Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

প্রবন্ধ ।। নব কলা পাত্রে শিক্ষা চিন্তন ।। তপন তরফদার



নব কলা পাত্রে শিক্ষা চিন্তন


প্রায়  ত্রিবিংশ বৎসরের পার  করিয়া নতুন  শিক্ষা নীতিমালা প্রনীত হইবে। প্রত্যেকে  আমরা প্রত্যেকের তরে। অতএব  আমরা  সবাই চিবুকে হস্তক্ষেপ করিয়া ভাবিত। 
 'আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে' - সত্যজিৎ ও রায় দিয়েছেন শিক্ষাপ্রণালীর পরিবর্তনের। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী অনুপ্রাণিত হইয়া স্থির করিয়াছেন, নতুন শিক্ষাব্যবস্থা ম করিয়া এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ লইয়া ইতিহাসে উজ্জ্বল জ্যোতিস্ক হইবার নজির রাখিয়া যাইবেন। সম্প্রতি ইচ্ছাটি প্রসব বেদনার মতোই চাগাড় দিয়া উঠিয়াছে। বাংলা ভাষার বর্ণ পরিচয়ের জনক বিদ্যাসাগরের মূর্তিকে খানখান করিয়া চূর্ণনে জন মানসের নজর কাড়িয়াছে। ইতি পূর্বে জাতির জনকের এক ও অদ্বিতীয় লাঠি অপহরণেও এই রূপ শোরগোলের উত্তাপ বঙ্গবাসী পায় নাই। শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সরেজমিনে সবিস্তারে জানিতে হইবে। নতুন ধাঁচে নবকলেবরে বিদ্যাসাগরকে স্থাপন করিতে হইবে। বিদ্যাসাগরের দ্বিশতক খন্ডিত অংশ অবলোকন করিয়া সুপ্ত বাসনা জাগরিত হইল শিক্ষামন্ত্রীর - আমাকেও শিক্ষাব্যবস্থা লইয়া চিন্তাসূত্র প্রয়োগ করিতে হইবে। 

আমার ও মূর্তি এখানে সেখানে স্থাপিত হইবে একদিন। যথারীতি মূর্তি ভাঙিলেই সংবাদ মাধ্যমের খবর হইয়া মরিয়াও মরিল না, প্রমাণিত হইব। কিন্তু কিরূপে কি মশলা দিয়া নতুন শিক্ষাসৌধ গড়িবেন সেই চিন্তায় প্রায়শই স্নানঘরে নগ্ন হয়ে মগ্ন থাকেন। অদ্যাপি সেই বিজ্ঞানীর মতোন মত্ত হইয়া নগ্ন-শরীরে ইউরেকা ইউরেকা বলিয়া বঙ্গবাসীর জ্ঞাতার্থে কোন সূত্র উদ্ভাবন করিতে পারেন নাই। মানসিকভাবে সামান্য বিপর্যস্ত্য। কিন্তু বঙ্গদেশীয় বিদ্বজন শিক্ষকমন্ডলী শিক্ষামন্ত্রীকে বঞ্চিত না করিয়া মহাশয়ের আজন্ম লালিত ভিন্ন এক ইচ্ছার ইচ্ছাপূরণ করিলেন।   

উত্তরবঙ্গের কালিদাস বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষ শিরোপা উপঢৌকন দিয়াছেন শিক্ষামন্ত্রীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ কালিদাস ইহার নিমিত্তিই সৃষ্টি হইয়াছিল। যত্রতত্র বৃক্ষশাখা কর্তন করিয়া, নিজস্ব কর্ন-নাসিকা মর্দন করিয়া প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তৈলমর্দন করিতে পিছপা হইবেক না। শিক্ষামন্ত্রীর নব্যউদ্ভাবনী শিক্ষাসূত্রর জন্য উনি পিতৃদত্ত নামাবলীর পূর্বে একটি বিশেষ আলঙ্কারিক অক্ষর ব্যবহার করিবেন যাহার দ্যূতি হীরকের ন্যায় ঔজ্জ্বল্যের ঝিলিক বিচিত্রস্থানে গমন করিবেক। এই শিরোপার তরে মনলোভা বিদ্বজন সহ মন্ত্রীরাও লালায়িত। 

অদ্য স্বয়ং রাজ্যপাল স্বহস্তে সেই উদ্ভট পোশাকে মস্তকে তাসের দেশের রাজার মতো টুকটুকে রঙিন কাপড়ের 'লিবার্টি ক্যাপ' শিরস্ত্রাণের আদলে মস্তকে ধারন করিয়া শিক্ষামন্ত্রীর বক্ষে আলিঙ্গন করিয়া মহামূল্যবান তুলটের কাগজটি প্রদান করিলেন। দূরদর্শন ও দৈনন্দিন দৈনিক বাজারি পত্রিকার চিত্র সাংবাদিকরা পুনর্বার বক্ষ আলিঙ্গনের অনুরোধ করিলেন। তাঁহারা মন্ত্রীমহোদয়ের ঐতিহাসিক ছবি প্রচার করিবেন। মন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা পূরণ করিয়া উনার সন্তুষ্টির নিমিত্তই এই প্রয়াস।

শিক্ষামন্ত্রী সপার্ষদ উজ্জ্বল নীল বর্ণের তৈল চালিত চার চাকার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বলেরো রথে উপবেশিত হইয়া ফণী ঝড়ের ন্যায় নবযৌবন প্রাপ্তীর আনন্দে নবান্নের অলিন্দের তরে অগ্রসর হইতেছেন। মন্ত্রী তাহার হাফ-হাতা নীল-সাদা ডোরা কাটা খদ্দরের পাঞ্জাবির বুক পকেট হইতে মুঠোফোন নির্গত করিতে বাধ্য হইলেন। তারঃস্বরে ক্ষুদ্র যন্ত্রটি বলিতেছে - বন্দেমাতরম, সুজলাং-সুফলাম-মাতরম। 
যন্ত্রটিতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি স্পর্শ করিয়া নিজ কর্ন-কুহরে স্থাপন করিয়া বলিলেন - বল।
অপর প্রান্ত হইতে উচ্চস্বরে ধ্বনিত হইল - স্যার, আমি শঙ্কুদেব দেববর্মন। 
এই নামটি এক্ষনে বঙ্গদেশের অতি পরিচিত স্বনামধন্য মান্যবর মনিষীদের অন্যতম সার্বজনীন সংগ্রহযোগ্য নাম। এই ব্যক্তি ও তার পুত্র বেলতলা বিদ্যানিকেতনের সহিত অতি সক্রিয় হইয়া জড়িত। পিতা শঙ্কুদেব এই বিদ্যানিকেতনের ছাত্র সাংসদের মহাসচিব। পুত্রও 'সক্রিয়' ছাত্র। বিস্তারিত রূপে অনুসন্ধান করিলে গিনেস রেকর্ডের অধিকারী হইবেক। বিশেষ সংবাদে শঙ্কুদেব ঘোরতর শঙ্কায় ছিলেন - সরাসরি ছাত্ররা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে মহাবিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার অর্জন করিবেক। শিক্ষা শুরুর পূর্বে শিক্ষাঙ্গনে পদধূলি প্রদানের প্রয়োজন নাই। শঙ্কুদেব ওই সময়ে শঙ্কাগ্রস্ত গলায় বলিয়াছিল - আমরা ছাত্র নেতারা কিরূপে 'রূপিয়া' অর্জন করিব, বাল-বাচ্চা সহ সংসার কি মন্ত্রে প্রতিপালিত করিব। মন্ত্রী মহাশয়ের পূজোয় প্রদান করিবার অর্থ কোন যাদুমন্ত্রে সংগ্রহ করিব?
উক্ত সময়ে মন্ত্রী নির্ভিক কন্ঠে আশ্বস্ত করিয়াছিলেন - যতই বৈদ্যুতিন মৈদ্যুতিন হউক, সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষই ফাঁকফোকর রাখিবে এবং ফাঁকতাল দিয়া ভালই অর্থ উপার্জন করিতে পারিবেক। সঠিক হিসাব কষিলে দেখা যাইবে শতকরা হিসাবে ন্যায়ত আমাকে আরও অর্থ প্রদান করিবে।
শঙ্কুদেব ছাত্র সমস্যার বিষয় উত্থাপন না করিয়া সজোরে শরবাণ নিক্ষেপ করিল - স্যার, মমতাময়ী ফরমান করিয়াছেন, আজ হইতে 'কাটমানি' অবৈধ ঘোষণা করিয়াছেন। আরও বলিয়াছেন কাটমানি হানিকারক হইয়াছে। উহা ওয়াপস করিয়া কালীঘাটের মন্দিরে পূজা প্রদান করিয়া বিশুদ্ধ দেশহিতব্রতী হইতে হইবেক। 
মন্ত্রী দন্তবিকশিত হাসি হাসিয়া বলিলেন - সময়ে সব ঠিক হইয়া যাইবেক। চিন্তা করিবেক না।      

শিক্ষামন্ত্রীর মস্তকের কেশরাজি কুচকুচে কালো। এই কালোতে ভূষন্ডীকাক বা ভুষিকালিও পরাজয় বরণ করিতে বাধ্য। কর্নদ্বয়ের পার্শ্ব হইতে সাদা-সফেদ চুনকাম করা কাঁচি দিয়ে সূক্ষ্ম্য কারুকার্য করা শ্বেত শুভ্র ফরাসিমার্কা দাড়ি। দেহবল্লরী ভালুকের সমগোত্রীয়। মন্ত্রী ভালুক মুখের সাচ্চা শুভ্র দাড়িতে হস্তমর্দন করিতে করিতে ধূসর চক্ষু দুইটি চশমার ফোকর হইতে প্যাটপ্যাট করিয়া দিগন্ত বিস্তৃত ধান ও পাট ক্ষেতের ধারে ধারে প্রোথিত বট-অশ্বত্থ বৃক্ষের শীর্ষদেশ পারাপার করিয়া ফিরোজা আকাশ অবলোকন করিতেছেন। আজ বড় আনন্দের দিন। শিক্ষামন্ত্রীর হৃদয়ে এক্ষনে পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ও ভাবনা উদিত হইতেছে। পুরীর মন্দিরের ন্যায় এক নকল মন্দিরের চূড়ায় গৈরিক পতাকা পতপত করিয়া ডানা ঝাপটাইয়া উড্ডিয়মান। যাহা অবলোকন করিয়া মন্ত্রীর অক্ষিগোলক প্রায় নিথর হইয়া স্থির হইয়া যায়। শিক্ষামন্ত্রীর বংশের পূর্ব প্রজন্মের প্রপিতামহ কৃষ্ণানন্দ ছিলেন রাজশাহীর ভূমিপুত্র। বিধর্মীদের দ্বারা ধর্মচ্যূতি এবং সামাজিক অত্যাচার হইতে পরিত্রানের নিমিত্ত সপরিবারে পালাইয়া আসিয়া ভদ্রাসন নির্মান করেন নবদ্বীপধামে। পবিত্র ভূমিতে তাঁর পুত্র পরমানন্দ একই চতুষ্পঠিতে শ্রী চৈত্ন্যদেবের সহপাঠী হইয়া তালপাতার পুঁথি সমুদয় গোগ্রাসে গিলিয়া, মুখস্ত করিয়া হৃদয়ে ধারন করিতেন। পরবর্তীকালে ভাটপাড়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করিয়া পরমানন্দ "অগম বাগীশ" উপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন। তৎকালীন ভাটপাড়া ছিল বাংলার অক্সফোর্ড। ছায়ায় ঘেরা শান্তির নীড়। দূর-দূরান্ত হইতে ছাত্ররা আসিত। আয়ূর্বেদ, জ্যোতির্বিদ্যা,কাব্য থেকে ন্যায়দর্শনের শিক্ষালাভের জন্য। এখানকার শিক্ষকেরা তর্কে পরাস্ত করেন আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকেও।    

ওনার একান্ত মনস্কামনা ছিল মহামহোপাধ্যায়, উপাধ্যায় বা বেদান্ত পন্ডিত-প্রবর উপাধি অর্জন করিয়া নামের অগ্রভাগ কর্নকুন্ডলীর মতো জ্বুল জ্বুল করিবেক। তদানীন্তন উচ্চাশা বা উচ্চাকাঙ্খা পরিপূর্ণ হয় নাই। সমগ্র জীবিতকাল ঐ টুলো পন্ডিতের পরিচয় লইয়া বৈতরণী নদী পার করিয়াছিলেন। বিষয়টি পরিবারের একাধারে লজ্জা এবং জ্বালা। সমাজের নিকট ইহা লজ্জার বিষয়, নিজেদের হৃদয়ে-মনে শিল নোড়ায় পেষিত লঙ্কা বাটার ন্যায় জ্বালায় সর্বদাই জ্বলিতে থাকিত। বংশ পরম্পরায় এক সুপ্ত ক্ষোভ সহ জ্বালা এইক্ষণেও বিরাজমান। 

শিক্ষামন্ত্রীর মা মানদা দেবী, তির্যক ও কর্কশ স্বরে হামেশাই বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর গোচরে আনেন। বারংবার বিষয়টি সুপুত্রের কর্নকুহরেপ্রবেশ করাইয়া স্মরণ করান। পূর্বপুরুষদের ক্ষমতা ছিলনা - উপাধির জন্য প্রতিপত্তি, অর্থ ইত্যাদি ব্যয় করিবার। অবশ্য তৎকালীন সময়ে ওই উপাধি ক্ষমতা বলে বা উৎকোচের দ্বারা অধিগ্রহণ করিতে কেহ অগ্রসর হইত না।

সময় পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। সামাজিক নিয়মনীতি, রীতিরও পরিবর্তন হইয়াছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর হাতের তালুতে সেই সুবর্ণ সুযোগ পকেটস্থ করিবার, শিক্ষামন্ত্রীর অঙ্গুলিনির্দেশেই টুকুস করিয়া খাজা কাঁঠাল মান্যবরের গোঁফের উপর টুপ করিয়া খসিয়া পড়িল। মন্ত্রী মহাশয় গোঁফে সহর্ষে খাঁটি সরিষার তৈলমর্দন করিয়া ভক্ষণ করিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক ধন্য ধন্য হইয়া মন্তব্য করিলেন - এমন শ্রুতিধর, জ্ঞানবান, কন্দর্পকান্তি ছাত্র ভারতবর্ষে বিরল। আমরা এই মহান ব্যক্তিকে শিরোপা প্রদান করিতে পারিয়া মোরা ধন্যপ্রাণ। খুশি, খুব খুশি একশ শতাংশ খুশি।

দুরন্ত চলন্ত চার চাকার বলেরো স্থলযানে সাপার্ষদ মন্ত্রী। মন্ত্রীর পার্ষদদের মুখমন্ডলে উজ্জ্বল হাসি। কিন্তু ভালুকমুখো মন্ত্রীর কপালে এক সূক্ষ্ম ভাঁজ প্রস্ফুটিত। স্বকীয় প্রশ্ন অবচেতন মনে ঘুরিয়া ফিরিয়া শুশুকের ন্যায় ভাসমান - সত্যি কি আমি ইহার যোগ্য। শুশুক গঙ্গায় ভুস করিয়া ভাসিয়া উঠে পরমুহূর্তে ফুস করিয়া ডুবিয়া যায়। মন্ত্রীর মন্ত্রণায় অন্তর বীর রসে প্লাবিত হইয়া বলিল - কোন সম্বন্ধীর পো বিচার করিবে, আমি যোগ্য না অযোগ্য? 
প্রশ্ন তুলিলেই তাহাতে 'সেন্টি' না হইয়া সেই চার অক্ষরকে 'খাপে খাপ' ভরিয়া দিব। কেহ বলিতে পারিবেক না ইহা "ভুয়ো ডিগ্রী"। বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নাগরিকতা লইয়া দগদগে প্রশ্ন উঠিতেছে। এই অলংকার লক্ষ্য করিয়া কেহ কড়ে আঙুলও তুলিবার সাহস পাইবে না - কারন ইহা জলের মতো পরিষ্কার, ভুয়ো নহে।

ভারতবর্ষের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ অবগত আছেন উপাধিটা প্রদান করা হয় নতুন কিছু অবদান বা আবিষ্কার করার জন্য। উপাধি প্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী ভাবিতে থাকেন তিনি কি কি করিয়াছেন। বদন এবং বগল চুলকাইয়া মস্তকে অঙ্গুলির দ্বারা হস্ত সঞ্চালন করিতে করিতে চিন্তা ভাবনা করিয়া কোন কূল কিনারা পাইলেন না। থই পাইলেন না। ভুলিয়া গিয়াছেন কি বস্তুর রহস্য উন্মোচনের জন্য উপাধি প্রদান করা হইয়াছে। 

'ভুলিয়া গিয়াছেন'। মহান ব্যক্তির প্রধান গুণ ভুলিয়া যাওয়া। ওই ইউরেকা ইউরেকা বলিয়া নগ্ন গাত্রে মগ্ন হওয়া সূতাহীন দেহে সব সমক্ষে আসিয়া ঘোষণা করেন তার অবিষ্কারের বিষয়। তাৎপর্যপূর্ন বিষয় তিনি ভুলিয়া গিয়াছেন তাহার অঙ্গে একটিও সূতা নেই। সম্পূর্ণ নগ্ন, বিবস্ত্র - ইহা ভুলিয়া গিয়াছেন। এই মগ্ন চিন্তার মাঝেই মুঠো ফোন গর্জাইয়া উঠিল। মন্ত্রী যথারীতি বৃধাঙ্গুষ্ঠি ঘর্ষণ করিয়া বলিলেন - বল।
- স্যার, সাংঘাতিক কান্ড হইতেছে। এই বৎসর যাহারা বেঙ্গল জয়েন্টে মেধা তালিকার প্রথম দশে নাম আছে, তাহারা প্রত্যেকেই সাংবাদিকদের বলিয়াছে উহারা বঙ্গদেশে পড়াশুনা করিবেক না। এখানকার পরিবেশ পড়াশুনার উপযুক্ত নহে। প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্র 'মিস্ত্রী'র ন্যায় দক্ষ কন্ঠে দ্বিধাহীন ভাষায় দূরদর্শনে বক্তব্য পেশ করিয়াছে। গোদের উপর বিষফোঁড়া, রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সে প্রথম দশে রাজ্য বোর্ডের এক মাত্র সবেধন নীলমনি 'অর্ক' নামধারী এক বালক। 

শিক্ষামন্ত্রী সদ্য সংগ্রীহিত শংসাপত্রের উপর চক্ষু দ্বারা লেহন করিয়া মুখে এক স্বর্গীয় হাসির রূপরেখা প্রস্ফুটিত করিয়া শিক্ষা অধিকর্তাকে মুঠোফোনে বলিলেন - আপনারা কি করিতেছেন, শুধু দুর্বা কর্তন করিতেছেন। অগণিত ব্যক্তিবর্গদের বঞ্চিত করিয়া আপনাকে শিক্ষা সংসদের সভানেত্রীর পদে আসীন করিলাম - প্রতিদানে কি করিলেন? সাংবাদিকদের দৃষ্টিকোন ওই মহুয়ার নেশার দাসে বশীকরণ করুন। এখনই প্রকৃষ্ট সময় - নিজস্বতা দ্বারা প্রচার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার।
- আপনি সঠিক পথের সন্ধান দিয়াছেন, মান্যবর। আমি উহাদের কর্ণকুহরে কিছু বাণী প্রবেশ করাইব। তাহা এইরূপ - অর্ক অর্থাৎ সূর্য। একটিমাত্র সূর্য আমদের ধরিত্রীকে আলোকিত করিতেছে, পৃথিবীর পথ প্রদর্শক। একটিই আমাদের শত সহস্রের সমতুল্য। রাজ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা সমাপনের কিয়ৎক্ষণেই রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সের তজদিগ হয়। 

শিক্ষামন্ত্রীর কর্নে তজদিগ শব্দটি বুলেটের ন্যায় কর্নমন্ডলীতে প্রবেশ করে হৃদয়ে আলোড়িত হইল। শিক্ষামন্ত্রী অথচ তজদিগ শব্দের মর্মার্থ অবহিত নন - তাহা অপরজনের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ্যে আসিলে জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অনুকূল নহে। নিমিলিত চক্ষুদ্বারা মর্মকথা শ্রবণ করিয়া শশব্যস্ত হইয়া ওঠেন। মৃদু স্বরে বলেন - অতঃপর পিঠোপিঠি দুইটি পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্বে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দেয়। অধিকাংশ মেধাবীরা রাজ্যবোর্ডের মেধাতালিকায় স্বীয় নাম সমুজ্জ্বল করিবার স্বপ্ন দেখেন। ইহার কারনেই জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি করেনা। মেধা তালিকায় আমাদের একজনের নাম থাকিলেও শতকরা হিসাবে আমাদের পরীক্ষার্থীদের সাফল্যের হার ৯৯.৫ শতাংশ যা অন্যান্য বোর্ডের থেকে অনেক অনেক বেশি। শুধু উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যসূচী অধ্যয়ন করিয়াই সাফল্য পাইতেছে। উপরন্তু বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষা বহু পূর্বে সমাপন হইবার নিমিত্ত প্রচুর সময় ব্যয় করিতে পারে - এন্ট্রান্স পরীক্ষার নিমিত্ত। অধিকিন্তু অন্যান্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা ধনীর সন্তান। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সফল হইবার নিমিত্ত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালিয়া বিভিন্ন স্তরের প্রাইভেট টিউশন ও বিশেষ প্রশিক্ষণের দারস্থ হয়। 

বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী একটু রাজনৈতিক প্রলেপ লাগাইয়া কহিলেন - কৃতী ছাত্র-ছাত্রী, জ্যোতি বসু, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ও ব্যারিস্টারি পড়িতে বঙ্গদেশের বাহিরে গমন করিয়াছিলেন।       

'প্রাইভেট টিউশন' শব্দটি ইথারের মাধ্যমে ভাসমান হইয়া শিক্ষামন্ত্রীর হৃদয়ে লক্ষণের শক্তিশেলের ন্যায় আঘাত করিল। চক্ষু মুদিত করিয়া রাখিতে পারিলেন না। নয়ন মেলিয়া অবলোকন করিলেন স্থানটির নাম - চাকদহ। অন্যতম ইতিহাস প্রসিদ্ধ ধাম। এই স্থানেই ভগীরথের রথের নিম্নাংশ অর্থাৎ চাকা ভূমিতে নিমজ্জিত হইয়াছিল। চাকদহে আসিয়া চারচাকার চাকা শম্বুক গতিতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হইতেছে। রাগান্বিত শিক্ষামন্ত্রী - অতি সত্ত্বর নবান্নে বা গৃহে গমন করা জরুরী। 
উদর ও তাহার তলদেশ গুরুতর বিদ্রোহ করিতেছে। উদ্যত উদর গহ্বরে ঠাসাঠাসি করিয়া লোভনীয় খাদ্যবস্তু উদরস্থ করিবার ফলস্বরূপ বিদ্রোহ ঘোষণা করিতেছে। শিক্ষামন্ত্রী বিরক্তির আঁখি মেলিয়া বুঝিতে পারিলেন ৩৪ নং জাতীয় সড়কের সেই ফ্যানেলের চ্যানেলে প্রবেশ করিয়াছেন। পুরমন্ত্রীর মেজ শ্যালিকার দুনম্বরী মিঁঞার মিডল্যান্ড মদিরালয় এই জাতীয় সড়কের পার্শ্ববর্তী জমি বেআইনি দখল করিয়া মহানন্দে মদের দুনম্বরী ব্যবসা করিতেছে। তৎকালীন সময়ে স্বপ্নেও ভাবিতে পারেন নাই এই জীবনে কোন দিন মন্ত্রী হইবেন। তৎকালীন প্রশাসনের মুখে চুনকালি মাখাইবার জন্য বিভিন্ন দুর্বৃত্ত ও জবরদখলকারীদের এককাট্টা করিয়া যুগান্তকারী আন্দোলনের সলতে পাকান - জান দেব, দেব না সূচাগ্র মেদিনী। ওই আন্দোলনই এখন বুমেরাং হইয়া প্রকটিত হইতেছে। বোলেরো রথের গতি একান্তই শূন্য। নয়নে জলচ্ছবির মতো স্পষ্ট হইয়া উদিত সেই হেলিয়া পড়া বটবৃক্ষ, যাহার তলদেশ হইতে মোরাম রাস্তা মিলিত হইয়াছে কাঁকিনাড়ার রথতলার ময়দানে। উক্ত মাঠ হইতেই রথ দেখা এবং কলা বেচার ক্রিয়া শুরু করিয়াছিলেন। বাঁশের দ্বারা নির্মিত মঞ্চ থেকে সজোরে চোঙা ফুঁকিয়া বাণী ছড়াইয়াছিলেন - জান দেব, রক্ত দেব তবু রাস্তার জন্য জমি দেব না। বেআইনীর সমর্থকরা, দখলদারেরা উদার হস্তে স্বতস্ফূর্ত করতালি সহযোগে অভিনন্দন জানাইয়াছিল। কান্ডজ্ঞানহীন জনতা জনার্ধনের মনে বা প্রাণে এ প্রশ্ন ঘুণাক্ষরেও উদিত হয় নাই - জান বিসর্জন সুসম্পন্ন হইবার পর রক্ত কোথা হইতে আসিবে। প্রায় এক যুগ পূর্বের ঘটনা ছায়াচিত্রের 'ফ্ল্যাশ ব্যাক' হইয়া চক্ষুর সামনে ভাসিতেছে। ইহা জনগনের সম্মুখে স্বচ্ছ হইলে মোক্ষম আঘাত আসিত। জনগণমনের ওই এক দোষ বা মহান গুণ - কিয়তকাল উদর গুরু গুরু করিলেও অবশেষে সব হজম করিয়া ফেলে। বিলকুল ভুলিয়া যায় বটবৃক্ষের বৃহদাকার একটি স্থলশাখা ভূতলে ধরাশায়ী হইয়া চির নিদ্রায় শায়িত। 

শিক্ষামন্ত্রী গবাক্ষ হইতে অবলোকন করিলেন - এক কন্যা নিবিষ্ট মনোজগতে শামিল হইয়া ঘোষি প্রস্তুতের আয়োজন করিতেছেন। বাম হস্তে গোবরের এক তাল। দক্ষিণ হস্ত উর্দ্ধে তুলিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোল্লা সযত্নে গুঁড়িতে লেপটাইয়া একাগ্র চিত্তে ঘুঁটে শিল্পের নির্মাণে নিমগ্না। গোবর ধারণে ব্যস্ত থাকায় এ ধরার অন্যান্য বিষয়ে কোন হুঁশ নাই। না থাকারই কথা। গায়ের রঙ খোসে পড়া শালপাতার সহিত তুলনীয়। আট হাত মিলের মোটা সুতোর শাড়ী দেহাঙ্গে আলুলায়িত রূপে লেপটিয়া রহিয়াছে। উপযুক্ত পৃষ্ঠদেশে বৃক্ষের পাতলা শিকড়ের মতো ছড়াইয়া রহিয়াছে রুক্ষঘন কেশরাজি। কপালের রক্তিম সিন্দুর বর্তমানের চিত্র-তারকাদের মতো উল্মব রেখা হয়ে কপালে বিদ্যমান হইয়া এক ত্রিমাত্রিক রূপ ধারণ করিয়াছে। মাত্রাতিরিক্ত সাইরেনের শব্দ তাহার মানসিক একাগ্রতাকে খানখান করিয়া দিল। সরাসরি অক্ষিগোলক সরলভূত বায়ুঝড়ের ন্যায় আছড়াইয়া পড়িল ওই শৃগালচক্ষু ভাল্লুক দাড়িতে। পরপুরুষের সহিত চারচক্ষুর মিলনে শিহরিত হইয়া লজ্জায় 'এ্য মা' উচ্চারণ করিয়া নিজ জিহ্বা প্রদর্শিত করিল কন্যা। এই মাহেন্দ্রক্ষণের মহাদৃশ্যটি চলচিত্রের মহানায়িকার প্রতিবিম্ব হইয়া শিক্ষামন্ত্রীর হৃদয়ে দাগা দিল। হৃদয় গুনগুনিয়া উঠিল - ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে লিখেছিলেন 'কৃষ্ণকলি' কবিতা। সেই কৃষ্ণকলি গানে রূপান্তরিত হইয়া সুপার হিট। সব কালো মেয়েরাই হরিণ চোখা হইয়া উঠিল। কালো মেয়েকে নয় আসলে মনে মনে লুক্কায়িত কালো ধনকে রক্ষা করিতে কালোর ভক্ত হইয়াছেন। শিক্ষামন্ত্রীর চোখ কালো হরিণ গ্রন্থিত ঘুঁটে সমুদয়। উজ্জ্বল খাঁকি রঙের ঘুঁটেগুলি এক অপার্থিব আলোক বিকিরণ করিতেছে। শিক্ষামন্ত্রী বুঝিলেন ঘুঁটে এক মহান শিল্প। শিল্পমন্ত্রী হইয়া উক্ত শিল্পকে উদ্বুদ্ধ করিবেন। ঘুঁটে শিল্পে পশ্চিমবঙ্গকে বিশ্বশ্রী পুরস্কৃত করাইবার সম্ভাবনা প্রবল। বর্তুলাকার উদর আবার ভুটভাট শুরু করিল। 

মহার্ঘ্য মুঠোফোনটি পুনরায় মুখোরিত হইল শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সূরের ন্যায়। ও প্রান্ত থেকে শরনিক্ষেপ হইল - স্যার, আপনার বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ জানাইতে আসিয়াছিল। আপনি কাটমানি ভক্ষণ করিয়া উহাদের শিক্ষকের চাকুরীতে নিয়োজিত করিবেন। 
মন্ত্রীর ধূম্রলোচন শিহরিত হইলেও শক্ত কন্ঠে কহিলেন - আপনি কি করিয়াছেন? 
- স্যার, আমি ডায়রি গ্রহণ করি নাই। 
- সঠিক কর্ম করিয়াছেন। আদেশ করবেন প্রমাণপঞ্জী সহ পদার্পন করিবেক। কোন শ্যালক প্রমাণ করিতে পারিবেনা কারন আমি নগদা-নগদি কারবার করি। আমি কয়েকদিনের মধ্যেই দলের নেতার আসন হইতে ঘোষণা করিব আমাদের দলের নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই শতাংশ ক্যাডার সৎ। উহারা ঘুষ -কাটমানিকে ঘৃণা করে। 

গৃহ হইতে মন্ত্রীর শ্যালিকার মুঠোফনে তলব করিতেছে। সমস্ত শক্তি প্রদর্শন করিয়া মধুক্ষরা কন্ঠে কহিলেন - বল।
যে যতই শক্তিধারী মন্ত্রী হউন ওই নিজস্ব গৃহমন্ত্রীর কাছে সবাই কুপোকাত। অনুযোগ আসিল - আজও গৃহশিক্ষক মন্ত্রীকন্যা পৃথাকে অধ্যায়ণ করাইতে গরহাজির। এক্ষণে হোমওয়ার্ক কিরূপে সম্পন্ন হইবেক। 
মন্ত্রী কাতর স্বরে বলিলেন - প্লীজ, ম্যানেজ করিয়া লও। আমি ভীষণ ব্যাস্ত আছি। 
বিপদের সময়ও ধীরস্থির গতিতে মস্তক সঞ্চালন করা রাজনৈতিক নেতৃত্বের মহামূল্যবান গুণ। ইতিপূর্বে শোনা প্রাইভেট টিউশনি শব্দটি হৃদয়ে ধাক্কা মারিতেছিল, কিন্তু তাহা উদর গুরগুর করিবার নিমিত্ত চিন্তাশক্তির শেকড় পাইতেছিল না। এবার সূর্যের ছটার ন্যায় মনে মনে ছক কষিতে লাগিলেন - ওই ঘুঁটে ঘাঁটাঘাঁটি - গোবরে পদ্মফুল - নিজস্ব শিল্প - অপরকে দায়ী করা যাবেনা। প্রাইভেট টিশনির টিউটর - অন্যকোন ব্যক্তির গর্দানে দোষ দেওয়া সঠিক হইবেক না। নিজেই ইউরেকা ইউরেকা বলিয়া - ঐ গৌরাঙ্গের ন্যায় দুই হস্ত উর্দ্ধে তুলিলেন - নিজেই নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করিতে লাগিলেন। সর্বজন অবদিত, এ রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউশনের দৌলতে শিক্ষালাভ করিতেছে। ভাল ফলের আশায় সব অভিভাবকরা ষাঁড়ের ন্যায় ছুটিতেছেন। এক্ষণে বিদ্যালয় সমূহের পঞ্চত্ব প্রাপ্তি করাইয়া প্রাইভেট টিউশনির জন্য লাইসেন্স প্রথা চালু করা যাইতে পারে। 

ওই ছোট ছোট ঘুঁটেরা একত্রিত হইয়াই আগুন ধরায়। স্কুলের পরিবর্তে যদি প্রাইভেট টিউটরদের লাইসেন্স দেওয়া হয় - ইহারাই পড়াইবেন। স্কুল বন্ধ করিতে পারিলে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ উদ্বৃত হইবে, যাহা উৎসবে ক্লাবে অনুদান হিসাবে বিতরণ করা যাইবে। উপরন্তু লাইসেন্স ফি হিসাবে অনেক অনেক রূপিয়া রাজকোষে জমা পড়িবে। লাইসেন্স প্রদান করিবার সময় বাম হস্তে অগুনতি "ইনকাম" হইবে। গ্রীষ্মাবকাশ কয়দিনের হইবে - তাহা লইয়া গরমাগরম তর্কের অবসান হইবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ৪৮৪ পৃষ্ঠার শিক্ষাদলিলে প্রকাশিত - ধাপে ধাপে বেসরকারিকরণ করা হইবে শিক্ষাব্যবস্থা।  

"১৯৮৬ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বা ২০০৫ ও ২০০৯ সালের জাতীয় পাঠক্রম কাঠামোতে সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিল, সমস্ত শিক্ষা প্রকল্প হইবে ধর্মনিরপেক্ষ, মূল্যবোধের ধারক, গণতন্ত্রের পাশাপাশি সাম্য, ন্যায়, স্বাধীনতা, মানুষের মর্যাদা-অধিকার, নাগরিকের কর্তব্যর প্রতি শিক্ষার দায়বদ্ধতা থাকিবে।" অতএব প্রাইভেট কোচিং 'শিক্ষানীতি' বৈধ। বকলমে এই উদার ব্যবস্থায় তৃণমূলস্তরের টোলগুলির টুঁটি চাপিয়া ধরিতে কোন বেগ পাইতে হইবে না। 

শিহরণে শিক্ষামন্ত্রীর মাথায় কলপ করা অকালপক্ক কেশরাজি ভালুকের লোমের ন্যায় খাড়া হইয়া গেল। নিজ দাড়ি নিজ হস্তে মোচড়াইয়া মনে মনে ভাবিলেন - এত সুন্দর, মসৃণ বুদ্ধিটা কেন এতদিন মস্তকাসীন হয় নাই। আগামী বিধানসভা অধিবেশনের পূর্বেই অর্ডিনেন্স আনিব। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন প্রাইভেট টিউটর হইতেই লাভবান হইতেছে - তাহা হইলে, অতঃপর - এমতাবস্থায় স্কুলের কোন প্রয়োজন মনে করিতেছিনা। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করিয়া আমরা এক নতুন দিগন্ত প্রসারিত করিব। শিক্ষার্থীকে কষ্ট করিয়া মোট বহিবার মতো মোটাসোটা ব্যাগ লইয়া আর স্কুলে গমন করিতে হইবে না। পাড়ার প্রাইভেট টিউটররা কোচিং করাইবে। কেবল লাইসেন্স প্রাপ্ত শিক্ষকরাই তাহাদের কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে বোর্ডের ফাইনান পরীক্ষায় নির্ধারিত 'ফি' জমা করিয়া অংশগ্রহনের অনুমতি পাইবে। সুব্যবস্থার সুব্যবহারে ছেলে-মেয়েদের কত মূল্যবান সময় সাশ্রয় হইবে। সরকারকে শিক্ষকদের বেতন বা বেতনবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক নির্বাচন করাইবার দাবীতে কোন আন্দোলন সহিতে হইবে না। শিক্ষকদের বদলির সমস্যা। বিশেষ করিয়া শিক্ষিকারা বিশেষ বিশেষ স্ত্রী রোগ দেখাইয়া বদলির দরখাস্ত করিয়া শিক্ষাভবনকে বিড়ম্বনায় ফেলিবার অবকাশ পাইবে না। বস্তুতঃ সব মাদ্রাসা, টোল এমনকি বেসরকারী বিদ্যালয় গুলিতো বৃহদাকারের কোচিং সেন্টার বলিলে অত্যুক্তি করা হইবে না। 

আলোচ্য বিষয় শিক্ষা, আমরা যাহাকে এডুকেশন বলি, কথাটা ল্যটিন লেখা থেকে এসেছে। 'ই ডিউকো' মানে 'টু ব্রিং আউট' অর্থাৎ বার করে আনা। ছাত্রদের মধ্যে যে সুপ্ত ক্ষমতা, তার বহিঃপ্রকাশ জরুরী। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ও বলিয়াছিলেন - চার দেওয়ালের মধ্যে শিক্ষাকে আবদ্ধ রাখিলে উহা প্রসারিত হইবে না। 
দিব্যচক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দেখিলেন উপরোন্তু সরকারী শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করিতেছে বলিয়া সব অভিযোগে জল ঢালিয়া দেওয়া যাইবে। 

জ্ঞানী ও বিবেচক শিক্ষামন্ত্রী - ওনাকে অনেক খোঁজখবর রাখিতে হয় যাহা আম আদমীর গোচরে নাই। ২০২১ সাল থেকে এমনিতেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হইবার হার খুবই কম হইয়া যাবে। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড বা অন্ধ্রপ্রদেশ - যে সব অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম, সেখানে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পড়ুয়া সংখ্যা হ্রাস পাইতেছে। জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডাতেও স্কুলে ছাত্রাভাবের কারনে হয় বহু স্কুল বন্ধ নতুবা জুড়িয়া দেওয়া হইতেছে অনেক স্কুলকে একসঙ্গে। তৈরি হবে নবকলেবরে শিক্ষাব্যবস্থা। যাদের ক্ষমতা থাকবে না - তারা ঘরে বসে কম্পিউটারে সেলফ লার্নিং কোর্সে শিক্ষা নেবে। 

এই নব্যব্যবস্থার ফলস্বরূপ জিডিপি দর চড়চড় করিইয়া বৃদ্ধি পাইবে, ঢিলে সফেদ পাঞ্জাবি ধারণ করিয়া অর্থমন্ত্রী শির ফুলাইয়া বিধানসভায় হিসাব দেবেন। দিব্যচোক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দর্শন করিলেন - এই উদ্ভাবনী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করিবার পুরষ্কার স্বরূপ হাভাতে ইউনিভার্সিটি বা অজানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ সাম্মানিক ডি.লিট উপাধির জন্য মনোনিত করা হইয়াছে। গোল চশ্মার কাঁচটি সন্তর্পণে খদ্দরের রুমাল দিয়া মুছিয়া শান্তিনিকেতনী কারুকার্য্য করা সিল্কের নীল-সাদা হাফ-হাতা পাঞ্জাবির বুক পকেটে রাখিয়া শিক্ষামন্ত্রী আবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া নয়ন মুদিতেই উদর ভুটভাট করিতে লাগিল। 
 
==============

তপন তরফদার, প্রেমবাজার (আই আই টি), খড়গপুর - 721306, 
ফোন- 9434077490, e-mail: tapan.tarafdar@gmail.com


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক