নিবন্ধ ।। শেফালি সর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, June 17, 2020

নিবন্ধ ।। শেফালি সর

।। নারী নির্যাতন ও নারী আন্দোলন।।



একসময় মাতৃ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীর সম্মানজনক স্হান ছিল। কিন্তু পরবর্তী যুগে তখন শোষণ মূলক উৎপাদন ব্যবস্হা ও ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভব হলে তখন থেকেই নারী তার স্বাধীনতা হারালো। আর ঠিক তখন থেকেই নারী তার স্বাধীনতা হারিয়ে পরিবারে দাসী হিসাবে এবং সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসাবে অন্তঃপুরে স্থান করে নিতে বাধ্য হ'ল। কুসংস্কার,ধর্মান্ধতা ও পারিবারিক লাঞ্ছনার চরম বহিঃ প্রকাশ ঘটল সতীদাহ প্রথা, বহুবিবাহ,বাল্যবিবাহ ও কৌলিন্য প্রথার মধ্য দিয়ে।
   অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংরেজ শাসনের পূর্ব পর্যন্ত এই ছিল সমাজে নারীর অবস্থান। উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের নবজাগরণের ঢেউ এসে লাগলো এদেশে ও।ইঙলণ্ডের শিল্প বিপ্লব,ফরাসী বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা, সাম্য-মৈত্রীর স্বাধীনতা পৃথিবীর বৃহৎ অংশের মানুষের মনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মাত্রাহীন শোষনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পুরুষের পাশে নারী শ্রমিকরা ও যোগ দিয়েছিল। এই আন্দোলনে অভিজাত শ্রেণীর মহিলারাও নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। আমাদের দেশে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর বৃটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সূচনা হল।১৮৮৫ সালে কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকেই মহিলারা  অংশ গ্রহণ করেছিল।১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন১৯২০সালে,১৯৩০ সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলন,১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনে মহিলারা ও অংশ গ্রহণ করেছিল।(১৯৩৪-১৯৪৫) সালে ভারত বর্ষের বিভিন্ন স্থানে বাংলার নারী সমাজ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি গঠন করে। এই সমিতির প্রথম সভানেত্রী ছিলেন ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ও সম্পাদিকা ছিলেন এলা রীড।১৯৪৫ সালে ফ্যাসিষ্ট হিটলারের পতনের পর সোভিয়েতের উদ্যোগে তৈরী হয় 'বিশ্ব নারী সঙ্ঘ'। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে স্বাধীন করার লড়াইয়ে মহিলাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস বড় দীর্ঘ। শহীদ হয়েছিলেন কল্পনা যোশী,লতিকা সেন, প্রীতি লতা ওয়াদ্দেদার, প্রতিভা গাঙ্গুলি, অমিয়া দত্ত, গীতা সরকার প্রমুখ।
     স্বাধীনতার৭৩/৭৪বৎসর পরেও আজ নারী সমাজ নির্যাতনের শিকার-তার প্রথম উদাহরণ কন্যাভ্রূণ হত্যা। অকাল মাতৃত্বের দায় বহন করে রক্ত হীন শীর্ন দেহে দুটি তিনটি সন্তান নিয়ে গলগ্রহ হয়ে ফিরে আসে বাপের ঘরে।পণের দাবিতে বন্ধু হত্যা,লক্ষ লক্ষ শিশু কন্যা সন্তান বিদেশে পাচার ইত্যাদি।বিনা মূলধনে লাভজনক ব্যবসা এই নারী পাচার।                            
      ধর্ষণ, গণধর্ষণ-নারী নির্যাতনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একবছরের শিশু কন্যা থেকে ৭৫বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষকের হাত থেকে রেহাই পায়নি।মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা হয়েও অন্যায়কারীদের উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। বলছেন-ছোটো ঘটনা, সাজানো ঘটনা, ধর্ষিতার স্বামী সি পি এম করে ইত্যাদি তাঁর যতো মিথ্যা ভাষণ। নারী নির্যাতনে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে।প্রতি ২১ মিনিটে একজন মহিলা ধর্ষিতা হচ্ছে সারা দেশে। স্কুল, কলেজ, বাড়ি, রাস্তা, অফিস প্রাঙ্গণে কোথাও মেয়েদের নিরাপত্তা নেই। সবসময় আতঙ্কের শিকার এই রাজ্যের অভিভাবকেরা। দিল্লিতে নির্ভয়া গণধর্ষণের পর সারা দেশ চমকে উঠেছিল মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর শুনে। গোটা বিশ্বে সেই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঁচার অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাঁচে নি নির্ভয়া।এতে ভারতের  মুখ উজ্জ্বল হয়েছিল কিনা কে জানে! সর্বোচ্চ প্রশাসন কিন্তু নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছিল। এই যেমন কামদুনির সেই দুঃখিনী মেয়েটি টালির ছাদের  ভাঙা ঘরে থেকে যে আদর্শ  শিক্ষিকা হওয়ার  স্বপ্ন  দেখতো, সেই মেয়েটি কলেজ থেকে ফেরার পথে গনধর্ষনের পর কীচক বনের কায়দায় তাকে হত্যা করা হল। ধর্ষকেরা শাসক দলের হওয়ায়  প্রশাসনের ছায়ায় লুকিয়ে থাকলো। কিন্তু কামদুনির  মৌসুমী কয়াল, টুম্পা প্রভৃতি মেয়েরা গর্জে উঠলো। মেয়েটির পরিবার চাকরি ও নানা রকম  টোপকে অগ্রাহ্য করে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির দরবারে পৌঁছে গেল। মুখ্যমন্ত্রী ১৫দিনে বিচার করার ঘোষণা করলেও সেই বিচার আর হয়নি। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে এভাবেই কাঁদে। ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতার শিকার আজকের মেয়েরা। নারীর বিরুদ্ধে হিংস্রতা মানে মানবতার বিরুদ্ধে হিংস্রতা। নারী পুরুষের সম অধিকারের লড়াইয়ে তরুণ সমাজ কে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সামিল হতে। সমাজে সুস্থ মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা একান্ত ই জরুরি। নারীর প্রতি সমস্ত প্রকার অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমস্ত অংশের মানুষকে পাশে নিয়েই নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য চাই  অসীম ধৈর্য্য ও গভীর উপলব্ধি।       
                                  
স----------মা------------প্ত














শেফালি সর জনাদাড়ি গোপীনাথপুর পূর্ব মেদিনীপুর ৭২১৬৩৩।