ইন্দ্রাণী দত্ত
........................................................
চরিত্র : বিশ্বরুপ ও প্রিয়ংবদাশব্দ : ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে যাবার শব্দ,তারপর হাল্কা পাখির ডাক
বিশ্বরুপ : (মাঝারি স্বরে)শুনছেন,এই যে শুনছেন,হ্যালো ম্যাডাম,আপনাকে ,আপনাকে বলছি
প্রিয়ংবদা :( সামান্য দূর থেকে আমতা,আমতা করে ) : অ্যাঁ,আমাকে ? আমাকে কিছু বলছেন?
বিশ্বরুপ: হ্যাঁ,আপনাকে,আপনাকেই বলছি
প্রিয়ংবদা :আস্তে,আস্তে,এইভাবে কেউ দৌড়ায় ,পড়ে যাবেন যে!!
বিশ্বরুপ : (জোরে,জোরে দম নিতে নিতে) দাঁড়ান,দাঁড়ান একটু হাঁফ ছেড়ে নি,আপনার পায়ে দম আছে বলতেই হচ্ছে !
প্রিয়ংবদা:তা আমার পিছু ,পিছু এভাবে না দৌড়ে, দূর থেকেই না হয় একটু উঁচু স্বরে হাঁক দিলেই তো পারতেন! নাকি আমাকে ফলো করছিলেন ?
বিশ্বরুপ:( জিভ কেটে )আরে না,না,তবা,তবা,তা কেন,আচ্ছা বলুন তো যৌবনের সেই তারুন্যতা কি আর গলার স্বরে আছে,একজন রমনীতে মিষ্টি করেঅ ডাকলে impression খারাপ হয়ে যাবে না ? তাই তো ,মানে..
প্রিয়ংবদা: হুম,হুম,বুঝলাম,এবার একটু খুলে বলুন তো আমার সাথে আপনার ঠিক কি দরকার?
বিশ্বরুপ:(লজ্জা পেয়ে)কি যে বলেন,এই মাঝ রাস্তায় সব যদি খুলে দিয়ে একটা মহিলার সাথে কথা বলি,পাবলিক কি আমায় আর আস্ত রাখখখবে. ...
প্রিয়ংবদা : আরে থামুন,থামুন,একদম এইসব ন্যাকান্যাকা কথাবার্তা আমাকে শোনাতে আসবেন না,কথা খুলে বলতে বলেছি,আপনার পাঞ্জাবীর বোতাম নয়..
বিশ্বরুপ :এই,এই কান ধরছি,এইভাবে রিয়াক্ট করবেন না প্লীজ,..
প্রিয়ংবদা : এবার যদি কাজের কথায় আসেন ,(ঘড়ি দেখে,আমতা,আমতা করে) আমার একটু তাড়া আছে আর মেট্রোতে নিজের সিট ছেড়ে আমাকে বসতে দেওয়ার জন্য আরও একবার ধন্যবাদ,কিছু বলার থাকলে তো তখনি বলতে পারতেন,এত কসরত করার....
বিশ্ব : (কথার মাঝে থামিয়ে প্রিয়ং কে)ওই যে বাঙালি তো,স্বাভাব কোথায় যাবে বলুন !
প্রিয়ং :(সংশয় নিয়ে)আপনি ঠিক কি স্বাভাবের কথা বলছেন বলুন তো??
বিশ্ব : কেন শোনেন নি,নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন,আমরা সময়ের কাজ সময় থাকতে না করে অসময়ে সেই কাজ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি,ওই অনেকটা ট্রেন ছাড়বে,ছাড়বে,সেই মুহূর্তে হুড়মুড় করে প্ল্যাটফর্ম খোঁজা...
প্রিয়ং :(দাঁত কড়কড়িয়ে) ওটা আমাদের নেতাজী নয় ,রবি ঠাকুর বলেছিলেন..
বিশ্ব :( আমতা ,আমতা করে )সে,সে যাই হোক,কেউ তো একজন বলেছে,দেখছেন আপনার সামনে আমার সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে !!!
প্রিয়ং :হুম,তবে যাই বলুন ,আপনি বেশ রসিক মানুষ
বিশ্ব :(হেসে)বলছেন !! কলেজ জীবনের বন্ধুরা আমাকে রসমালাই বলেই ডাকতে বুঝলেন!
প্রিয় ং : বেশ,বেশ,তবে এই আমি না অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি আপনি কথা বলতে বলতে,আমার পা থেকে মাথা অবধি ড্যাব ড্যাব,করে দেখে যাচ্ছেন,ব্যাপার টা কি বলুন তো,
বিশ্ব :(ভেবে) হুমমমম তা একটু দেখছি বটে,
প্রিয়ং : এই আপনার লজ্জা লাগছে না ,একজন অপরিচিত মহিলাকে এভাবে দেখছেন,আবার স্বীকার করছেন,আপনাকে তো সুবিধার ঠেকছে নাআআ !!
বিশ্ব : না,একটুও না,দেখাটা আমার বলতে পারেন অভ্যাস হয়ে গেছে ৷
প্রিয়ং : কি,! কি অভ্যাস,মানেটা কি,আপনি কি তাহলে মেয়েদের প্রথমে মেট্রোতে বসার সিট ছেড়ে দেন,তারপর পিছন পিছন আসেন,তারপর তাদের আপাদামস্তক পর্যবেক্ষণ করেন ??
আপনি তো মশাই সাংঘাতিক !
বিশ্ব : আরো না,না,ভুল বুঝবেন না,পৃথিবীর সব সুন্দর,কুৎসিত বিষয়গুলো ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে শব্দে তাদের গাঁথবো কি করে বলুন তো..
প্রিয়ং :আপনি তাহলে লেখালেখি করেন? উমমম,কবি মনুষ! আপনার ওই লম্বা দাঁড়ি আর কাঁধে ঝোলাতে একটু কবি কবি feelings আসছে বটে..
বিশ্ব : এই কেন কেন,এই আমার আট সেন্টিমিটার দাঁড়িতে কোথাও লেখা আছে নাকি কককক...বিবিবি..নাকি আমার এই কাঁধের ঝোলাতে? নাকি রবিঠাকুর আমাদের কবিদের জাতীয় স্টাইল দিয়ে গেছেন,তাই দেখেই চিনলেন ম্যাডাম?
প্রিয় ং :(বিরক্ত হয়ে) এই শুনুন এই ভর দুপুরে আপনার সাথে রসিকতা করতে একদম ভালো লাগছে না,ঝেড়ে কাশুন তো এবার একটু !
বিশ্ব : (আগ্রহ নিয়ে) এই কাশবো বলছেন?একদম ঝেড়ে,দেখুন ভেবে বলুন,মুখবন্ধনী আজ নেই কিন্তু ,ভাইরাস বাবাজি মুখ দিয়ে বেড়িয়ে,কোথা দিয়ে যে ঢুকে পড়বে আপনার শরীরে ধরতে পারবেন না !!!(হেসে)
প্রিয় ং : আমারি ঘাট হয়েছে আপনার কথার উত্তর দিয়ে ,আমার বোঝা উচিৎ ছিলো সব কাধেঁ ঝোলা,লম্বা দাঁড়িওয়ালা রবিঠাকুর হয় না,কেউ কেউ রমরহিম ও হয়..
বিশ্ব : তা যা বলেছেন,আপনিও কিন্তু কম যান না,রসকলি,না মানে আমি হাস্যরসের কথা বলছিলাম আরকি..
প্রিয় ং:(লাজুক ভাবে) আচ্ছা আপনি যে বললেন সুন্দর আর কুৎসিত দুটোই নাকি পর্যবেক্ষণ করেন ,তা আমি কোন দলে শুনি ?
বিশ্ব :নারী মাত্রই সুন্দর,নারী মানেই তো মা,বউ,কন্যা ভগিনী ,এরা কি কুৎসিত হয় বলুন তো...
প্রিয় : ইন্টারেস্টিং,বেশ গুছিয়ে কথা বলেন মশাই,এবার বলুন আমাকে পিছু করার কারন,খবরদার আর একদম কথা ঘোরাবেন না,
বিশ্ব :বলছি আমাকে একটু ধীরেন বাবুর বাড়িটা কোথায় বলতে পারবেন? ধীরেন মুখার্জী আর হ্যাঁ ওনার একটি মধ্যবয়স্কা মেয়ে আছে?
প্রিয়ং :ওনাকে কি দরকার বলে ফেলুন
বিশ্ব :আপনাকে কেন বলবো,আমি ওনাকেই বলবো শুধু
প্রিয় :(সুর টেনে)তাহলে আমি চললাম,আপনিই এই ভর দুপুরে দাঁড়িয়ে থাকুন,মনে হয় না আমি ছাড়া ঠিকানাটা আর কেউ বলতে পারবে না
বিশ্ব : (ভয়ে,ভয়ে,মাথা চুলকে)আরে না,না,যাবেন না,শুনুন না,বলছিলাম ওনার মেয়ের জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছিলাম
প্রিয়ং:ছেলে কি করে?
বিশ্ব : অ্যাঁ ?
প্রিয়ং :এই আপনি বাংলা বোঝেন না,বলছি আপনার ছেলে কি করে
বিশ্ব : এই মানে? আমার ছেলে? আমি তো অবিবাহিতা,কি সব বলছেন,আপনার মাথাটাও কি গেল তবে!!!!
প্রিয়: হ্যাঁ , এতক্ষনের সঙ্গদোষ,বলছি আপনার আনা ছেলে,আরে মশাই পাত্র কি করে,কোথায় থাকে ,
বিশ্ব :(ঢোক গিলে)পাত্র 5 ফিট,6,বয়স 42,গায়ের রং রং থপথপে ফর্সা,কাছে পিটেই থাকে,শিক্ষাগতা পেশা,কবিতা লেখা নেশা,ও হ্যাঁ মোটা কাচের চশমা পড়ে,মাইনাস 9
প্রিয়:এই আস্তে,আস্তে,শেষটা কি?
বিশ্ব : কেন চশমার পাওয়ার !
প্রিয় :( রেগে )এই আপনাকে না,ধুর,আপনি কি ঘটকালী করেন?
বিশ্ব:একা ঘরে সবি করতে হয়,দীর্ঘশ্বাস ফেলে ,আপনি আর কি বুঝবেন,!!আপনি ধীরেন বাবুর মেয়ে কে চেনেন নাকি
প্রিয়ং :মেয়ে 5 ফিট,4,বয়স 38,তিনদিন হলো নতুন একটি ইস্কুলে পড়াচ্ছে,শ্যমবর্ন,আর হ্যাঁ কফি,চা ছাড়া মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাকটা ভালোই রাঁধে
বিশ্ব: বলেন কি!!! কচুর শাক,মাছের মাথা ,জমে যাবে...
প্রিয় ং : (গম্ভীর ভাবে) ধীরেন মুখার্জী আমার বাবা,আমি ওনার সেই মধ্যবয়স্কা মেয়েটি,তা আপনার পাত্রটি ঠিক কে...?
বিশ্ব:এই যে আপনার সামনে সশরীরে অধমটি দাড়িয়ে আছে..
প্রিয়ং: আমার বাবাকে কবে,কোথায় কি ভাবে চিনলেন ??
বিশ্ব :এই যে একটু আগে,মেট্রো তে চিনলাম আপনার বাবাকে
প্রিয়ং:অ্যাঁ,মানে???
বিশ্ব: না মানে আপনার ব্যাগ দিয়ে এপিক কার্ড টা পড়ে গেছিলো,ওখানেই daughter of....,
সত্যিই বলতে তিন দিন আগে আপনাকে যখন প্রথম দেখি..
প্রিয়ং:(লাজুক ভাবে)থামলেন কেন,কি বলুন?শেষ করুন..
বিশ্ব;না মানে এখনকার কলেজ স্টুডেন্টরা যাকে বলে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট...
প্রিয়ং : (হেসে) লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট কি আপনার একারি শুধু...দিন, দিন,আমার এপিক কার্ড টা এবার দিন,খুব রিস্ক নিয়ে ফেলেছিলাম,আপনি যদি না দেখতেন কি হতো বলুন তো,দিন কার্ড টা
বিশ্ব: মানে!!সেকি,ইচ্ছে করে ফেলেছেন,তারমানে আপনিও!!!!
প্রিয়ং:(হেসে)হুম আপনি যা ভাবছেন একদম ঠিক ভাবছেন,..
.
.প্রিয়ং ও বিশ্ব: এক সাথে হো,হো হাসি......
পাশ দিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির গলায়:
''প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস—
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল পড়ে ঝ'রে—
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ'রে।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়,মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস—
মাঝখানে তার তোমার চোখেে আমার সর্বনাশ.''......... রবিঠাকুর
-------- যবনিকা-------
লেখনীতে : ইন্দ্রাণী দত্ত
ঠিকানা :পূর্ব বর্ধমান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন