Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

ছবি
  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

প্রবন্ধ ।। সবিতা বিশ্বাস


 

সামাজিক দূরত্ব – এক নতুন সংজ্ঞা


                                                     
সামাজিক দূরত্ব বলতে বোঝায়, "সংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রুখতে মানুষের সাথে মানুষের মধ্যেকার সংস্পর্শের ঘটনা কমানোর পদ্ধতি" | সামাজিক দূরত্ব স্থাপন হল সংক্রামক রোগ বিস্তার প্রতিরোধের জন্য সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের একগুচ্ছ ঔষধবিহীন পদক্ষেপ | সেই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তি যেন অপরের মাধ্যমে রোগ ছড়াতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা | তবে জল বা মশা মাছি বাহিত সংক্রামক রোগে দূরত্ব সেভাবে কাজে আসেনা | সামাজিক দূরত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয় যখন রোগটি হাঁচি কাশি বা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সংক্রামিত হয় |

সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে গেলে জনসমাগম এড়ানো, অন্যের থেকে ছয় ফুট প্রায় দুই মিটার দূরত্ব রক্ষা করা, যে কোনো সমাবেশ, সে ধর্মীয় বা সামাজিক যাই হোক না কেন পরিত্যাগ করতে হবে | ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নীতিটি এসেছে 'শ্বসন শারীরতত্ব' থেকে | যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম শাফনার ব্যাখ্যা করেছেন 'নিঃশ্বাস ফেলার সময় আমরা যদি না হাঁচি না কাশি তবে পরস্পরের মধ্যেকার তিন থেকে ছয় ফুট দূরত্বকে শ্বাস বান্ধব বলা হয় |'

জনসমাগম এড়ানোর জন্য স্কুল, কলেজ, কাজের জায়গা, বাজার, গণপরিবহন সব বন্ধ করতে হবে | কেবলমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষের দোকান খোলা রাখা যেতে পারে | সেক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নিয়মগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে | জীবাণু সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে বাজার থেকে আনা জিনিষপত্র স্যানিটাইজ করতে হবে |

সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে গেলে একের সাথে অন্যের সাক্ষাত্কালীন আলিঙ্গন একেবারেই চলবেনা | হৃদয়ের উষ্ণতা বোঝাতে নিজের হাতের সাহায্যে "লাভ" চিহ্ন আঁকা যেতে পারে | এবং করমর্দন এড়ানোর সহজ পন্থা হাত জোড় করে দূরত্ব বজায় রেখে নমস্কার জানানো | এছাড়াও বিভিন্নরকম চিহ্নের মাধ্যমে আমরা দূরত্ব রেখেও উষ্ণতা আদান প্রদান করতে পারি |

গাণিতিক মডেলিংয়ে দেখা গেছে স্কুল বন্ধ থাকলে প্রাদুর্ভাবের সংক্রমণ ধীরে হতে পারে | কর্মক্ষেত্র বিশেষ করে যেখানে অধিক জনসমাগম হয়, যেমন সিনেমার শ্যুটিং, খেলার স্টেডিয়াম, বড় কারখানা সেগুলো বন্ধ করলেও সংক্রমণ ধীর গতিতে হয় | খোলা বাজার বা হাট থেকে সংক্রমণ ছড়ায় দ্রুত গতিতে |

Covid-19 সারা বিশ্বে মহামারীর আকার ধারণ করেছে | তারই প্রেক্ষিতে এই আলোচনা | করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব এক সঠিক পদক্ষেপ | একই সাথে আক্রান্ত ব্যক্তিকে থাকতে হবে সেলফ আইসোলেশনে | খাবার-দাবার বা ওষুধপত্র কিনতে বাইরে বেরোতে হলে অবশ্যই পরস্পরের মধ্যে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে | সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির থেকে সূক্ষ থুতুকণা বা ড্রপলেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে | এই ড্রপলেটে ঠাসা থাকে ভাইরাস | যেসব জায়গায় এই কণাগুলো পড়ছে সেসব জায়গায় হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাকে মুখে হাত দিলে সেই কণাগুলো নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে সহজেই সংক্রমিত করে | সেই কারণে কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা একান্তভাবে জরুরী |

সেলফ আইসোলেশন বা স্বেচ্ছাবন্দী বলতে বোঝায় ঘরের ভেতর সম্পূর্ণভাবে একা থাকা | এই সময় বাইরে বেরোনো তো চলবেই না, বাইরে থেকে কেউ কোনো কিছু দিতে এলে দুই মিটার দূর থেকে তা গ্রহণ করতে হবে | এবার প্রশ্ন, করোনা আক্রান্তের কি কি উপসর্গ দেখা দিলে সেলফ আইসোলেশনে যাওয়া উচিত | হাই টেম্পারেচার, হাঁচি, কাশি গলা ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা থাকতে হবে | যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তার পরিবারের অন্য কারোর মধ্যে তিন দিন পরে এই উপসর্গ দেখা দিলে মোট দশ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে  |
সামাজিক দূরত্ব ব্যাপারটি আমাদের কাছে নতুন সংজ্ঞা মনে হলেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এর আগেও বিভিন্ন রোগে এটিকে ব্যবহার করা হয়েছে | ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী চলাকালীন কলোরাডোর গুনিসন শহরকে দুই মাসের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখা হয়েছিল | মহাসড়কগুলো ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছিল | ট্রেন যাত্রীদের পাঁচ দিনের জন্য আলাদা করে রাখা হয়েছিল | বিচ্ছিন্নতার ফলস্বরূপ গুনিসন শহরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় একজন ও মারা যায়নি |

১৯৯৫ সালে জায়কারের  রাষ্ট্রপতি মোবুতু সেসে সোকো সেনাবাহিনী নিয়ে পুরো শহরটাকে ঘিরে ফেলে সমস্ত ফ্লাইট স্থগিত করে দিয়েছিলেন | এর ফলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়েছিল | ২০০৩ সালে সিঙ্গাপুরে SARS প্রাদুর্ভাবের সময় ৮০০০ জনকে বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারানটাইনে রাখা হয়েছিল | এই পদক্ষেপটি সংক্রমণের বিস্তার রোধে সাহায্য করেছিল |

২০১৫ সালে প্রকাশিত মডেলিং টু ইনফর্ম ইনফেকশাস ডিজিজ কন্ট্রোল গ্রন্থে নিলস বেকার পাঁচটি পদক্ষেপের কথা বলেছেন, যা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার অন্তর্ভুক্ত | এগুলি হল এক, জনসমাগমস্থলে যাওয়া থেকে জনসাধারণকে বিরত করা | দুই, আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্তরীণ করা | তিন, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা রোধ করা | চার, স্কুল, কলেজ বন্ধ করা | পাঁচ, জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা |

ইউনিভার্সিটি অব ডেলওয়ারের অধ্যাপক মার্কিন মহামারী রোগ বিশেষজ্ঞ জেনিফার হর্নি বলেছেন, "কোভিড- ১৯" রোগটি যেহেতু এক নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ, এই মুহূর্তে টিকা বা অন্য কোনো চিকিত্সাবিধি আমাদের জানা নেই যা মানুষকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে | সে কারণেই আমাদের অন্যভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে | আইসোলেশন, কোয়ারানটাইন ছাড়াও সব ধরণের জমায়েত, অনুষ্ঠান বাতিল করতে হবে | গণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে |
চার্লস ডারউইনের ভাষায় যোগ্যই টিকে থাকবে এই পৃথিবীতে | মানুষ প্রায় প্রতি শতাব্দীতেই মহামারীর বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার পরীক্ষা দিয়েছে | হয়তো এই নতুন ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা প্রয়োগ করে এবারেও জয়ী হবে | মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে গর্ব করে, গর্ব করে ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবে | সেই দিক থেকে পরিস্থিতি বুঝে কৌশলী হওয়াটাও তার বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ |

করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত এই মৃত্যু মিছিল রোধ করতে হলে জীবনানন্দের বনলতা সেনের সাথে  "মুখোমুখি বসিবার" দিন নয় আজ | এখন দূরে দূরে, দূরভাষে গল্প করার দিন | একটা কথা মনে রাখতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বলতে শারীরিক দূরত্বকেই বোঝানো হচ্ছে | নিজে বাঁচতে হবে ও অন্যকেও বাঁচাতে হবে| তাই অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিক নৈকট্য গড়ে তুলতে হবে|
 সামাজিক অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব বা বিচ্ছিনতা রক্ষা করাই এখন বেঁচে থাকবার একমাত্র কৌশল | সে কারণেই সমগ্র বিশ্বের এখন একটাই স্লোগান "মেনে চলো, সামাজিক দূরত্ব" | যূথবদ্ধ হয়ে আমাদের এই কাজ করতে হবে | 

এটাই এখন "পরিবর্তিত সামাজিকতা"| 


                           ------

তথ্যসূত্র :- আন্তর্জাল এবং সংবাদপত্র|


সবিতা বিশ্বাস
প্রযত্নে – লন্কেশ্বর বিশ্বাস
গ্রাম + পোস্ট – মাজদিয়া (বিশ্বাসপাড়া)
(শুভক্ষণ লজের পাশে )
জেলা-নদীয়া পিন-৭৪১৫০৭
ফোন-৮৯০০৭৩৯৭৮৮
ভারত
ই মেইল- sraybiswas@gmail.com







জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল