গুচ্ছকবিতা ।। মেশকাতুন নাহার
বর্ষার রূপ
গ্রীষ্ম শেষে আষাঢ় এসে বর্ষা শুরু দেশে,
নতুন সাজে নতুন রূপে ঋতুর রানী বেশে।
কখনো মেঘ কখনো রোদ হঠাৎ নামে ঝড়,
দমকা বায়ু অশনি এলে হৃদয়ে জাগে ডর।
রিনিঝিনি যে বৃষ্টি ঝরে সারা শ্রাবণ মাসে,
জলের মাঝে খুশিতে খেলে ডুবে বেড়ায় হাঁসে।
নব পানিতে মাছেরা ছুটে পুকুর জলে ভাসে,
কদম ফুল জানান দেয় বর্ষাকাল হাসে।
গাঁয়ের ছেলে আমোদে মাতে ফুটবল যে নিয়ে,
সবুজ ঘাসে ভেজানো মাঠে খেলবে কাদা দিয়ে।
ছেলেরা সব কলা গাছের গড়ে সাধের ভেলা,
পুলকে মেতে ওঠে কিশোর ঝাঁপিয়ে করে খেলা।
শ্রাবণধারা বহে যখন ভরে তটিনী বিল,
যেদিকে দেখি জল প্রবাহ কানায় ভরে ঝিল।
বাদলা দিনে এমন ক্ষণে গাইবো সুরে গান,
মন মাতানো পবন এসে জুড়িয়ে দিবে প্রাণ।
কামিনী কেয়া কৃষ্ণচূড়া নানা রকম ফুল,
মর্মদেশে প্রণয় জাগে বরষা রূপ মূল।
রংধনুর সাতটি রঙে কিরণ এসে পড়ে,
চমৎকার চিত্র দেখে হর্ষ ধারা ঝরে।
বিবর্ণ আকাশ
মন ভালো নেই আজ আকাশের
গম্ভীর রূপ তাঁর মুখে,
বজ্রপাতের বিকট শব্দে
বিপর্যস্ত দুখে।
পাঁচমিশালি প্রবল পবন
তোলপাড় করে মর্ত,
দাঙ্গা আঁধি দৈবাৎ ক্রোধে
মর্মে করে গর্ত।
অবিশ্রান্ত ক্রন্দন ধ্বনি
নির্বাক অক্ষির সীমায়,
অর্কের আভা গুপ্ত হলো
শূন্যের বিষাদ জিম্মায়।
পুষ্পপত্র পরিপ্লুত
অন্তরীক্ষের শোকে,
বিহঙ্গিনী উদাস মনে
আর্দ্র নীড়ে ঢোকে।
প্রজাপতি উড়ে যায় না
মন ভার করে আছে,
গগনের মন ভালো নেই তাই
কুঁড়ি ঝরে গাছে।
সব নক্ষত্র হয় বিবর্ণ
ক্ষুন্ন স্বীয় দ্যুতি,
চন্দ্রিমা আজ বিমর্ষ সাজ
হয়ে নভো চ্যুতি।
জরাজীর্ণ এক কুটিরে
মনস্তাপের তলে,
হৃদ আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়
ভাসে প্লাবন জলে।
উত্থান -পতন
ভাঙা -গড়া চলছে খেলা সৃষ্টির আদিকাল থেকে,
উত্থান-পতন ছিল আছে,থাকবেই চতুর্দিকে।
রাজা-প্রজা কত মানুষ প্রয়াত হলো এ জগতে,
অর্থ- সম্পদ রইলো পড়ে,ক্ষমতা কী আছে হাতে?
জ্ঞানী-গুণী কত মহাজন ছিল কতই শাসক,
গণ্য-মান্য ছিলো আরো কত চিকিৎসক, প্রশাসক।
আরাম-আয়েশ ছেড়ে গেছে আছে কী তার হিসাব?
উল্টা-পাল্টা হয়েছে রাষ্ট্র পড়েছে কতই প্রভাব।
মৌর্য-পাঠান,বর্গী-মারাঠা কোথায় গেলো মোগল?
বিধি-নিষেধ পাল্টে গিয়ে গনতন্ত্র করে দখল।
খান-খান হয় রাজতন্ত্র, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন,
ইট-পাথরের রাজপ্রাসাদ নিখোঁজ সিংহাসন।
জোয়ার-ভাটা জীবনচক্রে দোল খায় বারে বারে,
যাওয়া -আসা চলে নিত্য শিল্প দর্শন চক্রাকারে।
কল-কারখানা ছিল যেথায় আজ ধ্বংসস্তূপ।
উনিশ-বিশের শক্তি কী থাকে বার্ধক্যে তদ্রূপ?
প্রযুক্তির দাস
যান্ত্রিক এই শহরে নেই কোন অনুভূতি
সময়ের টানে ছুটে চলে ব্যক্তি দ্রুতগতি
স্নেহ প্রীতি যে নিষ্ঠুরতায় দিলো আত্মাহুতি
সতেজ প্রাণ কৃত্রিমতায় গিলছে প্রযুক্তি।
নির্দয় বাস্তবতার স্রোতে অস্তিত্ব বিলীন
অন্তঃসারশূন্য ভূমণ্ডল আবেগ বিহীন
এভাবেই যাচ্ছে চলে বর্ষ মাস দিন
ক্যালকুলেটরে থেমে মন সম্বেদনহীন।
একাকীত্বের চাদরে ঢেকে মানব রোবট
সুখের খুঁজে স্বভাব করে বড়োই উদ্ভট
বিত্ত,প্রতিপত্তি নেই কোন অর্থের সংকট
কোথায় সুখ কোথায় সুখ গর্জন বিকট।
প্রযুক্তির দাসত্বে আচ্ছন্ন বিষাদী আঁধারে
একই কক্ষে বসে সবাই ফেবু ম্যাসেঞ্জারে
আত্মঘাতী রূপে ধ্বংসিত সে মানস বিকারে
কিশোর যুবক ডুবে যায় রন্ধ্রের শিকারে।
মরিচীকা ধরে মর্মদেশে যন্ত্র করে বাস
রিমোট টিপে চলছে যেন যান্ত্রিক শ্বাস
ইট পাথরে নির্মাণ করে স্বপ্নিল আবাস
জীবিকার টানে হয়ে যায় ব্যস্ততার দাস।
=============
মেশকাতুন নাহার
প্রভাষক (সমাজকর্ম)
কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ
কচুয়া, চাঁদপুর।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা
উত্তরমুছুন