রক্ষা কবচ
অনেক বছর আগে লোকালয় থেকে বহু দূরে গভীর বনের মধ্যে ছিল ব্যাধ সম্প্রদায়ের বাস।খাবার ছিল তাদের বনের ফলমূল আর শিকার করা জীবজন্তু।একদিন দলবেঁধে শিকার করতে বেড়িয়ে দলছুট হয়ে তাদের মধ্যে তিন জন পথ ভুল করে ঢুকে পড়লো অচিনপুরে।তারা শহরের আদবকায়দা কিছুই জানতো না।অচিনপুরে পশুপাখি শিকার নিষিদ্ধ ছিল। ওখানকার রাজা অত্যন্ত দয়ালু আর অথিতিবৎসল ছিলেন। তার নগরীতে যেমন ছিল অনেক বিদ্যালয় তেমনই ছিল শিল্পের নানা আয়োজন। নগরীতে প্রত্যেকেই ছিল শিক্ষিত। ব্যাধেদের শিকার করতে দেখে,রাজার লোকজন তাদের ধরে রাজার কাছে নিয়ে গেল। তারা বলল, মহারাজ এই বহিরাগতরা অত্যন্ত নিষ্ঠুর হৃদয়ের। এরা নিরীহ প্রানী হত্যা করছিল। তাই আপনার কাছে এদের ধরে নিয়ে এলাম। রাজা দেখলেন, সুঠাম চেহারার তিনজন পুরুষ হাতে বল্লম আর তীর ধনুক নিয়ে অবাক চোখে তার দিকে চেয়ে আছে।রাজা কৌতুহলী হয়ে ওদের প্রশ্ন করলেন, তোমরা কে? কি তোমাদের পরিচয়? কোন দেশ থেকে আসা হচ্ছে? তোমরা জান না, এই নগরীতে পশুপাখি শিকার করা নিষেধ? ব্যাধেরা তাদের পরিচয় দিয়ে বলল, শিকার করাই তাদের একমাত্র জীবিকা। এই প্রথম তারা পথ ভুল করে বাইরের জগতে ঢুকে পড়েছে। এর আগে তারা বা তাদের পূর্বপুরুষ রা তাদের বাসস্থানের ত্রিসীমানার বাইরে কখনো পা দেয়নি। তাই তারা অন্য দেশের নিয়ম কানুন কিছুই জানে না। তবে এই দেশে এসে এখানকার সব ব্যাপার স্যাপার দেখে তাদের মনে হচ্ছে, শিকার ছাড়াও আরও অনেক পেশা আছে যার থেকে তারা অনেক সুন্দর ভাবে বাঁচাতে পারে।রাজা তখন ওদের বোধদয়ে সন্তুষ্ট হলেন।তিনি তখন মহামন্ত্রীকে ডেকে বললেন, মন্ত্রী মশাই ওদেরকে আমাদের অতিথিশালায় এক সপ্তাহ রেখে রাজ্যের সব কিছু আরও ভালভাবে দেখান।মন্ত্রী মশাই তক্ষুনি তার পারিষদের ডেকে সমস্ত কিছুর ব্যাবস্থা করতে বললেন। সাতদিন পর তাদেরকে আবার রাজসভায় হাজির করা হল।রাজা তখন তাদের প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি দেখলে বলো? ব্যাধ তিনজন সমস্বরে বলল, মহারাজ আমাদের মা,ঠাকুমারা স্বর্গ রাজ্যের গল্প আমাদের শোনাতেন এটা নিশ্চয়ই সেই দেশ। কিন্তু এখান কার মানুষ জন যে সব কাজ করছে, একটু চেষ্টা করলে আমরা ও তা করতে পারি। রাজা শুনে চমৎকৃত হলেন। তিনি তখন তার লোকজনদের বললেন, যাও ওদের নিজেদের রাজ্যে পৌঁছে দিয়ে এসো। ওরা অজান্তে প্রানী হত্যা করেছে।আর এটাই ওদের জীবিকা।উপযুক্ত শিক্ষা দিলে ওরাও নিষ্ঠুরতা ত্যাগ করে তোমাদের মতো সৃষ্টিশীল ও মরমি হতে পারে।আমাদের উচিত ওদের সেই সুযোগ করে দেওয়া। রাজার লোকজনেরা তাদের ছাড়তে গিয়ে দেখল, জায়গাটা গভীর বনের মধ্যে আর চারিদিকে শুধু জানা অজানা বিশাল বিশাল বনস্পতির সমাহার। কোথাও কোন পাকা ঘর বাড়ি বা কলকারখানা চিহ্ন নেই।তারা ভাবল,এখানে যদি শিল্প গড়ে তোলা যায় তাহলে অচিনপুরেরও প্রচুর কর্ম সংস্থান ও অর্থ উপার্জন হবে।অচিনপুরের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। তারা ফিরে এসে রাজাকে সমস্ত বিষয়ে অবগত করল।রাজা তখন তার যাদুকর কে ডেকে বললেন, যাও তোমার যাদুদন্ড দিয়ে ব্যাধেদের রাজ্যকে আর একটা অচিনপুর বানাও।আর ওখানকার লোকজনকে শিক্ষিত করে তোলো।যাদুকর ও শির নীচু করে রাজামশাই কে অভিবাদন জানিয়ে তার আদেশ পালন করতে ব্যাধেদের রাজ্যের খোঁজে বেড়িয়ে পড়ল।প্রায় একপক্ষ কাল পরে বহু পথ অতিক্রম করে যাদুকর সেখানে পৌঁছে দেখল, সত্যিই সেখানকার মানুষ সভ্য জগতের আদব কায়দা কিছুই জানে না। জীবন যাপন ও তাদের অত্যন্ত নিকৃষ্ট। কিন্তু আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের চোখেমুখেই অত্যন্ত সরলতার ছাপ।ক্লিষ্টতা ও অনিশ্চয়তায়র জন্য শরীরে একটা মলীনতার ছাপ।যাদুকরের খুব মায়া হল। সে তখন তার যাদুর বলে, রাতারাতি তৈরি করে ফেললো নতুন নগরী। সেখানে স্কুল, কলেজ, কলকারখানার সবই থাকল।ব্যাধেরা রাতারাতি শিক্ষিত হয়ে গেল।তাদের পুরনো জীবিকা তারা ভুলে গেল।তাদের বাচ্চারা,মেয়েরাও বিদ্যালয়ে পড়তে শুরু করল।তারা ও ছেলেদের সঙ্গে নানা কাজে হাত মেলালো।ছেলেরা কলকারখানায় কাজ করতে লাগলো। দ্রুত তাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটলো। এইভাবে বহু বছর কেটে গেল। কিন্তু একদিন সকাল বেলা উঠে তারা দেখল, তাদের বয়সের তুলনায় তারা অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছে।কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দের মাথার চুল পেকে গেছে, চামড়ার জৌলুশ কমে গেছে। তারা ভাবল তাদের শরীরে কোন অশুভ আত্মা প্রবেশ করেছে।ডাক্তার বদ্যি চিকিৎসা পথ্যও বিশেষ কাজ হল না। অতঃপর তারা তাদের আরাধ্য দেবী বুড়ি মার দারস্থ হল।আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই মিলে দেবীর কাছে গিয়ে তিন দিন ধরে হত্যে দিল। খিদে তেষ্টায় তারা অচৈতন্য হয়ে পড়লো। দেবী ভক্তদের একনিষ্ট প্রার্থনায় অন্তরীক্ষ হতে দৈববাণী করলেন।ভয় নাই তোরা স্বস্থানে ফিরে যা। তোদের রক্ষাকবচ আমি দিয়ে দিয়েছি। এই বলে দেবী অন্তর্হিত হলেন। ব্যাধেরা আশীর্বচনে আশ্বস্ত হয়ে আবার নিজেদের বাসস্থানে ফিরে গেল।সেখানে গিয়ে তারা দেখল, তাদের প্রত্যেকের উঠোনে সুন্দর সুন্দর গাছে ভরে গেছে।রং বেরংয়ের প্রজাতির চারিদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে। পাখি ডাকছে, কাঠবিড়ালি দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের চেহারাও আগের মতো হয়ে গেছে।কর্ম ক্ষমতা ও ফিরে পেয়েছে।নিজেদের দেখে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে সমস্বরে বলতে লাগল , "জয় বুড়ি মার জয় " অন্তরীক্ষ থেকে আবার দৈববাণী হল 'অন্ধের মতো কোন কিছু অনুসরণ না করে প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে চল। তাহলেই সুখে থাকবি।'
=========================
=========================
Chandrani Dutta
Kajora Hospital complex D/Type quarter
Po-kajora Gram
Dist--paschim burdhaman
Pin-713338
Mobile No.9002237423