সকালেই বল্লরী ফোন করে জানালো যে , এবারের নবান্নের অনুষ্ঠানে ওরা অাসতে পারবে না ৷
- সে কি বলছিস !
- গতবারে গিয়ে অর্ক ভীষন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলো ৷
- কেন ? বিমলা জানতে চায় ৷
- কেন অাবার ৷ সে তো ও ই জানে ৷ বাড়িতে ফিরে খুব রাগারাগি করেছিলো ৷
-দে লাইনটা অর্ককে ৷ অামি কথা বলবো ৷
- মায়ের কথা শোনা মাত্রই বল্লরী ঝাঁজিয়ে বলে - থাক ৷ ওর সাথে কথা বলে কোনও লাভ হবে না ৷
- কেন ? অামার তো ব্যপারটা একটু জানা দরকার ৷
- তোমার জেনে কোনও লাভ নেই ৷গোটা ব্যাপারটা ওর বাবা মা শুনে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন - তোমার এসব অাধিক্ষেতা অার বুজরুকি ওনারা একদম মেনে নিতে রাজি নন ৷ নিষেধ করেছেন যেতে ৷ বলেছেন কথা দিয়েছিলেন মানে এইনয় যে , তুমি ওদের ছেলেকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই ভাবে হেনস্তুা করবে !
- এ কী লছিস ? বিমলা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে - অামি ওদের কাছে , মানে অর্কের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে এক্ষুনি ব্যাপারটা মিটিয়ে নিচ্ছি ৷ অামার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ৷ - সে অার করতে হবে না ৷ তুমি কী চাও তোমাদের জন্য অামার সংসারটা ভেঙে যাক ?অামি এর খেশি অার কিছুই বলতে চাই না ৷ তোমরা অামাদের জন্য অযথা অপেক্ষা করবে বলে সকালেই ফোন করে জানিয়ে দিলাম ৷ কিছু মনে কোরো না , বলেই লাইনটা কেটে দিলো ৷
বিমলা রিসিভারটা মুখের কাছে নিয়ে বার কয়েক জোরে হ্যালো হ্যালো করে চিৎকার করে বুঝলো বল্লরী ফোনটা ছেড়ে দিয়েছে ৷ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো ৷ ভাবে- এখন ওর কী করবে ? বল্লরীর বাবাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গোটা ব্যাপারটা বলবে ? নাকি নিজেই ছেলে বিল্টুকে নিয়ে সকালের প্রথম বাসেই বসিরহাটে অর্কদের বাড়িতে চলে যাবে ! ক্ষমা চেয়ে বুঝিয় সুঝিয়ে মেয়ে অার জামাইকে নিয়ে অাসবে ?
( দুই )
ভাবতে ভাবতেই বিমলার দু চোখ জলে ভরে ওঠে ৷
বুঝতে পারে -কথাগুলো মোটেই বল্লরীর মনের কথা নয় ৷ সাংসারিক শান্তি বজায় রাখার জন্যই ও সব কথা বলেছে ! বিয়ের পরে বিগত চার বছর ধরে ওরা অাসছে ৷ অথচ , এবারে এই কথা ! হঠাৎ কী হলো ! অর্করা তো অশিক্ষিত পরিবার নয় ! যথেষ্ট লেখাপড়া জানে ! তবু কেন এই ধরনের কথা ! বল্লরীর বিয়ে দেবার অাগে ওর শ্বশুর বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এবং শ্বাশুরি মহামায়া দেবী অর্কের বাবা অার মায়ের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেই নিয়েছিলেন ৷ লক্ষ্মীপুর গ্রামে নবান্নের অনুষ্ঠানটা খুবই জাঁক -জমক পূর্ণ ৷ সারাটা গ্রাম এই উৎসবে মেতে ওঠে ৷ ওই দিনটাতে বল্লরী অার অর্ককে যন অাসতে দেয়া হয় ৷
অর্কের বাবা অার মা ওঁদের সেই দাবী মেনেও নিয়েছিলেন ৷ অথচ ,অাজ অাসতে দিতে রাজি নন !
চোখের সামনে ভেসে ওঠে শ্বশুর বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায়ের মুখ ৷
বিছানায় বসেই ও দেয়ালে টাঙানো ছবিটার দিকে তকাতেই যেন শুনতে পায় - বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায়ের গলা ! ওকে ডেকে বলছেন - বৌমা ? ডোন্ট ক্রাই ৷ এটা খুব সামান্য ব্যাপার ৷ তোমার মেয়ে জামাই অাজ এলো কী না এলো , সেটা কোনও ব্যাপারই নয় ৷ মনে রেখো ,তুমি শুধুমাত্র বল্লরী অার বিল্টুরই মা নও ৷ তুমি সব্বার মা ৷ তোমাকে সব্বার কথাই ভাবতে হবে ৷ ওরা ওদের কথা খেলাপ করতে পারে , কিন্তু তুমি তোমার কর্তব্যে অটল থেকো ৷ অামি সেটাই দেখতে চাই ৷
হাজার হোক মেয়ে জামাই বলে কথা ! মনের ভেতরের দৃঢ়তা হঠাৎই কেমন যেন শীথিল হয়ে উঠেছিলো ৷ মাতৃস্বত্তা ওকে ভীষন ভাবে নাড়া দেয়া শুরু করেছিলো ৷ সত্যিই যদি ওর জন্য বল্লরীর সংসারটা ভেঙে যায় , তাহলে মা হিসবে সেটা ও দেখবে কিভাবে ? মিটিয়ে নেয়াটাই ভালো ৷
বিমলা একবার ভেবেছিলো স্বামীকে ডেকে বলবে - যাও ৷ তুমি শান্ত স্বভাবের মানুষ ৷ তোমাকে দেখলে ওনারা বেশি কিছু বলতে পারবে না ৷ গিয়ে ওদের বুঝিয়ে নিয়ে এসো ৷ কিন্তু , পরমুহূর্তেই বিমলা ওর শ্বশুর অার শ্বাশুরির মান সম্মানের কথা ভেবে ঠিক করে - নাহ্ ৷ বলবে না ৷ অন্তত অাজ তো মোটেই নয় ৷কারন এই দিনটার সকথে গ্রামের অনেকেরই মান সম্মান জড়িয়ে রয়েছে ৷
বিমলা কোনও মতেই গ্রামের মান সম্মাল ভূলুণ্ঠিত হতে দেবে না ৷
( তিন )
লক্ষ্মীপুর গ্রামটা মূলত দক্ষিন চব্বিশ পরগনার কোল ঘেঁসা উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট মহকুমার একটি কৃষি এবং মেছোঘেরি অধ্যুষিত অঞ্চল ৷
মিনাখাঁ থানার দক্ষিনে বিদ্যাধরী নদির পাশে এই গ্রামটি বাদ দিলে চারপাশের গ্রামগুলোতে - হাকিবপুর , রাঁকিপুর , নিয়ামতপুর , বেরমজুর , ইত্যাদিতে মুসলীমদের অাধিপত্যিই বেশি ৷ গ্রামের বেশিরভাগ লোকই হয় কৃষিজীবী - ধনী মানুষের জমিতে চাষ-অাবাদ করে , না হয় বাবুদের মাছের ঘেরিতে কাজ করে জীবন নির্বাহ করে ৷ লেখা পড়ায় খুব একটা উৎসাহী নয় ৷ ওদের ধারনা - লেখাপড়াটা অর্থ-কড়ি সম্পন্ন লোকদের একটা শখ ৷ সমাজে বাবুগিরি দেখাবার একটা কায়দা মাত্র ৷
বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায়ের বাবা ব্রহ্মজ্যোতি
বিদ্যাবিনোদ গ্রামে একটা সংস্কৃতের টোল খুলেছিলেন ৷ সেটা দেখেই হাজি নুরুদ্দিন মুনশীরো ইচ্ছে হয়েছিলো গ্রামের মসজিদে একটা মক্তবা খোলার ৷ ব্যাপারটা রেশারেশির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এই চিন্তা করে ব্রহ্মজ্যোতি বিদ্যাবিনোদ হাজি নুরুদ্দিন মুনশীকে বলেছিলেন - শোনো ভায়া ? গ্রামের ছেলেদের ওই সংস্কৃত অার অারবি-ঊর্দু শিখে কোন কামে লাগবে ? লেখা-পড়া যদি শিকতেই হয় , ইংরেজী শিখতেইহবে ৷ নাহলে গ্রামের ,ছেলেপুলেরা অফিস-কাছাড়ীতে চাকবীইপাবে না ৷
দু জনে উদ্যোগী হয়ে লক্ষ্মীপুর গ্রামে প্রায় বিঘা পাঁচেক জমির উপরে প্রথমে একটা প্রাথমিক ইস্কুল তৈরি করেছিলেন ৷ হাজি বদরুদ্দোজাকে পধান শিক্ষক করে বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায়কে করেছিলেন ইস্কুল কমিটির প্রেসিডেন্ট ৷
সেই ইস্কুল এখন জুনিয়ার হাই ইস্কুলে পরিনত হয়েছে ৷ আশ-পাশ গ্রামের ছেলেরা সব পড়তে অাসে ৷ বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এবং হাজি বদরুদ্দোজা সাহেবের ইচ্ছে যে কোনও মূল্যেই ওই জুনিয়ার হাই স্কুলকে একদিন হাই ইস্কুলে পরিনত করবেন ৷
ইস্কুলের সামনের বিরাট মাঠটাতে ওই তল্লাটের মুসলীমরা মহরমের দিন তাজিয়া নিয়ে এসে লাঠি-সড়কি খেলতো ৷ সব সম্প্রদায়ের মানুষ মাঠে এসে হাজির হতো তাজিয়া এবং লাঠি খেলা দেখার জন্য ৷ হিন্দুরাও রথ, গাজন , শিব , ইত্যাদির মেলা বসাতো ৷ হাজি বদরুদ্দোজা সাহেব একদিন নিজেই উপযাজক হয়ে বিমলার শ্বশুর বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায়কে বলেছিলেন - অামি যতদূর অাপনাদের শিব পূজোয় বট গাছ লাগে ,তাইনা ? কিন্তু , এই ইস্কুলের মাঠে তো বট গাছ নেই ৷ অসুবিধা হয় না ?
বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করেছিলেন ৷
- বুঝেছি সাহেব ৷ বদরুদ্দোজা মাস্টার হেসে বলেছিলেন - মৌনতাই সম্মতির লক্ষ্যন ৷ নিজেই উদ্যোগী হয়ে ইস্কুলের মাঠের একদম দক্ষিন প্রান্তে কালুয়া দিঘীর পাড়ে একটা বট গাছের চারা এনে লাগিয়ে বলেছিলেন - যতদিন এইগাছটা বেঁচে থাকবে ততদিন লক্ষ্মীপুরের বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এবং বদরুদ্দোজা মাস্টারও বেঁচে থাকবে ৷
কালুয়া দিঘীর পাড়ের সেই বট গাছটা এখন শাখা-প্রশাখা অার ঝুড়িতে বিরাট অাকার ধারন করেছে ৷ গ্রীষ্মের তপ্ত নিদাঘ অার দাবদাহের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই দুপুর বেলায় ওইবট গাছের ছায়ায় শুয়ে বসে বিশ্রাম নেয় ! মনে হয় যেন বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় অার বদরুদ্দোজা মাস্টার ছাতা হয়ে লক্ষ্মীপুর গ্রামটাকে রোদ ঝড় জল এবং বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে !
(চার )
সাল এবং মাসটা এখনো বিমলার মনে অাছে ৷ ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাস ! শীতটা সবে বেশ জাঁকিয়ে পড়া শুরু করেছে ৷
বিমলা সেই সময় বছর চারেক হলো লক্ষ্মীপুরে বৌ হয়ে এসেছে ৷
বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় সকাল সকাল বাজার করে এসে বাড়িত বসে টিভি দেখতে ব্যাস্ত ৷ সারা ভারত জুড়ে তোলপাড় করা খবর ! এক দল লোক অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজ শুরু করেছে ! সেখানে নাকি রাম মন্দির বানানো হবে !
সাংঘাতিক ব্যাপার !
ঘটনার রেশ হিসেবে ভারতের বিভিন্ন্ স্থানে সাম্প্রোদায়িক গন্ডগোল শুরু হয়ে গেছে ! উভয় সম্প্রোদায়ের মানুষ একে অপরের উপরে খড়্গ হস্ত হয়ে খেঁপে উঠেছে !
চারপাশে একটা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি !
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার উভয়েই রেড-এ্যালার্ট জারি করেছে ! পুলিশ টহল শুরু হয়ে গেছে ৷ প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য প্রচর করা শুরু করেছে ৷
বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় ঘরে বসে টিফিন খাচ্ছিলেন ৷ হঠাৎ , ছেলে ব্রজকে ডেকে বললেন - দ্যাখ তো বদরুদ্দোজা মাস্টার বাড়িতে অাছে কিনা ? থাকলে , ডেকে অানতো ৷ দেশের অবস্থা মোটেই ভালো না ৷ অামাদের এখনই কিছু ভাবা প্রয়োজন ৷
ব্রজ বরুতে গিয়েই দেখে বদরুদ্দোজা মাস্টার অারোও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে হাজির ৷ হন্তদন্ত হয়ে বলে ওঠেন - শুনেছেন কর্তা ? দেশের হাল ! অামাদের এই সব এলাকা তো গন্ড-মূর্খের বাস ৷ কেউ এই সুযোগে এদিকে না গন্ডগোল লাগাবার চেষ্টা করে ! বুঝলেন কর্তা অামি ঠিক করেছি অামরা সবাই মিলে এই লক্ষ্মীপুরে কোনও গন্ডগোল পাকাতে দেবো না ৷ কিছুদন সবাই মিলে পালা করে পাহারা দেবো ৷
- এর থেকে উত্তম প্রস্তাব অার কী হতে পারে ৷ বিপ্রদাশ বাবু বলেছিলেন - এমনটাই তো হওয়া দরকার ৷ চলুন হাজি সহেব অামি এখন থেকেই তৈরি ৷
অাতংক এবং ভীতির মধ্যেই দিন চারেক কাটার পরেই হঠাৎ কিভাবে যেন একটা গুজব রটিয়ে দেয়া হলো - লক্ষ্মীপুরের হিন্দুরা বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ইস্কুলের মাঠে যেখানে মহরমের লাঠি খেলা এতদিন ধরে হয়ে অাসছে , সেটা দখল করছে ৷ তুলসির বেদী এবং শিবের মন্দির করবে বলে ইঁট বালি সিমেন্ট সব ফেলেছে ৷
ব্যাস ! যাবে কোথায় ?
বিকেলের দিকে অাশ-পাশ এলাকার সব মুসলমানরা যেমন লাঠি-সড়কি নিয়ে চড়াও করলো লক্ষ্মীপুরে ৷ হিন্দুরাও পিছিয়ে ছিলো না ৷
তারাও লক্ষ্মীপুরের তুলসি বেদী এবং শিব মন্দির তৈরর কাজ ত্বরান্নিত করার জন্য সেখানে এসে দাঁড়ালো ৷
একদিকে মুসলীমদের না রাহে তগদির ধ্বনি ! অন্যদিকে হিন্দুদের ঘন ঘন জয় শ্রী রাম অাওয়াজ !
সংঘর্ষ বধে অার কী !
উভয় সম্প্রোদায়ের মহিলারা ভয়ে বাড়িতে বসে নিজেদের ইস্ট দেবতাকে স্মরণ করা শুরু করেছিলো ৷ ঠিক সেই সময়েই বদরুদ্দোজা মাস্টার এবং বিমলার শ্বশুর লক্ষ্মীপুরের উভয় সম্প্রোদায়ের সমস্ত ছেলেদের নিয়ে রুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন - এইগ্রামে ওসব ধর্মীয় জিগির তুলে গন্ডগোল পাকাতে দেবো না ৷ বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় বেপাড়ার এসে জড়ো হওয়া হিন্দুদের দ্দেশ্যে বলেছিলেন - তুলসী বেদী অার মন্দির যদি করার প্রয়োজন হয় , তাহলে সেখানে অাপনাদের অাসতে হবে না ৷ অামরা লক্ষ্মীপুরের লোকরাই তৈরি করতে পারবো ৷ বদরুদ্দোজা মাস্টারও তেমনি হাড়োয়া অার হাসনাবাদের চৌভাগার মুসলমানদের রীতিমতো দাবড়িয়ে বলেছিলেন - এই লক্ষ্মীপুর গ্রামে হিন্দু এবং মুসলমান কেউই ধর্মীয় খতরেতে নেই ৷ অামরা কিন্তু এখানে কারোও কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক ঝামলা বরদস্ত করবো না ৷ হিন্দুরা কেউ মহরমের মাঠ দখল করার ইছে প্রকাশ করেনি ৷ উল্টো অামরা এই লক্ষ্মীপুরের মুসলমানরাই উদ্যোগী হয়ে ওই কালুয়া দীঘির পাড়ে ওদের তুলসী বেদী এবং মন্দির তৈরি করে দেবো বলেছি ৷
যৌথভাবে সেদিন রুখে দাঁড়াতেই কেউ অার গন্ডগোল পাকাতে সাহস পায়নি ৷ ফিরে গিয়েছিলো ৷ তবু , মাস দুয়েক সবাই গ্রামটা পাহারা দিয়ে রেখেছিলো শুধুমাত্র উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনটাকে দৃঢ় রাখার জন্য ৷ পরে একটা রবিবারে গ্রামের সব্বাইকে নিয়ে বসে বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এবং হাজি বদরুদ্দোজা মাস্টার ঠিক করেন - গ্রামের সমস্ত মানুষকে নিয়ে একটা দিন সম্প্রীতির উৎসব হিসেবে পালন করবেন ৷
কেউ বলেছিলো দুর্গা পূজোর বিজয়ার পরের দিন ৷ কেউ বলেছিলো ঈদের পরের রবি বারে ৷ কেউ অাবার বলেছিলো - দুর্গা পূজো এবং ঈদের সাথে ধর্মের গন্ধ রয়েছে , সেই কারনে ওই দুটো দিনে না করে অন্য একটা অালাদা দিন ঠিক করতে হবে- যার সাথে ধর্মের কোনও সম্পর্ক থাকবে না ৷
সেটা কোন দিন হতে পারে ?
সেই ব্যাপারে বিস্তর অালোচনা হয়েছিলো ৷ বদরুদ্দোজা মাস্টার বলেছিলেন রাখীবন্ধন উৎসবটাকে পালন করলেই মনে হয় ভালো হবে ৷ কবিগুরু হিন্দু-মুসলীমের মধ্যে ঐক্যবন্ধন তৈরি করার জন্য বঙ্গ-ভঙ্গের বিরোধীতা করে ওই উৎসবের সূচনা করেছিলেন ৷ অামরা লক্ষ্মীপুরের মাঠে ওই লক্ষ্যেই রাখী উৎসবটা অাবার চালু করবো ৷
বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় হাজি সাহেবের ওই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বলেছিলেন - মাস্টার ? লক্ষ্মীপুর একটা গন্ড গ্রাম ৷ এখানকার লোকজন লেখা-পড়া জানে না ৷ অাপনি মোটেই বুঝাতে পারবেন না - হোয়াট ইজ বঙ্গ ভঙ্গ ? লোকজন অাপনার কথার হয়তো অাজ বিরোধীতা করবে না ৷ কিন্তু , মন থেকে রাখীর ব্যাপারটা মেনে নিতে পারবে না ৷ চব্বিশ ঘন্টা ওইব্যাপারটা নিয়েই ঘোঁটপাকাবে ৷ শহরের লোক হলে কর্ম ব্যস্ততায় ওইসব ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সময়ই পাবে না ৷ তাই অামি বলছিলাম - নবান্নের দিনটাকেই করলে মনে হয় ঠিক হবে ৷
কেন ? দু চারজন প্রত্যুত্তরে বলেছিলো - নবান্নও তো একটা হিন্দুদের উৎসব ! সেই ধর্মের ব্যাপারটাইতো এসে যাবে ?
- মোটেই নয় ৷ বিপ্রদাশ বাবু বেশ গম্ভীর হয়ে বলেছিলেন - কেউ কিছু হাইজ্যাক করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেই কী সেটা তার নিজের হয়ে যায় ?
ব্যাপারটা বোধগম্য না হওয়ায় সবাই ওর মুখের দিকে অবাক হয়ে ভাবতে থাকে - বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এ কী বলছেন ?
- অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷ বিপ্রদাশ বাবু হেসে বলেন - নবান্নটা মূলত কৃষি প্রধান উৎসব ৷ অর্থাৎ , যে কৃষক নবান্ন তারইউৎসব ৷ কৃষক তো কোনও ধর্মের বিচারে হয় না ৷ হিন্দুরাও হতে পারে ৷ মুসলসানরাও হতে পারে ৷ তাহলে "নোতুন ধান্যে হবে নবান্ন" কেন শুধুমাত্র হিন্দুদের উৎসব বলে বিবেচিত হবে ? তাছাড়া , অামাদের এই অঞ্চলটা হলো গিয়ে কৃষিজীবী অধ্যুসিত অঞ্চল ৷ এই বিদ্যাধরী নদির দু পাড় জুরেই এক সময় গড়ে উঠেছিলো বিখ্যাত কৃষক অান্দোলন - তেভাগা অান্দোলন ৷ পাশের গ্রাম বেরমজুরে এখনও সেই অান্দোলনের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শহীদ বেদী ৷ সেই অান্দোলনে কোনও জাত-পাত কিংবা ধর্মের ব্যাপার ছিল না ৷ অামার মতে নবান্ন পালন করে অামরা সবাইকে দেখাতে চাই - মানুষের পেটের লড়াইয়ের কাছে কোনও ধর্মের রাজনীতিকে লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকজন পাত্তা দেবে না ৷
বহু অালোচনা করেই ঠিক হয়েছিলো - প্রতিবছর নবান্নের দিনে সকাল থেকে ইস্কুলের মাঠে অনুষ্ঠানটা হবে ৷ চলবে সন্ধ্যে পর্যন্ত ৷ খাওয়া-দাওয়া , গান-বাজনা , ইত্যাদি সবই করবে গ্রামের ছেলে মেয়েরা ৷ লক্ষ্মীপুর গ্রামের ছেলেএবং মেয়েরা কর্মসূত্রে এবং বৈবাহিক সূত্রে যে যেখানেই থাকুক , ওই দিন সে ছুটি নিয় ওই নবান্নের অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেই৷
যতদিন বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এবং ওর স্ত্রী মহামায়া দেবী অার হাজি বদরুদ্দোজা মাস্টার এবং তার বিবি মেহেরুন্নিসা বেগম জীবিত ছিলেন , ওরাই উৎসবের মাথা হয়ে কাজ করে গেছেন ৷ ওদের অবর্তমানে গ্রামবাসীরা এখন বিমলা অার হাজি বদরুদ্দোজা সাহেবের মেয়ে রওশন বেগমের উপরে দায়িত্ব বর্তিয়েছে ৷
বিপ্রদাশ বাবু মারা যাবার অাগে বিমলাকে বারবার করে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন যে , কোনও অবস্থাতেই এই সম্প্রীতির উৎসব যেন বন্দ না হয় ৷
বল্লরী বেশ ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্মীপুরের এই উৎসবের সাথে জড়িয়ে থেকেছে ৷ নিজে তো নাচ -গান গাইতোই , অন্য ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নাটক ,গান-বাজনা করাতো ৷ বিয়ের পরেও তিন বছর অর্ককে নিয়ে এসেছে ৷ নাচ-গান করেছে ৷
সেই নবান্নের উৎসবে বল্লরী অার অর্ক এবারে অাসবে না !
( পাঁচ )
প্রত্যেক দিন বিমলা চা করে নিজেই এনে ব্রজেশ্বরকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে ৷ কিন্তু , চা হাতে অাজ অাসতেই দেখলো ব্রজেশ্বর বিছানায় নেই ৷ উঠে গেছে ৷
কোথায় গেলো ? বিমলা খানিকটা চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এদিকে সেদিকে তাকায় ৷ নাহ্ ৷ ঝুল বারান্দাতেওতো নেই !
বিমলা যখন চিন্পাতা এবং ভাবনার ঘূর্ণাবর্তে বিধ্বস্ত ,ঠিক সেই সময় পাশের ঘরে অালমারির পাল্লা বন্দ করার অাওয়াজে গিয়ে দেখে ব্রজেশ্বর স্নান সেরে ধুতি পাঞ্জাবি পরে একদম রেডি ৷
- কী ব্যাপার ! বিমলা জিঞ্জেস করে - সকাল সকাল স্নান সেরে একদম রেডি হয়ে কোথায় চললে ?
- ইস্কুলের মাঠে ৷
- ইস্কুলের মাঠে ! তুমি এত সকালে ? কী ব্যাপার সত্যি বলো তো ?
বিমলা মনে মনে ভাবে যে লোককে সে বিগত তিরিশ বছর সকালে উঠতে দেখেনি , সে অাজ সকালে উঠেছে !বলছে কাজ অাছে ! মনে হয় বল্লরীর ফোনের ব্যাপারটা ঘাপটি মেরে শুনেছে ৷ ওর অার বলার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই উদ্যোগী হয়েছে অর্কদের বাড়িতে যাবার জন্য ৷ অাসলে বল্লরীকে ব্রজেশ্বর দারুন ভালবাসে ৷ ও অাসবে না শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে ৷
- কী গো বললে না তো সত্যি কোথায় যাচ্ছো ?
- তুমি যা ভাবছো ,সেখানেই ৷ ব্রজেশ্বর বলে - বুঝতে পারছো মেয়েটার মনের অবস্থাটা কী হয়েছে ? যাই একবার চেষ্টা করে দেখি ৷ কেন ওনারা এইব্যাপারে অাপত্তি করছেন ! অর্কের যদি ইস্কুলের মাঠে যেতে অাপত্তি থাকে , যাবে না ৷ বাড়িতেই থাকবে ৷ অামিই না হয় ওকে অার বল্লরীকে সঙ্গ দেবো ৷
- যাও ৷ বিমলা গম্তীর ভাবে বলে - দেখো , বাবার সম্মানটা যেন ধুলোয় নষ্ট কোরো না ৷ মনে রেখো , অর্কের বাবা মায়ের সাথে তোমার বাবা মায়ের এই অনুষ্ঠানে অাসার ব্যপারে চুক্তি হয়েছিলো ৷ সেটা ওরা ভঙ্গ করেন কিভাবে ? এর মানে তো ওনাদের স্বর্গত অাত্মাকে অপমান করা ! শিক্ষিত ভদ্রলোকরা কখনও কথার খেলাপ করে না ৷ তুমি মেনে এসব মেনে নিলেও অামি কিন্তু মন থেকে ওদের এই অভদ্র বাজ ব্যবহারকে মেনে নিতে পারছি ন ৷ তাই কিছুই বলিনি ৷
- সে তো বুঝেছি বলেই অামি উঠে তৈরি হয়ে নিয়েছ ৷ব্রজেশ্বর চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে এক চুমুকে গলাধঃকরণ করে ঠাকুরের নাম স্মরণ করে বেরিয়ে পড়েছিলো ৷
( ছয় )
ব্রজেশ্বর বেরিয়ে যেতেই বিমলা ফোনে রমেশ অার নওশাদের সাথে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এক প্রস্থ অালোচনা করে নেয় ৷ বলে - রান্নার ঠাকুরকে দিয়ে সকালের টিফনটা বানাবার কাজটা শুরু করে দিতে ৷৷ইব্রাহীম অার গোবিন্দ যেন বাজারে চলে যায় মাংস অানতে ৷ একটু যেন দেখে নেয় ৷ গত বছর নাকি মাংসটা ভাল দেয়নি ৷ কম দামতো নেয় না ! কেন মাংস খারাপ দেবে ? রাখহরি মুদির দোকানে ফর্দটা দেয়া অাছে ৷ অামি বিল্টুর হাত দিয়ে সব টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি ৷ তোমরা মুদির দোকান থেকে সব মাল অার বাজারের থেকে ভালো মাছ অানিয়ে নিও ৷ কেষ্ট ময়রাকে বলা অাছে - ঠিক সময়ে মিষ্টি পাঠিয়ে দেবে ৷
সব্বাইকে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে বলে বিমলা অালমারি থেকে টাকা-পয়সা এবং চেক বইটা বের করে ৷ বিল্টুকে ডেকে সব ওর হাতে বুঝিয়ে দিয়ে বলে -যাহ্ ৷ মাঠে গিয়ে রওশন চাচীর হাতে এগুলো দিয়ে বলবি যে অামার অাজ যেতে একটু দেরি হবে ৷ স্নান করে বাড়ির পূজোটা সেরে অামি দশটা সাড়ে দশটার মধ্যেই যাবো ৷ অামার জন্য যেন কোনও কাজ ফেলে না রাখে ৷
বিল্টু বেরিয়ে যেতেই বিমলা স্নান সেরে ঘরে এসে অালমারিটা খুলে ভাবে কোন শাড়িটা পরবে ? ভেতরের সব থাকে থাকে নানান ধরনের নানা রঙের শাড়ি সাজানো ৷ ওসবের ভেতর থেকে একটা লাল পাড়ের তসরের শাড়িটা টেনে বের করে ৷ শাড়িটা ছিলো ওর শ্বাশুরির ৷ যখন প্রথম লক্ষ্মীপুরে নবান্ন উৎসবটা চালু হয়েছিলো বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় কোলকাতার বড়বাজার থেকে নিজেই পছন্দ করে কিন এনে দিয়ে বলেছিলেন ওটা পরে সব কাজ করতে ৷ মহমায়া দেবী ওই শাড়িটা উত্তরসুরি হিসেবে ওকে দিয়ে গিয়েছে ৷ এই ক"বছর বিমলা ওই শাড়িটা পরেই উৎসবের কাজ করেছে ৷ অাজোও ওটাই সে পরবে ৷
বিমলা শাড়িটা বের করে পরে ৷ অাস্তে অাস্তে ড্রেসিং অায়নাটার সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৷ কপালে সিঁদুরের টিপটা পরে নিজেকে বার কয়েক ঘুরে ফিরে দেখে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ৷ তারপরে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় শ্বশুর অার শ্বাশুরির ছবির সামনে ৷ নমস্কার জানিয়ে বলে - অামি সত্যিই ব্যার্থ ৷ অাপনাদের সৃষ্টির উপযুক্ত মর্যাদা রাখতে পারলাম না ৷ নিজের মেয়ে-জামাইমেয়ে-জামাইমেয়ে-জামাইমেয়ে-জামাইকেই এই নবান্নের সঠিক মূল্যায়ন বুঝাতে পারিনি ৷ অাজ ওরা অাসবে না বলেছে ৷ গ্রামের সবাই যখন জিঞ্জেস করবে , অামি কী জবাব দেবো ? এত কষ্ট করে যে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরন গড়ে তোলা হয়েছে , সেটা তো নষ্ট হয়ে যাবে ! শেয পর্যন্ত সুযোগ সন্ধানীরাই মনে হচ্ছে জিতে যাবে !
সেই দৃশ্য অামি দেখবো কিভাবে ? ঘরে বসে মুখ বুঁজে সহ্য করতে পারবো না ৷ অাপনারা অামাকে বলে দিন - এই মুহূর্তে অামার কী করনীয় ?
পাগলের মতো নিজের মনে কথা বলতে বলতে বিমলা ডুকরে কেঁদে ওঠে ৷
মনে হলো বিপ্রদাশ বন্দোপাধ্যায় এবং মহামায়া দেবী ফটো থেকে বেরিয়ে এসে , ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেন - যাও ৷ ঠাকুর ঘরে গিয়ে মন দিয় পূজোটা সারো ৷ প্রার্থনা করো লক্ষ্মীপুরের সব মানুষের মঙ্গলের জন্য ৷ দেখবে সমস্ত ঝামেলা মিটে যাবে ৷ শুভ শক্তির কাছে কখনোই অশুভ শক্তি জিততে পারবে না ৷
( সাত )
বেলা বারোটা বাজলো ৷
ইস্কুলের মাঠে সবাই বলাবলি শুরু করেছে - এখনও কেন বিমলা কাকিমা এসে পৌঁছালো না ! এতো তো দেরি সে কোনও দিন করে না !
- কী রে ? ইদ্রিশ মোল্লা এসে বিল্টুকে জিঞ্জেস করে - বৌদি এখনও কেন অাসেননি ? কী বলেছে ? শরীরটা খারাপ হয়নি তো ? যাহ্ না ৷ একবার গিয়ে দেখে অায় ৷
বিল্টু তখন মাঠে অন্যদের সাথে খেলায় ব্যাস্ত ৷ বলে - কাকা ? চিন্তা করবেন না ৷ মা বাড়ির পূজোটা সেরেই এসে পড়বে ৷ হয়ত দিদি জামাইবাবুরা এসে হাজির হয়েছে ৷ মনে হয় ওদের সঙ্গে নিয়েই অাসবে ৷
- নাহ্ ৷ শিবতোষ ভট্টাচার্য , সাগিনা মন্ডল , রোহিলা বিবিরা এক রকম জোর করেই বিল্টুকে সঙ্গে নিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখলো - সদর দরজাটা ভেতর থেকে বন্দ ৷ ডাকাডাকি করলো , কিন্তু কোনও সাড়া শব্দ নেই ৷
ওরা যখন নিজেরা ব্যাপরটা নিয়ে অালোচনায় ব্যাস্ত , ঠিক সেই সময়েই ফোনটা বিকট চিৎকার করা শুরু করলো !
বেজেই চলেছে , অথচ কেউ ধরছে না
- কাকা ? বিল্টু বেশ চিন্তিত হয়েই বলে - নির্ঘাৎ মায়ের কিছু একটা হয়েছে ! নাহলে নিশ্চিত ফোনটা ধরতো ! তোমরা দাঁড়াও ৷অামি প্রাচীল টপকে ভেতরে গিয়ে দেখছি ৷
- হ্যাঁ ৷ তাই কর ৷ শিবতোষ ভট্টাচার্য অার সাগিনা মন্ডল বিল্টুকে ঠেলে তুলে প্রাচীরে উঠতে সাহায্য করে ৷
ভেতরে ঢুকতেই ফোনটা থেমে গেলো ৷
সদরের দরজাটা খুলে দিয়ে বিল্টু মা মা বলে বার কয়েক ডেকে বাড়ির ঠাকুর ঘরের দিকে এগোতেই দেখে - মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় বিমলা পড়ে অাছে ! হাতে বাড়ির ধারালো কাস্তেটা ধরা !
- জেঠু ? বিল্টু কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে - দেখুন মা কী করেছে ! পুলিশকে খবর দিতে হবে ৷
শিবতোষ ভট্টাচার্য এবং সাগিনা মন্ডল ছূটে গিয়ে দেখে - ওর রক্তাক্ত শরীরের পাশেই একটা সাদা কাগজের টুকরোতে গোটা গোটা অক্ষরে কী সব যন লেখা অাছে ! কাগজটাও রক্তে ভিজে গেছে ৷
- বিল্টু ? শিবতোষ ভট্টাচার্য জিঞ্জেস করেন - দ্যাখ তো লেখাটা কী তোর মায়ের ?
বিল্টু কিছু বলতে যাচ্ছিলো , কিন্তু সেই মুহূর্তেই ফোনটা অাবার বেজে উঠলো ৷ বিল্টু ছূটে গিয়ে ফোনটা ধরেই বুঝলো বাবা ৷ দিদির বাড়ি থেকে বলছে - সবকিছু মিটে গেছে ৷ ওরা একটু বাদেই রওনা দিচ্ছে ৷ বলছে মাকে একটু ফোনটা দে অর্কের বাবা অার মায়ের সাথে কথা বলুক ৷
- বাবা ? মা এখন কথা বলতে পারবে না ৷ ওকে নিয়ে এক্ষুনি অামাদের হাসপাতালে যেতে হবে ৷ অামি ফোনটা রাখছি , বলে হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠলো ৷
সাগিনা চাচা গয়ে বিল্টুকে ধরতেই সে ফোনের রিসিভারটা ছেড়ে দেয় ৷ ভট্টা৷চার্য জেঠু
লোকজনকে ডেকে বিমলার রক্তাক্ত দেহটাকে একটা ম্যাটাডোরে তুলে বললেন থানা হয়ে যেতে ৷ লেখা কগজের টুকরো তুলে নিয়ে দেখে লেখা অাছে "যে কোনও মূল্যে লক্ষ্মীপুরের এই সাম্প্রোদায়িক সম্প্রীতির উৎসব নবান্নকে বজায় রাখতেই হবে ৷ "
ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও দোদুল্যমান রিসিভারটা থেক তখনো ব্রজেশ্বরের গলা ভেসে অাসছে - হ্যাঁ রে বিল্টু ? বলছিস না কেন তোর মায়ের কী হয়েছে ? কেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ?
হাসপাতালের মাঠে যেন সারাটা লক্ষ্মীপুর গিয়ে হাজির হয়েছে ৷ সবাই জাতি ধর্মের ভেদাভেদ ভূলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে চলেছে - ওকে বিপন্মুক্ত করে দাও ৷ লক্ষ্মীপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ৷
ঠিকানা :
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
৩৭/১ স্বামী শিবানন্দ রোড , চৌধুরীপাড়া ,
বারাসাত , কোলকাতা - ৭০০ ১২৪
মো: নং - ৯৪৩৩০ ২৮৬৮৫ এবং
৮৭৭৭৬ ৮৫৯৯২ ৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন