Featured Post
গল্প ।। জ্যোতির্গময় ।। সুদীপ ঘোষাল
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
গল্প
সংসারের জ্বালায় অতিষ্ঠ সুমন। তার স্ত্রী তাকে প্রতি পদে পদে অপমান করে বাইরের লোকের কাছে অসম্মান করে। সুমনের মাঝেমাঝে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু উপায় নেই। একটা ছেলে আছে। সে তার ওপরই ভরসা করে। সুমন এখন জালে পোড়া মাছের মত হয়ে গেছে।
কোনো দিকে তার ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। এই সংসারে মরতে হবে তাকে।
স্ত্রীর মুখ ঝামটা আর অপমান শুনে তাকে দিন রাত কাটাতে হবে। সুমন ভাবে এর থেকে যদি আমি বিয়ে না করতাম আমার কত পয়সা কড়ি হতো। টাকা পয়সা হতো।
আমি অনেককে হেল্প করতে পারতাম গরীবদের আমি সাহায্য করতে পারতাম।
অনেক বুঝিয়ে বলেছে সুমন তার স্ত্রীকে। কিন্তু তার স্ত্রী সকালে উঠে বিরাট চিৎকার শুরু করে। তাতে প্রতিবেশীরা খুব আনন্দ পায়।
আমাদের বাড়িতে অশান্তি হলেই প্রতিবেশীর নিয়মে তারা আনন্দ পায়।
কিন্তু সুমন অসম্মানের ভয়ে কিছু বলতে পারেনা। প্রতি পদে, পথে যেতে হয় সহ্য করে টোন টিটকিরি।
একদিন রবিবারে সুমন বাড়ি আছে।
তার স্ত্রী হঠাৎ চিৎকার শুরু করল কোন একটা অজুহাতে।সে বলল, সুমনা একটু আস্তে কথা বল। আমার কানে লাগছে। বুক ধরফর করছে। সুমনা বলল, তুই বাইরে যা। আপদ মরেও না।
সকাল থেকেই সুমন ধরফর করে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে নিল।
কিছু কথা না বলে।
কিন্তু উপায় নেই। কথা তো বলতেই হয় এত চিৎকার কি করে সহ্য হয়।
সকাল থেকে শুরু করলে কেন?
তুমি এরকম করো না সুমনা।
আমিতো তোমাকে কোন ডিস্টার্ব করিনি।
আজ রবিবার আমার কাজ বন্ধ।
তুমি তোমার কাজ করো আমি আমার কাজ করি। আমি একটু লিখি আমাকে নিশ্চিন্তে লিখতে দাও। নিশ্চিন্তে বাঁচতে দাও আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও।
কিন্তু তার স্ত্রী সুমনা শোনে না তার কথা সে অনবরত চিৎকার করে। আকথা কুকথা বলে। এমনকি ছেলেটাকে পর্যন্ত ছাড়ে না।
তার সমস্ত সম্পত্তি বলে নিজের।
আচ্ছা তোমার নিজের হোক।
সুমন বলে আমি তাহলে বাইরে কোথাও পালিয়ে যাব তুমি আমাকে নিশ্চিন্তে বাঁচতে দাও। তবুও সুমনা তাকে ছাড়তে চায় না। সে বলে আমাদের ফেলে যাবে কোথায়। তোমার দায়িত্ব না আমাদের পালন করা।
আমি যা করব তোমাকে সহ্য করতে হবে।
সুমনের ভালো লাগে না।
এই একঘেয়ে জীবন আর অশান্তি।
আর অপমান চারিদিকে প্রতিবেশীরা তার প্রতি সন্দেহের চোখে দেখে।তারা দেখে বউকে ভালবাসে না ছেলেকে ভালোবাসে না।
শুধু পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়।
এই লোক ভালো নয়।
সুমনের আসতে ইচ্ছা করে না।
সে মনে করে আত্মহত্যা করাই ভালো।
কিন্তু না আত্মহত্যা কাপুরুষে করে।
কি করে মানিয়ে নেওয়া যায় সেই চিন্তায় সে শুরু করে নতুন করে জীবন, মন।
তার মনে হয় তার চাকরি বদলি হলে সে ঘর ভাড়া করে অন্য জায়গায় থাকবে।
এরা সুখে থাকুক।
বউ ছেলেমেয়ে সুখে থাকলেই তো বাবার ভালো লাগে।
তাই সে আর অশান্তি করে না।
শুধু দরখাস্ত করে দেয় সরকারের কর্তৃপক্ষের কাছে, তাকে বদলি করার জন্য।
কিন্তু জীবন তো এত সহজ নয়।
সহজে কি বদলি সম্মতি মেলে মেলে না।
তাই তাকে থাকতে হয় এই অশান্তিময় জীবনে। এই অশান্তিময় সংসারে।
সে লেখক একটি লেখার কথা মনে করে সে সকাল থেকে আনন্দচিত্তে উঠতে চায়।
কিন্তু না তার স্ত্রী সকাল থেকেই শুরু করে কলহ। তার পাড়ার সে নানারকম অপপ্রচার করে সুমনের নামে এবং পরপুরুষের সামনে ঢলাঢলি করে। তাকে সহ্য করে থাকে।
তাকে বলে তুমি আমাকে এখন একটু খানি শান্তিতে থাকতে দাও।
তোমার ঘর বাড়ি আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। আমি এর প্রতি দাবি করছি না। কিন্তু আমাকে একটু শান্তিতে লেখার সুযোগ দাও। শান্তিতে বাঁচার সুযোগ দাও।
কোনমতেই সে স্ত্রীকে বাগে আনতে পারে না। সুমন একদিন কি করলো বাইরে সুপার মার্কেটে বেরিয়ে একটা বট গাছের উপর উঠে পরল। উঠে-পড়ে গামছা লাগিয়ে তাতে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ার চেষ্টা করল।
পাড়ার অনেক লোকে তাকে ভালোবাসতো। তাকে দেখে তাড়াতাড়ি গাছে উঠে তাকে তুলে ধরল।
সে কিন্তু ঝুলে পড়েছিল তো এখনো তার ধড়ে প্রাণ আছে।
পাড়ার যারা পছন্দ করে তারা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিল।
এখন সুমন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ার ফলে তারএকদিক অকেজো হয়ে গেছে।
সে এখন অপাঙতেয় সমাজে। সে এখন অপাংক্তেয় সংসারে।
সে এখন কোন কঠিন কাজ করতে পারে না। অফিসে অফিসে যেতে পারে না।
শুধু স্ত্রীর লাথি-ঝাটা খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। এক দুর্বিসহ জীবন। এ জীবন থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।
তবু সুমনের মনটা এখনো মরে যায়নি।
তার ছেলে ঝন্টু কে সামনে পেয়ে বলে বাবা আমাকে একটু সেবা কর।
আমাকে একটু ধর।
আমাকে একটু বাথরুম পায়খানায় নিজে যেতে সাহায্য কর। আমাকে নিজের মত থাকতে দে। চেষ্টা কর, তোর সহায়তা ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না, সন্তু বলে, বাবা তুমি ভয় করো না আমি আছি তোমার পাশে।
তবুও সুমনের মন মরে যায়নি।
সে এখনো লেখার চেষ্টা করে ভয়েস টাইপে। কম্পিউটারে লেখে।
আর বসে বসে নিজেকে গালাগাল দেয়।
কেন যে এই অপকর্ম করতে গেছিল।
তার স্ত্রী কিন্তু সময়ে অসময়ে তাকে গালাগালি দিয়ে চলে এখনো।
কোনো পরিবর্তন নেই কবে যে তার পরিবর্তন আসবে ঠাকুর।
আমার মনটাকে শান্ত করে দাও। সে যেন বুঝতে পারে ভালোবাসা।প্রেমে ভরিয়ে দাও তার মন।
সুমন দেখতে পায় অদূরেই একটা গোলাপ বাগান।
সেই গোলাপের নানা রকম রং। কোনটা হলদে লাল লাল সাদা গোলাপ ফুটে আছে।
এই গোলাপের বাগানে সে যদি মালি হতো প্রতিদিন জল দিত আর গোলাপের ঘ্রাণ গ্রহণ করত।
আজ মনে হয় সুমনের মনটা মরে যায়নি।
তাই সে এখনো চিন্তা করে ওই গোলাপ বাগানে আশা জাগছে।
সুমন বলে, গোলাপের হাতছানি দেখতে পাচ্ছি। ওই গোলাপ বাগান আছে। আমার কাছে। আমার অন্তরে।
যাব আমি যাব, ওই গোলাপ বাগানে আমি নিশ্চয়ই যাবো একদিন...
=======================
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন