গোপাল ভাঁড়ের অজানা সত্য
লোকনাথ পাল
আজ কথা বলব নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে, যাকে এক কথায় আমরা সকলেই চিনি।হ্যাঁ, তিনি হলেন আমাদের সকলের প্রিয় হাসির রাজা, রসিক রাজা, জ্ঞানের রাজা গোপাল ভাঁড়। এই নামটি শুনলেই বাঙালির মনে হাসির ঝিলিক খেলে যায়, তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে কত বই, বানানো হয়েছে বহু কার্টুন, আর যুগ যুগ ধরে কতই না মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে আমাদের সবার প্রিয় গোপাল ভাঁড়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে গোপাল ভাঁড় , কত বার নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন, অথচ ভালোবাসার টানে কখনও তাকে শাস্তি দেননি মহারাজ, তবে যদি বলি গোপাল ভাঁড় নামে আদৌ কেউ ছিল কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, আর যদি সত্যিই কেউ থাকত, তাহলে এত জনপ্রিয় ব্যাক্তিটি কোথায় হারিয়ে গেল !! কি তার রহস্য ! ঐতিহাসিক নগেন্দ্রনাথ দাস বলেছেন গোপালের সম্পূর্ণ নাম ছিল গোপাল চন্দ্র নাই। "নাই" অর্থাৎ নাপিত। নাই ছিল গোপালের পদবী, তাই হতেও পারে গোপাল ভাঁড় ছিলেন নাপিত বংশোদ্ভুত। তবে কোন কোন জায়গায় গোপালের নাম গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক বলা হয়েছে।ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে গোপালের একটি মেয়ে ও দুটি ছেলে ছিল। মেয়ের নাম ছিল রাধারানী এবং দুই ছেলের নাম ছিল রমেশ ও উমেশ।মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে এসে রাজ ভান্ডারী পদে নিযুক্ত করেন এবং তাকে গোপাল চন্দ্র ভান্ডারী নামে ভূষিত করেন। যা পরবর্তীকালে ভাঁড় নামে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ সুকুমার সেন এই প্রসঙ্গে বলেছেন গোপাল সম্পর্কে আধুনিক বাঙালির কৌতুহল থাকার ফলে বাস্তব অথবা কল্পিত ব্যক্তিটি সম্পর্কে যে জনশ্রুতি জাতীয় ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে তার বীজ হচ্ছে ভাঁড় নামের অংশটি । গোপাল ভাঁড়ের বাক্য প্রয়োগে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় ছিল, ভাগবত ও পুরাণে তার যথেষ্ট দখল ছিল।এই গোপাল ভাঁড়ের নাম জনপ্রিয় হয় ১৯০০ শতকের প্রথম দিকে। সেই সময় কলকাতার বটতলায় গোপালের নামে প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ঐতিহাসিক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন কৃষ্ণচন্দ্র রায় শঙ্কর তরঙ্গ নামে এক ব্যক্তিকে তার দেহরক্ষক হিসেবে রেখেছিলেন,যিনি ছিলেন ক্ষুরধার বুদ্ধি সম্পন্ন ও একজন সচেতন ব্যাক্তি , যাকে পরবর্তীকালে গোপাল ভাঁড় নামে ঐতিহাসিকরা আখ্যা দিয়েছেন। রাজনীতি ও সমাজনীতিতে গোপাল অতি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ইতিহাস থেকে গোপালের বিয়ে অথবা তার স্ত্রী সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তবে এখনো কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির সামনে একটি গোপাল ভাঁড়ের মূর্তি রয়েছে। তবে সেটি আদৌ গোপাল ভাঁড়ের মূর্তি কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বলা হয় তৎকালীন সময়ে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। তবে গোপাল ভাঁড় মহারাজকে বাংলার মাটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে বারণ করলেও মহারাজ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।তখন মহারাজ গোপালকে শর্ত দেন নবাবকে সে ভেংচি কাটতে পারলে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেবেন, গোপাল তখন যথারীতি নবাবের রাজদরবারে গিয়ে নবাবকে ভেংচি কাটেন,নবাব এতে রেগে গিয়ে তখন তাঁকে ফাঁসির নির্দেশ দিলেও গোপালের হাব-ভাব পরিবর্তন হয় না দেখে তিনি গোপালকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ভেবে ছেড়ে দেন। এরপরেও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তার কথায় অটল থাকলে গোপাল তখন মনের কষ্টে তার অতি প্রিয় মহারাজ তথা কৃষ্ণনগর ছেড়ে চলে যান নিরুদ্দেশের পথে । আর এই ভাবেই বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যায় গোপাল ভাঁড়। গোপাল ভাঁড় যেই হোক না কেন তিনি আদৌ ছিলেন , নাকি তিনি ছিলেন কেবলই একটি কাল্পনিক চরিত্র সেই নিয়ে সন্দেহ থাকলেও বারবার আমাদের হারতে হবে তার ক্ষুরধার বুদ্ধির সামনে। গোপাল ভার চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে । গোপাল ভাঁড় যুগ যুগ জিও ।
=============
তথ্যসূত্র:- বিভিন্ন ওয়েবসাইট, google, ইউটিউব চ্যানেল( romancho pedia by mithun) Wikipedia.
লোকনাথ পাল
ঠিকানা:- তিন নম্বর নতুন গ্রাম বালক সংঘ মাঠ রিষড়া হুগলী পোস্ট অফিস মোড়পুকুর, (পশ্চিমবঙ্গ ,ভারত)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন