"আপনি বিশ্বাস করবেন কি-না জানি না, গতকাল সন্ধ্যার সময় ঠিক এই রুম-ফ্রেসনারের গন্ধটাই আমার নাকে ভেসে আসছিল। তারপর,মাথার ভিতরে সেই ঘোর-ঘোর ভাবটা জমাট বাঁধতেই দেখলাম, আপনার চেম্বারে এইরকম-ই আমি বসে আছি !" ডাক্তারবাবুকে মৃদু হাসতে দেখে তপোময় বিষন্ন গলায় বললো, আমার কথাগুলো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না স্যার !
ডাক্তারবাবু তপোময়ের কথাটা এড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনি আমার অ্যাড্রেসটা পেলেন কোত্থেকে ?
তপোময় বললো, আমি তো সেই স্বপ্নটার ভিতরেই আপনার চেম্বার, এই রাস্তা-ঘাট এমনকি, আপনাকেও পর্যন্ত দেখতে পেয়েছিলাম !
ডাক্তারবাবু বললেন, হুম !
"স্যার, এটা কি কোনো মেন্টাল-ডিজিজ !" তপোময় খুবই অসহায়ভাবে ডাক্তারবাবুকে কথাগুলো জিজ্ঞেস করলো। ডাক্তারবাবু এবার প্রেসক্রিপশনে খসখস করে কয়েকটা ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন, "দেখুন এখনই অতকিছু ভাবতে যাবেন না। " তারপর,প্রেসক্রিপশনটা তপোময়ের হাতে ধরিয়ে দেয়ে বললেন, চারটে ওষুধ লিখে দিলাম ! এগুলো নিয়ম করে মাস-দুয়েক খান আশাকরি, সব ঠিক হয়ে যাবে ! .... তারপর বরং সময় করে এসে একবার চেকআপ করিয়ে যাবেন।
ইদানীং, তপোময় তার বিছানায়, ঘরে এমনকি, আশেপাশে যেখানেই যায় সেখানেই প্রায় ও কাকের গন্ধ পায়। যদিও সে কাকের গন্ধ চেনে না কিংবা, কাকেদের আদৌ নিজস্ব কোনো গন্ধ আছে কিনা তপোময়ের তাও জানা নেই। তবুও, গন্ধটা কেন যেন কাকের বলেই ওর মনে হয় !
গত সপ্তাহে তপোময়ের বউ রেণুকা পোয়াতি অবস্থাতেই, "মন কেমন করছে" বলে কয়েক দিনের জন্যে বাপের বাড়ি গেছে ! সেই থেকে তপোময়ের যেন আর কিছুই ভালো লাগছে না ! বাড়িতে বিধবা বুড়ি মা। রান্নাঘর আর ঠাকুরঘর ছাড়া তিনি কোনো সাতেপাঁচেই থাকেন না। পরিবেশটা এতই সুনসান যে গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের খচখচ শব্দটাও পর্যন্ত বাড়িময় শিলনোড়ায় মশলা বাঁটা আওয়াজের মতোই শোনা যায় ! দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়ার পর রেণুকাবিহীন বাড়িতে ভীষণই একা-একা লাগছিল তপোময়ের ! অন্য সময় হলে সে স্কুলেই ব্যস্ত থাকতো কিন্তু, এখন তারও উপায় নেই ! তপোময় রেণুকা-র আলমারিটা খুলে প্রাণভরে ওর শায়া-শাড়ি, ব্লাউজ, পারফিউমের গন্ধ শুঁকতে লাগলো ! তপোময় ভাবলো রেণুকা-র অবর্তমানে ওর একটা শাড়ি বালিশের পাশে নিয়ে শুলেই, তার এই একাকীত্বভাবটা বোধহয় কেটে যাবে! তপোময় আলমারির থেকে রেণুকা-র একখানা শাড়ি টেনে বের করতেই, সেটার ভেতর থেকে ভাঁজ করা একটা কাগজ মেঝেতে ছিটকে পড়লো। কাগজটার ভাঁজ খুলতেই তপোময় দেখলো, সেটা আসলে একটা চিঠি । ঘরের বাতাসে কাক-গন্ধটা আবারও জমাট বাঁধতে শুরু করলো ! রেণুকা-র কোনো-এক' দন্ত্যস 'নামের প্রেমিক তাকে ভালোবাসা ভরা চিঠি লিখে তার পেটের বাচ্চাটার পিতৃত্ব সম্মন্ধে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছে! তপোময় চিঠিটা হাতের মুঠোয় নিয়ে একেবারে চিলেকোঠায় উঠে গেল। সেখানেও গন্ধটা তীব্র ! তপোময় চিলেকোঠার দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের অন্ধকার এক কোণে বসে রেণুকাকে লেখা ওর প্রেমিকের চিঠিটা মুঠোর মধ্যে তালগোল পাকাতে পাকাতে খুব ধীরে ধীরে ডেকে উঠলো, কা !
[][][]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন