google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re ভ্রমণকথা ।। সত্যম ভট্টাচার্য - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০

ভ্রমণকথা ।। সত্যম ভট্টাচার্য

 

অচেনা অজানা রেল্লিখোলা

           

হিমালয়ের পাদদেশে আমাদের এই তরাই ডুয়ার্স অঞ্চলে যেখানে তিস্তা ধীরে ধীরে তার পাহাড়ী উচ্ছলতার মায়া কাটিয়ে সমতলে প্রবেশ করছে,সেখানে তিস্তার সাথে সাথে পাহাড় থেকে নেমে বয়ে চলেছে আরো অনেক অনেক নদী।রেল্লিখোলা তাদেরই মধ্যে একটি।
অসাধারণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের খনি আমাদের এই তরাই ডুয়ার্স।তিস্তানদীর গতিপথের হিসেবে যার ডানদিককে বলা হয় তরাই আর বামদিককে ডুয়ার্স।এই উভয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ ভূমি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ঢেউ খেলানো চা বাগান,পাহাড়ি নদী আর জঙ্গল।এই অঞ্চল ছাড়িয়ে সামান্য উপরে উঠলেই সেখানে মেঘ-বৃষ্টি আর রোদের খেলা।তাই সামান্য সময়ের ব্যবধানেই ঢুকে পড়া যায় সেই মেঘপিয়নের দেশে।
রেল্লিখোলা তরাই এর অসামান্য একটি নিরালা নির্জন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ঘাঁটি।শিলিগুড়ির ইঁট-কাঠ-পাথরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তা তিস্তাকে ডানহাতে রেখে শাল সেগুনের জঙ্গল পেরিয়ে কালিম্পং বা গ্যাংটকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।সেই পথেই একে একে পড়ে সেবক,করোনেশন ব্রীজ আর তারপরই শুরু হয়ে যায় জাতীয় মহাসড়ক দশ।সেখান থেকে সামান্য এগিয়েই কালিঝোরা আর তারপরেই একটি জায়গা পড়ে,নাম তার সাতাশ মাইল।এখানেই তিস্তার ওপর বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জলবিদ্যুত প্রকল্প।তার পেছনেই রেল্লিখোলা দাঁড়িয়ে রয়েছে তার অপার্থিব নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে।
উত্তরবঙ্গের এত জায়গায় খোলা দিয়ে বিভিন্ন নাম শুনতে শুনতে ইতিমধ্যে সকলেই নিশ্চয় জেনে গিয়েছেন যে নেপালী ভাষায় খোলা শব্দের অর্থ নদী।সেভাবেই এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে আছে ডুয়ার্সের সানতালেখোলা,গরুবাথানের কাছে চেলখোলা অথবা তরাইতে দুধিয়ার রাস্তায় জঙ্গলের ভেতরে টিপুখোলা।রেল্লিখোলাও এমনই একটি প্রকৃতির কোলে সময় কাটানোর আদর্শ জায়গা।পাহাড়ি নদী তার উচ্ছলতা নিয়ে সশব্দে এখান দিয়ে বয়ে চলেছে রাতদিন।চারিদিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড় আর জঙ্গল।


তবে রেল্লিখোলার প্রধান আকর্ষণ এর ঝুলন্ত সেতুটি।নদীর ওপরে এত বড় ঝুলন্ত সেতু আমাদের এই অঞ্চলে খুব একটা বেশী নেই। সারাদিন নাম না জানা পাখির ডাক,জলের শব্দের আওয়াজে কখন কেটে যাবে সময়।চাইলেই হারিয়ে যাওয়া যাবে সমস্ত এলাকা জুড়ে  নদী খাতে পড়ে থাকা বড় বড় পাথরের আড়ালে বা নির্জন অরণ্যে।এক এক করে ঝুলন্ত সেতুতে উঠে যাওয়া যেতে পারে পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে।তবে সাবধানতা অবলম্বন অনিবার্য।
সেবক ধরে রেল্লিখোলা পৌঁছতে হলে পেরুতে হবে কালিঝোরায় তিস্তার বাঁধের ওপরে আধা সামরিক বাহিনীর বাধা।সেজন্য পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা ও অনুমতিগ্রহণ আবশ্যক।এখানে ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।আর ও পথে পৌছনো যদি কঠিন মনে হয় তাহলে আমাদের পথ নিতেই পারেন,পাহাড়েও ঘোরা হয়ে যাবে একচক্কর।
সেই বৃষ্টিভেজা সকালে চা বাগান-ফরেস্ট দিয়ে আমরা প্রথমে পৌছ গিয়েছিলাম বাগরাকোট।সেখান থেকে রেললাইন-বাজার পেরিয়ে ডানদিক ঘুরে চুইখিমের রাস্তায়।দুদিকের ঘন সবুজ জঙ্গল রাস্তায় ফুল ফেলে আপনাকে স্বাগত জানাবে। আগে রাস্তা খারাপ থাকলেও এখন বেশীর ভাগটাই ভালো।এভাবেই একসময় পৌঁছে যাওয়া যাবে মেঘের দেশ চুইখিমে।বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়বে আর চুইখিমের ছোট্ট দোকানে বসে চা বা কফি খাওয়ার পর মনে হতেই পারে সেখানে এক রাত কাটিয়ে দেবার।হোমস্টে আছে,থাকতেই পারেন।আর না চাইলে সেখান থেকে বেরিয়ে বারবট ও নিমবঙ এর রাস্তা ধরে পৌঁছে যান চারখোলে। রাস্তায় আপনাকে সঙ্গ দেবে মেঘ-কুয়াশা-বৃষ্টি আর কখোনো পাহাড়ি ঢালে রামধনু।চারখোলের শোভা উপভোগ করে ,মোমো কফির স্বাদ নিতে নিতে, সুরুক-সামথারের রাস্তায় নেমে আসুন রেল্লিখোলাতে।তবে পাহাড়ে এখন অনেক রাস্তা,পথ হারাতে পারেন।তাই যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন সাতাশ মাইলে যাবার পথ।পাহাড়ি বন্ধুরা সদা প্রস্তুত আপনাকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে।
আরেকভাবেও পৌঁছোনো যায় রেল্লিখোলাতে।শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ছাড়ে সামথারের।কালিঝোরা –সাতাশ মাইল-রেল্লিখোলা হয়ে সে গাড়ি পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে চলে সামথারের দিকে।আপনি নেমে যেতে পারেন রেল্লিখোলাতে।এখানে রাত কাটাতে হলে ব্যবস্থা করতে হবে তাঁবুর,ক্যাম্পিং এর আদর্শ জায়গা।

 =========================

সত্যম ভট্টাচার্য,আস্থা এপার্টমেন্ট ৩য় তল,রায়কতপাড়া,জলপাইগুড়ি।মুঠোফোন-৯৪৭৫৮৯৩৪৩৩