Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

প্রণব কুমার চক্রবর্তীর নিবন্ধ

 কাজী নজরুল ইসলাম : এক অদ্ভুত অর্ধবিকশিত চরিত্র

                             

    অাজ যে মানুষটাকে নিয়ে এই অালোচনাটা করবো বলে মনস্থ করেছি তিনি যদিও অামাদের কছে বিদ্রোহী কবি বলে পরিচত  তথাপি বলতে দ্বিধা নেই  যে তিনি প্রকৃত পক্ষে বাস্কব এবং অবাস্তবের দ্বন্দে চাদরে মোড়া একটি অদ্ভুত অর্ধবিকশিত চরিত্র ! তাঁকে অাপাত দৃষ্টিতে বোঝা এবং উপলব্ধি করা যতটা সহজ বলে মনে হয় , অাসলে তা নয় ৷ তাঁকে তাঁর মানসিক এবং চারিত্রিক পরিকাঠামো সঙ্গে কর্ম এবং জীবন দর্শনের মিল খোঁজা , উপলব্ধি করা নি:সন্দেহে কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ৷কারন শুরুতেই বলেছি - কাজী নজরুল ইসলাম হলেন একটি অর্ধবিকশিত এবং অর্ধপ্রস্ফূটিত চরিত্র ও ওর ব্যক্তিত্ব ৷
    তাঁর জীবদ্দশা সাতাত্তর  বছরের কিছু বেশি ৷
১৮৯৯ সালের ২৪শে মে বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম জন্ম গ্রহন করেন ৷ পিতা - কাজী ফকির অাহমেদ এবং মাতা জাহিদা খাতুন ৷ নজরুল ছিলেন চুরলিয়ার কাজী পরিবারের চার ভাই - বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ৷ অন্যরা হলেন - কাজী সাহেবজন ( দাদা ), কাজী অালি হোসেন ( ছট ভাই  ) এবং বোন ঊর্মী কুলসুম ৷ বাড়ি এবং গ্রামের লোকজন তাঁকে ( কাজী নজরুলকে ) দুখু মিএাঁ বলে ডাকতেন ৷ ১৯৭৬ সালের ২৯শে অাগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়েছে ৷ জীবনের শেষ তিরিশটা বছর কবিকে বেঁচে থাকতে হয়েছে - এক অনুভূতিহীন এবং বাকশক্তিহীন পক্ষাঘাত রোগাক্রান্ত অবস্থায় ৷ এক অদ্ভুত স্নায়বিক রোগ - "মরবাস-পিক" (Morbus Pick ) ৷ ১৯৪২ সাল সারা ভারতবর্ষ জুড়ে যখন স্বদেশী অান্দোলনের ঢেউয়ে উত্তাল , স্বাধীনতার সেনানীরা যখন ব্রিটিশ  রাজশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তি-সংগ্রামকে( অসহযোগ অান্দোলন , ভারত-ছাড়ো অান্দোলন ইত্যাদিকে ) তীবরতর এবং ক্ষুরধার করে তুলছিলন ঠিক সেই সময়েই বিদ্রোহী কবি তাঁর অসুস্থ-জনিত কারনেএকেবারে নীরব হয়ে পড়েন ৷ বহু চেষ্টা করা হয়েছিলো  তাঁকে সুস্থ  করে তোলার ৷ চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ - সুদূর ভিয়েনাতেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো , কিন্ত  কোনও লাভ হয়নি ৷ কার্যত  ১৯৪২ সালেই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের মৃত্যু ঘটেছিলো ৷
তারপরের তাঁর প্রকৃত মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ( ১৯৭৬ সলের ২৯শ অাগস্ট  পর্যন্ত ) সময়টা ছিলো তাঁর কাছে একটা নিদারুন যন্ত্রণাময় কষ্টকর সময় ৷ নিজে সব কিছু প্রত্যক্ষকরতে পারতেন , কিন্তু বলে বুঝাতে পারতেন না ৷পরের দয়া এবং করুণায় পরোমুখাপেক্ষী হয়ে বেঁচে থাকা একজন যোদ্ধা এবং প্রকৃত বিদ্রোহীর পক্ষে যে কতটা যন্ত্রণাবহ এবং প্রাণন্তকর ,সেটা অনুভূতির গভীরে না ঢুকলে উপলব্ধি করা সম্ভব নয় ৷
     অামরা যদি কাজী নজরুলের জীবনের কর্মকান্ড এবং ভাবনা-চিন্তাগুলো পরপর সাজিয়ে অালোচনা এবং বিশ্লেষন করি , তাহলে দেখতে পাই - তাঁর মনের ভেতরে সারাক্ষন বাস্তব এবং অবাস্তবতার দ্বন্দ স্পষ্টতই প্রতীয়মান ছিলো ৷
      কাজী নজরুল তাঁর বন্ধূ-বান্ধবদের কাছে হামেশাই বলে বেড়াতেন যে,তিনি একজন নাস্তিক ৷ ঈশ্বর তত্বে মোটেই  বিশ্বাসী নন ৷ অথচ, অদালতে তিনি যে  "রাজবন্দীর জবানবন্দী" দাখিল করেছিলেন , সেটাকে কী ভগবান চর্চিত না বলে অন্য কিছু বলা যায় ?
     কবি বন্ধু মোজাফ্ফার অাহমেদ নজরুলের এই মানসিকতা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন - "সেমিটিক ধর্মাবলম্বীরা মানব জন্মের পূনরুত্থান বা শেষ বিচারের কথা মানেন এবং বিশ্বাস করেন ৷ ইসলাম ধর্ম সেমিটিক পরিবারের ধর্ম ৷....নজরুল মুখে না বললেও সেই ধর্ম এবং সত্যে বিশ্বাসী ছিলো ৷ তাঁর লেখা থেকেই বোঝা যায় যে , তিনি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করতো ৷"
     এই প্রসঙ্গে এগোতে হলে অামাদর শুধুমাত্র নজরুলের রচনা পড়লেই চলবে না ৷ তাঁর জীবন-যাত্রা , দৈনন্দিন কার্যপ্রণালী , ইত্যাদি বিশেষ ভাবে ( নজরুল ইসলামকে) অধ্যায়ন করা একান্তভাবে প্রয়োজন ৷
     নজরুল ইসলামের জীবনটাকে যদি অামরা বয়েস এবং কর্মকান্ডের পরিসরে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত করি তাহলে যেমন দেখতে পাই  - শিশু নজরুল থেকে বালক নজরুল , কিশোর নজরুল , যুবক নজরুল , তেমনি অাছে লেটো গানের  নজরুল থেকে যাত্রাপালার নজরুল , কবি এবং গীতিকার নজরুল ৷ অাবার রয়েছে যোদ্ধা নজরুল থেকে শুরু করে বিদ্রোহী এবং রািনৈতিক নজরুল , প্রেমিক নজরুল , স্বামী নজরুল , পিত নজরুল - সর্বোপরি দেশপ্রেমী মানবিক নজরুল ইসলাম ৷ বলা বাহুল্য , ওর এইপ্রত্যেকটা খন্ডেইযেন অামরা এক একটা অালাদা নজরুল ইসলামকে প্রত্যক্ষ করি ৷
      বিভিন্ন সূত্র থেকে অামরা জেনছি যে , তাঁর শিশু এবং বাল্যকালটা কেটেছিলো কাজী পাহালওয়ান নামে এক ফকিরের কবরের সেবা করার ( কবরস্থানের ধুলো ঝারা-মোছা করা , চিরাগ জ্বালানো ইত্যাদির ) কাজে ৷ এই কাজ করার প্রসঙ্গে শিশু নজরুলকে বলে বোঝানো হয়েছিলো যে , দীর্ঘ কাল অাগে ফকির সাহেব মারা গেলেও তাঁর একটা অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে এবং সেটাই  নজরুলের উপরে অাশীর্বাদ হিসেবে ঝোড়ে পড়বে ৷ বলা বাহুল্য , নজরুল ঞ্জানত সেইসেইটাই বিশ্বাস করতেন ৷ কবিবন্ধু  শ্রী শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় তাঁর বন্ধুর এইমানসিকতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন - নজরুল তখন "রানীগঞ্জের রাজ হাই ইস্কুলের ছাত্র ৷ সেই  সময় একবার এক সন্ন্যাসীকে দেখে তাঁর শখ হয়েছিলো - নিজের ভবিষ্যৎটা জেনে নেবার ৷ কারন , লোকমুখে সে শুনেছিলো - ওই সাধু নাকি মানুষের জীবনের ভূত এবং ভবিষ্যৎ  বলে দিতে পারেন ৷ নজরুল তাঁকে অনুরোধ করেছিলো , কিন্তু তিনি রাজি হচ্ছিলেন না ৷ বাধ্য হয়ে তখন নজরুল সেই  সন্ন্যাসীকে গাঁজা কিনে ঘুষ দিয়েছিলেন - ভবিষ্যৎ জানবার জন্য ৷
... তবে সেই  ভবিষ্যৎ বানী ফলেছিলো কিনা সেটা জানা সম্ভ হয়নি ৷ "...
     সালটা খুব সম্ভবত ১৯২০ - ১৯২১ ৷ কবির ভেতরে তখন প্রচন্ড অাবেগ মাথা চাড়া  দিয়ে উঠেছিলো ৷ নোতুন নোতুন চিন্তা এবং ভাবনাকে অাঁকড়ে ধরে নোতুন সৃষ্টির জন্য ব্যাকুল  হয়ে উঠেছিলেন ৷ কিন্তু , তাঁর অন্তরের গভীরে যে সব অাধ্যাত্মিক চিন্তা - ভাবনা ( সাধু সন্ন্যাসী এবং ফকিরের কথাগুলো ) নিহীত ছিলো , সেগুলো সমস্বরে যেন বাধা দেয়া শুরু করেছিলো ৷বলা শুরু করেছিলো - নাহ্ ৷ নাহ্ ৷ ওসব সঠিক পথ নয় ৷ বলা বাহুল্য , নজরুল তাঁর সেই  অন্তরের ডাকে খানিকটা ইত:স্তত বোধ করা শুরু করেন এবং ওইসব নোতুন সৃষ্টির চিন্তা-ভাবনাকে পরিত্যাগ করে তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর (৪১নং বঙ্গীয় রাজকীয় বাহিনীর )
চাকরি নিয়ে চলে যান ৷ সেনার কাজে বিভিন্ন স্থানে চার বছর চাকরি করে নজরুল অবশেষে কলকাতায় ফিরে অাসেন ৷
       নজরুল যখন চাকরি শেষে কলকাতায় ফিরে অাসেন সেই  সময় বাংলা হয়ে উঠেছিলো ভারতীয় বিপ্লবীদের তীর্থক্ষেত্র ৷ সেইসব বিপ্লবী দেশপ্রেমীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন - বারীন্দ্র কুমার ঘোষ , নিকুঞ্জবিহারী সেন , দীনেশ মজুমদার , যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় , প্রমুখ ৷বলা বাহুল্য , নজরুলের সাথে সেই সময় বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের স্বাক্ষাৎ এবং পরিচয়  হয়েছিলো ৷ নজরুলের সাথে কথা বলে এবং তাঁর লেখা সব রাজ-বিদ্বেষী এবং মানবিক বার্তার কবিতা পড়ে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ নিজেই  উদ্যোগী হয়ে তাঁকে তাঁর দাদা শ্রী অরবিন্দ ঘোষের সাথে স্বাক্ষাৎ করিয়ে দেন ,এবং তাঁর প্রকাশনি সংস্থা - অার্য পাবলিশিং হাউস থেকে নজরুল ইসলামের লেখা বইপ্রথম প্রকাশ করার ব্যবস্থা  করেছিলেন ৷ অনেকেই এই প্রসঙ্গে বলে থাকেন - এই ঘটনার প্রেক্ষাপটেই  নজরুলের মনে অাধ্যাত্মিকতার ছোঁওয়া কিছুটা হলেও নোতুন করে লেগেছিলো ৷
      কবিবন্ধু বিশিষ্ট কম্যুনিস্ট নেতা মুজাফ্ফার অাহমেদ নজরুলের এই মানসিক অবস্থা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন - " সে ( নজরুল ) নিজেকে বারে বারে নাস্তিক বলে ঘোষনা করেছিলো তা ছিলো তাঁর অাধ্যাত্মিকতা এবং অলৌকিকত্বের হাত থেকে বাঁচার কটা প্রচেষ্টা মাত্র ৷"...
      বহু বাধা বিপত্তির পরে ১৯২৪ সালের ২৪শে এপ্রিল কলকাতার ৬ নম্বর হাজী লেনের বাড়িতে নজরুলের সাথে প্রমীলায় বিয়ে অনুষ্ঠিত  হয়েছিলো ৷ ওই বিয়ের চুক্তিনামা (নিকাহানামা )
লিখিয়েছিলেন মৈনুদ্দিন হুসেইন সাহেব ৷ বলা বাহুল্য , ওই নিকাহানামার বয়ান থেকেই জানা যায় যে , নজরুল পত্নী প্রমীলার দুটি ডাক নাম - দুনি বা দোলনের বাইবাইরেও অন্য অার একটি নাম ছিলো - অাশালতা সেন ৷ তবে , এই নামটি নজরুলই তাঁকে ১৯২২ সালে অালাপের পরে দিয়েছিলেন কিনা সেটা অাজোও জানা সম্ভব হয়নি ৷ঘটনা পরম্পরায় অামরা যতটউ জানতে পেরেছি সেটা হলো - ১৯২২ সালে কাজী নজরুল একবার কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়ে ৩/৪ মাস অবস্থান করেছিলেন ৷ সেই সময়েই নার্গিসের সাথে তাঁর গড়ে ওঠা বৈবাহিক কথাবার্তা ভেঙে যায় এবং প্রমীলা সেনগুপ্তের সাথে অালাপ হয় ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , প্রমীলা সেনগুপ্ত ছিলেন পিতৃহারা - কুমিল্লার শ্রী ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্তের কন্যা গিরীজা সুন্দরী এবং তদানিন্তন ত্রিপুরা রাজ্যের নায়েব বসন্ত কুমার সেনগুপ্তের একমাত্র কন্যা ৷ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই  সেই অালাপ প্রেম এবং ভালবাসার পর্যায়ে উন্নীত হয় ৷  গিরীবালা দেবীর মেয়ের সথে নজরুলের বিয়ে দেবার ব্যাপারে কোনও  অমত ছিলো ন ৷ কিন্তু ,প্রমীলা তখন নাবালিকা ৷ স্বভাবতই সামাজিক এবং অাইনগত সমস্যার কারনে ও নজরুলের "ধুমকেতু মামলায়" সাজা ঘোষিত হওয়ায় বিয়েটা দু"বছর ( ১৯২৪ সালের ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছিলো ৷
     ১৯৩০ সালের মে মাসে নজরুলের পুত্র সন্তান বুলবুল বসন্ত রোগে অাক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৷ পুত্রশোকে কবি এতটাই কাতর হয়ে পড়েছিলেন যে , প্রকৃত অর্থে ঞ্জানশূন্য হয়ে গিয়েছিলন ৷ কবি জসিমুদ্দিন এই প্রসঙ্গে এক জায়গায় লিখছেন - " একটা জরুরী কাজে কাজী সাহেবের সাথে অামার দরকার ছিলো ৷ খোঁজ করতে করতে একদিন দেখা পেলাম কলকাতার ডি এম লাইব্রেরী দোকানে ৷ দেখি পুত্রশোকে পেছনের একটা ঘরের অন্ধকার কোনায় বসে লিখছেন অার সমানে কেঁদে কেঁদে দু চোখ ফুলিয়ে ফেলেছেন ৷"....
      বিদ্রোহী কবি পুতর বুলবুলের মৃত্যুর পরে মানসিকভাবে এতটাই  ভেঙে পড়েছিলেন যে অতিমাত্রায় অলৌকিকতাতে বিশ্বাসী  হয়ে উঠেছিলেন এবং যাত্রা শুরু করেছিলেন ৷ তথ্য থেকে জানা যায় - সেই সময় মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্তবর্তী শহর লালগোলা হাই স্কুলের ( মহেন্দ্র নাথ অ্যাকাডেমীর ) প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রী বরদাচরণ মজুমদার ৷ তিনি নাকি সাধনার মাধ্যমে যোগ সাধনার অত্যন্ত উন্নত মার্গে উন্নীত হয়েছিলেন এবং অনেককেই তাঁর সাধনার ফল দিয়ে মানসিক শান্তি প্রদান করতে পারতেন ৷
নজরুল খবরটা বন্ধুবর বারীন্দ্রনাথ ঘোষের কাছ থেক শুনে লালগোলায় তাঁর কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন ৷ শুধুমাত্র মানিক শান্তিলাভ করাই নয় , নজরুলের উদ্দেশ্য ছিলো - তাঁর মাধ্যমে সে যেন অন্তত একবার ব্রহ্মান্ডে বিলীন হয়ে যাওয়া পুত্র বুলবুলের স্থুলদেহটাকে প্রত্যক্ষ করতে পারেন ৷ বলা বাহুল্য , উক্ত বরদা চরন মজুমদারের বদান্যতায় নরুল নাকি সত্যিই পুত্র বুলবুলের স্থূলদেহ দেখতে পেয়েছিলেন !
       এটা কি কবির বাস্তব চিন্তার প্রতিফলন ? একটা নিছক শান্তির ব্যাপার ?
      কবি বন্ধু এবং জীবনীকারদের অনেকেরই 
ধারনা - এখান থেকেই  কবির সর্বনাশের শুরু   যা কিনা অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছিলো ১৯৪২ সালের ৯ই জুলাই  ৷
      ১৯৩১ সালে কবি পত্নী প্রমীলা তখন কঠিন পীড়ায় অাক্রান্ত এবং শয্যাশায়ী ৷ তখন তাঁর যে কী ব্যাকুলতা যারা সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন তারা প্রত্যেকেই  অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ৷ স্রীর চিকিৎসা  করাতে নজরুল সর্বস্বান্ত  হয়েছিলেন বটে , কিন্তু হতাশা বা নিরাশায় ভেঙে পড়েননি ৷ দুই  শিশু পুত্র কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধকে মায়ের বিছানার পাশে টেনে বসিয় বলেছিলেন - যতক্ষন না তোদের মা ভালো হচ্ছে ,ততক্ষন বসে একমনে ধ্যান কর অার তোদের ইষ্টদেবতাকে বল তিনি যেন তোদের মাকে ভাল এবং সুস্থ  করে দিতে পারেন ৷
      কবির এই যে অাধ্যাত্মিকতা এবং অতিমাত্রা অলৌকিকতার প্রতি বিশ্বাস ( যদিও ইদানিং চিকিৎসার ক্ষেত্রে এধরনের "রেইকী" পদ্বতির কথা  প্রায়শই শুনে থাকি ) তাঁকে এক অদ্ভুত বাস্তব এবং অবাস্তবের মধ্যে দাঁড় করিয়েছিলো , সেটা কতখানি স্বেচ্ছা প্রনোদিত কিংবা কতটা বাধ্যকতার  কারন জনিত , সেটা কিন্তু কবির নিজের মুখ থেকে শোনার সুযোগ হয়নি ৷ কারন কবি নিজেই  বাকশক্তি হারিয়ে নীরব হয়ে পড়েছিলেন ৷


# ঋণ এবং কৃতঞ্জতা স্বীকার : মোজাফ্ফার অাহমেদ , শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় , কাজী অনিন্দিতা  প্রমুখের লেখা গ্রন্থ  থেকে ৷

=======================================================


প্রণব কুমার চক্রবর্তী  , ৩৭/১ , স্বামী শিবানন্দ রোড , চৌধুরীপাড়া , বারাসাত , কোলকাতা - ৭০০ ১২৪ , মোবাইল নং : ৯৪৩৩০ ২৮৬৮৫ এবং ৮৭৭৭৬ ৮৫৯৯২ ৷

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত