google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। জীবন ।। অঞ্জনা গোড়িয়া - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

অণুগল্প ।। জীবন ।। অঞ্জনা গোড়িয়া

 

না না না।কিছুতেই না। এই টুকু মেয়ে। তার এত স্পর্ধা হয় কী করে? মুখে মুখে চপা। কী দিন কাল এল শুনি?  গুরুজনদের একটু মেনে চলবে না?  
ঠাকুমা গালে পান চিবাতে চিবাতে বকে ই চলেছে। এর একটা  বিহিত  না করলে এ মেয়ে যে কাউকে মানবে না। 
কথাগুলো  বলে মুখ থেকে  পানের পিচ ফেলল  উঠানের কোণে।
তা দেখে মনি আরও  রেগে খাপ্পা।
মেনে চলব নাকি?  কোথায় পিচ ফেললে দেখেছ? এই তোমাদের জ্ঞান। উঠান ভর্তি  করছ? আমার গায়ে ও ঠিকরে এল।
কেন একটা  পিচ ফেলার পাত্র রাখতে পারো না?  যেখানে সেখানে ফেলছ? যেখানে সেখানে থুথু সর্দি কফ এসব ফেলতে নেই জানো না? আমি কিছু  বললেই  বলবে চপা করছিস। 
ঠাকুমা রেগে বলে উঠল,
যত বড় মুখ নয়।তত বড় কথা। আমাকে কথা শোনাচ্ছিস।


 যা খুশি বল, কিন্তু তোর  আজ যাওয়া  চলবে না।  ঘর থেকে বের হবি না বুঝলি।
এই টুকু মেয়ে নাকি!  আমি  ভাবতেই  পারছি না। 
এখনো  বিয়ে হলো না।  ছেলে পুলের মুখ দেখল না সে দেবে কিনা রক্ত?
কত দিন  খেয়েদেয়ে ওই রক্তটা তৈরি করতে হয়েছে জানিস?
মা গো মা একবার হাত কেটে গিয়ে সে কি রক্ত? তোর কী কান্না!
আর সেই তুই কিনা  একবোতল রক্ত দিবি।  একটু ও কষ্ট  হবে না? 
মেয়েমানুষদের এসব দেওয়া  চলবে না।
এমনিতেই  প্রতি মাসে কত রক্তক্ষয় হচ্ছে। মনে নেই বুঝি? 
এতক্ষণ পর বুঝলো মনি। ঠাকুমা কেন এত রেগে যাচ্ছে?
 রবিবার আজ ক্লাবে রক্ত দান শিবির। 
চারিদিকে রক্তের হাহাকার।  তাই মনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে ক্লাবের ছেলেদের দিয়ে শিবিরের  আয়োজন করেছে। ভেবেছে মনি প্রথম রক্ত দেবে। তাই দারুণ  উৎসাহিত।   মনে মনে ভেবে ও রেখেছে ভালো  করে একটা  ফোটো তুলবে। রক্ত দান করার সময়।  কী আনন্দ মনে। কিন্তু  বাড়ির কেউ রাজি  নয়। 



 বাড়ি সুদ্ধ লোক চিৎকার চেঁচামেচি। মা শুধু বলে, সাহস করে  দে মা। অনেকের কত উপকার হবে। কিন্তু  ঠাকুমা বাবা বলে ওঠে, মেয়েমানুষ  দেবে রক্ত? এখনো  বিয়ে হয় নি। কোথায় কী রোগ এসে যাবে।  কিছুতেই দেওয়া  চলবে না। 
মনি ও রাগে দুচার কথা  শুনিয়ে দিল।
 মনি কারোর কথা শুনল না। জোর করে  দিয়ে  এল রক্ত। একটু ভয় ভয় করছিল বটে কিন্তু অসুস্থতার কোন লক্ষণই সে টের পায়নি।
 সে দিনের পর থেকে কেউ কথা বলে না মনির সাথে।  ঠাকুমা ছিল মনির প্রাণ।
 এখন মনিকে দেখলেই  মুখ ঘুরিয়ে নেয়।বাবা উঠতে বসতে নিজের মেয়েকে যা খুশি বলে।  পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের ও গালাগাল দেয়।
মনি আগেই  বলে রেখেছিল,কেউ যেন বাবা ঠাকুমার  কথায়  রাগ না করে।

হঠাৎ এক ঝড় জলের রাত। ঠাকুমার স্ট্রক। বাথরুমে  পড়ে জ্ঞান শুন্য।
 মনি ই ক্লাবের দাদাদের ডেকে গাড়ির ব্যবস্থা  করল। ছুটে চলল গাড়ি হসপিটালের দিকে।  রাত তখন ১-৩০
রাস্তাঘাট  শুনসান। ভর্তি  করা হলো  ঠাকুমার। ডাক্তার দেখে ই  বলল, এখুনি রক্ত লাগবে। ব্যবস্থা  করুন।  
ব্লাড ব্যাঙ্কে যেতেই  বলল, আগে রক্ত দিন তবে ই রক্ত পাবেন। মনি কার্ড টা বের করে ধরিয়ে দিল হাতে। আর কিছু  বলতেই  পারল না। 


 ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে  পেয়ে গেল  নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত।
ঠাকুমাকে সপ্তাহ খানেক পর বাড়ি আনা হলো। 
 এখন ঠাকুমার ঠিক আগের মতো  খুশি খুশি মন। মনিকে কাছে ডেকে  একগাল ফোকলা দাঁতে হেসে বলল,এই দেখ পানের পিচ রাখার পাত্র।  আরও  কিছু দিন বাঁচতে  চাই তোর বিয়ে টা দেখে যেতে হবে তো।
 ভাগ্যিস সেদিন আমার কথা শুনিস নি। 
তোর রক্তে ই আমি জীবন ফিরে পেলাম। 
এই পরের বছর  যখন রক্তদান শিবির হবে আমাকে বলিস। আমি রক্ত দেব। কী বলিস?
 সবাই খিলখিল করে  হেসে উঠল। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন