মিথ্যে ভালো থাকা
ডাকবাক্স যেখানে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর,
সেখানে একাধিক চিঠি ঘরের অবোধ সন্তান।
তাদের শরীরের ওপর লেখা আত্মকথন কিংবা
আত্মদহনের চেহারা অদৃশ্য ডানায় পৌঁছে যেত অন্যত্র।
কেউ যেত আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ হোস্টেলে পড়তে,
কেউ পুজো, কেউ কেউ গ্রীষ্মের ছুটি হয়ে,
কেউবা নিজের অলক্ষ্যে ছুটে যেত ফসকে যাওয়া বাণ হয়ে!
মায়ের কোল থেকে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন কাজ নিয়ে বেরিয়ে যায়, না ফেরার সঠিক সময় ছাড়াই!
অথবা বলতে পারি, নিজের ঘর সংসার ছেড়ে
দূরে পাড়ি দেওয়া কোনো শ্রমিক!
একজায়গায় শলা পরামর্শ করে ভিন্ন ভিন্ন দিকে ছুটে যাওয়া।
তারা চলে যেত সীমাহীন উচ্ছাসে, ফিরে আসতো কোনো সুখ, সন্তপ্তের খবর নিয়ে।
প্রত্যাবর্তনে সেই নিজের কুঁড়েঘরে।
আজ এক যুগ অতিক্রান্ত,
সময় আধুনিক, ব্যস্ততার মহড়া।
প্রতিযোগিতা এগিয়ে যাবার,
এখানে দয়া, স্নেহ, সহমর্মিতা আর সহানুভূতি
অর্থের মাপকাঠিতে।
চিঠির কোনো বালাই নেই!
উন্নতমানের মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে
দ্রুত যোগাযোগে ভয়েসকলিং,
অথবা খুব মন খারাপে ভিডিও কলিং।
সবকিছু স্পষ্ট, অথচ মনে হয় কোনো জোরালো আবেদন থাকে না তাতে!
তবে সব চাহিদা মেটে যন্ত্র দানবের ভূমিকায়।
নকল মানবিক সাড়া,
সম্পর্কেও অভিনয়, সারা শরীরে দামি পোশাক,
মুখেও অদৃশ্য মুখোশ!
লাগামছাড়া সুখের সন্ধানে সকলেই ছেড়ে থাকে
তার জন্মভূমি, মাতৃভূমি।
চিঠি আজ মূল্যহীন, বিস্তৃত সংসারের আধিপত্যে
নিজের আত্মবিলাপে মুখ গুমরে পড়ে থাকে
শুধু কলমের খোঁচা থেকে মুক্ত হয়ে।
আর ডাকবাক্স!
সেতো বার্ধক্য জরাগ্রস্ত কোনো এক মায়ের মতোই শূন্য বুকে আশা নিয়ে বেঁচে থাকে,
চোখের জল ফেলে অবলা সন্তানদের সুখ কামনায়।
ডাকঘরের বাইরে মিথ্যে ভালো থাকার মুখোশে এরাও দাঁড়িয়ে আছে, সুযোগের অপেক্ষায়!
সম্পর্কবিহীন অভিযোজনে মাটির তলায় এখনো শিকড় ছড়িয়ে রেখেছে।
-----------$------------
সুনন্দ মন্ডল
কাঠিয়া, মুরারই, বীরভূম
8637064029
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন