প্রথম ভালোবাসা
অঙ্কিতা পাল
প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, সুমিতা একা দাঁড়িয়ে কি যেন ভেবে চলেছে আর চোখের জল ফেলছে। এই কয়েক মাস হল সুমিতার বৈবাহিক জীবন শুরু হয়েছে।
সুমিতা বিয়ের আগে পার্থ নামে একজনকে ভালবাসতো। পার্থ কত বড় স্বার্থপর এবং তার জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছিল সেই সব ঘটনার কথা মনে করে সুমিতার চোখে জল আসে; হঠাৎই তার অতীতের কথা মনে আসে।
যখন সুমিতা নবম শ্রেণী ও পার্থ দশম শ্রেণীতে পড়তো।একই কোচিং ক্লাসে পড়ার সুবাদে যখন তাদের দুজনের মধ্যে একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়।
পার্থ হঠাৎই একদিন রাস্তায় যেতে যেতে বলে - সুমিতা আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? সুমিতা তখন খুব রেগে যায় এবং বলে তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করে ফেলছো। পার্থ কিছু না বলে চলে যায়। এভাবে আরো কটা মাস কেটে যায় পার্থ সারাদিন
যেন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে সুমিতার । সে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু পাত্তা দেয় না। এভাবে কেটে যায় আরও একটি বছর.......
সুমিতা এখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী ও পার্থ একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। পার্থ একদিন স্কুলের করিডোর দিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় সুমিতার সাথে দেখা হয়। সুমিতা কোনো কিছু না বলে চলে যাওয়ার সময় হঠাৎই পার্থ তার হাত ধরে ফেলে এবং আবারো বলে, আমি তোমায় ভালোবাসি সুমি। প্লিজ কিছু বলো সুমি। সুমি কিছু না না বলে মৃদু হেসে সেখান থেকে চলে যায়। সুমিতা ধনী পরিবারের মেয়ে এবং পার্থ ছিল মধ্যবিত্ত।
আজ সরস্বতী পূজা বাঙ্গালীদের জীবনে ভালোবাসার দিন, আজ পার্থ বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি ও সুমিতা একটি লাল পাড় হলুদ শাড়ি পড়ে স্কুলে এসেছে। দুজনকে বেশ চমৎকার দেখাচ্ছে। পার্থর হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ এগিয়ে আসে সুমিতার দিকে হাত বাড়িয়ে গোলাপ গুলি সুমিতার হাতে দিয়ে আবারো ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। সুমিতা এবার সেই প্রস্তাব ফেরাতে পারিনি সেও লজ্জারনিত হয়ে মাথা নিচু করে গোলাপ গুচ্ছ তার হাত থেকে নিয়ে বলেই ফেলে - আমিও তোমায় ভালবাসি পার্থ দা। এভাবে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক সূচনা হয়।
পার্থ এবার এবার তো স্কুলের পাঠ শেষ করে কলেজে ভর্তি হয় এবং সুমিতা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। পার্থ একদিন হঠাৎই সুমিতাকে ফোন করে এবং বলে - তুমি কি আজ পার্কে দেখা করতে পারবে। উত্তরে সুমিতা বলে - হ্যাঁ কিন্তু কি হয়েছে। পার্থ কাঁদো-কাঁদো ভঙ্গিতে বলে - কিছু টাকা দাও না আমার বন্ধুর খুব বিপদ। সুমিতা তখনই চট করে আমার মায়ের কাছে অনুনয়-বিনয় করে হাজার দশেক টাকা নিয়ে পার্থ কে দেয়। তারপর বেশ কয়েকদিন পার্থ আর সুমিতার সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ করেনি, বরংচ সুমিতা ফোন করলে পার্থ ফোন কেটে দিতো বা কখন ধরতো না।
দিন দিন সুমিতার মনে উথালপাতাল হতে থাকে সে মনে মনে চিন্তা করতে থাকে কি হয়েছে পার্থর। সে একদিন হঠাৎ ই পার্থর কলেজে গিয়ে উপস্থিত হয়; দূর থেকে দেখতে পায় পার্থ একটি অন্য মেয়ের হাত ধরে ঘুড়ছে এবং তার সাথে ভালবাসার অভিনয় করছে। যেটা সে কয়েক বছর আগে সুমিতার সাথে করেছিল, এইসব দৃশ্য দেখে সুমিতার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে চতুর্দিক অন্ধকার দেখতে থাকে এবং দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। তারপর আর সে কখনোই পার্থর সাথে যোগাযোগ করে না। তার এই কষ্টের কথা মা-বাবা আত্মীয়-পরিজন বন্ধুবান্ধব কাউকে বলতে পাড়ায় সুমিতার পড়াশুনায় ক্ষতি হয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ভালো না হওয়ায় তার বাবা তাকে বাইরের কলেজে পাঠিয়ে দেয়। সুমিতা তার মাসির বাড়ি থেকে পড়াশুনা করে। তার মন খারাপ দেখে, মাসি প্রশ্ন করে - কি হয়েছে মারে তোর? পরীক্ষা ভালো হলোনা রেজাল্ট ভালো করিস নি? মাসির কথা শুনেই সুমিতা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং তাকে জড়িয়ে ধরে সমস্ত অতীতের-কথা খুলে বলে। মাসি তক্ষনাত সুমিতার মাকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন এবং তাদের সেখানে আসতে বলেন। সুমিতার বাবা মা এসে তাকে ভালো করে বোঝাতে থাকেন।
এভাবেই সুমিতা জীবনে তিন তিনটি বছর পার হয়ে যায়.................
সুমিতা বাংলায় অনার্স নিয়ে ভালোভাবে পাস করে, তারপর এম এ পাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকে। এমন সময় একদিন তার কলেজের প্রফেসর সৈকত গুপ্তা তাদের বাড়িতে আসেন।তিনি দীর্ঘক্ষণ সুমিতার মাসির সাথে বাক্যালাপ করেন এবং সুমিতাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। প্রফেসর গুপ্তার প্রস্তাবে সুমিতার বাড়ির লোক সম্মতি প্রকাশ করে এবং তাদের বিবাহ হয়।
কিন্তু সুমিতা তার প্রথম ভালোবাসা পার্থকে আজও ভুলতে পারেনি।
===========================
অঙ্কিতা পাল, ভাঙ্গড্, দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন