Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছবি
  সূচিপত্র অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য: সমাজের আয়না ।। বিচিত্র কুমার প্রবন্ধ ।। বই হাতিয়ার ।। শ্যামল হুদাতী কবিতায় সংস্কৃতায়ন (দ্বিতীয় ভাগ ) ।। রণেশ রায় পুস্তক-আলোচনা ।। অরবিন্দ পুরকাইত কবিতা ।। লেগে থাকা রোদ্দুরের ঘ্রাণের মতো ।। জয়শ্রী ব্যানার্জি কবিতা ।। ভুল ।। সুপ্রভাত মেট্যা কবিতা ।। উন্মেষ ।। বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত কবিতা ।। গার্হস্থ্য ।। বিবেকানন্দ নস্কর একগুচ্ছ বিজয়ের কবিতা ।। বিচিত্র কুমার গল্প ।। পোষ্য ভূত ।। সমীর কুমার দত্ত কবিতা ।। আশপাশ ।। প্রতীক মিত্র কবিতা ।। মেঘ ।। তীর্থঙ্কর সুমিত অণুগল্প ।। বংশীবদনের সুখদুঃখ ।। দীনেশ সরকার কবিতা ।। গভীর রাত ।। সুনন্দ মন্ডল তিনটি কবিতা ।। সুশান্ত সেন ভালোবাসার বাসা ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত অণুগল্প ।। শিক্ষকের সম্মান ।। মিঠুন মুখার্জী কবিতা।। প্রশ্ন ।। জীবন সরখেল কবিতা ।।ক্ষরিত সে পথ ।। রহিত ঘোষাল কবিতা ।। রক্ত দিয়ে কেনা ।। মুহাম্মদ মুকুল মিয়া কবিতা ।। কংক্রিট ।। আলাপন রায় চৌধুরী ছড়া ।। শীত নেমেছে ।। রঞ্জন কুমার মণ্ডল কবিতা ।। কিছু শব্দ ।। সমীর কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা ।। শীতের নগ্নতা ।। রানা জামান কবিতা ।। পথ চলা ।। পাভেল আমান বেদ পু...

ভ্রমন কথা :: শ্রাবনী রায়



বেনারসের বন্যরা


          তখন 2001, আমি দাদু দিদার সাথে প্র্থম বার বেনারস ঘুরছি । কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন শহর..... সারনাথ, নৌকা-বিহার, বিশ্বনাথ-দর্শন, বেনারসি পান আর বিখ্যাত বেনারস এর গলি... সরু সরু আঁকা বাঁকা গলি, তার দুপাশে পুরানো ইট বার করা সারি সারি দোতলা বাড়ি । মোড়ের একটু আগে অব্দিও বোঝা যায় না যে গলিটা কোনদিকে ঘুরবে কিংবা গলিটা আরো আছে না শেষ হয়ে গেল .....   আরো যেটা বিখ্যাত সেটা হলো  বেনারসের ষাড় । তাদের স্বরূপ দর্শন ইতিমধ্যেই আমার হয়েছে । খুব অবাক হয়েছিলাম যে ভোরবেলা পাকা কলার গোটা কাঁধি , বালতি ভরা দুধ ভক্তরা রাস্তার ধারে দাঁড়ানো ষাঁড়-কে খেতে দিচ্ছে । কারণটা  পরে দাদু কে জিজ্ঞাসা করতে জানতে পারলাম যে ষাঁড়কে আমরা নন্দী রূপে পূজা করি তাই ... যাই হোক তা এই ষাঁড়গুলোর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় যে এরা এমন খাদ্যপ্রণালী তে অভ্যস্থ । আমাদের বাংলার ষাঁড় গরুরা ওদের কাছে পাত্তাও পাবে না ।  ভিড়ে ঠাসা সরু গলি, গাড়ি ভর্তি রাস্তা সব জায়গাতেই ওদের অবাধ বিচরণ... কি অদ্ভুত ভাবে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ঢালু রাস্তায় জোর গতিতে হেটে চলেছে, হুঙ্কার দিতে দিতে । যেন তার কতই  জরুরি কাজ আটকে আছে । লোকেরাও অভ্যস্থ , কেউ ভয় পায় না ....  ষাঁড়ের ঠেলা খাওয়ার পর দেখতে পেয়ে তাকে আগে যাবার জায়গা করে দেয়, পিঠে হাত বুলিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে নেয় ........ প্রণাম সারে ।  
           এমনই বিশ্বনাথ গলিতে হাঁটছি আর হঠাৎ একটা ষাঁড়কে দেখে একটু ভয় পেয়ে দিদা আর আমি একটা পাশের দোকান -এ নিজেদের ঠেলে দিয়ে তাকে যাবার জায়গা করে দিলাম । আমার দাদু সেটা দেখে সাহস দিতে দিতে বললেন যে , ''না না কোনো ভয় নেই... এ হলো বাবা বিশ্বনাথের ষাঁড়, কিচ্ছু করবে না, কোনো ভয় নেই।'' তো সেই বাঙালি দোকানদার হেসে উত্তর দিলেন যে, '' হ্যাঁ.... কিছুই করবে না,  শুধু ওই সিং দিয়ে একবার উপরে ঘুরিয়ে নিচে ফেলে দেবে....''   বেনারসে এমন বাংলায় কথা সারাক্ষণই সোনা যাই।  
          একদিন সন্ধ্যায় আমরা দাদুর এক বন্ধুর বাড়িতে দেখা করতে যাচ্ছি , সেই সরু গলি, দুজন পাশাপাশি হাঁটা যায় না , একে ওপরকে টপকে  যাওয়ার কোনো উপায় নেই । সামনে পিছনেই লাইন দিয়ে যেতে হয় । উল্টোদিক থেকে কেউ এলে একটু নিজেকে বেঁকিয়ে  নিতে হবে , নাহলে হালকা ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থেকে যায় । সামনে দাদু, মাঝে আমি আর শেষে দিদা এইভাবে হাঁটছি ।... দুধারে বড় বড় দোতলা বাড়ির দেওয়াল উঠে গেছে । লাইটপোস্ট থেকে টিউব লাইট ঝুলছে । ..রাস্তাটা আলোআঁধারী ...আমি এইসব দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি । তখনও দাদু-কে  টপকে সামনে দেখতে পাওয়ার মতো লম্বা হইনি, রাস্তা টাও এবরো-খেবড়ো সেটার দিকেই খেয়াল করে হেটে যাচ্ছি । মোরটা ঘুরেই হঠাৎ দাদু ডানদিকে সরে গেলো আর ঠিক সামনেই দেখতে পেলাম বিশালাকার দুটো কালো ষাঁড় রাস্তা দাপিয়ে আসছে। ....ঠিক সেই মুহূর্তেই আমার পা টাও হালকা মুচকে গেছে , খুব ভালো করে বুঝতে পারছি যে এই মুহূর্তে যদি আমি ডানদিকে সরে যেতে না পারি তাহলে এরা আমাকেও ওই.....''একবার উপরে ঘুরিয়ে নিচে ফেলে দেবে ''.....আর ভাবার সময় নেই.... ভয়ে জোর চিৎকার দিয়ে চোখ দুটো চেপে বন্ধ করে..... ঠিক কি ভাবে মনে নেই রাস্তার ওপারে ছিটকে গেলাম । কি আছে না আছে দেখার ,ভাবার সময় নেই । ...বোধহয় প্রাণটা হাতে নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচি । 
          ওদিকে দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খাইনি ....কোথায় একটা আটকে গেছি .... তখন হয়তো আমার আওয়াজ বন্ধ হয়নি ...চোখ তখন চেপে বন্ধ। ....শুধু হালকা কানে ভেসে আসছে......''দিদি কুচ নেহি হুয়া ...উও ষাঁড় তো চালা গায়া ''.......''দিদি খুচ নেহি হুয়া .....'' আবার..... আবার .....একই কথা বলছে একটা লোক ।  কিন্তু গলি গুলো এতো সরু যে  ....ষাঁড় গুলো যে যাচ্ছে ... আমাকে ওদের পেট দিয়ে একটা করে গোঁত্তা দিতে দিতে । তাই আমি ভালোই বুঝতে পারছি যে ''ষাঁড় চালা গায়া ....''  না, যা রাহা হেয় । ......তারপর একটু একটু বুঝতে পারলাম যে ওই লোকটাই আমার হাতদুটো ধরে ঝাঁকাচ্ছে আর বলছে যে , ''ষাঁড় তো চালা গায়া ...'' যখন দিদা পিঠে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করছে যে, ''রিঙ্কি..রিঙ্কি.. তুই ঠিক আছিস ?''  তখন আমার হুশ ফিরছে । ...চোখটা  আস্তে-আস্তে খুলে দেখি যে.....আমি লোকটার একেবারে সামনে । .....আর লোকটা আমার হাত ধরে ঝাকানি দিচ্ছে ।...
          চারিদিকে তাকিয়ে দেখি, রাস্তায় সব লোক দাঁড়িয়ে পড়েছে ..আমাকে দেখছে ... আস্তে আস্তে দিদা কে বললাম....''হ্যাঁ ''     ঘটনার আকস্মিকতায় আর আতঙ্কে লোকটা কে একটা ধন্যবাদ দিতেও ভুলে গেলাম । নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলাম । তখন ও হাত-পা এতো কাঁপছে যে বাকি রাস্তাটুকু দাদুর হাত ধরে হাটতে হলো । 
          পরে যখন আমি বার বার ওই ঘটনা টা  মনে করেছি , মনে হয়েছে যে ওই লোকটা  ( লোক ই বলা উচিত..ওই পরিস্থিতি আর আলোআঁধারে পরিবেশে  বয়স বোঝার চেষ্টা আমি করিনি )  ওখানে না থাকলে যে গতিতে আমি ছুটে গেছিলাম, ওই ইট বার করা দেওয়ালে  ধাক্কা খেয়ে তাতে মাথা না ফাটুক ,মুখ টা  ছিঁরে-ফেটে যেতে পারতো । কিন্তু নিজে বাঁচতে... শান্তি তে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে যে অস্বস্থি তে আমি ফেলেছিলাম , তাতে তিনি যে বিন্দুমাত্রও  বিরক্ত না হয়ে, উল্টে আমাকে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । তখন জানাতে না পারলেও আমি চির কৃতজ্ঞ। 
          বেনারসে বাবা বিশ্বনাথ হয়তো তার বুনো নন্দী দের হাত থেকে ঐদিন  ঐভাবে বাঁচিয়ে দিলেন । পরবর্তীকালেএ এই গল্প টা আমি অনেকবার অনেককে শুনিয়েছি। ..আর ভীষণ হাসির খোরাক হয়েছে ঘটনা টা... কিন্তু মনে পড়লে সেই দিনের সেই আকস্মিকতাটা এখনো অনুভব করি .....।

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত