অণুগল্প : সঞ্জয় কুমার মল্লিক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Saturday, October 19, 2019

অণুগল্প : সঞ্জয় কুমার মল্লিক



                      দুর্গা পূজার আনন্দ

                

বর্ষার ঝিমঝিম বৃষ্টি থেমে গেছে।গায়ে এসে লাগছে হিমেল হওয়া।উঠনের শিউলি ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা বাতাস।অন্ধ,বৃদ্ধ মানিকবাবু গিন্নিকে বলে,দূর্গা পূজার আর কতদিন বাকী জানো?
       -হ্যাঁ,আর কয়েকটা দিন বাকী আছে।তোমার তাতে কি?তুমিতো কোথাও যেতে পারবে না।
      - সে অবশ্য তুমি ঠিকই বলছ,তবু পূজাতো।দূর্গা পূজা এলেই সবার মতো আমারও মন আনন্দে ভরে ওঠে,মাইকে শুনতে পাই ঢাকের শব্দ,মন্ত্র উচ্চারণ।আমিও অনুভব করতে পারি দূর্গা পূজা হচ্ছে।ওই চারদিন নিয়ম করে পাড়ার ছেলের দল নানান খাবার পৌঁছে দিয়ে যায়।এই চারটে দিনের অপেক্ষায় কেটে যায় সারাবছর।এমনিতে বছরের অন্যান্য সময় খুব একটা খাওয়াতো আর হয়ে ওঠে না।তাই পূজার কটা দিন খুব মজা হয়।
       গিন্নি এসব কথা শুনে চুপ করে যায়, 
       কিছুক্ষণের নীরবতা ভেঙে গিন্নি বলে,আচ্ছা তোমার খুব কষ্ট হয় বল ?
      -সেতো হয়,তবে নিরুপায় হয়ে সহ্য করতে করতে এ এক রকম গা সোয়া হয়ে গেছে, চোখের শেষ দেখা এ পৃথিবী,মানুষ সবই থমকে গেছে, সময় পেরিয়ে যায়,কিন্তু পরিবর্তন কিছু বুঝতে পারি না।থাক এও এক ভালো থাকা !
       -তবে তুমি যে দূর্গা পূজার আনন্দ নিতে চাও এও কি থমকে যাওয়া জীবন?
        -এক কথায় তাই।জীবনের শেষ দেখা দূর্গা প্রতিমা একই ভাবে আজো জ্বলজ্বল করে মনে,যেন দুচোখ দিয়ে দেখছি।এই যে সব পাড়ার মেয়েরা পূজাতে বাপের বাড়ীতে আসে,মন খুলে কত গল্প করে, হাসাহাসি করে আমি শুনে খুব আনন্দ পাই।ওরা যখন আমার সাথে গল্প করে,আমার খোঁজ নেয়,আমার মনে পড়ে যায় আমি ওদের ছোটবেলায় কত আদর করতাম,কোলে নিয়ে বেড়াতাম।আমার মেয়ে নেই,ছেলে নেই কিন্ত ওরা এলে আমার বুকটা আজো ভরে ওঠে।আমি আবার প্রাণ ফিরে পাই।আমি আগের মতো ওদের মুখে আদরমাখা হাত বুলিয়ে দিই।এগুলোই তো আমার পূজার আনন্দ।

        -কিন্তু ওরা যে অনেক বড় হয়ে গেছে।তুমি কি বুঝতে পার?
        -আমিতো বুঝতে পারি না,ওরাও তো বুঝতে দেয় না!আমি অনুমান করার চেষ্টা করি কিন্তু কতটা বড় হয়েছে তা বুঝতে পারি না।থাক ওসব কথা।
            দুজনে নিস্তব্ধ।
          মানিকবাবু আবার বলতে শুরু করে,জানো তোমার নারকেল কোরার শব্দ হলেই বুঝতে পারি বিজয়া দশমীর প্রাণামের জন্য তৈরি হতে হবে।ওদের হাতের প্রনাম পাওয়ার পর বুঝতে পারি,আমার উমারাও শ্বশুরবাড়ী চলে যাবে।তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।
        ওরা যখন শ্বশুরবাড়ী যাবার আগে প্রনাম করে,আমি দূর্গা মাকে মনে মনে বলি,মাগো ওদের তুমি সর্বদা বিপদমুক্ত রাখো।আমার উমারা যেন সুখে থাকে।আবার পরের বছর আমায় হাঁসিমুখে জিগ্যেস করতে পারে, কেমন আছো?