google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re দুটি অণুগল্প ।। জয়তী ব্যানার্জি মুখার্জি - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

দুটি অণুগল্প ।। জয়তী ব্যানার্জি মুখার্জি





   বাৎসল্য 

 


  সাদা সিঁথি নয়, ঝুমার  সাদা শাড়িটা রুমার চোখেকে একটা ধাক্কা দিলো । ঝুমাকে যে সাদা সিঁথেয় দেখবে এটা জানতোই সে, সিঁদুর পরে তাকে দেখেওনি কখোনো  কিন্তু এমন সাদা শাড়ি পরার কী দরকার! এখন বিধবা হলেই কি কেউ এমন সাদা শাড়ি পরে! তাছাড়া ঝুমার বয়সই বা কতটুকু, তিরিশ হলো সবে । সাদা রঙ পছন্দ করে না ঝুমা ,চোখে লাগা রঙ পছন্দ করে বেশি । ছোটবেলাতে সবসময় ঝকঝকে জামা কিনতো । সাজতে ভালোবাসতো খুব । নিজে হাতে ঝুমাকে সাজাতো রুমা । যা চাইতো তাই দিতো । সবসময় দিদির জিনিসটা বেশি পছন্দ হতো তার। রুমা এককথায় দিয়ে দিতো । পিঠোপিঠি তবু যেন দিদি নয় মা ছিলো রুমা । বড্ড ভালোবাসতো বোনটাকে, একদিনও ছেড়ে থাকতো না অথচ সাত বছর কেটে গেল কোনোরকম সম্পর্ক না রেখে ।

             হয়তো এখোনো যোগাযোগ হতো না কিন্তু ঝুমার স্বামী বাসবের হঠাৎ মৃত্যুতে আর স্হির থাকতে পারেনি তাদের মা । রুমার সরকারি চাকরির নিরাপত্তায় আশ্রয় দিতে চেয়েছে ছোট মেয়ে আর তার সন্তানকে । বারবার অনুনয় করেছে রুমাকে ঝুমার কাছে আসবার জন্য । তবে শুধু মায়ের কথাতেই আসেনি রুমা,  বাসবের মৃত্যুতে সেও যন্ত্রণা পেয়েছে, এতোকিছুর পরেও যন্ত্রণা পেয়েছে ।
        দরজার পাল্লা ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুমার পিছন থেকে বারবার একটা কচিমুখ উঁকি দিয়ে দেখছিলো রুমাকে অথচ চোখে চোখ রাখছিলো না । আচমকা বাচ্চাটাকে টেনে সামনে নিয়ে এসে তার দিকে ঠেলে দেয় ঝুমা-

 " নে, একদিন তোর বাসবকে তোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিলাম । আজ তার ছেলেকে ফিরিয়ে দিলাম । নে, তুইই ওর মা  হ!"
 
                                  

                                    বর্ষা 


 একে মাঝ বর্ষা,  তার উপর বঙ্গোপসাগরের উপর গভীর নিম্নচাপ বৃষ্টিটা বাড়িয়ে দিয়েছে খুব । আকাশ যেন মন হাল্কা করার জন্য যতো পারছে কেঁদে নিচ্ছে আর সেই অশ্রুকণায় কামিনী গাছটায় একগাছ জোনাকির মতো ফুল এসেছে । কোয়ার্টারের আশপাশটা এমনিই সবুজ , বৃষ্টির জলে সবুজ রঙ ঝেঁপে নেমেছে একেবারে মাটি পর্যন্ত । 
        
           দুই বছর আগে এমনই এক বৃষ্টির দিনে এই প্রত্যন্ত গ্রামটায় চাকরিতে জয়েন করতে এসে আদ্যন্ত শহুরে মেধা ভেবেছিলো হয়তো এক সপ্তাহ ও এখানে টিকতে পারবে না অথচ পুরো একবছর কেটে গেলো শহরের সাথে কোনোরকমে যোগাযোগ ছাড়া । সেই সন্ধ্যেটায় চার ঘন্টা বাস জার্নি করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে যখন নিজের ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমে অভীকের সঙ্গে বিথীকে বসে থাকতে দেখেছিলো তখনই মাথায় আগুন জ্বলে গেছিলো । বারবার মানা করেছে সে অভীককে,  অথচ । তাই তিনমাসের বিবাহিত জীবন, দশ বছরের রিলেশনকে টান মেরে জঞ্জালে ফেলে চলে এসেছিলো সে। আর কোনো খোঁজ রাখেনি। না ফোন,  না সোশ্যাল মিডিয়া,  কিচ্ছু নয় । 
 
          পুরো বারোটা মাস কাটিয়েছে সে নির্বান্ধব । বেশ ছিলো । এই বর্ষাটা সব গোলমাল করে দিচ্ছে । বড্ড একা একা লাগছে তার । কাল একটা নেট প্যাক ভরেছে মেধা,  ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা আবার অ্যাক্টিভ করেছে । কোনো বন্ধু নেই তার,  সব আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে,  ব্লকও । 
 
        প্রথমে অভীককে আনব্লক করে মেধা,  প্রোফাইলটা খোলে ।
কী অদ্ভুত ছেলে! রিলেশনশিপ স্টেটাসে লিখে রেখেছে- ম্যারেড টু মেধা সরকার । কভারে ওদের দুজনের হাসিমুখের ছবি দেখে মনের  ভিতরটা ছটফট করে ওঠে মেধার। পাঠিয়েই ফেলে একটা রিকোয়েস্ট, টু অভীক রায় ।।

=========================
 
জয়তী ব্যানার্জি মুখার্জি 
বর্ধমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন