Featured Post

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

ছবি
  বিঃ দ্রঃ আগামী ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য ভাষা দিবসের কথা মাথায় রেখে লেখা পাঠান। email: nabapravatblog@gmail.com  সূচিপত্র ফিচার।। গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য ।। লোকনাথ পাল প্রবন্ধ ।। মসুয়ার রায় পরিবার এবং বঙ্গসংস্কৃতি ।... প্রবন্ধ ।। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: কাব্যের দার্শনিক ও ন... কবিতায় সেতুবন্ধন (তৃতীয় অংশ) শিল্পবিপ্লবোত্তর কাল... রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিদ্রোহী প্রেমের কবিতা: ... কবিতা ।। এই মন ভালো নেই দিনে ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। জোছনা আলোর স্বপ্ন ।। তুষার ভট্টাচাৰ্য কবিতা ।। নিঃস্ব হবো ।। লালন চাঁদ কবিতা ।। ভালোলাগা  ।। আজিজ উন নেসা  গল্প ।। স্বীকারোক্তি ।। চন্দন দাশগুপ্ত কবিতা ।। শীতের দিন ।। প্রশান্ত কুমার মন্ডল কবিতা ।। শীতকাল ।। অঙ্কিতা পাল নাসির ওয়াদেনের দুটি কবিতা ভূতের লেখা ছড়া ।। বদরুল বোরহান কবিতা ।। ব্যস্ত ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছোটগল্প ।। লম্বুর স্বপ্নপূরণ ।। পরেশ চন্দ্র মাহাত কবিতা ।। সৎকার ।। সুমিত মোদক কবিতা।। শীত বৈচিত্র্য ।। সুমিতা চৌধুরী পুস্তক-আলোচনা ।। নিউটনের আপেল ও প্রেমিকা ।। অরবিন্... গল্প।। শান্তির পথে …...।। বন্দনা সেনগুপ্ত কবিতা ।। মা...

ছোটগল্প ।। প্রায়শ্চিত্ত ।। মিঠুন মুখার্জী

 

প্রায়শ্চিত্ত

মিঠুন মুখার্জী 


আজ থেকে দশবছর আগের কথা। শীতকাল গিয়ে সবে বসন্তকাল পড়েছে। সারা প্রকৃতিকে প্রাণময় করে তুলেছে একদল কোকিলের ডাক। চারিদিকের পরিবেশ নানান ফুলের গন্ধে আমোদিত হয়ে উঠেছে। হালকা শীতের আমেজ তখনও বিরাজমান। হোলি উৎসবের কয়েকটি দিন বাকি। প্রফেসর শুভদীপ সরকার তার একমাত্র মেয়ে শ্রাবন্তীকে বললেন--- "এবারের দোল উৎসবটা ভাবছি শান্তিনিকেতনে কাঠাব। বছর দশেক হয়ে গেল শান্তিনিকেতনে দোল উৎসবে যাই না। তোর যখন দশ বছর বয়স তখন আমরা শেষবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। খুব মজা হয় ওখানে। কবিগুরুর বিচরণের জায়গাগুলো আমার খুবই ভালো লাগে। কলেজে দুদিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদনপত্র দুদিনবাদেই দিয়ে দেব। যাওয়া-আসা নিয়ে এবারের ভ্রমণটা আমাদের তিন দিনের।" বাবার কথা শুনে খুব খুশি হয়ে কুড়ি বছরের শ্রাবন্তী সরকার তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে--- " খুব ভালো বাপি। আমি খুব খুশি। শান্তিনিকেতনে যাব ভেবে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। শাড়ি পড়ে রঙ খেলব, কী মজা হবে। ভাবতে পারছি না। দারুন অনুভুতি হচ্ছে আমার। আমার ভালো বাপি, আমার সোনা বাপি।" মেয়ের কথা শুনে অধ্যাপক শুভদীপ সরকার হেসে দেন। তারপর মেয়ে শ্রাবন্তীকে বলেন-- " তোর খুশির জন্য আমি সব করতে পারি। তুই যাতে এবারের হোলিতে খুব আনন্দ করতে পারিস তাই আমি এই আয়োজন করেছি। তুই খুশি হলেই আমি খুশি।"
শ্রাবন্তী বাবার কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার বিষয় সমাজবিজ্ঞান। বাবা শুভদীপ সরকার বাংলা বিভাগের প্রধান। শ্রাবন্তীর যখন দুই বছর বয়স তখন তার বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কারণ তার বাবার নাকি কলেজের এক কলিগের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক আছে। কিন্তু পরে দেখা যায় তার মার অভিযোগ একেবারে মিথ্যা। বিয়ের আগে তার মার একজন উকিলের সঙ্গে প্রেম ছিল। তার জন্যই তার মা বাবাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুধু বাবাকেই নয় তাকেও নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তারপর বিয়ে করেছিলেন সেই উকিলকে। দেখতে দেখতে আজ আঠারোটি বসন্ত পার হয়ে গেছে। ভালো মন্দ অনেক ঘটনাই ঘটেছে তাদের প্রত্যেকের জীবনে। শুভদীপ সরকার কোনো দিন তার মেয়েকে মায়ের অভাব বুঝতে দেন নি। তিনি একাধারে বাবা-মা উভয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। মেয়ে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেছেন--- " তোর মা আমাদের ছেড়ে বহুদূর চলে গেছেন, আর কোনদিন আমাদের কাছে ফিরে আসবেন না। দুজনের ভুল বোঝাবুঝির কারনে সম্পর্কের ভাঙন ধরেছিল। আমিই তোর মা, আমিই তোর বাবা।" তিনি বাড়িতে একজন বিশ্বস্ত ভদ্রমহিলা রেখেছিলেন  মেয়ের দেখাশোনা, রান্নাবান্না ও বাড়ির কাজ করার জন্য। তার জন্য তাকে মাসে সাত হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতেন তিনি। এমন সৎ ও ভালো কাজের মানুষ এখনকার দিনে তেমন দেখাই যায় না। দেখতে দেখতে তারও কাজের বয়স ষোলোবছর হয়ে গেল। অধ্যাপক শুভদীপ সরকারের পত্নী চলে যাওয়ার পর অনেকেই মেয়ের দিকে তাকিয়ে তাকে পুনরায় বিয়ে করতে বলেছিলেন , কিন্তু তিনি সৎ মায়ের আচরনের কথা চিন্তা করে তা করেন নি। প্রথম দিকে মেয়েকে সামলাতে খুবই কষ্ট হয়েছে , অনেকেই তাকে দেখার জন্য এসেছিল কিন্তু বেশিদিন কেউ কাজ করেন নি। তারপর একদিন এই ষোলো বছর কাজ করা  মাসিটি কাজের খোঁজে তাদের বাড়িতে আসে। সেই কাজের মাসিটি শ্রাবন্তীকে   মায়ের ভালোবাসা কম দেয় নি। কেবল জন্ম দিলেই মা হয় না, মায়ের কর্মও করতে হয়। পালনকারী ব্যক্তিও মায়ের সমতুল্য।
এদিকে শ্রাবন্তীর মা যে উকিলকে বিয়ে করেছিলেন তিনি একটা পথদুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর ঔরষে শ্রাবন্তীর মায়ের গর্ভে  যমজ পুত্র সন্তান হয়। বতর্মানে তাদের বয়স দশবছর। উকিল স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলেকে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি। তাই বাধ্যহয়ে একটি বেসরকারি অফিসে কাজ নেন। শ্রাবন্তীর দিদা তার সৎ ভাইদের দেখাশোনা করেন। তিনিও খুবই অনুতপ্ত। আজ এতবছর পর শ্রাবন্তীর মা সুরভির মনে হয়---" এমন জীবনের কী দরকার ছিল! সুখে থেকেও সে নিজের সুখী সাংসারিক জীবনকে গলাটিপে হত্যা করেছিল। খালি চোখে যেটা সুন্দর মনে হয় সেটা প্রকৃত সুন্দর নাও হতে পারে। শুভদীপ ও শ্রাবন্তীকে ছাড়ার শাস্তি ভগবান তাকে দিয়েছেন। এরজন্য সে অনুতপ্ত।"
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়। রঙ খেলার দুদিন আগে শ্রাবন্তী তার বাবার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে যায়। শান্তিনিকেতনের কাছেই একটা ঘর তিন দিনের জন্য বুকিং করেন শ্রাবন্তীর বাবা। চারিদিকে প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য দুচোখ ভরে উপলব্ধি করেন তারা। রবিঠাকুর যেখানে বসে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দিতেন, তার প্রিয় ছাতিমগাছ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসার ঘর, মিউজিয়াম  রঙ খেলার আগের দুইদিন সমস্তই ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন তারা ‌। অধ্যাপক শুভদীপ সরকারের কলেজ জীবনের নস্টালজিক অনুভূতি মাঝে মাঝেই জেগে উঠছিল। তিনি কলেজ জীবনে অললিকা নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসতেন। কলেজ থেকে একবার তাদের শান্তিনিকেতনে নিয়ে এসেছিলেন কলেজের শিক্ষকেরা। তখন শুভদীপ ও অললিকা দুজনেই এসেছিলেন। সেই প্রথম তাদের দুজনের শান্তিনিকেতনে আসা। খুবই আনন্দ করেছিলেন সেই সময়। তখনও হোলি খেলার দিন ছিল। অললিকা হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিলেন ও অধ্যাপক শুভদীপ সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা। হোলির দিনের সেই আনন্দ আজও ভোলেন নি তিনি। অললিকার ফর্সা দুগালে শুভদীপ লাল আবির লাগিয়েছিলেন আর শুভদীপের গালে অললিকা হলুদ আবির। শুভদীপের দিকে তাকিয়ে অললিকার সেই হাসি ও চোখের চাওনি আজও তিনি ভোলেন নি। অললিকা ও তিনি যেখানে যেখানে গিয়েছিলেন সেখানে সেখানে মেয়ে শ্রাবন্তীকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দেখেছিলেন অনেককিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার ও অললিকার সম্পর্কও একটি সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে কেটে যায়। তারপর কলেজে চাকরি পাওয়ার দশবছর পর শ্রাবন্তীর মাকে বিয়ে করেন তিনি। অললিকা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না।
পরদিন ছিল হোলি। শ্রাবন্তী একটি সাদা শাড়ি ও অধ্যাপক শুভদীপ শ্রাবন্তীর মার দেওয়া একটি হলুদ পাঞ্জাবী ও সাদা পাজামা পড়েছিলেন। শ্রাবন্তী জানত বাবাকে মা এই পাঞ্জাবিটা দিয়েছিলেন। বাবাকে মায়ের দেওয়া পাঞ্জাবি পড়তে দেখে সে বুঝতে পারে বাবার মায়ের প্রতি ভালোবাসা এখনও আছে, শুধু মুখে প্রকাশ করতে পারেন না। বিভিন্ন নাচগানের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকবছর শান্তিনিকেতনে হোলি উৎসব পালন করা হয়। ডান্ডিয়া নৃত্য এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। সকলেই শুধুমাত্র আবির নিয়ে হোলি উৎসবে সামিল হতে পারে। বড়দের পায়ে আবির দিয়ে নমস্কার করার একটি চল আছে এখানে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এই উৎসবকে লাইভ টেলিকাস্ট করা হয়। শ্রাবন্তী প্রথম বাবার পায়ে আবির দিয়ে হোলির রঙখেলা শুরু করে। বাবা শুভদীপ সরকার মেয়ের কপালে একটি চুমু খেয়ে বলেন---" দীর্ঘজীবী হ মা। একশো বছর আয়ু হোক তোর। মানুষের মঙ্গলে সবসময় নিয়োজিত থাকিস।" বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শান্তিনিকেতনের পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা  মোট একশো একটি বৃক্ষ রোপন করেন। সকলে এই শুভ উদ্যোগকে হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান। শ্রাবন্তী ও অধ্যাপক শুভদীপ একটি দোকান থেকে দুটো নারকেলের চারা কিনে রোপন করেন। এরপর রঙ মাখানো শুরু হয়। চারিদিকের আকাশ ও মাঠ দেখতে দেখতে সাত রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য ভোলার নয়। দেখতে দেখতে সকলের সাদা হলুদ জামা-কাপড় আবিরের বিভিন্ন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। ও দিকে মাইকে বসন্তের বিভিন্ন রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতে থাকে। 'নীল অঞ্জনঘন পুঞ্জ ছায়ায় সম্বিত অম্বর', 'বাদল বাউল বাজায় বাজায় বাজায় রে, 'ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল' ইত্যাদি। গানের তালে তালে শ্রাবন্তীও নৃত্য করে। মনের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব এক মুহূর্তের মধ্যে সে ভুলে গিয়ে অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠে। মেয়েকে আনন্দ করতে দেখে অধ্যাপকও খুব খুশী হন। 
রঙ খেলার আনন্দ উপভোগ করতে করতে শ্রাবন্তী দেখে কিছুটা দূরে একটি সুন্দর দেখতে হ্যানসাম ছেলে বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। তার চোখে মুখে লজ্জা ফুটে উঠছে। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেলে যেমন অনুভূতি হয় ঠিক তেমনি। বাবাকে শ্রাবন্তী বিষয়টি জানায়। বাবা তাকে বলেন--- "মেয়ে আমার বড় হয়েছে বুঝতে পারছি। অনেক ছেলেই এখন তোর যৌবনে মজে অনেকরকম আচরন করবে কিন্তু তুই একেবারেই গুরুত্ব দিবি না। দেখবি যখন বুঝতে পারবে তুই কোনো গুরুত্ব দিচ্ছিস না ওকে, তখন‌ তোর কাছ থেকে নিজেই সরে যাবে।" বাবার কথাশুনে শ্রাবন্তী বলে---- "ছেলেটাকে আমি কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে। ও আমায় চেনে নিশ্চয়। নতুবা এভাবে হাসবে কেন?" অনেক চিন্তা করে শ্রাবন্তী মনে করে এই ছেলেটি তার ফেসবুকের বন্ধু। এর নাম শুভদীপ দে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করে শ্রাবন্তী দেখে শুভদীপের বাড়ি শান্তিনিকেতনে। সে প্রথমে ভাবে, আমি এখানে এসেছি ও জানলো কি করে। কিছুক্ষণ পরে ছেলেটিকে আবার দেখতে পায় শ্রাবন্তী। এবার বাবাকে পুরো ঘটনাটি বলে সে। বাবা শ্রাবন্তীকে বলেন--- " শুভদীপকে এখানে ডেকে আন। ওর সঙ্গে একটু আলাপ করি। আশেপাশের জায়গাগুলো ওর নিশ্চয় চেনা। ওর সঙ্গে বিকেলে একটু নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখব।" বাবার কথা মতো শ্রাবন্তী শুভদীপের কাছে গিয়ে আলাপ করে। এবং লাজুক দৃষ্টিতে বলে --- " বাবা আপনাকে একটু ডাকছেন। আপনি অনুগ্ৰহপূর্বক একটু শুনে যাবেন। " শ্রাবন্তীর বাবার কাছে গিয়ে শুভদীপ প্রথমেই দুই পায়ে আবির দিয়ে নমস্কার করে। তারপর বলেন, কাকু ভালো আছন। সৌজন্যতাবশত বলে হ্যা। তারপর শ্রাবন্তীর বাবা শুভদীপকে বলেন--- " মেয়ের মুখে শুনলাম তুমি ওর ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং তোমার বাড়ি এখানে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল আমাদের দুজনের নাম এক। অর্থাৎ আমরা মিতে। তুমি আমাদের আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুড়িয়ে দেখাবে? অনেকদিন আগে এখানে এসেছিলাম কিন্তু রাস্তাঘাট সব ভুলে গেছি।" এরপর শুভদীপ বলে--- " অবশ্যই, আমার কোন সমস্যা নেই। আপনারা আমাদের অতিথি। আপনাদের ইচ্ছাপূরণ করা আমার দায়িত্ব । তাছাড়া শ্রাবন্তী আমার বন্ধুসম, আমি আজ বিকেলে আপনাদের সঙ্গে ঘন্টা দুয়েক থেকে আপনাদের ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা করব।" এরপর শুভদীপ দে অধ্যাপক শুভদীপ সরকারের পায়ে আবীর দিয়ে প্রনাম করে এবং নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে চলে যায়। শ্রাবন্তীর বাবা তাকে মনে মনে আশীর্বাদ করেন। তিনি ভাবেন --- " আজকালকার দিনে এরকম ছেলে দেখা যায় না। নিশ্চয় এর পিতা - মাতার সু-সংস্কার পেয়েছে ছেলেটি। এ রকম ছেলেই আমার শ্রাবন্তীর জন্য প্রয়োজন। দেখি ওর বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে।" এরপর অধ্যাপক শুভদীপ শ্রাবন্তীকে বলেন--- " কীরে মা এই ছেলেটি কী করে তুই জানিস? মানে চাকরি - বাকরি করে কিছু?" বাবার প্রশ্নের জবাবে মেয়ে বলে --- " আমি যতদূর জানি ও একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। পরিবারে বাবা - মা ও বোন আছে। বাবা বিশ্বভারতীর অধ্যাপক।" মেয়ের কথা শুনে অধ্যাপক শুভদীপ সরকার বুঝতে পারেন তার মেয়ে ছেলেটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। হয়তো ওদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে। নতুবা একই জায়গায় এমনভাবে দেখা হয়! নাকি এই দেখা হওয়াটি কোনো কাকতালীয় বিষয়।
রঙখেলার দিন বিকেল বেলা পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো ফোন করে অধ্যাপক শুভদীপ সরকার শুভদীপ দে-কে ডেকে নেন। তারপর তিনজন মিলে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। যেহেতু রঙ খেলার দিন সেহেতু সেই সময়ও কোথাও কোথাও ছেলে-মেয়েরা রঙ খেলছিল। শুভদীপ দে তাদের দুজনকে প্রথমে মজে যাওয়া কোপাই নদী দেখাতে নিয়ে যায়। তারপর পাশের একটি আদিবাসী গ্ৰামে নিয়ে গিয়েছিল। গ্ৰামের মানুষ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে শ্রাবন্তী ও তার বাবা খুবই খুশি হন। এরপর তারা কংকালীতলা মন্দিরে যান। সেই সময় সন্ধ্যার পুজো চলছিল। তারা তিনজন মিলে পুজো দেন। এই মন্দিরটি একান্ন সতীপীঠের একটি। সেখানে ঘন্টা খানিক সময় কাটিয়ে শুভদীপ তাদের দুজনকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে ঢুকে অধ্যাপক শুভদীপ সরকার অবাক হয়ে যান। হঠাৎ সোফায় বসে পড়েন তিনি। শ্রাবন্তী তাকে জিজ্ঞাসা করে--- " তোমার কী হয়েছে বাবা? শরীরটা খারাপ লাগছে? জল খাবে?" শুভদীপ দে তাড়াতাড়ি একগ্লাস জল এনে তার মাথায় ও চোখে - মুখে দেয়। এরপর একটু খাইয়ে দেয় । অধ্যাপক শুভদীপ সরকার শুভদীপ দে-র মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলেন--- " তুমি অললিকার ছেলে? তোমার মা কবে মারা গেল? তোমার মামার বাড়ি কলকাতায়? এরপর অললিকার মালা দেওয়া ফটোটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন অধ্যাপক। শুভদীপ দে বেশ অবাক হন অধ্যাপকের এই আচরনে। সে বলে ---" আপনি আমার মাকে চেনেন? এর আগে আমি আপনাকে কখনো দেখিনি।" কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর অধ্যাপক বলেন --- " আমি আর তোমার মা একই সঙ্গে কলেজে পড়তাম। আমাদের দুজনের একই বিষয় ছিল। পড়াশোনার সূত্রে তোমার মার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল।" এই কথা বলার সময় গলা কেঁপে গিয়েছিল অধ্যাপক শুভদীপ সরকারের। অললিকার ছেলেকে তো বলা যায় না তার মার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল তার। তবে তার গলা কাঁপতে দেখে ও চোখ চিকচিক করতে দেখে মেয়ে পুরো বিষয়টি বুঝে গিয়েছিল। এরপর শুভদীপ সরকার শুভদীপ দে-র কাছে জানতে চান তার মা কিভাবে মারা যান। শুভদীপ দে বলে --- " আমার বাবা তখন চাকরিসূত্রে কাশ্মীরে থাকতেন। আমি ছিলাম স্কুলে। বাড়িতে কেউ ছিলেন না। হঠাৎ মার হার্ট অ্যাটাক হয়। পাড়ার লোকে কেউ বুঝতেই পারেন নি। আমি যখন স্কুল থেকে আসি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। শুধু একটু সহযোগিতার অভাবে আমার মা অকালে চলে গেলেন। বাবা মনের কষ্টে চাকরি ছেড়ে দিলেন। " এই কথা বলতে বলতে শুভদীপ দে-র গলা কেঁপে উঠলো, চোখে জল দেখা দিল। আপন হারানোর যন্ত্রনা অনুভব করেন অধ্যাপক। তাঁর দুচোখেও জল দেখা যায়। নিজেকে কোনক্রমে সামলে নিয়ে তিনি বলেন --- " তবে আজ আমরা উঠি। এখানে কাল পর্যন্ত আছি। সুযোগ পেলে এসো ডলফিন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে। অনেক কথা হবে।" তারা হোটেলে ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায় এমন সময় শুভদীপের বাবা ঘরে ঢোকেন। তিনি শুভদীপের কাছে সব শুনে বলেন--- " আপনি অললিকার বন্ধু, প্রথম আমাদের বাড়িতে এলেন, খালি মুখে চলে যাবেন। বসুন মশাই একটু চা করি। মামনি তুমিও বসো। " দুজনেই একটু ইতস্তত করছিলেন, কিন্তু শুভদীপের বাবার অনুরোধ ফেলতে পারলেন না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি নিজে চা করে আনলেন। চা খেতে খেতে অনেকক্ষণ গল্প করলেন তারা। এদিকে শুভদীপের শ্রাবন্তীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি কর্নেল রামতনু ঘোষাল লক্ষ করলেন। শ্রাবন্তীকে প্রথম দেখে রামতনু বাবুর ভালোই লাগে। তিনি মনে মনে ঠিক করে নেন একে আমার শুভর বউ করতে হবে। তবে তিনি তখনই কিছু বলেন না। এরপর শুভদীপ শ্রাবন্তী ও তার বাবাকে একটি টোটোতে তুলে দিয়ে বলে দেয় ডলফিন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দিতে ‌।
পরদিন বিকালে শুভদীপ ওর বাবাকে নিয়ে অধ্যাপকদের হোটেলে যান। শ্রাবন্তী পাশের দোকান থেকে চা ও বিস্কুটের অর্ডার দেয়। এবার শ্রাবন্তীর শুভদীপের প্রতি সলজ্জ তাকানো অধ্যাপকের চোখে পড়ে। তিনি এবার বুঝতে পারেন তার মেয়ে ও শুভদীপের সম্পর্কে তার সন্দেহ পুরোপুরি সত্যি। শুভদীপকে নিয়ে যখন শ্রাবন্তী হোটেলের পাশের দোকানে চা আনতে গিয়েছিল তখন অধ্যাপক কর্নেলের সঙ্গে তাদের মনের কথা বলে নেন। দুজনেই এই সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্মতি জানান। কর্নেল বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় অধ্যাপককে বললেন --- " তাহলে ওই কথাই রইলো। বাকি কথা ফোনে বলব। শুভ কাজে দেড়ি করতে নেই ।" 
শুভদীপরা চলে যাওয়ার পর শ্রাবন্তীর বাবা তার ও কর্নেলের মধ্যে হওয়া কথাগুলো শ্রাবন্তীকে জানান। লজ্জায় শ্রাবন্তীর মুখ লাল হয়ে যায়। কর্নেল বাড়ি গিয়ে শুভদীপকে সব জানালে তারও একই অবস্থা হয়। ক্ষণিকের মধ্যে তারা দুজন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পরদিন সকালে ট্রেনে করে শ্রাবন্তী ও তার বাবা কলকাতায় ফিরে আসে। স্টেশনে তাদেরকে ছাড়তে শুভদীপ দে ও তার বাবা এসেছিলেন। ট্রেন ছাড়ার সময় সাময়িক শুভদীপ ও শ্রাবন্তীর মুখে নেমে এসেছিল একরাশ অন্ধকার। প্রিয় বিদায়ের একটা যন্ত্রনা ছিল তাদের মনে।
কলকাতায় ফিরে আসার দুইদিন পর রাত্রে খাওয়ার সময় হঠাৎ অধ্যাপক শ্রাবন্তীকে বলেন--- " শোন্ মা তোকে আজ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানাব। আমার মনে হলো আজ তোকে জানান প্রয়োজন। তোর মা মারা যান নি। সুরভি আজও বেঁচে আছেন। তার একটি ভুল বোঝাবুঝিতে আমাদের সম্পর্ক কেটে যায়। তখন তুই খুব ছোট। তোর মা একজন উকিলকে বিয়ে করেছিল। তিনি আজ বেঁচে নেই। তোর মা তোর যমজ সৎভাইদের নিয়ে আজ এই কলকাতাতেই অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তুই চাইলে মায়ের সাথে দেখা করতে পারিস। আজ আর তোকে আমি বাঁধা দেব না।" বাবার কথা শুনে শ্রাবন্তীর চোখ দুটো আনন্দাশ্রুতে ভরে যায়। এরপর মনে সাহস নিয়ে শ্রাবন্তী বাবাকে বলে ---- "বাবা তোমায় একটা কথা বলছি। জানি আমার বলাটা ঠিক হবে না। তবুও আজ আমায় বলতে হবে। আমি শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে তুমি একেবারে একা হয়ে যাবে।তাই বলছিলাম পুরনো দিনের কথা ভুলে গিয়ে মাকে নিয়ে আসলে হয় না। তাকে ক্ষমা করে দাও। সেও হয়তো আজও অনুতপ্ত। কিন্তু লজ্জায় আসতে পারে না আমাদের কাছে।" মেয়ের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন অধ্যাপক শুভদীপ সরকার। তারপর বলেন --- "সে যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমাদের সংসারে আসতে চায় তবে আমার কিছু বলার নেই। প্রথমে ভাবতাম ওকে কোনো দিন আমি ক্ষমা করব না। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পেরেছি একাকিত্বের জীবনের থেকে একসঙ্গে থাকা ভালো। মানুষই ভুল করে। আগের মতো না হলেও একসঙ্গে তো বাকি জীবনটা কাটাতে পারব।" বাবার কথা শুনে মেয়ে বুঝতে পারে বাবা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নরম হয়ে গেছেন। তার একাকিত্ব দূর করার ব্যবস্থা এখনি তাকে করতে হবে।
সপ্তাহ খানেক বাদে শান্তিনিকেতন থেকে শুভদীপ ও তার বাবা শ্রাবন্তীদের বাড়িতে আসেন। ঠিক হয় শ্রাবন্তী বি.এ পাশ করলে তারা তাদের চারহাত এক করে দেবেন। খাওয়া - দাওয়া, গল্প, হাসাহাসি চলে সেই দিন। শুভদীপ দে ও শ্রাবন্তী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঘুরতে যায়। শ্রাবন্তী শুভদীপকে তার মায়ের কথা জানায়। তারপর বাড়ি ফেরার সময় শুভদীপকে নিয়ে শ্রাবন্তী মায়ের কাছে যায়। দুদিন আগে মায়ের ঠিকানা সে বাবার কাছ থেকে নিয়েছিল। শ্রাবন্তী যখন মার বাড়িতে পৌঁছায় তার কিছুক্ষণ আগেই সুরভি অফিস থেকে এসেছেন। কলিং বেল টেপার পর সুরভি এসে দরজা খোলেন। শ্রাবন্তীকে ও শুভদীপকে দেখে বলেন --- " কে তোমরা? কাকে চাই?" মাকে দেখে শ্রাবন্তী একমুহুর্ত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তারপর বলে --- " আপনিই সুরভি সরকার, মানে সুরভি ভক্ত?" সুরভি কথাটা শুনে একটু অবাক হয়ে বলেন হ্যা আমি সুরভি ভক্ত। তোমরা কারা? শ্রাবন্তী বলে --- " আমি শ্রাবন্তী সরকার, অধ্যাপক শুভদীপ সরকারের মেয়ে। " এই কথা বলতে গিয়ে দুচোখে জল দেখা যায় তার। শুভদীপ সরকারের নাম শুনতেই তিনি বুঝতে পারেন এটা তার মেয়ে শ্রাবন্তী। মুহূর্তের মধ্যে দুচোখে অশ্রুধারা নেমে আসে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সুরভি। মা ও মেয়ে দুজনকে কাঁদতে দেখে শুভদীপের  মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। সুরভি তার মেয়ে ও শুভদীপকে ঘরে ঢুকিয়ে বসতে দেয়। মনের দুঃখের সঙ্গে সঙ্গে সুরভি নিজের কৃতকর্মের জন্য কিছুটা লজ্জা পান। কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। শ্রাবন্তী বেশি ভনিতা না করে শুভদীপের পরিচয় দেয়। তারপর বলে---" মা, এক বছর পর আমার বিয়ে, তুমি ভাইদের নিয়ে বাড়ি চলো। আমি চলে গেলে বাবা একেবারে একা হয়ে যাবে। বাবাই তোমাকে নিতে পাঠালেন। অতীতের সব বাবা ভুলে গেছে, তোমাকেও সব ভুলে যেতে বলেছে। তুমি আর না করো না। তোমার ভালবাসা থেকে আমি আর বঞ্চিত হতে চাই না। অনেক কষ্ট পেয়েছি এতবছর।" মেয়ের কথা শুনে প্রথমে আপত্তি করলেও ছেলেদুটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুরভি বলেন --- " কোন্ মুখ নিয়ে আমি তোর বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াব। আমার সেই সাহস নেই। তাছাড়া তোর বাবা আমাকে ঠকায় নি, আমি ওনাকে ঠকিয়েছি। তবে ভাইদের কথা চিন্তা করে আমাকে যেতে হবে। তোর বিয়ের আগে আমি যাব। বাবাকে বলিস তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন।"
একবছর দেখতে দেখতে কেটে যায়। অনেক কিছুই এই একবছরে ঘটে যায়। শ্রাবন্তী বি.এ পাশ করে প্রথম শ্রেণীতে। শ্রাবন্তীর মার কাজটি চলে যায়। অধ্যাপক শুভদীপ সরকার সুরভির সঙ্গে দেখা করেন। তিনিও ছেলেদের নিয়ে সুরভিকে বাড়ি ফিরে আসার কথা বলেন। সুরভিও তাকে কথা দেন মেয়ের বিয়ের আগে তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন। অবশেষে মেয়ের বিয়ের শুভ মুহূর্ত চলে আসে। বিয়ের তিন দিন আগে সুরভি শ্রাবন্তীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে দুই ছেলেকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। চিঠিতে তিনি লেখেন ---- "স্নেহের শ্রাবন্তী, তুমি আর তোমার বাবা অনেক মহৎ মনের মানুষ। তাই আমার জঘন্য কৃতকর্মের পরও তোমরা আমায় ক্ষমা করে দিয়ে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছ। কিন্তু আমি এখনো পর্যন্ত নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারি নি। প্রতিটি মুহূর্তে আমি আমার কর্মের জন্য নিজের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া আমার কৃতকর্মের ফল তোমার দুই ভাইয়ের দায়িত্ব তোমরা কেন নেবে। তাদের মানুষ করার দায়িত্ব আমার। তাই ওদের নিয়ে আমি চললাম। তোমার বিয়ে খুব ভালোভাবে হোক। আমার আশীর্বাদ সবসময় তোমার সঙ্গে থাকবে। তোমার বাবাকে বুঝিয়ে বোলো। উনি যেন আমার জন্য কষ্ট না পান। পারলে তোমার এই হতভাগ্য মায়ের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করে দিও। ইতি-- তোমার মা সুরভি।" 
এদিকে মা আসছেন না দেখে বিয়ের আগের দিন শ্রাবন্তী মাকে ও ভাইদের আনতে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখে দরজায় তালা দেওয়া ও দরজার নীচে একটি ইট চাপা দিয়ে চিঠিটি রাখা। চিঠিটি পড়ে শ্রাবন্তীর দুচোখ দিয়ে জল ঝরে পড়ে। সে বুঝে উঠতে পারে না কী করবে। মাকে খুঁজে পাওয়ার কোনো উপায়ও তার কাছে থাকে না। সে বাড়ি ফিরে যায়। মা চলে যাওয়ার কথাটি চেপে রাখার চেষ্টা করেও সে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে সব বলে ও চিঠিটি তাকে দেয়। অধ্যাপক শুভদীপ সরকার চিঠিটি পড়ে বুঝতে পারেন জীবন কত জটিল। আমরা চাইলেই অতীতের সবকিছু ভুলে এগিয়ে যেতে পারি না। নিজের ভুল বার বার বিবেককে দংশন করে। তাই আমরা চাইলেও সব মেনে নিতে পারি না। সুরভিও পারে নি। তাইতো নিজের কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করার পথ সে বেছে নিয়েছে।

=======================
মিঠুন মুখার্জী
C/O-- গোবিন্দ মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252
মোবাইল+হোয়াটসঅ্যাপ: 9614555989



মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান