বাহনমানস কুমার সেনগুপ্তবহুদিন আগে তৎকালীন বর্ধমান জেলার মেমারি ষ্টেশনে নেমে অনেক দূরবর্তী গুলটে নামে এক গ্রামে পৌঁছেছিলাম । বাসযাত্রা, ছৈ লাগানো তিন চাকার ভ্যান রিক্সা অবশেষে গরুর গাড়িতে দীর্ঘ যাত্রাশেষে পৌঁছন গেল সেই গ্রামে। উপলক্ষ্য বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ে। গ্রামে গিয়ে আমার মত খাস শহুরে লোকের বিয়ে দেখার অনাবিল আনন্দের অনুষঙ্গে মিশে ছিল অনেক ঘটনা। বরযাত্রী গেলাম গ্রামের অন্ধকার মেঠো পথে গরুর গাড়িতে। বউভাতের দিন গ্রামের প্রান্তসীমায় বন্ধুর বাড়িতে আরও কয়েকজন মিলে মাদুর পেতে সংলগ্ন পুকুর ঘাটে চলছিল চা সহযোগে বৈকালিক আডডা। হঠাৎ দেখা গেল অনেক দূরে গ্রামের মেঠোপথ ধরে ধূলো উড়িয়ে কিছু একটা ছুটে আসছে। কাছে আসতে বোঝা গেল ঘোড়সওয়ার হয়ে কেউ একজন আসছেন এদিকেই। বাড়ির কাছে আসতে আমার বন্ধুটি এগিয়ে গেল ঘোড়সওয়ারী ভদ্রলোককে অভ্যর্থনা করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে। কাছ থেকে দেখলাম সযত্নে লালিত চকচকে ঘোড়াটিকে। গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা ঘোড়াটিকে দেখতে তখন গ্রামের মানুষের ভীড়। আমার কাছে সে এক বিস্ময়। বন্ধু আবার বাইরে এসে আডডায় যোগ দিয়ে জানাল ভদ্রলোক কনের মামা । শুধুমাত্র লাইসেন্স প্রাপ্ত কম্পাউন্ডার হয়ে এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তিনি দূরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে ছুটে চলেন চিকিৎসা পরিষেবা দিতে। দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার জন্য বাহন ওই বিশ্বস্ত ঘোড়াটি । আজ কিছু সময়ের জন্য ভাগ্নির সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। অনেক পরে শুনেছি যে, তার মৃত্যুর পর শুুধু ভদ্রলোকের নিজের গ্রাম নয়, পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু গ্রামের মানুষও সামিল হয়েছিলেন শেষ যাত্রায় । চিকিৎসক হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। অবশ্য তার বিশ্বস্ত বাহনটির কি গতি হয়েছিল শেষ অবধি তা আর জানা হয়ে ওঠেনি।
==============
মানস কুমার সেনগুপ্ত, 17/8, আনন্দ মোহন বসু রোড, দমদম, কলকাতা 700074
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন