Featured Post
মুক্তভাবনা ।। শেফালি সর
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শূদ্র সমাজের আলোকবর্তিকা
এক জনসংখ্যার তথ্য থেকে জানা যায়-ভারতে প্রতি বছর দু'লক্ষের কিছু বেশি নারী মারা যায় শুধু লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে। বহুল প্রচার ও সরকারি উদ্যোগের ফলে কন্যাভ্রণহত্যা যদিও বা কিছু টা ঠেকানো গিয়েছে এটা ঠিকই। কিন্তু শিশু কন্যাদের প্রতি অবহেলা, তাদের শিক্ষা,স্বাস্হ্য ও মানবিক অধিকার গুলো থেকে বঞ্চিত করার যে প্রবহমান ধারা তা এখন ও সমাজের বহুলাংশে বর্তমান আজও।
পুরুলিয়ার নজিপুর নামে তেমনি একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা ছিল শূদ্রানী হেমলতা রানা। ছোট বেলা থেকেই সে অনেক অত্যাচার দেখেছে শূদ্র পরিবারে জন্মের সুবাদে। তেমন সে দেখেছে পড়াশুনা করা মহাপাপ,বাল্যবিধবাদের মাথার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া ও তাদের একঘরে করে রাখা ইত্যাদি। মেয়েদের জন্য নানান বিধি নিষেধের বেড়া। নানা নিষেধের সুউচ্চ প্রাচীর তুলে মেয়েদের অসূর্যম্পশ্যা করে রাখা হ'ত সমাজে। এসব দেখে দেখে হেমলতা বড় হয়েছে। আর এই সব দেখে দেখে হেমলতার মন বিদ্রোহী হয়ে উঠতো। কিন্তু সে যে অপারগ। এরপর একসময় সামাজিক প্রথা মেনে তার ও বিয়ে হয় বেতাল গ্রামের শূদ্র পরিবারের ১৩ বছরের ছেলে সোমনাথের সাথে। তখন হেমলতার বয়স মাত্র ৯বৎসর। বিয়ের পরে ই তার পড়াশুনা শুরু হয় স্বামীর ঘরে সংগোপনে। লুকিয়ে লুকিয়ে হেঁসেলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে। স্বল্প পড়াশুনা জানা স্বামীই তাকে সাহায্য করে এই ব্যাপারে। তার স্বামী ই তার শিক্ষক। এক সময় এই গোপনীয়তা প্রকাশ হ'ল পরিবারে সেই দিন যেদিন শূদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার উদ্যোগ নিল তারা। শ্বশুর শাশুড়ি পরিবারের ও সমাজের অমঙ্গল আশঙ্কায় তাদের দু'জনকে বের করে দিলেন। আসলে শূদ্র সমাজের মোড়লরাই তার পরিবার কে এমন করতে বাধ্য করেছিল। বাইরে শূদ্র সমাজের মানুষ জন ও তাদের প্রতি নানান অত্যাচার করতে লাগলো।এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তাদের একটি পোড়ো বাড়িতে তাদের দুজনের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ওরা নিঃসন্তান দম্পতি ও বাড়িতে ই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মাত্র কয়েক জন শূদ্র ছাত্রীকে নিয়ে পাঠশালা শুরু করে। এই সবের জন্য গোঁড়া ব্রাহ্মণদের ও চক্ষুশূল হয় সেই শূদ্র দম্পতি।তারা কিন্তু অনেক রকম সমাজ সেবার সঙ্গে ও যুক্ত ছিল। একসময় সোমনাথের বাবা মা মারা গেলে , তারা দুজন সমাজের কিছু সহৃদয় মানুষ কে ও কাছে পেয়ে উৎসাহিত হয়ে এইসব দুরূহ সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিল। শেষ পর্যন্ত পৈতৃক ভিটাতেই বিদ্যালয় গড়তে সক্ষম হয়েছিল তারা। শূদ্র সমাজে তারা একদিন হেমলতার গায়ে গোবর জল ছিটাতো,পাথর ছুঁড়ে মারতো , তারাই এখন হেমলতাকে সম্মান করে।হেম লতা এখন তাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
আজ ১৫ইআগষ্ট । শূদ্র ছাত্রীদের হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে প্রভাত ফেরীর আয়োজন করেছে হেমলতা। হেমলতার মনে পড়ে অতীতের কতো স্মৃতি! নানান সামাজিক অচলায়তনগুলো পেরিয়ে একেরপর এক লক্ষ্য তে তারা পৌঁছিয়েছিল যে সময়ে,সে সময় রক্ষন শীল সমাজে মেয়েদের পড়াশুনা মানে ভয়ংকর অপরাধ ছিল।তাঁর জীবনের পথ ছিল বড় লাঞ্ছনার বড় অপমানের। আর আজ হেমলতা শূদ্র সমাজের আলোক বর্তিকা। হেমলতা ভাবে- যেকোনো অজানা পথ অতিক্রম করতে গেলে এমন কঠিন সব বাধা অতিক্রম করতেই হয়।
-----------------------:-----------------
শেফালি সর,জনাদাড়ি, গোপীনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুর।৭২১৬৩৩
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন