস বা সম্বল কিছুই সঞ্চয় করতে পারেনি অতএব পালিয়ে যাওয়া ওর পক্ষে অসম্ভব ।
            বাধ্য হয়েই ছেলে তিনটের হাতে নিজের সবকিছু তুলে দিল । প্রতিবেরেই দেয়মানিব্যাগ, হাতঘড়ি, কালো ছাতা ছাড়াও আরও অনেককিছু । সাধারণ মানুষের যেটুকু সম্বল – সোজা হাঁটার শক্তি, প্রত্যুত্তর দেওয়ার সাহস, চোখে চোখ রেখে তাকানোর দৃঢ়তা । মাঝপথে সব কিছু দিয়ে দিয়ে কোনক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসে প্রতিদিন । 
____________