শ্বেত পদ্ম
অঞ্জনা গোড়িয়া সাউ
টিং টং রিংটা বেজে উঠল । পুষ্পিতা এই কলটার অপেক্ষায় উৎসুক হয়ে ছিল। "অপেক্ষা করো । আমি আসছি ।" নির্দ্বিতায় বলে, ফোনটা কেটে দিল। পুষ্পিতা আয়নার সামনে আর একবার ভালো করে তাকাল।
লাল শাড়ি ম্যাচিং ব্লাউজ আর ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। ঠিক ঠাক লাগছে তো ?মনে মনে বলল।আয়নার অপ্রান্ত থেকে কেউ বলে উঠল , কলঙ্কিনী বধূ হতে চাও ? নাকি রাধিকা ?
পুষ্পিতা একদম ভয় পেল না । তীব্র কন্ঠে বলল ,"আমি ওর বউ " হতে চলেছি। কোন অন্যায় করছি না । ছবিটা অদৃশ্য হয়ে গেল ।
পুষ্পিতার মাথার সিঁদুরটা আলতো করে ঢেকে দিল চুলে ।
হাতে একটা স্ট্রাইলিস্ট নোয়া , এঁয়োস্ত্রীর চিহ্ন।
সকল বন্ধন মায়া মমতা মুক্ত করে আজ সে যাবেই অয়নের কাছে ।
দীর্ঘ ১৫ বছর বন্দী সংসারের খাঁচায় । ওড়বার খুব ইচ্ছে সামনের আকাশটাতে ,শিকল বাঁধা পাখি । নিজের ইচ্ছা গুলিকে দমিয়ে রেখে ছিল এত দিন ।
একদিন বাজার করতে গিয়েই আলাপ হয় অয়নের সঙ্গে । দুব্যাগ বাজার নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল ওর গায়ে। অয়নই হাতটা ধরে তুলে ছিল ।
রান্নাকরা ,বাজার করা শ্বশুরের সেবা ছেলেমেয়ের দেখাশোনা করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছিল পুষ্পিতা । অয়নকে বন্ধু হিসাবে পেয়ে আঁকড়ে ধরল।
স্বামী ওর চেয়ে বছর ১৫ বড় হবে । তবু পতিসেবার কোন ঘাটতি ছিল না ।বছরে একবারই স্বামী আসে বিদেশ থেকে । পূজার ছুটিতে তাই খুশির হাট । তখন ও সোহাগ করার সময় থাকে না ।
পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে আর সব দিক সামলাতেই সময় কেটে যেত । আবার ফিরে যায় সেই বিদেশ ।
পুষ্পিতার ভালোবাসা রূপ যৌবন গুমরে কাঁদে ।আজ তাই সে কোন কিছুর পরোয়া করে না ।
অয়নকে ভালোবাসে প্রাণের চেয়েও অধিক ।
পরকীয়া নয় ,প্রেম নয় ,সত্যিকারের স্ত্রীর মর্যাদা দিতেই অয়ন ডেকেছে কাছে ।
আজ পড়িয়ে দেবে মায়ের পায়ের সিঁদুর । ভরিয়ে দেবে হৃদয় । তাইতো এত সাজ ।
সব ভয় ভুলে অয়নের সম্মুখে উপস্থিত ।
অয়ন দুচোখ ভরে দেখল তাঁর প্রিয়াকে,তার ভালোবাসাকে ।
জড়িয়ে ধরতে গিয়েও সরিয়ে নিল হাত ।
পাদুটি রাখল নিজের হাতে । শ্বেত পদ্ম আর গঙ্গাজলে পা ধঁইয়ে দিল পুষ্পিতার।
হাতে দিল গীত গোবিন্দ। দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল জল ।
পুষ্পিতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ।
============
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন