Featured Post

ভয়ের গল্প ।। গা ছম ছম রাত ।। সুনীপা শী


 গা ছম ছম রাত

সুনীপা শী

 
প্রলয় রাতে পির্জা খাবে বলে অর্ডার দিয়েছে।ডেলিভারি বয় দশটার সময় পির্জা দিয়ে যাবে । তাই প্রলয় বার বার ঘড়ির দিকে তাকাছে, ঢং ঢং করে দশটা বাজল। কলিংবেলের আয়াজ প্রলয় আনন্দে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। মনে মনে বলল কেউ কি তবে আমার সাথে মজা করছে। তারপর, দরজার আসে পাসে কেউ নেই দেখে প্রলয় এর গাটা যেন কাঁটা দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিল । মনে মনে বলল বাড়িতে একা আছি বলে কেউ কি আমার সাথে মজা করল নাকি.?..আজ তো আবার অমাবস্যা । 
প্রলয় নিজে ই নিজেকে বলল কি প্রলয় বাবু বাড়িতে একা থাকতে ভয় লাগছে ।মনে মনে নিশ্চয়ই ভাবছ বাবা মায়ের সাথে মামার বাড়ির কালীপুজোয় গেলে ভালো হতো । প্রলয় তখন বলে- আমি কি ভীতু নাকি ,যে ভয় পাব। আর ভুত টুত বলে ওসব কিছু হয় না । তবে বাড়িতে একা বলে যেনো বরিং লাগছে ।বরিং কাটানোর জন্য জয়কে বরন ফোন করি ।প্রলয় জয়কে অনেক বার ফোন করল ।জয় প্রলয় এর ফোন রিসিভ করল না। । তারপর প্রলয় ফেসবুক খুলে দেখতে থাকে । ফেসবুকের মধ্যে হঠাৎই একটা বিভৎস মুখ দেখে ।সঙ্গে সঙ্গে দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ হয় ।প্রলয় এর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। ও সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা যেনো অদৃশ্য হয়ে যায় । কলিং বেল বাজতে থাকে ।প্রলয়ের দরজা খোলার সাহস হয় না ।ফোনে অচেনা নম্বরে ফোন আসে। ফোন টা রিসিভ করতে ও যেনো সাহস পায় না ।দুই বার এর মাথায় ফোন টা যখন বাজল তখন ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলল । ফোনের ওপার থেকে বলে স্যার দরজা খুলুন পির্জা এনেছি। প্রলয় দরজা খুলে ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে পির্জার পের্কেট নিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রলয় পির্জা প্লেটে রেখে একটু করে খা ই আর মনে করতে থাকে আগের বারে কলিংবেলের আওয়াজ হলো , দরজা খুললাম অথচ কেউ নেই। যখন থেকে ফোন ব্যবহার করছি কখনো এমন মুখ দেখিনি ।অর্ধেক পির্জা খেয়ে বলে আজকে আমার সাথে কি যে সব হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না । এখন মনে হচ্ছে বাবা মায়ের সাথে মামার বাড়ি গেলে ই বরন ভালো হত। এই যা বাবা মাকে তো ফোন ই করা হলো না ।ভালো ভাবে পৌঁছেছে তো ।এক বার ফোন করে দেখি ।এই যা ফোনে চার্জ ও নেই দেখছি। ফোন টা বরন আমি চার্জ এ দিয়ে ফোন করি । এতো আবার নর্টরিচেবল বলছে ।বাবা মায়ের সাথে একটু কথা বললে ভালো লাগত । মনে মনে বলে ফোন দেখে যে রাতটা কাটাব এদিকে ফোনে চার্জ ও নেই। কি আর করব বাথরুম সেরে নাক ডেকে টানা ঘুম দেবো ।এক ঘুমে সকাল। প্রলয় বাথরুম সেরে বের হবার সময় বাথরুমের আলোটা দপ দপ করে নিভে গেলো ।
প্রলয় সত্যি ভয় পেয়ে এক ছুটে ঘরে চলে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর মনে মনে বলে কি যে হচ্ছে আমার সাথে একলা একা ঘরে সত্যি এবার ভয় করছে। ভুত বলে কি সত্যি কিছু আছে? কি জানি বাবা । আবার ও নিজের মনকে সান্তনা দিয়ে বলে না না ভুত টুত বলে কিছু হয় না ।এবার এই বিছানায় শুলাম। নাক ডাকিয়ে ঘুম দিয়ে ,এক ঘুমে সকাল। 
প্রলয় নিজের মনকে যত ই সান্তনা দিক না কেন ভয় ও পাচ্ছে। আবার ও নিজের মনে বলে এই চোখ বন্ধ করে ঘুমছি, চোখ খুলে দেখব সকাল। ঘড়িতে ঢংকরে একটা বাজল, চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় বলে একটা বাজল মানে এখন গভীর রাত। 
প্রলয় এই গভীর রাতে খাটে এপাস ওপাস করছিল, হঠাৎই যেন মেঝে থেকে উঠে এল আওয়াজ। প্রলয় আওয়াজ শুনে বাঁচা ও বলে চিৎকার করে উঠল। বিছানার উপর বসে চোখ বন্ধ করে ,দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুঁজে থর থর করে কাঁপতে লাগল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগল, আজ আমার সাথে এ কি হচ্ছে, এ যে সব ভুতুরে কাণ্ড। আজ আমি প্রাণে বাঁচব তো? হাঁটুর ফাঁক থেকে আপছা করে চোখ মেলে তাকায়। দেখে, কে যেনো দৌড়ে ছুটে চলে গেলো ।রান্না ঘরের বাসন গুলো দুম দাম করে পরছে ।প্রলয় ভয়ে আরো থর থর করে কাঁপতে থাকে ,আর কাঁদো কাঁদো গলায় বলে -বাবা, মা আর হয় তো তোমাদের সাথে আমার দেখা হলো না ।বলে অজ্ঞান হয়ে যাই। 
পরের দিন প্রলয় এর জ্ঞান ফিরতে দেখে চারিদিকে আলো ।মনে মনে বলে যাক সকাল হয়ে গেছে ।কাল রাতে আমার সাথে যা সব ঘটল ভাবিনি আবার আমি সূর্যের আলো দেখব। 
দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ।প্রলয় বলে এতো সকালে সত্যি কি কেউ এলো ।নাকি কাল কের এর মতন ভয়ে ভয়ে দরজা টা খুললো। প্রলয় এর মা বলে , বাবা কি ঘুম বটে তোর ।কখন থেকে বেল বাজাছি। নিশ্চয়ই অনেক রাত করে শুয়েছিস? 
প্রলয় বলে হ্যাঁ যা ঘুমিয়েছি..... বলতে গিয়েও বলল না ।তা তোমরা এতো সকালে কেন ?তোমাদের তো বিকালে আসার কথা ।প্রলয় এর বাবা বলেন.. তোর মামার বাড়ি গেলে তবে না বিকেলে আসব। 
প্রলয় বলে মামার বাড়ি গেলে মানে ..তোমরা যা ওনি ? প্রলয় এর মা বলে ..যা ওয়া আর হলো কই মাঝ রাতে গাড়ি খারাপ হওয়াতে সাড়া রাত তো রাস্তাতে ই কাটিয়ে দিলাম। এদিকে তোকে ফোন করছি ফোনের কোনও ওস্তিত্য নেই বলছে ।প্রলয় তখন মনে মনে বলে ..মাঝ রাস্তায় তোমাদের গাড়ি খারাপ হওয়া,ফোনে আমাকে না। পা ওয়া ।আমার সাথে রাতে যা সব ঘটল সব কিছু কি ভুতুরে ব্যাপার। না কি কাক তালিয়। কিছু ই যে বুঝতে পারছি না তবে এটুকু বলতে পারি আমরা যে সবাই প্রণে বেঁচে আছি তার জন্য ভগবান কে ধন্যবাদ জানাই।
 
===================

সুনীপা শী, গ্রাম -মামুদপু্‌ থানা -ফলতা, জেলা -দক্ষিণ ২৪ পরগনা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী