অর্ণব সামন্তর ৬টি কবিতা
১
কর্কটক্রান্তি
কর্কটক্রান্তির দুপুরে বৃশ্চিক দংশন করে
আয় কবুতর আয় জড়ানো আদরে আদরে
ভগ্নাংশ নিদ্রায় ভগ্নাংশ জাগরণে
তন্দ্রাঘোরে তন্দ্রাহরণী দ্রাঘিমাংশকে দ্রাঘিমা করে
আয়ু পোড়ে আয়ু পোড়ে তবু উজ্জীবিত শিখা
মধ্যদিনে মধ্যগগন স্পর্শ করে অবাধ্য অসহ্য দহনে
চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় কোষে কোষে ক্ষুধা মেটায়
স্নায়ুতে স্নায়ুতে ঝঙ্কার ওঠে , বিদ্যুচ্চমকের ঝাঁকুনি
স্বাতীনক্ষত্রের জল পড়ে গা'য় , জল যেতে চায় জলের গভীরে
কিছুই অসম্ভব নয় আর সপ্তভুবন পদতলে মূর্চ্ছাপ্রবণ
সমাধির থেকে উঠে আসে দুপুর একা একা
তোর লাবণ্যের ঢেউয়ে ঢেউয়ে , তোর রূপের অরূপে
২
চন্দ্রবেলা
চাঁদ এসে ধরা দেয় বামনের মুঠ্ঠিমে
নীলের ব্যাকগ্রাউন্ডে স্কিনরঙের দাপাদাপি
শব্দের সাদা ভাত বেড়ে দেয় সঙ্গে পঞ্চপদ
সাত সতেরো কথা পুব-পশ্চিম-দক্ষিণ-উত্তরের
সেইসঙ্গে মধ্যপ্রদেশের ঢাক ঢাক গুড় গুড় গূঢ় কথা
যেন ম্যাজিক বক্স না খুললে শান্তি পাচ্ছে না
রোদ্দুরে পোড়ার পর জ্যোৎস্না সম্প্রপাত
সমস্ত দিবারাত্রি বেড়ে দেয় নির্মেদ কাব্যের পাতায়
চোখের মণিকর্ণিকায় নতুন চরাচরের বজরা এসে লাগে
এক চাঁদ আকাশে থাকে , অন্য চাঁদ মাটিতে নামে
আগুন থেকে নেমে আসে হাড়ে-রক্তে-মাংসে-মেদে
সেবাযত্ন আশিস আদর দিয়ে আকাশে মিলায়
সাগরের উচ্ছ্বাস নিয়ে নদী সতত হাসে
নৈঃশব্দে নিগূঢ় জল ঘূর্ণিজলের ঘূর্ণিস্রোতে ভাসান দেয়
ভাটিয়ালি গেয়ে চাঁদ যায় অন্য চাঁদের অবগাহনে ...
৩
স্রোত
স্রোত অনেককে ছোঁয় না শুধু দূর থেকে চলে যায়
ভিতরের স্বচ্ছ স্রোত না থাকলে
বাইরের স্রোতও দ্যাখা যায় না
এই তো সেদিন দেখি একটা স্রোত অভিমানে ফেটে পড়ছে
আরেকটা তার কোনো খেয়ালই নেই
উপরে উপরে তার বরফ জমে যাচ্ছে
আবার ঘূর্ণিস্রোতের বিপাকে পড়লে ত্রাহি ত্রাহি
কিছু স্রোত দূর থেকে দ্যাখে মুগ্ধ মোহিত হয়ে
মগ্ন হয়ে লিখতে থাকে স্বগতোক্তির শব্দগুলি
কিছু কিছু আবার অহংকারী হয়ে মাটিতে পা
না ফেলে উড়ে উড়ে যায় হাওয়ার মতন
হৃদয়ের ফল্গুস্রোত যে স্রোতে মেশে
সেই স্রোতের কোনো তুলনা হয় না
৪
তিস্তা তোর্ষা
সেবার আমি তিস্তা তোর্ষা পার হয়ে
কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে যাচ্ছিলাম
তিস্তা একটি মেয়ের নাম হতে পারে
তোর্সাও হতে পারে একটি মেয়ের নাম
বাইরে কথার খরস্রোত , ভেতরে জ্যান্ত ভিসুভিয়াস
আরও ভেতরে অভিমানসমৃদ্ধ , ভালোবাসাময় হৃদয়পুর
সোনার হাতে সোনার কাঁকন না রেখে
দু'জনেই রেখেছিল স্মার্ট ওয়াচ
কোনো ওয়াচ টাওয়ারে তাদের ধরা যাবে না
আমি সূর্যোদয় দ্যাখার বদলে
সূর্যাস্তের অঙ্কুরোদ্গম দেখলাম কাঞ্চনজঙ্ঘায়
রাতকে দিনের চেয়েও বেশি সুন্দর মোহিত মুগ্ধ মগ্ন লাগল
জ্ঞান হারাবার আগে মনে আছে
আমি তোমার কুলুকুলুতেই ঝাঁপিয়ে পড়লাম
ফল্গুস্রোতের জারণে আমরা আবহমানের নৌকায় ...
৫
বেহালাবাদিকা
একদিন ছিল খরস্রোতা , সুনাব্য
ষাঁড়াষাড়ির কোটালে প্লাবিত করেছে সমস্ত সংসার
মিটিয়েছে প্রিয়জন ক্ষুধা , বেড়েছে সাত ব্যঞ্জন
গেরস্থালিতে মোহমুগ্ধ ভাবব্যঞ্জনায়
আজ হে ঝড়ের পাখিনি গোধুলির লগ্নে
বেহালার ছড়ে সুর তুলে লন্ডভন্ড খন্ড করে দিচ্ছ
যত মেঘ যত স্রোত যত স্বরবিতান
মজে যাওয়া নদীটির অন্তঃস্থলে ফল্গুস্রোতও নেই
' নাব্যতা ' শব্দটি হারিয়েছে অভিধান থেকে , শুধু কালো দিগন্তরেখা
পাখিনি যখন তখন উড়ে যেতে পারে
নীলকন্ঠ হয়ে অচেনা কৈলাসে , অজানা আকাশে ।
৬
দ্রাঘিমা সিঁড়ি
পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে অলকানন্দা
দ্রাঘিমা স্খলিত করে তোড়ে ভাসায় সমস্ত সমুখ
খরস্রোতা , সুনাব্য নদী হয়ে পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে
উপত্যকা পথে ছোটে মালভূমে , সমভূমে ...
তারপর সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে ঝপাং সমুদ্রে
সংসারের দু'কূল ভাসি যায় উজানে উজানে
ভাটিতে গেয়ে ওঠে ভাটিয়ালি জ্বালা জুড়াতে একান্নবর্তীর
পাগলি এখনও হৃৎকমল ভাসাতে পারে আশ্লেষে উচ্ছ্বাসে
গোধূলির অস্তরাগে জ্বেলে দিতে পারে
নুড়ি নুড়ি সংঘর্ষে চকমকি আলো
দ্রাঘিমাকে ডাকতে পারে স্খলনে , ধারনে
একেক নদী নাব্যতা স্রোত ধরে রাখে আজীবন
আর কবিকে দিয়ে যায় অনন্তের পান্ডুলিপি
ভালোবেসে , সুগভীর ভালোবেসে
জোছনাযুবতী অমল ভাসানে ডাকে কবিকে।
*********************************************
অর্ণব সামন্ত
A P Nagar ( Paschim)
House No S-1/ 53
P.O. + P.S. -- SONARPUR
SOUTH 24 Pgs
Kol - 150
Pin - 700150
**********************************************
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন