Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

প্রবন্ধ ।। সাহিত্যে ইতিহাস ও দর্শন ।। রণেশ রায়


সাহিত্যে ইতিহাস ও দর্শন 

রণেশ রায়


সাহিত্যের  কাজ হলো মানবজীবন ও প্রকৃতির বিবর্তন প্রক্রিয়ার ইতিহাস ঘেটে স্মৃতি রোমন্থন করা, তাকে  তুলে এনে  বর্তমানের সঙ্গে  মেলবন্ধন ঘটিয়ে  সাহিত্যিকের নিজের মননে সাহিত্যের প্রাঙ্গণে সাজিয়ে তোলা, ভবিষ্যতের ছবি আঁকা। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের মেলবন্ধন ঘটিয়ে, বর্তমানের ঘটনাবলিকে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কল্পনার মালা গাঁথা হয় সাহিত্যে। ভবিষ্যতের ছবি আঁকা হয়। আর ইতিহাস ঘাঁটাটাও কার্যত স্মৃতি রোমন্থন কারণ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকে মানুষ আর তার জীবনের অতীত, ভৌত জগতের বিবর্তন প্রক্রিয়া। সেই অর্থে ইতিহাসও ডায়েরির কাজ করে। মজুত থাকে সমাজ জীবন আর ভৌত জগতের যাবতীয় অতীত সম্পদ। তাই বলা চলে সাহিত্যিক ইতিহাস হাতরিয়ে তাঁর সাহিত্য কর্মে সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে, গল্প কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধে, অতীত আর বর্তমানের মধ্যে মেল বন্ধন ঘটিয়ে কল্পনার রঙে যে শিল্প সৃষ্টি করেন তাঁকে সাহিত্য শিল্প বলে। এটা ধরেই আমরা সাহিত্যের বিভিন্ন বিভাগে যা বলতে চাই তা এই এই আলোচনায় তুলে ধরব। এখানে স্মৃতি কথাটা এই বিশেষ প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। নেহাত ব্যক্তিস্মৃতি নয়। এ এক সমাজস্মৃতি। সেখানে দেশ কালের অতীত নিহিত থাকে। ইতিহাসের মলাটে মজুত থাকে। সেই অর্থে সাহিত্য কালের গণ্ডি পেরিয়ে  মহাকালে বিচরণ করে।আর সাহিত্যিকের জীবন বোধ তথা তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি সাহিত্য সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সাহিত্যিক কেবল ভৌতজগতের দ্রষ্টা নন তিনি প্রকৃতি ও সমাজ জীবনে যা দেখেন তার ছবি আঁকেন মনোজগতের প্রচ্ছদে।


লিখতে বসলে যেন মনের দরজা খুলে যায়, স্মৃতি উন্মোচিত হয়, সরে যায় বিস্মৃতির পর্দাটা। বিস্মৃতির অতল সমুদ্রে লেখকের সমুদ্র মন্থন। তাঁর সংগ্রহ করে আনার চেষ্টা পান্না হিরে মণি মুক্ত জীবনের যা কিছু সম্পদ। ছড়া গল্প কবিতা উপন্যাস নাটকের মধ্যে দিয়ে লেখক টুকরো টুকরো স্মৃতির ফুলে মালা গাঁথেন, তৈরী করেন পুষ্প স্তবক। লেখকের সাহিত্য জগতে অনুপ্রবেশ। তিনি স্মৃতিকথা আর কল্পনার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে সাহিত্য সৃষ্টিতে প্রয়াসী হয়। জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ সম্পদ বর্তমানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে।লেখক খুঁজে পান সাহিত্য সৃষ্টির উপাদান যা স্মৃতিতে মনোজগতে বিরাজ করে। এ হল অতীতের সঙ্গে বর্তমানের এক মেলবন্ধন যা অজানা ভবিষ্যতকে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে। অর্থাৎ অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের মেলবন্ধন। 


সবার ডায়েরি লেখার অভ্যাস নেই। যাদের ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে তাঁরা ডায়েরির আয়নায় স্মৃতির অস্পষ্টতা আরও স্পষ্ট করে তুলতে পারেন। তাঁদের পক্ষে অতীত অবলোকন করা সহজ হয়, বিস্মৃতির কপাট ভাঙার কাজটা করতে তেমন অসুবিধে হয় না। কিন্তু আমাদের যাদের ডায়েরি লেখার অভ্যাস নেই তাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয় ডায়রি নেই বলে। তাই তারা রাতে শুয়ে নির্ঘুম চোখে মনোজগতের আলোয় অতীতকে অবলোকন করেন। হাতরে বেড়ান  বিস্মৃত অতীতের ডাইরি। বিস্মৃতির উজান বেয়ে স্মৃতির দরজায় মেলেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয় শুতে আসার আগে সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিনটা, তাঁর অভিজ্ঞতা, সমাজজীবনে তার অভিব্যক্তি। মালা গাঁথার সুতোটা পাঁকাতে থাকেন সাহিত্যিক। লেখকের সাহিত্য সৃষ্টির এই হল প্রাথমিক প্রক্রিয়া। রাতের পর রাত জাগার ফসল। এ এক সৃষ্টির আনন্দ।


লেখক স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নিজের মধ্যে নিজেকে খোঁজেন।  বহিরাঙ্গের 'আমি'র সঙ্গে অন্তরঙ্গের 'আমি'কে চিনে নিতে চান। সেই 'আমি'র আমিত্ব যেন এই মহাজগতের কৃষ্ণগহ্বরে  কবরস্থ কেউ যে বাইরের জগতের আলো দেখেনি অথবা সে প্রাচীন গ্রীক উপাখ্যানের পান্ডরা বাক্সে লুকিয়ে থাকা কেউ বাক্সের  চাবিটা যার হারিয়ে গেছে। লেখক সেই আমিত্বের কবর থেকে নিজের 'আমি'কে জাগিয়ে তুলে আনতে চান, পান্ডরা বাক্সের চাবি খুঁজে বেড়ান তাঁর সাহিত্য কর্মে।  এটাই তাঁর স্মৃতিচারণ তথা বিস্মৃতির অতল সমুদ্র মন্থন। বলা চলে অতীতচারিতা। ডায়েরির আয়নায় নেহাত স্মৃতিকে অবলোকন নয় বরং স্মৃতিবিস্মৃতির  কাগজ কলমে শৈল্পিক নৈপুণ্যে ডায়েরি লেখা। সেটাই তাঁর সাহিত্য।  এই চর্চার মধ্যে নিজের মননের সাথে বস্তুজগতের মিলন ঘটাতে চান।


আমার 'আমিকে' চিনতে গেলে 'আমি' কে 'আমার'  কি পরিচয় তা  জানতে হয়। এই 'আমির' সঙ্গে সমাজ জীবনের সম্পর্কটা তুলে ধরতে হয়। লেখকের এই আমির জীবনচর্চা  জীবন ভাবনার সঙ্গে তাঁর সাহিত্য চর্চা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ যেন এক জীবন চরিত, জবানবন্দী। লেখকের শিশু বেলা থেকে বেড়ে ওঠা  বেড়ে ওঠার  পথে  সহায়ক ও প্রতিবন্ধক বিষয়গুলো কোন ব্যক্তির ব্যক্তিজীবনে সামাজিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত তাঁর লেখায় । এ হল সমাজ জীবনে  মানুষে মানুষে, মানুষে প্রকৃতিতে আন্তঃসম্পর্কের আলোয় নিজেকে, নিজের জীবনকে  প্রদক্ষিণ করা । আর এই স্মৃতিচারণের মাধ্যমে সত্যিকারের সাহিত্য চর্চা। 


এবার আবার আসি দেখার চেষ্টা করি একজন সাহিত্যিক তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে কিভাবে নিজের নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁর নিজের মধ্যেই এক নিজেকে চিনে নেওয়ার যে তাগিদ তিনি বোধ করেন সে সম্পর্কে আমার ভাবনা প্রকাশ পাবে এই লেখায়। বলেছি যে  বহিরাঙ্গের সঙ্গে অন্তরঙ্গের 'আমি'কে চিনে নিতে চান সাহিত্যিক। প্রত্যেকের জীবনে একজন বাইরের আমি আর একজন অন্তরের তথা ভেতরের আমি আছে। কার্যত আমাদের  বাহ্যিক জগতের সঙ্গে পরিচয়টা বহিরঙ্গের আমিকে অনেকটা চিনিয়ে দেয়। আর এই বহিরঙ্গের  আমি স্নায়ুর জগতে যেভাবে প্রতিভাত হয় তাই আমার অন্তরঙ্গের 'আমি'র স্রষ্টা। সেটাকে ঠিকমত চেনা  খুব কঠিন। কার্যত সবটা চেনা হয় না। থেকে যেতে হয় অসম্পূর্ণ এক 'আমিকে' জানার সীমাবদ্ধতার মধ্যে। বহিরঙ্গ আর  অন্তরঙ্গের 'আমির' মধ্যেকার আন্তঃসম্পর্ক বুঝে নিজের মধ্যেকার 'আমিকে' চেনা যায়। এ  এক আত্মউপলব্ধি। আমরা নিজে নিজের সবটাকে চিনতে চাই না। ভালো মন্দ মিলিয়ে মানুষ। আমরা নিজেকে মন্দ বলে পরিচিত নিজে করতে চাই না। তাই নিজে নিজেকে চিনলেও সেটা উন্মোচিত করতে চাই না বাইরের জগতের কাছে। সেটাই এই আত্মোপলব্ধির পথে সবচেয়ে  বড় বাধা।


আমরা যখন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন নাক কান চোখ মুখ দিয়ে কাজ করি আমাদের বহিরঙ্গ সচল হয়। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে স্নায়ু জগতে বার্তা পাঠায়। আমাদের নানারকম অনুভূতি হয়। মনোজগত ক্রিয়া করে।আমরা গলার সাহায্যে তা কথায় প্রকাশ করি। এই অনুভূতি গুলো সুভাবনা বা কুভাবনা হতে পারে। সেই অনুযায়ী মানুষের মনোজগতের চরিত্র ঠিক হয়।বিষয়টা একটা আধটা উদাহরণ দিয়ে বুঝে নেওয়া যেতে পারে। যেমন আমরা একটা খুনের দৃশ্য দেখলে আমাদের অনুভূতিতে একটা নৃশংসতার বার্তা আসে। আমাদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ প্রতিহিংসার মনোভাব বা ভাবনা গড়ে ওঠে। এটা যখন চেতনায় আসে তখন এই ভাবনাকে আমরা কুভাবনা  বলি। আমাদের চেতনা এর বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ হতে বলে একে এড়িয়ে যেতে বলে আবার এর বদলা নিতে বলতেও পারে । কুদৃষ্টির ফলে যে কুভাবনার জন্ম হয় তাকেই আমাদের মনোজগতে  চেতনার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কে কোন ধরনের মনোজগতের প্রতিক্রিয়াকে গ্রহণ করবে তা তার সামাজিক ভাবনা গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া স্নায়ু ব্যবস্থায় অসংখ্য কোষের পুষ্টি রক্তচলাচল ব্যবস্থা সব কিছুর ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের হিংসা প্রতিহিংসা বিদ্বেষসুলভ ভাবনা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর বলে একে সাধারণভাবে  কুভাবনা বলা হয়। আবার অনেকে ভাবতে পারে এই খুনটা খারাপ একটা খারাপ কাজ বলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার তখন প্রতিঘাত প্রতিহিংসাকে সুভাবনা বলে মনে হতে পারে। এর ফলে কেউ বিদ্রোহী চরিত্রের মানুষ হয়ে ওঠে যেটাকে  কুভাবনা বলা চলে না। আবার আমাদের দৃষ্টিতে যদি কোন সৌন্দর্যপূর্ণ কিছু ধরা পড়ে তবে আমাদের স্নায়ু জগতে তথা মনোজগতে সুভাবনার উদ্ভব ঘটে। আমরা উৎফুল্ল হই। মনোজগতে আনন্দের ঢেউ ওঠে। আমাদের চেতনা এই সৎভাবনার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে পরামর্শ দেয়। এই সৌন্দর্য বোধ সবার মধ্যে সমান নয়। কাকে কতটা আলোকিত করে তা নির্ভর করে  স্নায়ুজগতের বিকাশের ওপর।কেউ বাগানের ফুলের সমাহারে বেশি আপ্লুত হতে পারে আবার কারো ক্ষেত্রে সে প্রভাব ততটা তীব্র নয়। এইভাবে  সৃষ্টি হওয়া মনোজগতের প্রভাব পড়ে সাহিত্যিকের সাহিত্য সৃষ্টিতে।



 কেউ যখন চোখ দিয়ে দিনের আলোয় বাইরেটা দেখে তখন জীবনের সব আলো যেন বর্ষিত হয় তার ওপর। আমরা জীবনের আলো দুভাবে দেখি -----  অন্তদৃষ্টি দিয়ে আর বহিদৃষ্টি দিয়ে। বহিদৃষ্টি দিয়ে সকালে সূর্য উঠলে তার আলোয় এই ভৌতিক জগৎটা নেহাত  একটা ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য জগৎ হিসেবে দেখি যেটা চোখ নামক একটা ইন্দ্রিয়ের বাহ্যিক অনুধাবন। কিন্তু মানুষের একটা অন্তর্দৃষ্টি থাকে যা দিয়ে বিভিন্ন ইন্দ্রিয় দিয়ে  বাহ্যিক এই দেখাকে অনুভূতির স্তরে নিয়ে যায় মানুষের মনোজগতে। সেখানে শুধু চোখ নয় প্রত্যেকটা ইন্দ্রিয় বাহ্যিক অনুভূতি ছাড়াও  অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে আমাদের বিভিন্ন অনুভূতিকে হৃদয়ের গভীরে নিয়ে যায়। যেমন কোন কিছু চোখে দেখলে দেখা বিষয়টা  আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে, পৌঁছে যায়  গভীর মননে। সঙ্গে সঙ্গে চেতনার জগৎটা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।আলো যার ওপর বর্ষিত হয় শুধু তার অবয়ব আমরা দেখি না। তাকে হৃদয় দিয়ে অনুভবও করি। যেমন সুন্দর হাসি মুখ দেখলে আমাদের মননে এক আনন্দ অনুভূতি আনে। শুধু দেখা নয়, হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বিষয়টার বৈশিষ্ট্য আমাদের মনকে স্পর্শ করে। শব্দ শুনলে তা হৃদয়ে ঝঙ্কৃত হয় যা বিভিন্ন বার্তা  পোঁছে দেয় আমাদের মননে। কোন কিছু খেলে তার স্বাদে  আমাদের মনে আনন্দ নিরানন্দর ঢেউ খেলে যায়। এই আলো বর্ষিত করে দ্রষ্টার ভাবনায় তার আঁচার আচরণ এক কথায় জীবন যাপনে। সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে তার মনোজগতটা খুবই আবেগ প্রবন ও মর্মস্পর্শী হয়। বাইরের  জগৎটাকে তিনি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অবলোকন করেন, চোখে দেখেন শ্রবণে শোনেন স্পর্শে পান বা ঘ্রাণে বোঝেন।  এই আলো তাঁর অন্তরলোকে যে বার্তা পাঠায় তা স্নায়ু জগৎকে উজ্জীবিত করে।  তার চেতনায় আঘাত করে।  সাহিত্যিক তাঁর  আবেগ দিয়ে তাকে গ্রহণ করেন তাকে নিংড়ে নিয়ে গল্প কবিতা উপন্যাস ছড়ার মাধ্যমে প্রকাশ করেন।  সৃষ্টি হয় সাহিত্য।  সূক্ষ অনুভূতির সাহায্যে সাহিত্যের মাধ্যমে বস্তুজগতের সঙ্গে মনোজগতের মিলন ঘটে। এছাড়া তিনি তাঁর স্মৃতির সাহায্যে অতীতকে তুলে এনে বর্তমানের সঙ্গে তার মেলবন্ধন ঘটান, ভবিষ্যতকে যে ভাবে অবলোকন করেন তাঁর ছবি আঁকেন। এর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয় তাঁর শিক্ষা সংস্কৃতি অভিজ্ঞতা। এ সবকিছুর সমবেত উপস্থাপন ঘটে সাহিত্যে তথা গল্প কবিতা প্রবন্ধ উপন্যাসে। সাহিত্যিক মনোজগতের সূক্ষ অনুভূতির সাহয্যে সাহিত্য সৃষ্টি করেন । এর জন্য তাঁকে স্মৃতির সমুদ্র মন্থন করতে হয় বর্তমানকে অবলোকন করতে হয় অভিজ্ঞতার সার সংকলন করে ভবিষ্যতের ছবি এঁকে। সৃষ্টির পেছনে এক মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া কাজ করে যা সাহিত্যের ভাবনার জগৎকে আবেগ দিয়ে কল্পনা দিয়ে রাঙিয়ে নেয়। সাহিত্যিকের মনোজগত এই প্রক্রিয়ায় আলোকিত হয়।


জীবনদর্শনের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ন যা সাহিত্যের আঙিনায় জীবনটাকে বুঝতে সাহায্য করে তার গতিপথের নির্দেশ দেয়। জীবন বোধটাকে তুলে ধরে। 


জীবনটা দেখে সবাই। যে যার ইন্দ্রিয় দিয়ে জীবনটাকে দেখে। কি ঘটছে জীবনে তার চোখে যা ধরা পড়ছে সে দেখছে সবটা। কিন্তু সেটা তার কার্যকারণের মধ্যে দিয়ে মনোজগতে উদ্ভাসিত হলো  না, কেন ঘটে তার তাৎপর্য কি ভবিষ্যত গড়ে তোলায় তার ভূমিকা কি সেটা স সে বোঝার চেষ্টা করল না। তার মনে হয় কোন অজানা কারণে  ঘটনা ঘটার জন্যই ঘটে। ঘটে যাওয়ার পর সে মৃত শব। এই দেখা তার নেহাত চাক্ষুষ দেখা। যেটা যেমন সেরকম সে দেখে। অতীত তার স্মৃতিতে ভাসে। কিন্তু সে অতীতকে কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা হিসেবে দেখে। কেন কোনটা কিভাবে ঘটল তার থেকে কি শিক্ষা অতীত ধরে কিভাবে বর্তমানে উত্তরণ সেটা সে তার অনুভূতি দিয়ে মনন দিয়ে বুঝলো না, ঘটনা তার কাছে ঘটনাতেই শেষ, স্মৃতিতে সে শব হয়ে বেঁচে থাকল, সেক্ষেত্রে সেটা তার  জীবন দর্শন জীবনদর্শন নয়।সে নেহাতই একজন দ্রষ্টা। তার দেখায় সে ভবিষ্যতকে আগাম অনুমান করে না ভবিষ্যত অতীত বর্তমানের ঘটনাবলীর চাপে (ইমপ্যাক্ট) কোনদিকে কিভাবে মোর নেয় তা তার এই দেখায় চোখে পড়ে না। ভবিষ্যত তার কাছে কোন অজানা শক্তি নির্ধারিত ঘটনা বলে দেখা দেয়। সেটা তার কপাল নেহাত স্থির করে দেওয়া কিছু বলে মনে হয়। মানুষ তার কাছে এক অসহায় দ্রষ্টা ঘটনাকে মেনে নেওয়া পুতুল মাত্র, সে বিধাতার নিষ্ক্রিয় সৃষ্টি, জগত সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় জীবনটাকে রূপ দিতে তার কোন ভূমিকা থাকে না। সে তখন হয়ে দাঁড়ায় কুসংস্কারে জর্জরিত এক জীব, জীবনটা যেমন সেভাবে মেনে নেওয়া, নীরব দর্শক হিসেবে তাকে মেনে নেওয়াই তার কাজ। এটা তার জীবন দর্শন হতে পারে কিন্তু জীবনদর্শন নয়। সে তখন নেহাতই দ্রষ্টা দার্শনিক নয়।


কিন্তু একজন দার্শনিক জীবনটাকে তার মনন দিয়ে দেখেন। তাঁর মনোলোক দিয়ে দেখা জীবনবোধ দিয়ে মানস লোকে জীবনকে উপলব্ধি করা তাঁর জীবন দর্শন।তাঁর জীবন বোধ দিয়ে তাঁর এই দেখা যাকে তিনি তাঁর সৃষ্টিকল্পে সাজিয়ে তোলেন। তিনি তখন আর নেহাত দ্রষ্টা নন তিনি একজন স্রষ্টাও।বলা চলে জীবনের রূপকার। ভবিষ্যত কোনদিকে  বাক নেয় তা অবলোকন করেন। তাই দেখা যায় রাষ্ট্র যখন এই পরিবর্তনকে ভয় পায় তখন দার্শনিকের ওপর নেমে আসে সন্ত্রাস এমন কি তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ইতিহাস তাই বলে। কার্যত একজন শিল্প সাহিত্যিক যার সাহিত্য চর্চায় জীবনবোধ মূর্ত হয়ে ওঠে তিনি একই সঙ্গে দার্শনিক। এখানে সাহিত্যের সঙ্গে দর্শনের সম্পর্ক। সেজন্য দেখা যায় সাহিত্যিককেও প্রায়ই রাষ্ট্রের বিষ নজরে পড়তে হয়।


জীবনটাকে শুধু দেখা নয় তাকে তার কার্যকারণ দিয়ে বোঝা তার বিবর্তন প্রক্রিয়াটা জানা আর জীবনের ভবিষ্যত দিক নির্দেশকে আগাম অনুমান করে তার চিত্রকল্প গড়ে তোলা হয় জীবনদর্শনে।বস্তুজগতের সঙ্গে মনোজগতের মিলন ঘটে জীবনদর্শনে। সেখানে একটা জীবনবোধ কাজ করে যা মানুষের শুভাকাঙ্ক্ষী। তাই তিনি শুধু জীবনটাকে দেখেন না জীবনদর্শন তার দেখায় গুরুত্বপূর্ন । যার মননে জীবনদর্শন জীবন বোধ প্রতিভাত হয় তিনিই দার্শনিক। একজন দার্শনিক তাঁর জীবনদর্শনে যা দেখেন তার পেছনে দৌড়ান না তাকে তার মনোলোকে এমন ভাবে অবলোকন করেন যে তিনি ঘটনার ওপর লাগাম পরাবার পথটা বাতলে দিতে পারেন। তিনি তখন আর বিধাতার পায়ে নিজেকে সঁপে দেন না। ঘটনার স্রোতে গা ভাসান না কোন জনজাতির জীবনযাপন আচার আচরণ সমাজ পরিচালনা এক কথায় অর্থনীতি রাজনীতি খেলাধুলো প্রভৃতি বিষয় নিয়ে দৈনন্দিন যে কাজকর্ম তার প্রতিফলন ঘটে মানুষের  মনোজগতে। সৃষ্টি হয় মানুষের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির একটা অংগ সাহিত্য। গল্প কবিতা উপন্যাস নাটক প্রবন্ধের মাধ্যমে সংস্কৃতির অংগ  হিসেবে সাহিত্যকে উপস্থিত করা হয় তার নিজস্ব আঙিনায় আমরা যাকে  সাহিত্যের আঙিনা বলছি।

 

========০০০========

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক