Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ভ্রমণ ।। হরিদ্বার বদ্রিনাথের পথে ।। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

।। ভ্রমণকাহিনি।।


কংক্রিটের ঘেরাটোপে যন্ত্রচালিতের মত নির্বিকার দিনগত পাপক্ষয়। ব্যস্ততার দুরন্ত গতিতে একই কক্ষপথে নিরন্তর আবর্তমান গতানুগতিক প্রাত্যহিকতা। ছকেবাঁধা জীবনসংগ্রামের বৈচিত্র্যহীনতায় বিবর্ণ ভাবনায় গভীর অবসাদের দীর্ঘ ছায়াপাত। চেতনায় বেঁচে থাকার ঝিমমারা অনুভব। একঝলক টাটকা বাতাসের জন্য ক্লিষ্ট প্রাণের হাঁকুপাঁকু ব্যাকুলতা। তবু গড়িয়ে চলে জীবন।

    মনের রুদ্ধদুয়ারে ঠকঠক কড়াঘাত। কে গো তুমি? আমি গো আমি। ভিতরের বাউল-মানুষটা সাড়া দেয়। চলো গো ঘুরে আসি। কোথায়? আরে ওই যে যেখানে ---- যেখানে অচেনা আকাশ। অজানা পথ। অদেখা মানুষ। অননুভূত চারপাশ। যেখানে নিসর্গের কাব্যময়তায় প্রাণে জাগে আপনভােলা আবেগ। অনুভবে চুম্বন এঁকে যায় --- বেঁচে থাকার কতই না সুখ! ওই বাউল মানুষটাকে তখন বড় আপন মনে হয়। হাত বাড়িয়ে তার হাত ধরি। বলি, চলো গো তোমার সাথে ঘুরে আসি আবারো দূরে কোথাও, অনেক দূরে। আজো ওই বাউল-মানুষটাই ভরসা। ওর হাত ধরেই চার-দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এই জগৎটাকে এখানেওখানে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি। এমনি ছুঁয়েদেখার যে অভিজ্ঞতার কথা এখন বলবো ---- তা' অনেকটাই পুরনো কিন্তু আমার কাছে এতটুকুও ম্লান হয় নি তার অনুভবের জৌলুস।

    যাত্রা শুরুর আগের মুহূর্তেই আনন্দে আঁচড় কাটে বিষাদের কাঁটা! পা বাড়িয়েছি মহানবমীর রাতে। যে উৎসব হৃদয়ের আপনজন, তার বিদায়ক্ষণে প্রাণ তো কাঁদবেই। রাত পোহালেই ঢাকের কাঠিতে বাজবে বিসর্জনের বাজনা। যে বাজনা শুনলে মনে হয় --- একটা বছর! সে তো অনেক সময়!

    ঘড়ির কাঁটার নির্দেশ মেনেই ট্রেন ছুটলো। ছুটে চললো সারা রাত। পরেরদিন সারা দিনমানও কেটে গেল চলন্ত ট্রেনের কামরায়। জানালার ধারে ঠায় বসেবসে দেখি, জানালার ওপারের যা কিছু --- আমাকে দেখা দিয়েই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তেই! দৃষ্টিতে আলসেমি লাগে, তবুও দেখায় বিরাম নেই। চোখ ছুঁয়েছুঁয়ে গেল কতই না মাঠঘাট-নদীনালা-সবুজক্ষেত-টিলা-খোয়াই ….। চাকার ঘূর্ণনে একটানা বেজে চললো দশমীর বিষন্নতার আবহ। কত স্টেশন এলো। গেলো। কত মানুষ উঠলো। নামলো। সারাদিন ঝলসে-ঝলসে ক্লান্ত সূর্যটা ক্রমেই ঝিমিয়ে ফিকে হয়ে আসতে লাগলো। তারপর একটুএকটু করে নিভে গেলো দিনটা। সন্ধ্যে নামলো। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত। সে রাত আরো গভীর হলো। জানালার বাইরে এখন ধূ ধূ অন্ধকার। আচমকাই আঁধারচোখে আলোকিত স্বাদবদল --- ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে মুহূর্তের ঝাপটা মেরেই পিছন পানে হারিয়ে গেল কোন একটা অখ্যাত স্টেশন। চেয়ে থাকতেথাকতেই দুচোখের পাতায় যেন আসন পেতে জমিয়ে বসতে চাইলো ঘুম। যতই জমিয়ে বসতে চাক না কেন, ট্রেনের কামরায় কোনোকালেই আমার তেমন জমকালো ঘুম হয় না। তবুও প্রতিবার যা করি --- দেখাই যাক না একবার চেষ্টা করে।

    সকাল হলো। ঝকঝকে সকাল। ট্রেন থামলো। হলুদবোর্ডে কালো রঙে গোটা গোটা হরফে লেখা --- হরিদোয়ার। ট্রেন উজার করে লোক নামলো। সেই সাথে আমরাও।

    স্টেশনে পা রাখতেই চোখের তারায় সবুজ ছায়া ফেলে দৃষ্টি কেড়ে নিল 'শিবালিক'। পাথরের বুকে তার অফুরান ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা উজার করে অভ্যর্থনা জানালো আমাদের। কুয়াশাভরা নরম রোদ ধুয়েদিল দেহমনের বেবাক অবসাদ। একরাশ মিষ্টি বাতাস কোথা থেকে ছুটে এসে জনিয়ে গেল বিজয়ার প্রাণভরা শুভেচ্ছা। অনুভবে কান পেতে শুনি --- বেজে চলেছে কী এক ভালোলাগার অদ্ভুত রিনিঝিনি সুর!

    নতুন জায়গায় প্রথম ভাবনা আশ্রয়। তবে আমরা দিনদুই নিশ্চিন্ত। ব্যাঙ্কের একটি হলিডেহোম আগাম পাকা করেই এসেছি। হলিডেহোমের হদিস পেতেও বিশেষ নাকাল হতে হলো না। জায়গাটার নাম সবজিমন্ডি। জমজমাট এলাকা। দোকান-পসার। গাড়িঘোড়া। লোকজন। তবে কলকাতার মতই পরিচ্ছন্নতা বোধের অভাবটুকু এখানেও বড্ড বেশি চোখে লাগে।

    চা-জলখাবার খেয়ে, খানিক বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য তেমন কোথাও নয় --- নিছকই নতুনজায়গা দেখার তরে পায়েপায়ে পথচলা। পথের দুপাশে রকমারি দোকানের মেলা। হোটেল, লজ, ধরমশালা। চলমান মানুষের সারি। সাদামাটা চোখের দেখায় যেন অতি সাধারণ একটি শহর! কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের এতটুকু চিহ্নও। অথচ মহাকালের রথ যুগ থেকে যুগান্তরের যাত্রাপথে বারবার ছুঁয়ে গেছে এস্থান। হয়তো বা স্থান-মাহাত্ম্যের টানেই। এস্থান তাই অমর হয়ে আছে পুরাণ-আখ্যানের পাতায়পাতায়। মহাকাব্যের কাহিনীতে। ঐতিহাসিক বিবরণীতে। যুগভেদে ভিন্নভিন্ন নামে ডেকেছে মানুষ এইস্থানকে। কপিল, গঙ্গাদ্বার, মায়াপুরী, বক্ষপুরী, হরদ্বার হয়ে হালে হরিদ্বার। বৃহদ্ধর্ম, শিব, স্কন্দ, পদ্মপুরাণ --- এস্থানের আধ্যাত্মিক মহিমাবর্ণনে উচ্ছ্বসিত। বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে মায়া অর্থাৎ হরিদ্বার সপ্তমোক্ষদায়িকার অন্যতম। "অযোধ্যা, মথুরা মায়া কাশী কাঞ্চী অবন্তিকা/পুরী দ্বারাবতী দৈব সপ্তৈতে মোক্ষদায়িকাঃ।।"

    মহাভারতে রাজা ধৃতরাষ্ট্র বিষয়বাসনা ত্যাগ করে নির্লিপ্ত বার্ধক্যে এখানেই এসেছিলেন বানপ্রস্থে। সঙ্গে ছিলেন মহামতি বিদুর, স্ত্রী গান্ধারী এবং কুন্তী। তীর্থভ্রমণকালে এইস্থানটি দর্শন করেছিলেন জ্যেষ্ঠপাণ্ডব যুধিষ্ঠিরও। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এই স্থানটিকে উল্লেখ করেছিলেন মায়া-য়া-লো নামে। তাঁর ভ্রমনবৃত্তান্তে স্থানটির আধ্যাত্মিক আবেদনের চিরন্তন স্বরূপটি ফুটে উঠেছে গভীর ব্যঞ্জনায়। মধ্যযুগে আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরীতেও হরিদ্বারের নামোল্লেখ পাওয়া যায়।

    পৌঁছে গেলাম বহুশ্রুত সেই হর-কি-পউরিতে। সামনে তরতর করে বয়ে চলেছে স্বচ্ছসলিলা পুণ্যতোয়া জাহ্নবী। দুইতীরে অবগাহনরত অসংখ্য মানুষ। ধনী-গরীব পাশাপাশি। বামুন-চাড়াল ছোঁয়াছুঁয়ি। ভেদাভেদের বালাই ঘুচে গেছে জাহ্নবীর খরস্রোতে। গঙ্গা-মাইজির কোলে সবার যেন একটাই পরিচয় --- মানুষ। সবাই অমৃতের পুত্রকন্যা।

 


 

    হর-কি-পউরির প্রাণকেন্দ্র ব্রম্মকুণ্ড। ভগীরথবংশীয় রাজা শ্বেত এখানেই তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মাকে প্রসন্ন করেন এবং তার দর্শনলাভে সমর্থ হন। সেই থেকেই এইস্থান ব্রম্মকুণ্ড। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে মনে, কে নির্মাণ করলো এই পউরি (যার অর্থ সিঁড়ি)? এই কুণ্ড? কিংবদন্তী বলে --- রাজা বিক্রমাদিত্যের ভাই ভত্তৃহরি এখানে কঠিন তপশ্চারণে অমরত্ব লাভ করেন। ভায়ের অমরত্ব লাভের স্মারক হিসেবেই রাজা বিক্রমাদিত্যের অমরকীর্তি এই পউরি। এই কুণ্ড। জনমানসে চিরায়ত বিশ্বাস --- ব্রম্মকুন্ডের জল অমৃতময়। অবগাহনে ধুয়ে যায় জন্মজন্মান্তরের সব পাপ। কর্মফল। সেই বিশ্বাসেই যুগযুগান্ত ধরে, দূরদূরান্ত থেকে দলেদলে এসেছে মানুষ। অমৃতসলিলে অবগাহন করে পাপশুদ্ধির ভরসা নিয়ে ফিরে গেছে নিশ্চিন্তে।

    প্রয়াগের মতই পূর্ণকুম্ভের গৌরবে মহিমান্বিত হরিদ্বার। প্রতি বারোবছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় এই পূর্ণকুম্ভ। পৌরাণিক কাহিনীর সূত্র ধরেই পূর্ণকুম্ভের আয়োজন। চিরবৈরিতা সত্ত্বেও একদা সমুদ্রমন্থনে সামিল হয়েছিল দেবতা এবং অসুররা। কথাছিল যা পাওয়া যাবে দুপক্ষের ভাগ হবে আধাআধি। কিন্তু দেববৈদ্য ধন্বন্তরি অমৃতকুম্ভ হাতে উঠে আসার পর দেবতারা অমৃতের ষোলোআনাই নিজেদের করায়ত্ত করতে চাইলো। ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত পিতার নির্দেশে ধন্বন্তরির কাছ থেকে অমৃতকুম্ভ চেয়ে নিয়ে ছুটতে শুরু করলো। কিন্তু ব্যাপারটা অসুরদের দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্রই তারা ধরে ফেললো দেবতাদের মতলব। তারাও সদলবলে জয়ন্তর পিছু নিল। একটানা তিনদিন ছুটতে ছুটতে বেদম হয়ে পড়লো জয়ন্ত। অমৃতকুম্ভ পাশে নামিয়ে রেখে একজায়গায় বিশ্রাম নিতে বসলো। কিন্তু অসুরদের ধেয়ে আসতে দেখে অনতিবিলম্বেই অমৃতকুম্ভ তুলে নিয়ে আবার ছুটতে শুরু করলো। এইভাবে ছুটতেছুটতে তিনদিন অন্ততঅন্তর চার জায়গায় বিশ্রাম নিতে বসেছিল জয়ন্ত। এই চারটি জায়গা --- হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক, উজ্জ্বয়িনী। প্রতি তিনবছর অন্তর এই চারটি জায়গায় তাই হয়ে থাকে কুম্ভমেলা। প্রয়াগ এবং হরিদ্বারে অমৃতকুম্ভ থেকে কয়েকফোঁটা অমৃত পতিত হওয়ায় এই দুটিস্থানে বারোবছর অন্তর হয় পূর্ণকুম্ভ।

    গঙ্গার উপরে বেশ কয়েকটি সুরম্য সেতু। যেন দুপারের মাঝে সৌহার্দ্যের বন্ধন। এই সেতুগুলোর উপর নিশ্চুপ দাড়িয়ে থেকে সুরোধুনীর পীতাভ-নীল স্বচ্ছ জলধারায় অপলক চেয়ে থাকা এক অনবদ্য অনুভবের অভিজ্ঞতা। প্রবাহিনীর চলার ছন্দে দোলা লাগে প্রাণে। বিভোরতায় পেয়ে বসে। পাশ কাটিয়ে তখন নিঃসাড়ে চলে যায় সময়।

    হর-কি-পউরি ছাড়াও আরো অনেকগুলো ঘাট প্রায় কাছাকাছি। কুশাবর্ত্ত ঘাট, গৌঘাট, বিষ্ণুঘাট, রামঘাট, সুভাষঘাট। প্রতিটি ঘাটের সাথেই জড়িয়ে আছে পৌরাণিক মাহাত্ম্য, কিংবদন্তী নয়তো কোনো স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

    গঙ্গায় স্নান সেরে, সুপ্রসিদ্ধ দাদাবৌদির হোটেলে আহারপর্ব সমাধা করে আমরা চলে গেলাম গঙ্গার অপরপারে। সেখান থেকে অটোয় চেপে সোজা চণ্ডীমন্দির। শহর থেকে ছ'কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি একেবারে লিল-পর্বতের শীর্ষদেশে। তিনমাইল চড়াই ভেঙে হাঁটা পথে সেখানে পৌঁছানো গেলেও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সুবাদে এপথ এখন অনেক সহজ এবং সুগম। রোপওয়ে ট্রলিতে ভাসতে ভাসতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মন্দিরের নাগাল। শূন্যে ভাসমান চলার পথে মুহূর্তের দেখা ঘন-চিকন সবুজের পাহাড়িয়া-সৌন্দর্য স্মৃতির সম্পদ হয়ে থাকবে বহুদিন। পর্বতের উপর থেকে ভারী সুন্দর লাগে গোটা শহরটাকে। মনে হয় নিখুঁত তুলির টানে ফুটিয়ে তোলা কোনো ল্যান্ডস্কেপ। এইপর্বতের ঢালেই অঞ্জনাদেবীর মন্দির। গৌরীশঙ্কর এবং নীলেশ্বর মহাদেবের মন্দির। মন্দিরগুলো ঘন জঙ্গলাকীর্ণ। সেই জঙ্গলে নাকি চিতাদের অবাধ বিচরণ। তাহোক! ভক্তের প্রাণে ভয় তুচ্ছ। ভক্তিকে ভরসা করে তাই অনায়াসেই দর্শন করে আসা যায় মন্দিরগুলো।

    চণ্ডীমন্দির থেকে আবার হর-কি-পউরি। হাতে অনেকটা সময়। ভাবলাম একটা চক্কর দিয়ে আসলে কেমন হয়! আবার অটোয় সওয়ার হলাম। পশুপতিনাথের স্মৃতি বিজড়িত শ্রবণনাথের মন্দির। নাথ সম্প্রদায়ের গোরক্ষনাথ মন্দির। গীতাভবন। শান্তিকুঞ্জ। মায়াদেবীর মন্দির। দেখতে দেখতে দিনকাবার। হর-কি-পউরিতে যখন ফিরে এলাম তখন সুরনদীর স্রোতধারায় সায়াহ্নের মায়াবী রঙ লেগেছে।

    এখানে আসার অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি --- হর-কি-পউরিতে গঙ্গা-আরতির দৃশ্য নাকি অসাধারণ। কানে শোনা সেই অসাধারণ দৃশ্যটি চোখের দেখায় যেন স্বর্গীয় মনে হোল। মন্দিরেমন্দিরে ঘণ্টার ধ্বনি। বন্দনাগীত। ধুপ-ধুনার ম ম গন্ধ। গঙ্গারবুকে অজস্র আরত্রিক প্রদীপশিখার বিম্বিত বর্ণচ্ছটা। সবমিলিয়ে এক অদ্ভুত ভাবগম্ভীর পরিবেশ। মন তখন সমস্ত জাগতিক আবিলতা খসিয়ে ফেলে এক স্নিগ্ধ পবিত্রতার আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে চায়।

 


 

    হরিদ্বার শহরের আরেক আকর্ষণ মনসা মন্দির। হর-কি-পউরি থেকে শিবালিক শিখরস্থিত এই মন্দিরটি এমনভাবে নজর কাড়ে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সে ডাকে সাড়া না দিয়ে যেন উপায় নেই। মনসা মন্দিরে যাবার দুটি পথ। একটা পাকা সিঁড়ি বেয়ে, অন্যটি পাকদন্ডীর পথ ভেঙে। হাঁটাহাঁটি যাদের নাপছন্দ তাদের ভরসা রোপওয়ে ট্রলি। অবিরাম উঠছে আর মন্দিরের বুড়ি ছুঁয়ে নামছে। তবে হাঁটাপথে মজা বেশি। দুপাশে গহন সবুজের অপরূপ বাহার। নিরিবিলি পথে রোদছায়ার আলপনা। পাখির কলতান। জংলা গন্ধ। চড়াই ভাঙার কষ্টটুকু যেন গায়েই লাগে না।

    মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসা। ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন বলেই তিনি মনসা। দূর্গার প্রতিরূপ। দেবী ত্রি-আননা।

    পরেরদিন মনসা মন্দির দর্শন সেরে চলে গেলাম কনখল। হরিদ্বার থেকে মাত্র দুমাইল। এখানে পতিব্রতা সতীর আত্মাহুতির বেদনার্ত কাহিনী অমর হয়ে আছে কালের বুকে। সতীকুন্ডের অনলশিখা আজো অনির্বাণ। কনখলে দর্শনীয় স্থান বলতে সতীকুন্ড, সতীঘাট, দক্ষেশ্বরের মন্দির, নির্মল সন্তপুরা, আনন্দময়ী আশ্রম, অবধূত মন্ডল। অটোয় চুক্তি করে নিলে ঘণ্টা চার পাঁচেকের মধ্যেই সব ঘুরে দেখে নেওয়া যায়।

    ঠিক ছিল পরেরদিন চলে যাব হৃষিকেশে। হরিদ্বার-হৃষিকেশ-দেরাদুন-মুসৌরি। মোটামুটি এইছিল এবারকার সফরসূচি। কিন্তু ঘটনা ঘটলো অন্যরকম। বোধহয় এইরকমই ঘটে থাকে। আর ঘটে বলেই জীবন-মাঝারে এত বিস্ময়! এত বৈচিত্র্য! যিনি অতর্কিতে এমন ঘটালেন তার সাথে কয়েকমুহূর্তের আলাপচারিতায় পরিচয় হয়েছিল কোনো একসময়ে। প্রতিদিনকার জীবনে কত মুখেরই তো আনাগোনা! সেইসব অজস্র মুখের মিছিলে কবেই হারিয়ে গিয়েছিল ওই মানুষটার মুখও। তাই যখন মানুষটা জানতে চায় --- আপনাকে কোথায় দেখেছি বলুনতো? আমি নির্দ্বিধায় বলি, "আমি কিন্তু আপনাকে কখনো দেখিনি।" মানুষটা চিন্তান্বিত গলায় বলে, "উঁহু, নির্ঘাত কোথাও না কোথাও দেখেছি…" নিঝুম হয়ে মানুষটা ভাবে কিছুক্ষণ। তারপর সহসা বলে ওঠে, "মনে পড়েছে, ভূত বাংলোর ছাদে …. শিমুলতলায় …. অনেকদিন আগেরকথা …."

    স্মৃতির উপর থেকে ধূসর আস্তরণটা সরে যায়। একটুএকটু করে মনে করতে পারি যেন।

    "হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক ঠিক। আপনার সঙ্গে আপনার স্ত্রী ছিল। আর একটা ছোট্ট বাচ্চা …"

    জমে গেলাম কথায়। একথা সেকথা কতকথা! একসময় এসে পড়লো এবারের ভ্রমণপ্রসঙ্গ।

    "সে কী মশাই, হরিদ্বারে এসেও কেদার-বদ্রী যাবেন না? বলেন কী? এই তো আমরা ঘুরে আসলাম।"

    বললাম, "আগেথেকে ঠিক করে আসি নি। হাতে সময়ও কম। সঙ্গে বয়স্ক মানুষও রয়েছেন দু-একজন।"

    মানুষটা উড়িয়ে দেবার মত করে বললো, "ওগুলো কোনো ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। কেদার-বদ্রি ঘুরে আসতে বড়জোর তিন-চার দিন সময় লাগবে। তারপরেও আপনি মুসৌরি-দেরাদুন ঘুরে নিতে পারবেন। দেরাদুনে দেখার তো ওই সহস্রধারা। আর মুসৌরিতে তো সৃষ্টিছাড়া খরচ! মাছভাত বাদ দিন, সব্জিভাতের একটা মিলের দাম শুনলেও তড়াক করে লাফিয়ে উঠতে হবে। যেমনতেমন একটা লজে থাকার খরচও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে বলতেই হবে, জায়গাটা অসাধারণ। তবে ওখানে না থেকে দিনেদিনে ঘুরে আসাই ভালো। যা বলছিলাম --- কেদার যদি না-ও যেতে পারেন বদ্রিটা ঘুরে আসুন।"

    প্রস্তাবটা মনে দাগ কাটলো। সাথীদের জানালাম। সানন্দে সায় দিল সবাই। তবু স্মরণ করিয়ে দিলাম --- ঠান্ডা কিন্তু মাইনাসে। ওদের ভাব কুচপরোয়া নেহি! তবে আর বেরিয়ে পড়তে বাঁধা কোথায়? প্রবীণেরা বলেন -- তীর্থে না টানলে নাকি যাওয়া যায় না! বোধহয় একেই বলে সেই টান।

    খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, গাড়োয়াল বিকাশ নিগমের বাস সোজা চলে যাচ্ছে বদ্রিনাথ। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির অল্পসিটের ছোটছোট বাসেও যাওয়া যেতে পারে। আর আছে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া করে যাওয়ার জন্য বিভিন্নরকমের যানবাহন। আমরা সেরকমই একটাকে কথা বলে ঠিক করলাম। যদিও দক্ষিণাটা ঈষৎ বেশি --- টেনেটুনে কোনোভাবেই তাকে সাধ্যের পরিসীমার মধ্যে বিবেচনা করা সম্ভব নয়! শুধু কী তাই --  পথে টোল-ট্যাক্সের যত দায় সব নিজেদেরকেই নিতে হবে। স্বভাবতই খরচে খচখচ করে ওঠে মন! মধ্যবিত্তের স্বভাবদোষ আর যাবে কোথায়? ভিতরের বাউল-মানুষটা মুচকিমুচকি হাসে। কৌতুকে বেজে উঠে বলে, "ওহে বাপু, নিক্তিমাপা নৈমিত্তিক জীবনের বাইরে এসে এমন বেহিসেবি হওয়াটাই ভ্রমণের অন্য এক আনন্দ! মুঠো খোলো হে মুঠো খোলো।"

    পরেরদিন সকাল নটা নাগাদ আমাদের গাড়ি ছুটলো বদ্রীনাথের পথে। হরিদ্বার থেকে বদ্রিনাথ তিনশো-বাইশ কিলোমিটার। উচ্চতা ১০৪০০ ফুট। হৃষিকেশ ছুঁতেই হিমালয়ের মুখোমুখি। যেন চোখের সামনে কোনো মৌনমূর্তি প্রকান্ড সুন্দরের আত্মপ্রকাশ ঘটলো। হিমালয় যেন এখানে গড়িয়ে এসে হারিয়ে ফেলেছে নিজেকে। চোখে ঘোর লাগে। দেখার সেই মুগ্ধতা কাটতে না কাটতেই দেখি আমার চারপাশে শুধুই হিমালয় আর হিমালয়! উদ্ধত। সুগম্ভীর। আহা! কী সুন্দর ওই অভ্রংলিহ হিমালয়কে পরম মমতায় জড়িয়ে থাকা শ্যামলিমা নিসর্গের অপরূপ প্রাণোচ্ছ্বাস! যেন সবুজে-সবুজে নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছে স্বয়ং নগাধিরাজের সম্পূর্ণতা জুড়ে। পাহাড়-সবুজের বিহ্বলকরা অমন সৌন্দর্যকে দৃষ্টির গভীরতায় আরো নিবিড় করে আনতে বিভোর হয়ে উঠলো মন!

 


 

    দুর্গম হিমালয়ের বুকে পিচঢালা পথ। কালের বুকে হালের গৌরব! চোখে বিস্ময় লাগে। মানুষের অসাধ্যসাধনের কীর্তিতে স্ফীত হয়ে ওঠে বুক। পাশাপাশি মনেরমাঝে কোথাও যেন খচখচ করে। এপথ তো সে পথ নয়! যে পথে ধর্মেরটানে কৃচ্ছ্যসাধ্য পদযাত্রায় যুগে যুগে সামিল হয়েছে কত সহস্র তীর্থকামি মানুষ! কত রক্ত ঝরেছে। প্রাণ নিঁভেছে। তবু ভক্তি টলে নি এতটুকুও। ভক্তপ্রাণের সর্বকালীন বিশ্বাস --- এপথ ধরেই মোক্ষের সন্ধান। তাই সকল বিঘ্ন তুচ্ছ করে দুরত্যয় পথ ভেঙেছে মানুষ। কিন্তু আজ আর কোথায় সেই মহাপ্রস্থানের প্রাচীন পথচিহ্ন! ঢেকে গেছে ঘন জঙ্গলে। এপথ তার আধুনিক সংস্করণ! যার উপর দিয়ে ঝাঁ-চকচক চক্রযানের অহরহ মসৃণ আনাগোনা। যুগান্তরে পথ বদলেছে মানুষ। দুটি পা-কে ছুটি দিয়ে আজ নিশ্চিন্তে কণ্ঠলগ্ন যন্ত্রসভ্যতার। কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক হিমালয়? বদলায় নি এতটুকুও। তেমনি অনাহত তার রঙ-রূপ-গন্ধের বিচিত্র সম্ভার। তাই আজো টেনে আনে মানুষকে। পাগল করে। বিহ্বল করে। বিভোর করে।

    গাড়ি এসে থামলো বেয়াসিতে। চোখ জুড়িয়ে গেল। হিমালয়ের পেলব সবুজে সোনালীরোদের ঝলমলে সোহাগ। আকাশের নীলসাগরে অলস ভাসমান শ্বেতহংস মেঘের দল। হিমালয়ের কানেকানে চুপিচুপি কি যেন বলে যায় তারা গোপনকথা। ভারী মনোরম স্থানটি। চারদিক অদ্ভুত শান্ত। নিরালা। শুধু আত্মভোলা বাতাস কী যেন সুর ভাঁজে আপনমনে। সহসা দুটিচোখ ওই আকাশ-পাহাড়-সবুজের মাঝে যেথাখুশি হারিয়ে যাওয়ার বাসনায় চঞ্চল হয়ে ওঠে!

    গরম চায়ে গলা ভিজিয়ে আবার চলা শুরু। দেখতেদেখতে চলা। একপাশে পাহাড়ি অরণ্য। অন্যপাশে গভীর খাদ। সমতলের মত মোটেও সরলসোজা নয় এপথের রকমসকম। একটার পর একটা টার্নিং। প্রতিটি টার্নিংয়ের পাশে পাথরের বুকে লেখা হুঁশিয়ারি --- ব্লো হর্ন। শুনশান পথ। দু-একজন মানুষ। স্থানেস্থানে পথজুড়ে বসে থাকা হনুমানের দল। মাঝেমাঝে বিপরীত দিক থেকে আসা হঠাৎ কোনো গাড়ির মন্থর পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া।

    দেবপ্রয়াগে আবার যাত্রাবিরতি। হৃষিকেশ থেকে যার দূরত্ব সত্তর কিলোমিটার। প্রয়াগ অর্থে সঙ্গম। এখানে ভাগীরথী মিলেছে অলকনন্দার সাথে। দুয়ের মিলিজুলি রূপ গঙ্গা। নেমে এসেছে হরিদ্বারে। এই দেবপ্রয়াগেই রাবণবধের কারণে ব্রহ্মহত্যার পাপস্খলনের উদ্দেশ্যে তপস্যা করেছিলেন  শ্রীরামচন্দ্র। বহুপ্রাচীন এখানকার রামচন্দ্রের মন্দিরটি।

    সকালে তাড়া থাকায় সামান্য কিছু মুখে দিয়েই বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল। এখন শূন্যউদরের  অগ্নিজ্বালায় যেন ঝালাপালা হয়ে উঠলাম। দ্বিপ্রাহরিক আহারপর্বটা তাই এখানেই সেরে নিতে হলো। দেবলোকের গোটাপথে আমিষ নিষিদ্ধ। নিরামিষ সবজিভাতও মোটেও উপাদেয় নয়। তবু খিদের মুখে সবই অমৃত।

    লতার মত পাহাড় পেঁচিয়ে উঠেগেছে পথ। সেপথ এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। মাঝেমাঝে ছোটছোট সেতুতে পাহাড়েপাহাড়ে মেলবন্ধন। আমাদের পাশেপাশে কলস্বনা অলকনন্দা। উপলখণ্ডের সাথে সুতীব্র অভিঘাতে তার সফেদ ফেনা টুকরোটুকরো হয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে অজস্র মুক্তোরাশি। দৃষ্টির সীমানাজুড়ে কেবল পাহাড় আর পাহাড়। বিচিত্র আকারে। বিন্যাসে। বর্ণসুষমায়। কোনোটা ঢাল। কোনোটা খাঁড়াই। কোনোটা সবুজ মখমলে ঢাকা -- যেন চাবাগানের উদ্ভিন্নযৌবনার কোমল লাবণ্যময়তায় উদ্ভাসিত। কোনোটা আবার পাথরকাটা মেহনতি শ্রমিকের কঠিন মুখাবয়বের মত রুক্ষ। কর্কশ। হিমালয়ের এই বর্ণাঢ্য বৈচিত্র্যের ছোঁয়ায় মনের মগ্ন আবেশে জেগে ওঠে এক অনন্ত সুন্দরের অপার্থিব অনুভব। হিমালয়ের পথে এটাই বুঝি সবথেকে বড় পাওনা। শুনেছি মোক্ষের বাসনায় নাকি তীর্থের পথ ভাঙে মানুষ। সেই মোক্ষ কে কবে কোথায় পেয়েছে --- আমার জানা নেই। হিমালয়ের পথে যেতেযেতে, দুচোখ ভরে দেখতেদেখতে বারবার মনে হয়েছে, যদি কোথাও সেই মোক্ষ থেকে থাকে তবে তা' বুঝি পাওয়া যাবে এপথেরই দুপাশে, যা কিছু আঁক কেটে যায় দর্শনে-চিন্তায়-অনুভবে -- তারই মাঝে কোথাও কোনোখানে! কবির ভাষায় বললে --- "পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়,/পথের দুধারে আছে মোর দেবালয়।"

    আরো পয়ঁত্রিশ কিলোমিটার পথ উজিয়ে গাড়োয়াল-শ্রীনগর। প্রশান্ত-গম্ভীর পাহাড়-প্রকৃতি ভোল পাল্টে হঠাৎই মেতে উঠলো ভিড়ের হট্টগোলে। তাজ্জব বনতে হলো দু-হাজার ফুট উচ্চে পাহাড় অধিত্যকায় এমন একটি নিটোল প্রাণবন্ত শহর দেখে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, হাসপাতাল --- কী নেই এখানে! ভিড়ঠাসা শহরের লোকজন, গাড়িঘোড়া কাটিয়ে কাটিয়ে দক্ষ ফরোয়ার্ডের মত আমাদের গাড়িটা একসময় পেরিয়ে এল শহরটাকে। সভ্যতার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে আপনস্বরূপে আবার নিজেকে মেলে ধরলো হিমালয়। পাশেপাশে ছায়াসঙ্গিনী চঞ্চলা অলকনন্দা।


    চলতেচলতেই কানে এসে বাজে চপলা নির্ঝরের চকিত সঙ্গীত। চেয়ে দেখি, পাহাড় থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে, পথ ভিজিয়ে, ঝাঁপ দিয়েছে পাশের খাদে। হঠাৎ থমকে গেল গাড়ির গতি। কী ব্যাপার, না সামনে মেষবাহিনীর লম্বা মিছিল! হর্ন শুনে বিরক্তি বোধ করে। তবু পথ ছেড়ে দেয়। কাঠেরবোঝা পিঠে নিয়ে ন্যুব্জ দেহে ছন্দের তালেতালে এগিয়ে চলে গাড়োয়ালি স্ত্রী-পুরুষ। অদূরের পাহাড়ে প্রাণময় জীবনের টুকরোটুকরো ছবি। ছোটছোট গ্রাম। ধাপচাষ। ফসলের ক্ষেত। সহজ-সরল মুখ। সেইমুখে কঠিন জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকার সফল হাসি।

    "চা পিয়েগা?" ড্রাইভার শর্মাজির প্রস্তাবে এককথায় রাজি। মন্দ কী!

    "হিঁয়াপর বহুত আচ্ছা চা মিলেগা।" বলেই গাড়িটা ঘ্যাঁচ করে রূখে দিল শর্মাজি।

    একেবারে ফাঁকা জায়গায়, রাস্তার ধারে ছোট্ট নিঃসঙ্গ চায়ের দোকান। দোকানের পাশে গাছের ছায়ায় গুটিকতক চেয়ারটেবিল পাতা। লোকজন নেই। একপাশে পাহাড়ের ঢালে বেশকিছু ঘরবাড়ি। অন্যপাশে অনেকদূরে নীলআকাশের গোটা অঙ্গনজুড়ে ঢেউ তুলেছে পর্বতশ্রেণী। চারপাশে অকৃপণ সবুজের সমারোহ। দারুণ জায়গা। শর্মাজিকে মনেমনে ধন্যবাদ জানালাম।

    কী নাম স্থানটির? গুলাবরাই। উসখুস করে ওঠে স্মৃতি। নামটা যেন কোথায় শুনেছিলাম … কোথায় শুনেছিলাম …!! মনে পড়েছে। শুনি নি, পড়েছিলাম --- জিম করবেটের রচনায়। এই সেই গুলাবরাই? যেন বিশ্বাস হয় না -- এই সেই গুলাবরাই, যেখানে এক ভয়ানক নরখাদক চিতার অন্তিম পরিণতি ইতিহাস হয়ে আছে কালেরবুকে।। ১৯১৮ থেকে ১৯২৬। রুদ্রপ্রয়াগের জনজীবনে দুরাত্মা নরখাদকটি ছিল এক দুর্ধর্ষ বিভীষিকা। যার উৎপাতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল গোটা অঞ্চলের মানুষ। কেড়ে নিয়েছিল রাতের ঘুম। শিকার হয়েছিল একশো-পঁচিশটা প্রাণ। অবশেষে সন্ত্রস্ত কালযাপনের অবসান ঘটে একদিন। আতঙ্কিত মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। দিনটা ছিল, ১৯২৬-এর পয়লা মে। করবেট-সাহেবের মাত্র একটি গুলিতেই ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছিল ভয়ঙ্কর সেই নরঘাতকের। সেই কবেকার কথা! কতবছর কেটে গেছে তারপর! কিন্তু এখনো এদিগরের মানুষজন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে করবেট-সাহেবের নাম।

    পাহাড়ের জঙ্গলে আজো আছে চিতার দল। তবে তারা নরখাদক নয়। মাঝেমধ্যে নেমে আসে। পথেঘাটেও তাদের ঘুরে বেড়াতে দেখে কেউকেউ। কখনোসখনো দুএকটা ছাগল-বাছুর মারে। আবার ফিরে যায়।

    গুলাবরাই থেকে সামান্য পথ রুদ্রপ্রয়াগ। গাড়োয়াল-শ্রীনগর থেকে যার দূরত্ব চৌত্রিশ কিলোমিটার। আর হৃষিকেশ থেকে একশো ঊনচল্লিশ কিলোমিটার। উচ্চতা ছ'শ দশ মিটার। এখানে অলকনন্দার বুকে হারিয়ে গেছে মন্দাকিনী। রুদ্রনাথের প্রাচীন মন্দিরটিও এখানকার অন্যতম দ্রষ্টব্য।

    পঞ্চপ্রয়াগের অন্যতম কর্ণপ্রয়াগ। রুদ্রপ্ৰয়াগ থেকে মাত্র একত্রিশ কিলোমিটার। কর্ণপ্রয়াগে পিনারি হিমবাহ থেকে উৎসারিত পিন্ডারগঙ্গা একাত্ম হয়েছে অলকনন্দার সাথে। এখানে অলকনন্দা সগর্জনে রুদ্ররূপিনী। কর্ণপ্রয়াগ ছাড়িয়ে এগিয়ে চললাম আরো সামনে। অপরাহ্নের নিরুত্তাপ আলোয় যেন বিধুর রং লেগেছে পাহাড়িয়া নিসর্গে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে অপরাহ্ন। সময় থেকে সময়ান্তরে দিনের ঘন ঘন রংবদল। সেই রঙে নিজেকে রাঙিয়ে ক্ষণেক্ষণে রূপান্তরে অপরূপ হয়ে ওঠে হিমালয়।

 


 

    যান্ত্রিক আর্তনাদ তুলে হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে গেল আমাদের গাড়িটা।

    --- কী ব্যাপার?

    একহাত জিব বার করে বসলো ড্রাইভার শর্মাজি।

    --- টায়ার পাংচার হো গিয়া।

    --- সর্বনাশ! সন্ধ্যে যে হয় হয়! তারউপর একেবারে পথের মাঝখানে! চারপাশেও তো দেখছি জনবসতির চিহ্নমাত্র নেই! যেতেও  তো হবে আরো অনেকটা পথ ...

    আমার এহেন ভাবনার মাঝেই শর্মাজি তার মাতৃভাষায় আশ্বস্ত করলো। যার বাংলা তর্জমা --- " ভগবানের কাছে যাবার এপথে ভয় পাবার কিছু নেই। চোরডাকাত এপথ মাড়ায় না। জঙ্গলে বাঘ আছে বটে। মানুষ তাকে ভয় খেলেও সে খামোকা মানুষকে ভয় দেখায় না …."

    না দেখালেই ভালো। মনেমনে ভাবলাম।

   শর্মাজি আবার বললো, "আপনারা বরং এক কাজ করুন, নির্ভয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান। খুব ভালো লাগবে। আমি টায়ার বদলে আপনাদের ধরে নেব।"

    আর সকলে উৎসাহ না দেখালেও প্রস্তাবটা মনে ধরলো আমার।

    সূর্য তখন অস্তাচলে। একটা মস্ত বড় লাল টুকটুকে বল যেন মন্থর গড়িয়ে নামছে পর্বতের ঢাল বেয়ে। মুঠোমুঠো লাল আবির ছড়িয়ে দিয়ে কে যেন রাঙিয়ে দিয়েছে পশ্চিমাকাশ। ঠিকরে পড়া রক্তিমাভায় হিমালয়কে মনে হলো -- ঠিক যেন কোনো এক রক্তবসন ধ্যানমৌন যোগী। অরণ্যের গহনেও শুরু হয়েছে রাত্রির আয়োজন। বেজে উঠেছে নৈশ-কনসার্টের একটানা সুর। প্রকৃতির বিষন্নতায় দিনান্তের বেদনা। বিচ্ছেদকাতর দিবস আসন্ন সন্ধ্যার কাছে রেখে যাবে তার আজিকার শেষ নিবেদনটুকু --- "হে মোর সন্ধ্যা যাহা কিছু ছিল সাথে/ রাখি তোমার অঞ্চলতলে ঢাকি।"

    হাঁটতে হাঁটতে কখন দাড়িয়ে গিয়েছিলাম জানিনা। হঠাৎ শুনি শর্মাজির গলা -- "উঠিয়ে।"

    নন্দপ্রয়াগ পেরিয়ে পিপুলকোটিতে যখন পৌঁছালাম তখন এই পাহাড়দেশে একপ্রহর রাত। এখানেই রাত্রিবাস। শর্মাজি জানিয়ে দিয়েছে, কাল দিনের আলো ফোটার আগেই আবার বেরিয়ে পড়তে হবে। বদ্রিনাথ এখান থেকে আরো ঊনআশি কিলোমিটার। সে রাতে কালিকমলি ধরমশালায় থাকার ব্যবস্থা হলো। শর্মাজি নিজেই উপযাচক হয়ে সব বন্দোবস্ত করে দিল। শুধু তাই নয়, কোন হোটেলের খাবার "মন্দের ভালো" --- সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েও দিল। যাওয়ার আগে আবার বলে গেল, "ভোর চারটের আগে রেডি হয়ে থাকবেন। আমি এসে ডেকে নিয়ে যাব।" মুগ্ধ হলাম মানুষটার নিখাদ আন্তরিকতায়।

    পরেরদিন আবার যখন রওনা দিলাম রাত তখনো চরাচরের কোলে গভীর ঘুমে অচেতন। পিপুলকোটিতেই বেশ ঠান্ডা পেয়েছিলাম, এখন যতই এগোতে লাগলাম ততই "হি-হি" তীব্র হতে লাগলো।

    পুবেরআকাশে আঁকিবুকি কাটে দিনের রং। তরল হয়ে ঝরে পড়ে বিভাবরী। অস্ফুট আলোয় আবছা ধরা দেয় তরঙ্গায়িত পর্বতরেখা। একসময়ে রাত মুছে ঝিকমিকিয়ে ওঠে নতুনদিনের ঝকঝকে আলো।  সেই আলোকের কোমল আভায় সদ্যস্নাতা পূজারিনির পবিত্রতায় মূর্ত হয়ে ওঠে পর্বতশোভিতা অপরূপা বসুন্ধরা। জেগে ওঠে আকাশস্পর্শী ভয়ঙ্কর সুন্দর হিমালয়। পাশের গভীর খাদে চেয়ে থাকা যায় না। রক্ত যেন হিম হয়ে আসে।

    সূর্যের প্রথম কিরণ চুম্বন এঁকে যায় উত্তুঙ্গ তুষারশৃঙ্গে। ঝিকমিকিয়ে ওঠে নন্দাদেবীর তুষারশৃঙ্গ। নীলকন্ঠের গা বেয়ে নামে গলানো রূপো। অনেক নীচে নিঃসীম নীরবতাকে রোমাঞ্চিত করে ছুটে চলে অলকনন্দা। এখানে নদীর রোষান্বিত আত্মপ্রকাশ! যেমন উত্তাল গর্জন, তেমনি দুর্বার গতি! একঝলক নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেই বুক যেন শুকিয়ে আসে! চারপাশের শান্ত-সমাহিত নিসর্গ কী অদ্ভুত মায়াবী! প্রকৃতির রঙ-রূপ-ধ্বনির এমন অনিন্দ্যসুন্দর ব্যঞ্জনা যেন দুচোখের অনুভবে এক অপার্থিব বিস্ময়! চিত্ত বিহ্বল হয়। কিন্তু যা দেখি তাকে যে ভাষায় ব্যক্ত করি --- এমন সাধ্য কোথায়?

    চমৎকৃত চেতনায় তখন সময়ের, পথের কোনো সাড়া ছিল না! তাই টেরও পাই নি, পেরিয়ে এসেছি আরো একত্রিশ কিলোমিটার পথ। গাড়ি থামলো যোশীমঠে। উচ্চতা প্রায় ৬২০০ ফুট। শোনা যায় --- এখানে বহুবছর আগে কল্পবৃক্ষতলে গভীর তপস্যায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন অদিগুরু শঙ্করাচার্য। এটিই তার প্রতিষ্ঠিত প্রথম মঠ। শীতকালে মূলমন্দির তুষারপাতের কারণে বন্ধ হয়ে গেলে এখানেই পূজিত হন বদ্রিনাথ। থাকার সুব্যবস্থা থাকায় এখানেও অনেকে রাত্রিবাস করে।

    যোশিমঠ ছাড়িয়ে আরো দশ কিলোমিটার এগোলে বিষ্ণুপ্রয়াগ। এখানে ধৌলিগঙ্গাকে বুকে টেনে নিয়েছে অলকনন্দা। উন্মত্ত অলকনন্দা এখানে আরো বেপরোয়া। আরো ভীষণ-ভয়ানক। বিষ্ণুপ্রয়াগের পর পান্ডুকেশর। জনশ্রুতি --- জীবনের শেষ ক'টাদিন এখানেই অতিবাহিত করেছিলেন রাজা পান্ডু। পাণ্ডবদের স্বর্গযাত্রাও নাকি এখানথেকেই।

    বদ্রিযাত্রার শেষপথটুকু চড়াই-উৎরাইয়ের বেশ দাপট। গাড়ি একবার ওঠে। আবার নামে। আবার ওঠে। মনে হয় --- হিমালয়ের পথে যেন জীবনের রঙ্গ দেখি। বেশ লাগে। নিচেরদিকে তাকিয়ে দেখি --- পাকদন্ডীর পথ  ঘুরে উঠে আসছে আরো অনেক গাড়ি। এত উপর থেকে রঙবেরঙের গাড়িগুলোকে দেখতে কী ভালোই না লাগে! ঠিক যেন খেলনা গাড়ির মত এতটুকুন! এপথের বেশ খানিকটা দূরত্ব খুবই সংকীর্ণ। বিপদসঙ্কুলও বটে। তাই ওই পথটুকুতে যান চলাচলে রাস টানতে হয়েছে নিয়ন্ত্রণের শক্ত রশি দিয়েই। গাড়ির গতি সব একমুখী। একদল উঠে গেলে আরেকদল নামবে।

    বদলে গেছে হিমালয়। সবুজবসন পরিহার করে, পাথুরে-নগ্নতায় এখন তার রুক্ষ-গাম্ভীর্য। মাথায় তুষারমুকুট। সূর্যকিরণে ঝলকে উঠছে রাশিরাশি হিরে-মুক্তো-চুনি-পান্না। চোখ ঝলসে যায় সেই ঐশী আলোর বিচ্ছুরণে। তবু চোখ ফেরে না!

 


 

হনুমানচটি পেরিয়ে এলাম। শর্মাজি জানালো --- আর মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে বদ্রিনাথ। এই সাত কিলোমিটার আর কতটুকুই বা পথ! দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর দৃষ্টির সীমানায় ধরা দেবে উত্তরাখণ্ডের সেই দুর্গম পর্বততীর্থ। যার পৌরাণিক মাহাত্ম্য আসমুদ্র-হিমাচলের কোটিকোটি ধর্মপ্রাণের ভক্তির উচ্ছ্বাসে এক চিরন্তন ব্যাকুলতা। তাই মুনি-ঋষি-সাধু-সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে কালের স্রোতে এসেছে কতশত মানুষ। মানুষের ভক্তির কাছে হার মেনেছে দুর্লঙ্ঘ্য পথের প্রতিকূলতা। বিশ্বাসের আবেগের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে দেহমনের সকল কষ্ট, সকল ক্লান্তি। এই সেই মহাতীর্থ!

  

    তীর্থের দেবতা পদ্মাসনা। ধ্যানস্থ। শালগ্রাম শিলা নির্মিত মূর্তিটি খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে নারদকুণ্ড থেকে উদ্ধার করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন শঙ্করাচার্য। মন্দিরটি অতীব সুদৃশ্য। মন্দিরের স্বর্ণচূড়া ইন্দোরের রানী অহল্যাবাঈয়ের বিনম্র ভক্তির এক অক্ষয়কীর্তি। মন্দিরের নীচেই তপ্তকুণ্ড। যার উষ্ণসলিলে অবগাহনে নাকি ধুয়ে সাফ হয়ে যায় জন্মজন্মান্তরের যত পাপ। এসবই বিশ্বাসের কথা। বলে তারাই --- যারা আসে তীর্থের টানে! আমি তো সে টানে আসি নি। এসেছি পথের টানে। আরেকটু গিয়েই সেপথে লম্বা দাঁড়ি টানা হবে। চলার শেষ! দর্শন-ব্যাকুলতায় তীর্থকামির অস্থিরপ্রাণ যখন আনন্দে উথালপাথাল, আমার প্রাণে শুধুই বিষাদের সুর। আসলে তীর্থের বাসনা নিয়ে তো আসি নি যে পুণ্যের হিসেব কষে আত্মপ্রসাদ লাভ করবো। এসেছি অচেনা পথের অজানা আনন্দের স্বাদ নিতে আর দুচোখ ভরে দেখে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে। কিন্তু না মিটলো মনের স্বাদ, না দুচোখের পিপাসা! আসলে হিমালয়কে দেখেদেখেও যেন আশ মেটে না! কী জানি, হয়তো এই অতৃপ্তিই হিমালয়ের চিরন্তন আকর্ষণ। তাকে একবার দেখা দিলে, সে তোমাকে বারবার টানবে। জানিনা সে টানেই ব্যস্তজীবনের টানাপোড়েন কাটিয়ে, পথের রেস্ত জোগাড় করে আবার কখনো আসা হবে কিনা! তবে হোক আর নাই হোক, এটুকু নিশ্চিত জানি, শিমুলতলায় পরিচয় হওয়া সত্ত্বেও হরিদ্বারে যাকে আমি চিনতে পারি নি --- তাকে আর নতুনকরে কখনোই চিনতে ভুল করেবো না। কারণ বদ্রিনাথের পথে হিমালয়ের স্মৃতি কোনোদিনই ভোলার নয়।।

 =======================================

 


 

 

 

 

 

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, হৃদয়পুর, উত্তর ২৪ পরগণা।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩