Featured Post
প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সবিতা রায় বিশ্বাস
'আমার জীবনের লভিয়া জীবন
জাগোরে সকল দেশ"|
এই কথাটি বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবীর| আক্ষরিক অর্থেই তিনি বাংলার প্রথম স্বসাক্ষরা নারী| রাজবাড়ী জেলার 'ভর রামদিয়া' গ্রামের বধূ রাসসুন্দরী দেবী ১৫৫ বছর আগে নিজেকে লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন| রাসসুন্দরী এমন এক নারী, এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি আঁটোসাঁটো ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেও মানসিক শক্তির জোরেই নীল আকাশে মেলে দিয়েছিলেন তাঁর দুটি ডানা|
জাগোরে সকল দেশ"|
এই কথাটি বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবীর| আক্ষরিক অর্থেই তিনি বাংলার প্রথম স্বসাক্ষরা নারী| রাজবাড়ী জেলার 'ভর রামদিয়া' গ্রামের বধূ রাসসুন্দরী দেবী ১৫৫ বছর আগে নিজেকে লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন| রাসসুন্দরী এমন এক নারী, এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি আঁটোসাঁটো ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেও মানসিক শক্তির জোরেই নীল আকাশে মেলে দিয়েছিলেন তাঁর দুটি ডানা|
১৮০৯ সালে রাসসুন্দরী জন্মগ্রহণ করেছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার পোতাজিয়া গ্রামের এক জমিদার পরিবারে| রাসসুন্দরীর যখন মাত্র চার বছর বয়স তখন তাঁর বাবা পদ্মলোচন রায় মারা যান| পিতৃহীন মেয়েকে সুরক্ষিত রাখতে তাঁর মা তাঁকে পাখির ছানার মত আগলে রাখতেন| রাসসুন্দরীর শৈশব শিক্ষা শুরু হয় বাড়ির বাংলা স্কুলে| রাসসুন্দরী দেবীর পৈতৃক বাড়ির বাইরের অংশে একজন মিশনারী মহিলা ছেলেদের পড়াতেন| সেখানেই শান্ত, ভীরু, লাজুক, সরল রাসসুন্দরীকে তাঁর মা বসিয়ে রাখতেন| যদিও তাঁকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠানো হয়নি, বসিয়ে রাখাটাই লক্ষ্য ছিল| কারণ ছোটবেলার খেলার সাথীরা তাকে মারতো, কাঁদাতো| রাসসুন্দরীর খুড়া কালো রঙয়ের একটা ঘাগরা পরিয়ে উড়ানি গায়ে দিয়ে মেমসাহেবের পাশে বসিয়ে রাখতেন| তিনি ভয়ে চুপ করে এক জায়গায় বসে থাকতেন, কোনোদিকে নড়তেন না| সারাদিন স্কুলে বসে থাকলেও তাকে লেখাপড়া শেখানোর কথা কারো মনে হয়নি| সমাজের ধারণা ছিল হিন্দু মেয়েরা 'নেকাপড়া' শিখলে সংসার রসাতলে যাবে, সে মেয়ে বেধবা হবে, সন্তানবতী হলে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাবে, অমঙ্গলে সংসার পূর্ণ হয়ে উঠবে| কিন্তু কেউ জানতে পারেনি, সেই বয়সে শুধু শুনে শুনেই তিনি চিনেছিলেন অক্ষর| এই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন,
"তখন ছেলেরা ক খ চৌত্রিশ অক্ষরের বর্ণমালা মাটিতে লিখিত, পরে এক নড়ি হাতে লইয়া ঐ সকল লেখা উচ্চৈঃস্বরে পড়িত| আমি সকল সময়ই থাকিতাম, মনে মনে ঐ সকল পড়াই শিখিলাম"|
তবে তিনি যে লেখাপড়া শিখেছেন সেটা কাউকে বুঝতে দেননি| রাসসুন্দরী জানতেন, একথা জানলে সবাই তাঁকে বিধবা হবার ভয় দেখাবে| আবার এটাও ঠিক রাসসুন্দরীর পিতার বাড়ি অনেক উদার ছিল, তা নাহলে বেশ খানিকটা বড় হবার পর অর্থাৎ বারো বছর বয়সে বিয়ে হয় ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত রামদিয়া গ্রামের জমিদার সীতানাথ সরকারের সঙ্গে| রাসসুন্দরীকে তাঁর মা যেমনভাবে পাখির ছানার মত বুকে আগলে রাখতেন, শ্বশুরবাড়িতে এসেও তিনি পেলেন তাঁর শ্বাশুড়ি মাকে| তিনিও মায়ের মতোই রাসসুন্দরীকে কোলে টেনে নিলেন| শ্বাশুড়ি মাতা ছিলেন কর্মঠ ও স্নেহশীলা| তিনি সংসারের সব কাজ নিজেই করতেন, রাসসুন্দরী ঘর সাজানোর জিনিস তৈরী করতেন, সবসময় চেষ্টা করতেন কিভাবে ভালো কাজ করে সকলের মনোরঞ্জন করা যায়|
বারো বছরে বিয়ে হবার পর আরো ছয় বছর তিনি ছিলেন সকলের আদরের নতুন বৌ| এরপরে সান্নিপাতিক জ্বরে শ্বাশুড়ি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়লে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ল রাসসুন্দরী দেবীর কাঁধে| দু'বেলা পঁচিশ-ছাব্বিশ জনের রান্না, ঠাকুরের সেবা, শ্বাশুড়ির সেবা, অতিথি সেবা সব দায়িত্ব নিপুণভাবে পালন করতে লাগলেন| তাছাড়া আঠেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম সন্তান ভূমিষ্ট হয়, একে একে বারোটি সন্তানের জন্ম দেন একচল্লিশ বছর পর্যন্ত| সংসারের কাজের চাপে মেয়েদের করুণ অবস্থার কথা তিনি তাঁর আত্মজীবনী "আমার জীবন" (পৃষ্ঠা-২৯)-এ লিখেছেন –
"তখন মেয়েছেলেরা লেখপড়া শিখিত না, সংসারের খাওয়া-দাওয়ার কর্ম সারিয়া যে কিঞ্চিত অবকাশ থাকিত, তখন কর্তাব্যক্তি যিনি থাকিতেন, তাঁহার নিকট অতিশয় নম্রভাবে দন্ডায়মান থাকিতে হইত| যেন মেয়েছেলের গৃহকম্ম বৈ আর কোনো কম্মই নাই| তখনকার লোকের মনের ভাব ঐরূপ ছিল| বিশেষত তখন মেয়েছেলের এই প্রকার নিয়ম ছিল, যে বউ হইবে, সে হাতখানেক ঘোমটা দিয়া ঘরের মধ্যে কাজ করিবে, আর কাহারও সঙ্গেই কথা কহিবে না, তাহা হইলেই বড় ভালো বউ হইল"|
মেয়েদের করুণ অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন, মোটা কাপড়ে বুক পর্যন্ত ঘোমটা দিয়ে সব কাজ করতেন তিনি| কিন্তু তাঁর খুব আক্ষেপ ছিল শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারণে তিনি পড়াশোনা করতে পারেননি| তিনি বলেছেন, মেয়েরা ছিল একদম হতভাগা, একদম পশুর মতোই| মেয়েদের হাতে কাগজ দেখলে বৃদ্ধারা খুব অসন্তোষ প্রকাশ করতেন| এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লাজুক, ভীরু রাসসুন্দরী পুঁথি পড়ার অদম্য ইচ্ছা লালন করতেন| এমনকি একদিন রাত্রে স্বপ্নে দেখেন তিনি চৈতন্যভাগবত পড়ছেন| এরপর একদিন কাকতালীয়ভাবে হাতে পেলেন 'চৈতন্যভাগবত' গ্রন্থ| অপরিসীম আনন্দে একটি পৃষ্ঠা নিয়ে লুকিয়ে রাখলেন রান্নাঘরে| অক্ষর চেনার সুবিধার জন্য বড় ছেলের তালপাতায় লেখা একটি পৃষ্ঠাও লুকিয়ে রাখলেন| কিন্তু তাঁর তো অক্ষর পরিচয় নেই, আর সারাদিনে সময়ই বা কোথায়? সারাদিন এমনকি অনেক রাত অবধি রান্নাবান্নার পাট, তারপরেও কি অবকাশ মেলে? তাঁর কথায় – "তখন তো ছেলেপুলের জেগে ওঠার পালা, তখন কেহ বলে, 'মা মুতিব', কেহ বলে, 'মা ক্ষিদে পেয়েছে', কেহ বলে, 'মা কোলে নে', কেহ বা কান্না আরম্ভ করে| তখন তো ঐ সকলকে সান্ত্বনা করিতে হয়| ইহার পরে রাত্রিও অধিক হয়, নিদ্রা আসিয়া চাপে, তখন লেখাপড়া করিবার আর সময় থাকেনা—সুতরাং ওই লেখাটি আমি কেমন করিয়া পড়িব? অধিকন্তু কেহ দেখিবে বলিয়া সর্বদাই ভয়"|
কিন্তু রান্নাঘরে ওই মোটা দেড় হাত ঘোমটা ঢাকা শাড়ি তাঁর কাছে সুযোগ হয়ে দেখা দিল| তাঁর কথায় – "ঐ তালপাতাটি একবার দেখি, আবার ঐ পুস্তকের পাতাটিও দেখি, আর আমার মনের অক্ষরের সঙ্গে যোগ করিয়া দেখি, আবার সকল লোকের কথার সঙ্গে মিলাইয়া মিলাইয়া দেখি"—এই অনুশীলন চলত মনে মনে, সারাদিন ধরে | তিনি লিখেছেন, আমি অনেক দিবসে, অনেক পরিশ্রমে, অনেক যত্নে এবং অনেক কষ্ট করিয়া ঐ চৈতন্যভাগবত পুস্তকখানি গোঙাইয়া পড়িতে শিখিলাম"|
বাড়িতে পুরাণ পাঠ এবং সংকীর্তনের প্রচার থাকিলেও অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলনা| তিনি ঠিক করলেন ঘরে বসেই ভালো করে পুঁথি পাঠ করবেন| কিন্তু ঘরে তিনটি বিধবা ননদ ছিল, তারা যদি কিছু বলে! তাই তাদের 'আহ্নিক, পূজা, আহারাদির' সময় পুঁথি পড়তে শুরু করলেন| কিন্তু রাসসুন্দরী দেবীর ধারণা ভুল ছিল, ননদরা তাঁর পুঁথি পাঠের খবরে খুশিই হলেন| একে একে রাসসুন্দরী তাঁর বাড়ির সব পুঁথি পড়ে ফেললেন| চৈতন্যভাগবত, চৈতন্যচরিতামৃত, আঠারো পর্ব জৈমিনি ভারত, গোবিন্দলীলামৃত, বিদগ্ধমাধব, প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা, বাল্মিকী পুরাণ (শুধু আদিকান্ড)| পড়ায় দক্ষ হলেও তখনো তিনি লিখতে শেখেননি|
আবার তিনি পরমেশ্বরের শরণাপন্ন, "আমায় তুমি লিখিতে শিখাও"| ছেলেমেয়েরা জানে মা পড়িতে পারে, তার মানে মা লিখিতেও জানে| সপ্তম পুত্র কিশোরীলাল একদিন বললেন, "মা! আমরা যে পত্র লিখিয়া থাকি, তাহার উত্তর পাইনা কেন" (আমার জীবন-পৃষ্ঠা-৬৪) কিশোরীলাল বেশ জোর দিয়ে বলে গেলেন, 'ও কথা আমি শুনি না, মায়ের পত্রের উত্তর না পাইলে কি বিদেশে থাকা যায়! পত্রের উত্তর দিতেই হবে'| (পৃষ্ঠা-৬৪) কিশোরীলাল কাগজ, কলম, দোয়াত. কালি সবকিছু মাকে সংগ্রহ করে দিলেন| ছেলের এই ইচ্ছাতেই বিপদে পড়লেন মা| পড়তে শিখেছেন জ্বলন্ত উনুনে রান্না চড়িয়ে, ঘোমটার আড়ালে পুঁথি লুকিয়ে| লেখা তো রান্না করতে করতে হবেনা| কাগজ, কলম, দোয়াত রাখার জায়গা দরকার, লিখতে শেখার ও লেখার অবকাশ দরকার| "আমি একে তো মেয়ে, তাহাতে বউ মানুষ, মেয়েমানুষকে লেখাপড়া শিখিতেই নাই| এটি স্ত্রী জাতির পক্ষে প্রধাণ দোষ বলিয়া সকলে সিদ্ধান্ত রাখিয়াছেন| সে স্থলে আমি এ প্রকার সাজিয়া লিখিতে বসিলে লোকে আমাকে দেখিয়া কি বলিবে?"
সুযোগ এল, স্বামীর চোখের চিকিত্সা করাতে রাসসুন্দরী স্বামীসহ গেলেন পঞ্চমপুত্র দ্বারকানাথের কর্মস্থলে| সেখানে সাংসারিক কাজ কম থাকায় তিনি লিখতে শিখলেন, হলেন যথার্থ জিতাক্ষর| শুধু শিখলেনই না, লিখলেন আত্মজীবনী| তবে আত্মজীবনী লিখেছেন স্বামীর মৃত্যুর এক বছর পর ১৮৭০ সালে, ৬০ বছর বয়সে| নারী হিসেবে এই সমাজে জন্মে যে বিড়ম্বনা তা প্রতি মূহুর্তে রাসসুন্দরী উপলব্ধি করেছেন| ব্যক্তি মানুষ হিসেবে, নারী হিসেবে বঞ্চনার দিনগুলি তিনি সুচিহ্নিত করেছেন| ধীর গতিতে, শান্ত মেজাজে, সুকোমল স্পর্শে সংসারে তিনি সব সময় কল্যাণী নারী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছেন| কিন্তু তার মনের মধ্যে সবসময়ের দ্বন্দ্বের যে ওঠানামা, নিজেকে প্রকাশের জন্যে অস্থিরতা, নিজেকে প্রকাশের জন্যে যে ব্যাকুলতা তা যদি তিনি ৬০ থেকে ৮৮ বছর বয়স পর্যন্ত সময় ধরে না লিখে যেতেন তাহলে এক অবগুন্ঠিত সাধারণ নারীর অসাধারণত্ব আমাদের কাছে অজানাই থেকে যেত|
রাসসুন্দরী ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু ভাগ্যবাদী ছিলেন না| অথচ সেই কঠিন সময়ে জন্মগ্রহণ করেও রাসসুন্দরী দেবী সময়ের বিপ্রতীপে আশ্চর্যজনকভাবে হয়ে উঠেছিলেন ব্যতিক্রমী| তিনি যখন 'আমার জীবন' লিখছেন বাংলায় তখন আত্মজীবনী রচনার প্রয়োজন ছিলনা| সদ্য স্বয়ং শিক্ষিত একজন প্রৌড়া, পাশ্চাত্য সাহিত্য যে জানে না, সেই রাসসুন্দরীর হাত দিয়ে আত্মজীবনীর স্বতন্ত্র সাহিত্যরূপ সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়| বাংলা গদ্য তখন বঙ্কিম যুগ পেরিয়ে এলেও স্বীকৃত হয়নি, সেই সময় নিজের জীবনকে অবলম্বন করে সাহিত্য সৃষ্টির চল-সেই সময়ে রাসসুন্দরীর 'আমার জীবন' একইসঙ্গে নতুন সাহিত্যরূপ সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়|
রাসসুন্দরী যখন লেখেন-"আমি যেন এখন সে আমি নই, আমি যেন ভিন্ন আর একজন হইয়াছি; আমার মনের দুর্বলতা ঘুচিয়া কত বল ও কত সাহস প্রাপ্তি হইল"| তখন আমরাও পেয়ে যাই আত্মপ্রত্যয়ী একজন নারীর ভাষ্য, যা শুধু সমকালীন সাহিত্যের নয়, হয়ে উঠবে পরবর্তীকালের মানবী বিদ্যাচর্চার অন্যতম আলোচ্য বিষয়|
রাসসুন্দরীর জীবনের সবচেয়ে নিষ্ঠার, ধৈর্য্যের, একাগ্রতার জায়গা ছিল তাঁর লেখাপড়া শেখা| ১৮৭৬ সালে রাসসুন্দরীর ৬৭ বছর বয়সে প্রথম বইটি ছাপা হয়| পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বইটির সংস্করণ প্রকাশিত হয়| 'আমার জীবন' এর দুই ভাগে রাসসুন্দরী তাঁর সমগ্র জীবনের ষাট বছর পর্যন্ত সময়-সীমা বর্ণনা করেছেন| যা থেকে আমরা বুঝতে পারি উনবিংশ শতাব্দীর নারী মনস্তত্ত্বকে| দ্বিতীয় ভাগে আছে পুরোটাই ভগবত বন্দনা| ৮৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি লিখতেই থাকেন| তিনি লিখেছেন, "১২১৬ সালে চৈত্র মাসে আমার জন্ম হইয়াছে, আর এই বহি ১২৭৫ সালে যখন প্রথম ছাপা হয় তখন আমার বয়ঃক্রম উনষাইট বত্সর ছিল| এই ১৩০৪ সালে আমার বয়স অষ্টাশী বছর"| প্রথমে ১২৭৫ সালে লিখেছিলেন ১৬ টি রচনা সমৃদ্ধ প্রথম খন্ড, ১৩০৪ বঙ্গাব্দে ১৫ টি রচনা নিয়ে দ্বিতীয় খন্ড সমাপ্ত হয়| প্রত্যেক খন্ডের আগে একটা করে উত্সর্গমূলক কবিতা আছে|
আমার জীবন – রাসসুন্দরী দাসী| ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর| গ্রন্থ-পরিচয় লিখে দিয়েছিলেন দীনেশচন্দ্র সেন|
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বইটির 'ঘটনাবলীর বিস্ময়কর ধারাবাহিকতা' এবং অভিব্যক্তির 'সহজ মাধুর্য্য'র প্রশংসা করেছেন| দীনেশচন্দ্র সেন বলেন তার গদ্য একটি 'অতীত যুগের সহজ গদ্য রচনার সংক্ষিপ্তসার'| 'আমার জীবন' বইটি হিন্দিতে অনুবাদ করা হয়েছিল|
রাসসুন্দরীর সহজ, সরল ব্যক্তিত্বকে আমরা খুঁজে পাই তাঁর লেখায়| কর্তাকে এতটাই সমীহ করতেন যে কর্তার ঘোড়া একবার সামনে এসে পড়ায় তিনি সভয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন| পরে উপলব্ধি করলেন, "এটা ভয় নয়, লজ্জা| এবং মনুষ্যেতর একটি জীবকে লজ্জা করা মানুষের অনুচিত"|
রাসসুন্দরীর সহজ, সরল ব্যক্তিত্বকে আমরা খুঁজে পাই তাঁর লেখায়| কর্তাকে এতটাই সমীহ করতেন যে কর্তার ঘোড়া একবার সামনে এসে পড়ায় তিনি সভয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন| পরে উপলব্ধি করলেন, "এটা ভয় নয়, লজ্জা| এবং মনুষ্যেতর একটি জীবকে লজ্জা করা মানুষের অনুচিত"|
তিনি তাঁর জীবনে সাংসারিক সমস্ত দায়-দায়িত্ব অত্যন্ত সুষ্ঠু ও বিচক্ষণতার সাথে পালন করেছেন| কিন্তু সংসারের বিষয় ঐশ্বর্য্যের মোহ তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি| মায়ের মৃত্যু, ১২ টি গর্ভজাত সন্তানের মধ্যে চোখের সামনে সাত-সাতজনের মৃত্যু; নাতি-নাতনির মৃত্যু, তাঁকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছে| শেষ বয়সে এসে স্বামী হারিয়েছেন| স্বামীর মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "আমার শিরে স্বর্ণমুকুট ছিল, কিন্তু এতকাল পরে সেই মুকুটটি খসিয়া পড়িল| এক্ষণে শেষ দশাতে বৈধব্য দশা ঘটিয়েছে| কিন্তু একটি কথা বলিতেও লজ্জা হয়| শুনিতেও দুঃখের বিষয় বটে| শত পুত্রবতী যদি পতিহীন হয়, তথাপি লোকে তাঁকে অভাগিনী কয়, বাস্তবিক যদি আর কিছু না বলে তুমি বিধবা হইয়াছ, কথাটি বলিতেই চাহে"|
স্বামী ছাড়া নারী সমাজের চোখে হেয় এই কথাটি এই মানসিকতাকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন| রাসসুন্দরীর জীবন সম্পূর্ণ নিজের হাতে গড়া| পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন| প্রবল প্রতিপত্তিশালী স্বামীর বিনা অনুমতিতে প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য পার্শ্ববর্তী তেতুলিয়া গ্রামের মীর আমুদে নামের প্রতিপত্তিশালী জোতদারকে চিঠি দিয়ে ডেকে আনেন| এবং তার সাথে তিন পুরুষের মামলা মোকদ্দমার লিখিত আপোষ নিষ্পত্তি করেন| এক হাত ঘোমটা দেওয়া এক অন্তঃপুরবাসিনীর এই দুঃসাহস তাঁর বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে| এই ব্যক্তিত্বের কাছে কর্তাব্যক্তিটিও শেষ পর্যন্ত বিনত হতে বাধ্য হন|
রাসসুন্দরী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি নারী, যিনি একটি সম্পূর্ণ আত্মজৈবনিক উপন্যাস লেখেন| বিয়ে হবার পর মাকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় তাঁর কেমন লেগেছিল সেকথা তিনি আত্মজীবনীতে লিখেছেন, 'আমার ওই সময়ের মানসিক অবস্থা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব একটা ছাগলকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে পূজার বেদির কাছে বলি দেওয়ার সময় তার যে অনুভূতি হয়, আমারও ঠিক ঐরকম লেগেছিল| প্রচন্ড কষ্টে ভেতরে ভেতরে চীত্কার করে কাঁদছিলাম, কাঁদতে কাঁদতে মাকে ডাকছিলাম|
রাসসুন্দরী তাঁর আত্মজীবনীতে জানান, গৃহস্থালির কাজ করতে করতে মাঝে-মধ্যে তিনি খাবার সময় পর্যন্ত পেতেন না| তিনি লিখেছেন, খাওয়ার সময় না পেলে তা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না| তিনি শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন তাঁকে যেন তিনি পড়তে শেখান| রাসসুন্দরীর আত্মজীবনী পড়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের যথার্থ মন্তব্য-'লেখাপড়া শিখিবার তাঁহার কোনো সুবিধা ঘটে নাই| তখনকার কালের স্ত্রীলোকের লেখাপড়া শেখা দোষের মধ্যে গণ্য হইত| তিনি আপনার যত্নে, বহু কষ্টে, লেখাপড়া শিখিয়াছিলেন| তাঁহার ধর্ম-পিপাসা তাঁহাকে লেখাপড়া শিখিতে উত্তেজিত করে|
নারী হিসাবে এই সমাজে জন্মে যে বিড়ম্বনা তা প্রতি মুহূর্তে রাসসুন্দরী উপলব্ধি করেছেন| ধীর গতিতে, শান্ত মেজাজে, সুকোমল স্পর্শে সংসারে তিনি সবসময় কল্যানী নারী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছেন| কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে সবসময় দ্বন্দ্বের যে ওঠানামা, নিজেকে প্রকাশের জন্য যে অস্থিরতা, ব্যাকুলতা তা যদি তিনি ৬০ থেকে ৮৮ বছর বয়স পর্যন্ত ধরে না লিখে যেতেন তাহলে এক অবগুন্ঠিত সাধারণ নারীর অসাধারণত্ব চেনা—জানার আড়ালেই থেকে যেত|
আত্মজীবনী রচনার কোনো আদর্শই যখন বাংলা সাহিত্যে ছিলনা বা কোনো পুরুষ লেখকই তখনও পর্যন্ত পূর্নাঙ্গ আত্মজীবনী লেখেন নি বলেই রাসসুন্দরী দেবীর আত্মজীবনী 'আমার জীবন' বাঙালি পাঠককে চমকে দেয়| এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম নারীর কলমে আত্মজীবনী গ্রন্থ হিসেবে চিরকালীন আসন লাভ করে|
আত্মজীবনী রচনার কোনো আদর্শই যখন বাংলা সাহিত্যে ছিলনা বা কোনো পুরুষ লেখকই তখনও পর্যন্ত পূর্নাঙ্গ আত্মজীবনী লেখেন নি বলেই রাসসুন্দরী দেবীর আত্মজীবনী 'আমার জীবন' বাঙালি পাঠককে চমকে দেয়| এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম নারীর কলমে আত্মজীবনী গ্রন্থ হিসেবে চিরকালীন আসন লাভ করে|
রাসসুন্দরী আপন অন্তরের অনির্বাণ শিখাটি সম্বল করে স্বশিক্ষার পথ খনন করেছেন| শিক্ষালাভ, অক্ষর পরিচয় বঞ্চিত মেয়েদের কথা অকপটে লিখেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে| তাঁর লেখা 'আমার জীবন' আমাদের কাছে আজও এক গভীর বিস্ময়| জিতাক্ষরা স্বশিক্ষিত রাসসুন্দরীর 'আমার জীবন' মেয়েদের শিক্ষার সূচনাপর্বের এক অসাধারণ দলিল|
----
তথ্যসূত্র—
১) আমার জীবন – রাসসুন্দরী দাসী --- আমার বই.কম
২) রাসসুন্দরী দেবী --- উইকিপিডিয়া
৩) 'আমার জীবন' ও রাসসুন্দরী দেবী – সুবর্ণা দাশ
৪) প্রথম নারী আত্ম্জীবনীকার রাসসুন্দরী দেবী –সুমিত্রা চৌধুরী
৫) রাসসুন্দরী দাসী – বাংলা সাহিত্যে প্রথম পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনীকার – ফরিদ আহমেদ
=====================
Sabita Ray Biswas
Flat - 3k Block -4,
Shankar Tower,
33 Sukanta Sarani, Italgachha
Kolkata 700079
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
জনপ্রিয় লেখা
প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা
লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা শ্রীজিৎ জানা "সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়"। স্রোতের ধারা তার দু'প্রান্তে রেখে যায় ভাঙাগড়ার চিহ্ন। কালের দৃশ্যপটেও পরিবর্তনের ছবি অনিবার্যভাবেই চোখে পড়ে। সমাজ সময়ের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নেয় প্রতিনিয়ত। সেখানে মনে নেওয়ায় বাধা থাকলেও,মেনে নেওয়ার গাজোয়ারি চলে না। ফলত কাল বদলের গাণিতিক হিসেবে জীবন ও জীবিকার যে রদবদল,তাকেই বোধকরি সংগ্রাম বলা যায়। জীবন সংগ্রাম অথবা টিকে থাকার সংগ্রাম। মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আজকে যা অত্যাবশ্যকীয় কাল তার বিকল্প রূপ পেতে পারে অথবা তা অনাবশ্যক হওয়াও স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়টির পরিষেবা দানকারী মানুষদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক কালে গাঁয়ে কত ধরনের পেশার মানুষদের চোখে পোড়তো। কোন পেশা ছিল সম্বৎসরের,আবার কোন পেশা এককালীন। সব পেশার লোকেরাই কত নিষ্ঠা ভরে গাঁয়ে তাদের পরিষেবা দিত। বিনিময়ে সামান্য আয় হত তাদের। আর সেই আয়টুকুই ছিল তাদের সংসার নির্বাহের একমাত্র উপায়। কালে কালান্তরে সেই সব পেশা,সেই সব সমাজবন্ধুরা হারিয়ে গ্যাছে। শুধুমাত্র তারা বেঁচে আছে অগ্রজের গল্পকথায়,আর বিভিন্ন সাহিত্য
মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি
লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি (লেখক ও সম্পাদকীয় দপ্তরের কথোপকথন আকারে) --কী পত্রিকা? --নবপ্রভাত। --মুদ্রিত না অনলাইন? --মুদ্রিত। --কোন সংখ্যা হবে এটা? --বইমেলা 2024। --কোন কোন ধরনের লেখা থাকবে? --প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া। --বিশেষ কোন বিষয় আছে? --না। যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে। --শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন আছে? --না। নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা 12-14 লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি 200/250শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। --ক'টি লেখা পাঠাতে হবে? --মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। --ফেসবুক বা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশিত লেখা কি পাঠানো যাবে? --না। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। --পত্রিকা কোন সময়ে প্রকাশিত হবে? --জানুয়ারি 2024-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে। --লেখা পাঠানোর শেষতারিখ কত? -- 17 ডিসেম্বর 2023। --কীভাবে পাঠাতে হবে? --মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। --লেখার সঙ্গে কী কী দিতে হবে? --নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) --বিশেষ সতর্কতা কিছু ? --১)মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন '
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল
সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ -- "ত্রয়ী কাব্য" ------------------------------------------------------------------------------ সুনন্দ মন্ডল নবীনচন্দ্র সেন সাহিত্যে তথা বাংলা কবিতার জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৪৭ সালে তাঁর জন্ম এবং মত্যু ১৯০৯ সালে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁকে 'বাংলার বায়রন' বলেছেন। জীবৎকালীন যুগে আত্মপ্রত্যয়ের মধ্যে জাতীয় চরিত্র আত্মস্থ করে নতুন সংস্কারে প্রয়াসী হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন।মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্র--এই তিন কবি বাংলা কাব্যধারায় প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। বিশেষত মহাকাব্য লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। এদিক থেকে মধুসূদন দত্ত একজন সফল মহাকাব্যিক। তাঁর 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের মত গভীর ও ব্যঞ্জনাময় না হলেও নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' কাব্য বিশেষ মর্যাদা দাবি করতেই পারে। তাছাড়া 'ত্রয়ী' কাব্যে ধর্মীয় ভাবধারার আবেগ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন বহু কাব্য লিখেছেন। যেমন- 'অবকাশরঞ্জিনী','পলাশীর যুদ্ধ', 'ক্লিওপেট্রা', 'রঙ্গমতী', 'খ্রীষ্ট', '
কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার
বসন্তের কোকিল তুমি বিচিত্র কুমার (০১) তোমার দু-আঁখির গহীন অরণ্যে একটা স্বপ্নের বহমান নদী রয়েছে, তারই রেশ ধরে আমি হেঁটে চলি অজানা বসন্তের পথে নীর উদ্দেশ্যে। সে চলার কোন শেষ সীমা নেই তাই আমার বিষণ্ণ একতারা সন্ন্যাস খুঁজে ফিরে , কবে তুমি বুঝবে অনুশ্রী মনের পর্দা খুলে একুশ বসন্ত তোমার রঙ ছিটিয়ে যাচ্ছে অচিনপুরে। এদিকে আমার দেহের প্রতিটি শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে তোমার ভালোবাসার একটু উষ্ণতা পাবার জন্যে, শুধু অনুভবে তাণ্ডব উচ্ছাসিত হচ্ছে--- যেদিকে তাকাই --- ফুলে ফুলে ভ্রমর গুনগুনিয়ে উড়ে উড়ে পরে বসন্তের কোকিল গান গায় নব বসন্তে, তোমার দুই চোখে আমার একই ছায়া রয়ে যায় উতলা ভালোবাসার সীমান্তে। (০২) এক রক্তাক্ত বসন্তের স্মৃতি কোন এক উতলা বসন্তের সকালে পুষ্পবনে ফুটেছিল একটি টকটকে লাল গোলাপ, তার সাথে হয়েছিলো দেখা প্রথম ফাগুনে হয়েছিল দুজনার এ জীবনের আলাপ। তারপর প্রতিটি শীতের ভোরে অনেক রোদের পরশ মেখে ছুঁয়ে যেতে আমার বুকের বাঁ পাস শিশির রেখা, তখন প্রতিটি ভোর হয়ে যেত ভীষণ রকম মিষ্টি আর ছিলো শুধু বসন্তের ঘ্রাণ মাখা। প্রতিটি সকালে একঝাঁক মায়াবী পাখি অনুভবের
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সূচিপত্র কবিতা ।। তৈরি হয় এক নতুন বিপ্লবের পটভূমি ।। প্রণব কুমার চক্রবর্তী কবিতা || প্রতিবাদ || জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। সেই মেয়েটি রাত জাগে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। শপথ ।। দীপঙ্কর সরকার কবিতা ।। কোরাস রাত ।। বন্দনা পাত্র কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই ।। দীনেশ সরকার অণুগল্প ।। ব্যাকবোন ।। বিশ্বনাথ প্রামাণিক কবিতা ।। আন খুঁজে আন শিরদাঁড়াটা ।। জয়শ্রী সরকার কবিতা ।। জীবন এখন ।। লাবণী পাল কবিতা ।। তিলোত্তমার বিচার চাই! ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা ।। যুদ্ধ , প্রতিনিয়ত ।। সুমিত মোদক মুক্তভাবনা ।। কী বলব! ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রতিবেদন ।। বিচার পাক অভয়া ।। জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ার যে চিঠিটা আজো পাওয়া যায়নি ।। আশীষকুমার চক্রবর্তী কবিতা ।। জগন্মাতা নাকি তিনি ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। মেয়েটির মৃত্যু দেখে ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। অন্ধকারের আলো ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। ঘোষণা ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। অপেক্ষায় ।। রণেশ রায় কবিতা ।। গ্লানি ।। সুজন দাশ কবিতা ।। বিনীত আবেদন ।। শংকর ব্রহ্ম কবিতা ।। তুই যে মেয়ে তিলোত্তমা ।। অশোক দাশ কবিতা ।। শোক সন্তাপের দুর্গা ।। সুদামকৃষ্ণ মন্ডল ক
প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪
সূচিপত্র গল্প ।। উৎশব উৎসব ।। বন্দনা সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ।। শ্যামল হুদাতী প্রবন্ধ ।। বাংলায় প্রথম আত্মজীবনী লেখিকা রাসসুন্দরী দেবী ।। সবিতা রায় বিশ্বাস মগরাহাট (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এলাকার স্থানীয় কিছু কথ্যশব্দ, উচ্চারণ, বাগধারা ইত্যাদি (পর্ব-৬)।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। একটি মৃত্যু, অজস্র প্রতিবাদ ।। নাসির ওয়াদেন কবিতা ।। অন্ধকার জগৎ ।। সুপ্রভাত মেট্যা গুচ্ছকবিতা ।। আবদুস সালাম কবিতাগুচ্ছ ।। হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় খোলা কবিতা ।। মানস মণ্ডল নিবন্ধ ।। সম্পর্ক ।। সংঘমিত্র ব্যানার্জি উপন্যাসিকা ।। উদয় ।। তপন তরফদার সিনেমা রিভিউ ।। ছবি : বহুরূপী, পরিচালক : রাজাদিত্য ব্যানার্জি ।। আলোচনা: জয়শ্রী ব্যানার্জি গল্প ।। গল্পটা মিথ্যে নয় ।। বিকাশকলি পোল্যে অণুগল্প ।। স্পিড ব্রেকার ।। দেবাংশু সরকার কবিতা ।। একটা পুরোনো অঙ্ক ।। রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতা ।। গোপন সম্মোহন ।। বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ কবিতা ।। আগুনের পাখী হব ।। কাকলী দেব দুটি কবিতা ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। বেঁচে থাকে ।। তীর্থঙ্কর সুমিত কবিতা ।। হে অনিন্দ্য, রক্তাক্ত মাকড়সার সর্বাঙ্গ ঋষি দৃশ্য খাও
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত
উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে সৌরভ পুরকাইত বাংলার উৎসব বাংলার প্রাণ। প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যে যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায় এই উৎসব। কথায় বলে 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'।মন আনন্দই চায়।তাই তাকে সজীবতা দিতে,পরিবারের,সমাজের ভালো-মন্দের কথা মাথায় রেখে মানুষ নিজেই সৃষ্টি করে নিয়েছে নানাবিধ উৎসবগুলিকে। একেবারে প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কখনোই উৎসব বিমুখ ছিল না।উৎসবই তাকে ঘর থেকে বাইরে টেনে এনেছে,চিনতে শিখিয়েছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দকে। উৎসব আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের যোগ, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'সত্য যেখানেই সুন্দর হয়ে প্রকাশ পায় সেইখানেই উৎসব'।হৃদয়ের সেই সুকোমল বৃত্তির জাগরণ যেন ফুটে ওঠা ফুলেরই মতো সত্য ও সুন্দর।এই জাগরণই উৎসব। তাই নানা কিছুর মধ্য দিয়ে,নানা উপলক্ষ্যে এই উৎসব প্রকাশ পায়। প্রাচীনকালে মানুষের হাতে না ছিল পসার, না ছিল পসরা।ছিল মনের আন্তরিকতা,মানুষকে কাছে টেনে নেবার ক্ষমতা।সেটাই ছিল উৎসবের সৌন্দর্য। তাই সেদিনের উৎসবে ক্ষুদ্র,তুচ্ছ উপকরণও প্রাণের উচ্ছ্বাসে মহৎ হয়ে উঠত।সেকালের উৎসবে লোক দেখানো ব্যাপার কিছু
"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান
"নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)। আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক
মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার সফ্ট কপি ডাউনলোড করতে ছবিতে ক্লিক করুন। ====০০০==== মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যাটি অনলাইনে অর্ডার করে বাড়িতে বসে পেতে পারেন অর্ডার করার লিঙ্ক: https://notionpress.com/read/nabapravat-utsab-2023 NABAPRAVAT30 কোডটি ব্যবহার করলে কম দামে পাবেন। (প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ৯৪৩৩৩৯৩৫৫৬ নিরাশাহরণ নস্কর। সম্পাদক, নবপ্রভাত।)
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী
কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা : এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় পার্থ সারথি চক্রবর্তী কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। রাজার শহর কোচবিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। দুর্গাপূজা আর দীপাবলির মতো দু'দুটো বিরাট মাপের উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই, এ শহর ভাসে রাস উৎসবের উন্মাদনায়। মদনমোহন ঠাকুর কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর। তাঁকে নিয়ে সবার আবেগ আর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখানে বাঁধনছাড়া। এক অপূর্ব মিলনোৎসবের চেহারা নেওয়া এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক। জন, মত, সম্প্রদায়ের উর্ধে এই উৎসবের গ্রহণযোগ্যতা। সময়ের কষ্টি পাথরে পরীক্ষিত! এক প্রাণের উৎসব, যা বহুদিন ধরেই গোটা উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ উৎসবে পর্যবসিত।কোচবিহারের এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে যে মেলা হয় তাও সময়ের হাত ধরে অনেক বদলে গেছে। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া! শৈশবে বাবার হাত ধরে যে মেলা দেখেছি তা চরিত্র ও আকৃতি দু'দিক থেকেই বদলে গেছে। গত পঁচিশ বছর ধরে খুব কাছে থেকে এই উৎসব ও মেলা দেখা, অনুভব করার সুযোগ হয়েছে। যা দিনদিন অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির ঝুলিকে সমৃদ্ধ করে গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই। খুব সংক্ষেপে এই উৎসবের ইতিহাস না জানাটা কিন্তু অবিচারই হবে বলে মনে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন