Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

মুক্তগদ্য ।। রঙিন চশমা ।। রশ্মিতা দাস





শিশুকালে এক কৌতুক শুনেছিলাম। এক শহুরে বাবুর শখ হয়েছে বাড়িতে গরু পুষে খাঁটি গরুর দুধ খাওয়ার একটা স্হায়ী বন্দোবস্ত করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ।গ্রাম থেকে একটা দুগ্ধবতী গাভী কিনে এনে নিজের বহুতল ফ্ল্যাটের তলায় রাখলেন আর তার খাদ্য হিসাবে খড়বিচালির বন্দোবস্ত করলেন। কিন্তু গ্রামের সতেজ সবুজ ঘাস ফেলে তো সে গরু খড়বিচালি খেতে নারাজ।এখন ভদ্রলোকের হয়েছে জ্বালা। রুক্ষ শহরের নিষ্প্রাণ যান্ত্রিকতায় একমুঠো সবুজ ঘাসও যে দুর্লভ। কিন্তু সে তো আর নির্বোধ গরু বুঝবে না।সবুজ ঘাসও মিলবে না। পরদিন থেকেই দেখা গেল,সে গরু সুন্দর সোনামুখ করে খড় খাচ্ছে।শুধু তার চোখে পরানো হয়েছে সবুজ কাঁচের গগলস।

সে গরু। নির্বোধ একটি গরু। নিজের কার্যসিদ্ধি ও সুবিধার্থে তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। চোখে তার নিজের পছন্দসই রং বসিয়ে দিয়ে তাকে তার ইচ্ছা, তার স্বভাব-প্রকৃতি কে ভুলিয়ে দেওয়া গেছে।
শুনে আমার মজা লেগেছিল খুব। কিন্তু পরিণত হওয়ায় পর যখন এই ব্যাপারটা আমি আমার চারদিকে চোখ মেলেই চাক্ষুষ করি,তখন কিন্তু তা আমার মনে আর হাসির উদ্রেক করে না। বরং আমার কপালে স্পষ্ট হয় দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
ভুল বুঝে ভুল পথে চালিত হলে সেটা যতটা না তার অক্ষমতাকে প্রকট করে, সেই গহীন কালোর ভয়াল তীব্রতাকেও ছাড়িয়ে যায় তার প্রয়োগ করার পদ্ধতি ও পরিণতি। ভয়াবহতা যুক্তি-বুদ্ধি-মানবতার এবং পরিশেষ জীবন পর্যন্ত বিপর্যস্ত করে তোলে.ফলে সবাই নর্দমার সংকীর্ণতায় আবদ্ধ জীবনকে ধারণ ও বহন করে ও পরিশেষে মরে।



এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষকে নৃশংসভাবে খুন হতে হচ্ছে "ডাইনি" অপবাদ নিয়ে।
২০১৯ সালের ১৯শে মার্চ ঘাটালের ঈশ্বরপুরে ডাইনি অপবাদে যে মেয়েটি খুন হল নৃশংসভাবে, ২০০৪ সালে মারাইটোলির লাগোয়া গ্রামের যে মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাকে সমারোহ করে হত্যা করার পর তার মুন্ডু কেটে নিয়ে সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে চষে বেড়ানো হল গোটা গ্রাম, ঝাড়খন্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের ব্যবধানের মধ্যে স্রেফ ডাইনি সন্দেহে, থুড়ি বিশ্বাসে যে এগারোজন মহিলাকে গুলি করে-গলা টিপে হত্যা করা হল, এবং সর্বোপরি ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গোটা ভারতবর্ষের আড়াই হাজারেরও বেশি মহিলাকে "ডাইনি" বিশ্বাসে ভূতে ভর করার অপবাদে নির্মমভাবে হত্যা করা হল এবং ভবিষ্যতে আরও হবে, তারা কি জানে তাদের অপরাধ কি! কেন তারা এইভাবে বেঘোরে "শহিদ" হচ্ছে!

কারণ আর কিছুই নয়.ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং বিশেষত তাদের সম্পত্তি ও অর্থ হাতানোর ষড়যন্ত্র। এইটাই যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে এবং কারণও অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু সেটা দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা এদের নেই।তাদের এই বন্ধ এবং অন্ধ চোখে কিছু গুনিন ওঝাদের সব অযৌক্তিক নীতি ও বিধানই বেদবাক্য। এইসব বেদবাক্য কখনো সন্দেহভাজনদের নামে চিরকুট বানিয়ে পুঁটুলিতে বেঁধে ইঁদুর দিয়ে খাওয়াবার প্রতিযোগিতা,কখনো গাছের ডালে নাম খোদাই করে দেখা কোন গাছটি আগে মরছে, কখনো ঝাঁটা-ধুনো নিয়ে উদ্দাম নাচনকোঁদন ইত্যাদি ইত্যাদি রসিকতা দিয়ে যখন একটি নিরপরাধ মানুষকে ডাইনি ঘোষিত করা হয়, তখন এই হাস্যকর ছেলেভুলোনো কান্ডকারখানার সাথে ছেলেবেলার "ইনপিন সেফটিপিন" অথবা "আপন বাপন চরকি চাপন" এর কোনো সাদৃশ্যই কেউ খুঁজে পায় না,এবং এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যও কেউ তলিয়ে দেখতে পারে না।পারে শুধু মারতে আর পারে মরতে।

আর মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে শুধু গাঁ গঞ্জের গুনিন ওঝাই নয়,এক শ্রেণীর মানুষ নিজেদের হিসাব, পেটের ভাত ও জীবন গুছিয়ে নিচ্ছে আর সমগ্র মানবজাতিকে বাঁদরের পিঠেভাগের খেলার ময়দানে নামিয়ে দিয়েছে। তারা সমান তালে তাল দিয়ে যাচ্ছে।
লাগ্ লাগ্ লাগ্ ! নারদ নারদ !
আর টুক করে আড়ালে গিয়ে তাদেরই ভাগের পিঠে খেয়ে জীবনধারণ করছে।



একেকটি প্রাণীর মাংস দিয়ে জাতধর্মের আগুন ধরিয়ে,সৃষ্টিকর্তাকে নিজেদের পছন্দমতো ভাগ করে টুকরোগুলি ছড়িয়ে দিচ্ছে কাকেদের দলে আর নির্বোধ কাকগুলি সেগুলো নিয়ে খুনোখুনি করে মরছে। সৃষ্টিকর্তার আরাধনার স্হানে গম্বুজ থাকবে না ত্রিশূল,সেটা নির্ধারণ করে দিয়ে যাচ্ছে অন্য কেউ আর মানুষ সেই নিয়ে লড়াই করে লাশের পাহাড় বানাচ্ছে নিজেদের শান্তি-হাসি-শ্বাসপ্রশ্বাস-রক্ত-জীবন বিসর্জন দিয়ে। অথচ আড়ালে থেকে তালিটা বাজাচ্ছে যারা তাদের ফূর্তি-পাপাচার-শান্তি-হাসি সবকিছু পরিপাটি করে সাজানো আছে।মানুষ চালিত হচ্ছে। বড় নির্বোধের মত চালিত হচ্ছে কিন্তু তারা বুঝছে না, যে অদৃশ্য হাতল তাদের উপর আরোপ করা হচ্ছে,তা কোনো উর্দ্ধজগৎ থেকে প্রেরিত নির্দেশ বা বাণী নয়, বরং তা তার ষোলো আনাই রক্তমাংসের এই সংস্করণগুলির নিজেদের সুবিধার্থে।

বিশ্বশান্তি পুরস্কার ও সম্মানজয়ী মালালা কি বলেছিলেন! তিনি কিন্তু পুরুষের শিক্ষালাভে কোনো আপত্তি না তুলে শুধু নারীশিক্ষার জন্য সোচ্চার হয়েছিলেন। কিন্তু ওই একজন নারী বাদে তাঁর নিজের জন্মস্হানের নারীরা কিন্তু তাদের নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে হয়তো ততটা সচেতন ছিলেন না। কিছু কিছু নারী হয়তো চিরকালই মনে করে এসেছেন যে শিক্ষার অধিকার বা জীবনের ময়দানে ছাড়পত্রলাভের অধিকার শুধুই পুরুষের একচেটিয়া সম্পত্তি। কিন্তু তাঁদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে,খাদ্যগ্রহণ করতে বা তাঁদের মলমূত্রত্যাগে কিন্তু কেউ কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কেন করেনি?কারণ এগুলির সাথে এইসব বিধান প্রয়োগকারীর কোনোরকম স্বার্থ জড়িত নেই। নারী মানুষ হয়ে বাঁচতে শিখে গেলে তাদের ফূর্তির রসদে ঘাটতি দেখা দেবে তাই এই বিধান।



আসলে বিনাযুক্তিতে,কোনো প্রশ্ন না রেখে শুধুমাত্র সবাই মানছে বা অনুসরণ করছে বলেই তাকে যদি নিঃশর্তভাবে জীবনধারণের বুলি বানাতে হয়,তাহলে অবশ্যই এর পিছনে অন্য কোনো গল্প আছে বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে সেইটা সবার আগে বুঝতে হবে.কারণ আমরা কেউই আসলে তোতাপাখি নই। সবাইই মানুষ।
তাই এই একবিংশ শতাব্দীতে একটু চোখ খুলে,মন খুলে, যুক্তি খুঁজে,প্রশ্ন করে নিজেদের জীবন যদি নিজেরা বেছে নিয়ে তাকে সুন্দরভাবে নবরূপের একটা সার্থকতা দিতে পারি, সেই সার্থকতা আসলে মানব সভ্যতার সার্থকতা। লাল-নীল-গোলাপী-আকাশী-বেগুনী কাঁচের গগলস খুলে আমাদের নিজেদের দৃষ্টি যেদিন প্রসারিত করতে পারব, সেইদিন পৃথিবীর বুকে রক্ত-অশ্রু নদী বাকরুদ্ধ হবে.কল্লোলিনী হয়ে উঠবে জীবনের বারিধারা।
 
=================== 


রশ্মিতা দাস
maheshwarinagar,
T.Dasarahalli,
Bangalore.


মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত