প্রচ্ছদ, সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র ।। ৮৬তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩২ এপ্রিল ২০২৫

বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দমদম ঘুঘুডাঙগার দিকে যাচ্ছিলাম কোনো একটা বিশেষ কাজে। দমদম স্টেশনের নিচের আন্ডার পাসটা পেরিয়ে একটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। স্ত্রী ছাতা নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও তাড়াতাড়ি বেরোতে গিয়ে ঠিক সেটা ভুলে গেলাম। তার ফল তো ভুগতে হবেই এখন। কোনোমতে দমদম রোড পেরিয়ে গিয়ে বাসস্ট্যান্ডের shade এর তলায় গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে খুব ভিড়। দুটো বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াল। এরপরে আমি একটু ভালোভাবে সামনের দিকে দাঁড়াতে পারলাম। বৃষ্টিটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। পুরোটা না থামা পর্যন্ত আমি এ জায়গা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। হঠাৎ এমন একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম যে চোখ সে জায়গায় স্থির হয়ে গেল। একটা অতি ক্ষুদ্র, ইঁদুর বাচ্চা রাস্তার কিছু বৃষ্টির জল ভরা গর্তের মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট গর্তটার মধ্য থেকে খালি মুখটা বাড়িয়ে ভয়ে এদিক সেদিক দেখছে। কি নিষ্পাপ তার চোখ দুটো, যাতে এখন ভয়ের আভাস। এই অত্যন্ত ক্ষুদ্র ইঁদুর ছানাটা যে কিভাবে এখানে এলো, আর ঠিক বেছে বেছে ওই ক্ষুদ্র গর্তটাকে আবিষ্কার করলো, তা আমার ঠিক বোধগম্য হলোনা। গর্তটা আমাদের ফুটপাথের চার ফুটের মধ্যে।
ওই ক্ষুদে ইঁদুরটির খুব ইচ্ছে যে প্রাণ বাঁচাতে আমাদের দিকের ফুটপাথে উঠে আসে। কিন্তু এত চলমান গাড়ীর শব্দে তার সাহস হচ্ছেনা গর্ত থেকে পুরোপুরি উঠে আসতে। বেশির ভাগ গাড়িই ওই গর্তের ওপর দিয়ে গেলেও গাড়ির চাকা গর্তের বেশী গভীর পর্যন্ত না পৌঁছানোয়, আর ইঁদুরছানা গর্তের একদম তলায় চলে যাওয়ায় বারবার বেঁচে যাচ্ছে। বাস আসলে ওই গর্তটা পড়ে বাসের দুপাশের চাকার প্রায় মাঝামাঝি। কিন্তু যতক্ষন না বাসটা চলে যাচ্ছে ততক্ষণ বোঝা যায়না সে বেঁচে আছে না মারা গেছে। কিন্তু যেই বাসটা চলে যাচ্ছে অমনি তার মাথাটা আবার দেখা যাচ্ছে। ক্ষুদেটির দৃষ্টি মনে হয় বেশি দুর পৌঁছায় না, তাই ও গর্ত থেকে বেরোনোর ঠিক সময়টা বুঝতে পারেনা। আমার পাশে আরও দু একজন লোক ওই ক্ষুদেটির জন্য মায়া বোধ করছে। একসময়, সেই সময়টা উপস্থিত হল। সত্যই ও কিন্তু বেরিয়ে ফুটপাথের ঠিক কাছাকাছি এসে গেলো। সেটা হতে পারলো কিছুক্ষণ গাড়ি না চলায় আর ক্ষুদে বাচ্চাটা অতি সাহসী হয়ে ওঠায়। মনে হল এবার গাড়ির চাকার এলাকার বাইরে চলে এসেছে, আর কোন ভয় নেই ক্ষুদের। আর ঠিক সেই সময় একটা সাইকেলের আরোহী পেছনে বোঝা নিয়ে ডানদিকে একটা চলমান লরির পাশ কাটিয়ে ফুটপাথের ধার দিয়ে বেরিয়ে গেলো জোরে। কিন্তু সেই সাইকেলের আরোহী জানতে পারলো না যে একটা ক্ষুদ্র প্রাণী একটু আগে বাঁচার নিরন্তর চেষ্টা করে, বলতে গেলে খুব সংগ্রাম করে সফল হওয়ার মুখে, তাকে দলে মুচড়ে দিয়ে চলে গেলো। একজন ভদ্রলোক বলে উঠলো 'যাততেরিকা, এত বাধা পেরিয়ে আসার পরেও শেষ পর্যন্ত সাইকেলের তলায়, হায় ভগবান।' কি আফসোস তার গলায়। আমিও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমার নির্দিষ্ট কাজে ফিরে চললাম। বৃষ্টিও তখন থেমে গেছে।
-0-0-0-0-0-0-
Address :-
---------
Dipak Kumar Paul,
DTC Southern Heights,
Block-8, Flt-1B,
Diamond Harbour Road,
Kolkata - 700104
Mb: 9007139853
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন