google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re সিদ্ধার্থ সিংহের অণুগল্প - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯

সিদ্ধার্থ সিংহের অণুগল্প


সত্যি সত্যি


মুর্শিদাবাদ ঘুরতে যাচ্ছে বানেশ্বর। ট্রেনের দোলানিতে বেশ তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। ভাবছিল, গতকালের কথা।
গতকাল বিকেলবেলায় জীবনদ্বীপের উল্টো দিকে এলিয়ট পার্কে বসেছিল ওরা। ও মুর্শিদাবাদ যাচ্ছে শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল ঝুম্পার। সেটা দেখে ও বলেছিল, দুটো দিনের তো ব্যাপার। যাব আর আসব।
--- দু... উ... উ... উ... টো... দিন! তোমাকে দু'দিন, মানে আটচল্লিশ ঘণ্টা না দেখে থাকতে হবে!
বানেশ্বর বলেছিল, তুমি আমাকে খুব ভালবাসো, না?
--- হু। লজ্জা পেয়ে উপর-নীচে মৃদু মাথা দুলিয়েছিল ঝুম্পা।
--- আচ্ছা, তুমি কি এ রকম ভাবে আর কাউকে ভালবেসেছ?
--- ধ্যাৎ, আজেবাজে কথা বোলো না তো...
--- না, বলছি, আমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে? --- না।
--- আচ্ছা, তা হলে গত পাঁচ বছরে?
--- না। ঝুম্পা বলেছিল।
--- গত আট বছরে?
--- উঁহু, না।
--- তা হলে বারো বছরে?
---  কোন সাল সেটা? কোন সাল! না... না... নাঃ।
--- গত কুড়ি বছরেও কি এত ভালবাসিনি কাউকে? সত্যি বলছ? আমাকে ছুঁয়ে আছে কিন্তু। মিথ্যে বললে আমি মরে যাব।
ঝুম্পা বলেছিল, সত্যি বলছি, বিশ্বাস করো। আমি কাউকেই তোমার মতো এত ভালবাসিনি।
গতকালের সেই কথা ভাবতে ভাবতে বানেশ্বরের চোখ বুজে এসেছিল। হঠাৎ হুড়মুড় করে কারা যেন চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ল। সবাই বুঝতে পারল, এরা কেউ ছিঁচকে চোর, ছিনতাইবাজ কিংবা ডাকাত নয়। এরা টেরোরিস্ট। উগ্রপন্থী। এই ট্রেনটাকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য এরা একেবারে তৈরি হয়ে এসেছে। যে কোনও সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে।
ও মুর্শিদাবাদে যাচ্ছে হাজারদুয়ারি দেখতে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! তা হলে কি গতকাল ওর চোখে চোখ রেখে ঝুম্পা মিথ্যেকথা বলেছিল!
মন্ত্র
সিদ্ধার্থ সিংহ
থালায় একটু চাল আর দুটো আলু দিয়ে বউ বলল, যাও, দিয়ে এসো।
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কালো আলখাল্লা পরা এক ফকির বাবা। বিনায়ক তাঁর ঝোলায় উপুর করে সেটা ঢেলে দিতেই, ফকির বাবা তাঁর দু'হাত মুঠো করে ওর সামনে মেলে ধরে বললেন, বেটা, আমার দু'হাতের মুঠোয় দুটো মন্ত্র আছে। তুই যেটা ইচ্ছে দিতে পারিস।
মন্ত্র! ভুরু কোঁচকালো বিনায়ক।
ফকির বাবা বললেন, আমার ডান হাতের মন্ত্রটা উচ্চারণ করলেই, তোর শরীরে সময় আর কোনও দিনই কোনও আঁচড় বসাতে পারবে না। দেশের সেরা সুন্দরীরা তোর বশীভূত হয়ে থাকবে। যতই খরচ করিস না কেন, তোর ব্যাংক ব্যালান্স দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে।
--- আর বাঁ হাতেরটা? জানতে চাইলে বিনায়ক।
--- বাঁ হাতের মন্ত্রটা উচ্চারণ করলেই, যখন ইচ্ছে, যতক্ষণ ইচ্ছে, তুই অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারবি। ইচ্ছে হলে, যা ছুঁবি, সেটাকেও অদৃশ্য করে দিতে পারবি। আর মন চাইলে, যে কোনও অদৃশ্যকে সবার সামনে দৃশ্যমান করে দিতে পারবি। নে বেটা, নে। কোনটা নিবি?
--- কোনটা! কোনটা! কোনটা! বিনায়ক একবার ডান মুঠোর দিকে তাকায়, একবার বাঁ মুঠোর দিকে। আচ্ছা, এক মিনিট, বলেই পকেট থেকে এক টাকার একটা কয়েন বার করে করল সে।
যখন দুটো অপশন থাকে এবং দুটোর একটাকেও ছাড়তে মন চায় না, দোটানায় পড়তে হয়, তখন একমাত্র পথ হল, টস করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
টস করার জন্য কয়েনটা উপর দিকে ছুড়ে দিল বিনায়ক। কিন্তু ধরতে পারল না। উপর থেকে পড়েই গড়াতে গড়াতে হাইড্রেনের ফাঁক গলে টুক করে নীচে পড়ে গেল।
--- নে বেটা, নে, কোনটা নিবি নে... ফকির বাবা ফের বললেন।
বিনায়ক তাঁর দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, আবার?
প্রতিবেদন
সিদ্ধার্থ সিংহ
গোটা দেশ সবুজে-সবুজ। ফুলে-ফুলে ছেয়ে আছে অলিগলি। প্রজাপতির পাখনা থেকে রং ঝরে ঝরে মিশে যাচ্ছে মানুষের মনে। কচি কচি বাচ্চারা কাঁটা-ঝোপঝাড়ে হুঁচোট খেয়ে পড়েও হাসে। যেন মায়ের কোল। সাদা কবুতরদের ডানা এত ভারী হয়ে উঠেছে, আর কোনও দিনই হয়তো উড়ে যেতে পারবে না এখান থেকে।
প্রতিবেদনটা পড়েই শঙ্খশুভ্র ঠিক করে ফেলল, এই স্বপ্নময় প্রতিবেশী দেশে যাবার। না, আকাশ পথে নয়। সে সব কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে চায়। পারলে, পায়ে হেঁটেই ঘুরবে গোট দেশ। সেই মতো রওনা হয়ে গেল সে। ওদের সীমানায় পা রাখতেই কে যেন তাকে একটা চশমা পরিয়ে দিল। ও বুঝতে পারল, কতগুলো সতর্ক দৃষ্টি তাকে আগলে রেখেছে। যেখানে যাচ্ছে, মোলায়েম কার্পেট পাতা। মাথার উপরে ছাতা। রাত কাটাতে হোটেলে ঢুকলেই দরজার কাছে লাইন দিয়ে হাজির সার সার ডানা টাকা পরী।
সত্যিই কি দেশটা এমন! সব ক'টা চোখকে ফাঁকি দিয়ে ঝট করে ও ঢুকে পড়ল সামনের একটা ফটকে। চশমাটা খুলল। মনে হল, সরকারি অফিস। চেয়ারে-চেয়ারে ওরা কারা! মুখগুলো অন্ধকারে ঢাকা! চোখ উপড়ে ফেলা কোটর। ঠোঁট জুড়ে সূক্ষ্ম সেলাই। পাঁজর খুঁড়ে চাই চাই পাথর ভরা। কপালের পাশে ঠেকানো আগ্নেয়াস্ত্রের নল। মাথা গুঁজে সোনার কলমে ওরা লিখে যাচ্ছে কী সব। উঁকি দিয়ে শঙ্খশুভ্র দেখল, সেই প্রশস্তি প্রতিবেদন, যেটা পড়ে ও এ দেশে এসেছে। সেটাকেই আরও আরও আরও বর্ণময়, চমকপ্রদ, নিখুঁত করে তুলছে ওরা।
==============
সিদ্ধার্থ সিংহ
২৭/পি, আলিপুর রোড,
কলকাতা ৭০০০২৭
ফোন : 9836851799
            8777829784