Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প -- অয়ন সাঁতরা




 বিকৃত 


লাল গোলাপের পাপড়িটা অনেক্ষণ ধরে পায়ে পায়ে পিষ্ট হতে হতে এখন দলা পাকানো আবর্জনায় পরিনত হয়েছে। বর-আসন এখন শুন্য, বরকে ঘিরে পারিষদের ন্যায় বসে থাকা বন্ধুবর্গদের চেয়ারও শুন্য। সবাই বিয়ের মণ্ডপে। খাওয়ার জায়গাটাও এখন ফাঁকা, তবে পাখাগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরেই চলেছে। প্যান্ডেলের বাইরে, মাঠের এক প্রান্তে দু জন নারী পুরুষকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তারাও বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে বেড়িয়ে গেল। ক্যাটারারের লোকগুলো দ্রুত কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে। একজন এসে হঠাত খবর দিল –' বাড়ির পিছনে এইমাত্র একটা ডেডবডি দেখা গেছে!'  
                                               ১
-' বিয়েবাড়িতে আমি এমনিতে খাওয়া হয়ে গেলে বেড়িয়ে যাই। কিন্তু কোলকাতার বাইরে ... এইরকম গ্রাম সাইডে আসায় রাতে খাওয়ার পরেও আমি মাঠে ঘুরছিলাম।  বিয়ের সময় হতে সবাই একে একে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলও আমি একাই ঘুরছিলাম। এমন সময় হঠাতই পারোমিতাকে দেখতে পাই। সেও আমাকে দেখতে পায়। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেমন আছে সে! এখানেই বা আসা কিভাবে... এইসব আর কি'।
-' আপনাদের রিলেশানটা?'
-'চার বছর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল...'
-'একবার বিয়ে হয়েছিল, মানে টেকেনি তাই তো?'
-'বলাই বাহুল্য। তারপর টুকটাক সাধারন কথাবার্তা। জানতে পারলাম ও কনে পক্ষ। ব্রাইডের পি.এইচ.ডি গাইড'।
-'তারপর?'
-'তখন পৌনে দুটো হবে... আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে যাই। বিয়ের জায়গায় যাইনি। পাশের পুকুরটার ধারে একটু পাইচারি করি। তেমন কোনো কথা হয়নি। মিনিট পনেরো কুড়ি পরে সুমন আসে..'
-'এক মিনিট। সুমন কে?'
-'অভিরূপের অফিস কলিগ হিসেবে আমরা দু জনেই এসেছিলাম কোলকাতা থেকে'
-'বুঝেছি। বলে যান'।
-'সুমন এসে বলে সে এবার লজে ফিরতে চায়। আমি সম্মতি দিতে বাইক বার করতে গেল সুমন পারোমিতা আর কিছু কথা না বলে বিয়ের মন্ডপের দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে সুমন বাইক নিয়ে এসে দাঁড়াল, আমি উঠে পরলাম। ব্যাস! তারপর আজ সকালে জানতে পারলাম পারোমিতা বাড়ির পাশের খাতটায় পরে মারা গেছে'।
-'আচ্ছা সুমনের সঙ্গে পারোমিতার পরিচয় ছিল?'
-'না। তা কি করে সম্ভব!'
-'ঠিক আছে'।
কৌশিকবাবু এতক্ষন রাজদীপকে জেরা করছিলেন। আর কৌশিকবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে রাজদীপের জবানবন্দি শুনছিল অংশুমান।
কৌশিকবাবু এবার পরিতোষবাবুকে, মানে যার মেয়ের বিয়ে ছিল গতকাল, তাকে জিজ্ঞেস করল –' আচ্ছা আপনার মেয়ে বেড়িয়ে গেছে তো?'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ... আপনারা আসার আগেই ওইদিকটা আমরা সেরে ফেলেছি'।
-'ধন্যবাদ। তবে ওখানেও আমাদের যেতে হতে পারে... সে যাই হোক, আপাতত আপনি বলুন তো- বিয়ের ব্যাবস্থা তো এই উঠোনেই হয়েছিল?'
বাড়ির উঠোনটার দিকে লাঠি নির্দেশ করে জিজ্ঞেস করলেন কৌশিকবাবু।
-'হ্যাঁ'
-'খাতটা যেহেতু বাড়ির পিছন দিকে, পারোমিতাকে তাই সেই অবধি যেতে মন্ডপ ক্রস করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনাদের কারুর না কারুর তো তাকে দেখার কথা, কারন আপনাদেরই কথা অনুযায়ী রাত হয়ে যাওয়ায় সেই সময় বেশি কেউ এই বারান্দায় ছিল না। অথচ আপনারা প্রত্যেকেই বলছেন কেউ তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেননি... এটা কি করে সম্ভব?'
পরিতোষবাবুর স্ত্রী শর্মিলা বললেন –'দেখুন, বিয়ের সময় আমরা সবাই মন্ডপে নানান কাজে ব্যাস্ত ছিলাম। কতজন মাঠ থেকে ভিতরে আসছে...আমরা তো আর সবাইকে লক্ষ রাখিনিতাছাড়া বাথরুম যেতে গেলেও...'
-'বাথরুমটা দেখাবেন চলুন।' বাথরুমের দড়জার দিকে এগিয়ে গেলেন কৌশিকবাবু। তারপর বললেন –' এটার পিছনেই খাতটা?'
-'হ্যাঁ' বলে দরজাটা খুলে দিলেন পরিতোষবাবু। দরজাটা খুললেই সামনে একফালি ঝুল বারান্দার মত জায়গা, তারপর সেই খাত! বাঁ দিকে আবার বাথরুমের দরজা।
কৌশিকবাবু বিস্ময় প্রকাশ করলেন –'এ তো মশাই ডেঞ্জারাস জায়গা! এখন তো মনে হচ্ছে এটা সুইসাইড বা মার্ডারের থেকে সিম্পিল অ্যাক্সিডেন্টের কথাই আগে ভাবতে হয়'।
-'সে আমরা অবশ্য অস্বিকার করতে পারিনা'।
-'ইনভিস্টেগেশান হয়ে গেলেই আগে এই জায়গাটা ঘিরে দেবেন'।
একজন কনস্টেবেল গোছের লোক কোশিকবাবুকে বললেন –'স্যার, কাল রাতে যারা যারা এই বাড়িতে থেকেছে প্রত্যেককে ছাদে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছি'।
-'হ্যাঁ, চল' বলেই একবার পরিতোষ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন –'ডোন্ট মাইন্ড, আপনার গেস্টদের একটু বিব্রত করতেই হচ্ছে'। তারপর –'আয় অংশু' বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলেন।
গতরাতে যারা যারা এই বাড়িতে ছিল, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ঘুমিয়ে পরেছিল; যেহেতু বিয়ে ছিল অধিক রাতে। যারা জেগে ছিল তারা বলছে কেউ পারোমিতাকে চিনত না এবং কে এল, কে গেল, বিয়ে বাড়িতে তা নিরিক্ষন করা সম্ভব নয়। তবুও সবাই মোটামুটি নিজের নিজের কার্যকলাপ বর্ণনা করল। কেবল দু জনের বক্তব্যের মধ্যে সন্দেহভাজন কিছু ছিল। প্রথমজন কনের এক মামা আর দ্বিতীয়জন কনের ভাইয়ের এক বন্ধু। 
মামার বক্তব্যঃ বিয়ের দেরি আছে বলে প্যান্ডেল থেকে খেয়ে এসে একবার একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম। তারপর নিচে শাঁখের আওয়াজ টাওয়াজ হতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘর থেকে বেড়িয়ে যখন নিচে নামতে যাই তখন স্পষ্ট একজনের ছায়া দেখেছিআবার যখন নেমে আসছি, তখনো মনে হয়েছে পিছন পিছন আরো কেউ নামছিল, তখন অবশ্য অতটা আমল দিইনি। কিন্তু পরে মনে হয়েছে, উপর থেকে তো আর কারুর নেমে আসার বাকি ছিল না। থাকার মধ্যে আমার ছোত ভাইয়ের বাচ্চা ছেলেটা...সে তো ঘুমচ্ছিল, তাছাড়া তার বয়স তিন। আর মা, তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, তাঁর বয়স চুরাশি'।
রাজের বক্তব্যঃ (কনের ভাইয়ের বন্ধু) আমি একটা ফোন করতে ছাদে এসেছিলাম। আমি কথা বলতে বলতে চাপা স্বরে একজন ছেলে আর মেয়ের গলার আওয়াজ পেয়েছি। সামথিং ... স্পেশাল... মানে...
রাজের বক্তব্য আন্দাজ করে অংশু ঠান্ডা অথচ গম্ভিরভাবে, এই প্রথম কথ বলল –'মধ্য রাতের গোপন অভিসার বলতে চাইছেন তো! কিন্তু তারা কারা সেটা দেখতে পাননি?'
-'না'
এইবেলা অংশুমানের পরিচয়টা দিয়ে রাখা দরকার। অংশুমান প্রথমত কৌশিকবাবুর বন্ধুর ছেলে এবং দ্বিতীয়ত ওনার হবু জামাইও বটে। অংশুমান পেশাদারি গোয়েন্দা না হলেও শখে এর আগে কৌশিকবাবুর দুটো ইন্টারেস্টিং কেসে ওনাকে সহায়তা করেছে। তবে সেই দুটো কেসই কোলকাতার ছিলএবারের টা তো একেবারে মাদিনীপুর! ব্যপারটা আসলে নিতান্তই কাকতালীয়। কৌশিকবাবু মেদিনীপুরে এসেছিলেন মাস তিন এক আগে একটা মার্ডার কেসের তদন্তে। সে কাজ হয়ে গেছে। এই সপ্তাহেরই শেষে ওনার কোলকাতায় ফেরার কথা ছিল, কিন্তু আজ সকালে এই খবরটা পেয়ে উনি ঘটনাস্থলে চলে আসেন। আর অংশুমান এসেছে তার অফিসের কাজে। ও একটা বিজ্ঞাপন অফিসে কাজ করে –মেইনলি ফোটগ্রাফি। সেই কাজেই এসেছিল এদিকে, কৌশিকবাবু থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আজ সকালে খবর পাওয়ামাত্র কৌশিকবাবু ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।
                                          'আচ্ছা কাকু, বলছি আপনি ওদের সাথে একটু কথা বলুন। গুকালের পুরো ভিডিও আর যা স্টিল তোলা হয়েছে, তার সবগুলোর যেন এক কপি করে পাঠিয়ে দেয়'।
-'গুড। ঠিক বলেছ'।
-'আর বলে দিন, ভিডিও যেন কোনোভাবে এডিট না কর হয়'।
পরিতোষবাবু ক্যামেরাম্যানকে ডেকে দিলেন। কৌশিকবাবু ছবি আর ভিডিও দিতে বললেন।
-'আচ্ছা কাকু... একটু শোনো'।
-'কি?'
-'পারসোনাললি যারা ভিডিও করেছিল...'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছ। দেখছি। শুধুমাত্র কাল রাতের ভিডিও গুলোর ব্যাবস্থা আমি করতেই পারি। ওয়েট'। কৌশিকবাবু দু জন ইন্সপেক্টারকে নিয়ে ভিতরে গেলেন। অংশু এর মাঝে পরিতোষবাবুকে বলে রাখল, 'ছবি গুলো আমরা পেয়ে গেলে আপনাকে একবার আসতে হবে'।
-'কেন বলুন তো?'
-'সবাইকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য। তাছাড়া কাল রাতে এখানে যে যে গেস্টরা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আপনাদের রিলেশান, এটসেট্রা...'
-'ঠিক আছে, আপনারা খবর দেবেন। তবে একটা কথা ছিল...'
-'বলুন'।
-'কাল সন্ধ্যেবেলা আপনারা কি বাকি পুলিশদের সাথে নিয়ে...'
কোউশিকবাবু এমন সময় এসে বললেন –'চিন্তা নেই, ওখানে শুধু আমি আর অংশুই থাকব। আর আমি পুলিশের পোশাকে থাকব না'।
ছবি আর ভিডিও বিকেলের মধ্যেই গেস্ট-হাউসে পৌঁছে দিল ক্যামেরাম্যান। কৌশিকবাবু বেড়িয়েছেন তাঁর এক সহকারি অফিসারের সাথে। আসলে পরিতোষবাবুর অতিথিদের জবানবন্দি অনুযায়ী এবং আনুষঙ্গিক তথ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে চার জনের নাম উঠে এসেছে, যাদের সঙ্গে ওইদিন পারোমিতার কথোপকথন হয়েছে –তাদেরই বাড়ি গিয়েছেন ওঁরা।
আকাশটা কালো করে এসেছে। এই সময় এইরকম আবহাওয়াটা অস্বাভাবিক। ফাল্গুন মাসে সাধারনত চৈত্রবৈশাখের মত বিকেলের দিকে আকাশ কালো করে ঝর বৃষ্টি হয় না। তবে আজ হয়েছে। বেশ ভালো রকম কালো করেছে, ঠান্ডা বাতাসের সাথে ধুলো উড়ছে ঝরের দাপটে। মধুস্মিতা, অংশুর মিতা এতক্ষন জানালার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। এবার জানালা থেকে সরে এসে ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। অংশু বিছানায় বসে ছবি গুলো বিছিয়েছে, তার একটাতে খেয়াল না করে বসে পরেছিল। অংশু 'কানা নাকি' বলে ছবিটা সরিয়ে নিল।
'ওপস, সরি। খেয়াল করিনি। এই বাবা কখন আসবে?'
অংশু ছবি গুলোর উপর থেকে চোখ না সরিয়েই বলল –'ঠিক নেই। একেকটা জায়গা থেকে কেমন ইনফরমেশান পাচ্ছে, সেসবের উপর দিপেন্ট করছে'
-'তাহলে তুই তখন থেকে ছবি গুলো নিয়ে কি করছিস?'
-'যে ছবি গুলোতে পারোমিতাকে দেখা যাচ্ছে বা আংশিক দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আলাদা করছি'।
-'বাবা... আংশিক! পারোমিতাকে পছন্দ হয়েছে বল। তা না হলে কোন ছবিতে আংশিক দেখা যাচ্ছে সেটা আবার আলাদা করে রাখছিস'।
-'ভাট বকলে অন্য কাউকে ফোন করে বক'।
-'ঠিক আছে বকব না। তাহলে বল, সকাল থেকে কি কি বুঝলি?'
-'বলতে পারি। তবে...'
-'স্পাই এর কাজ করতে হবে?'
-'এই মুহূর্তে না। তবে ...ছাড় সে কথায় পরে আসছি। আগে আমার থিওরিটা বলি'।
-'মানে পারোমিতা কিভাবে খাতে পরল?'
-'রাইট। দেখ, খাতের দিকে যাওয়ার দু টো রাস্তা। একটা রান্না ঘরের পিছনে, অন্যটা বাথরুম যাওয়ার মুখে'।
-'ওয়েট। বাথরুম যাওয়ার মুখে বলতে?'
-' পরিতোষবাবুর বাড়ির শুরুতেই বারান্দা। বারান্দায় উঠে ডানদিকে সিঁড়ি। সিঁড়ির পাশ দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার রাস্তা। কমন বাথরুম, আই হোপ বিয়ে বাড়িতে সবাই এটাই ইউস করেছেকাজেই কারুর অ্যাক্সিডেন্ট হল না, হল শুধু পারোমিতার?'
-'মে বি হতেই পারে। আর তুইই তো বললি দু টো রাস্তা, একটা রান্না ঘরের পিছনে'।
-'সেতাই তখন বলতে যাচ্ছিলাম। রান্না ঘরের পিছনে যদি যায় সেটা হবে আত্মহত্যার চেষ্টা। কিন্তু সেটা করলে ভোর অবধি জেগে থাকা রান্না ঘরের পাঁচ জন লোকের কারুর না কারুর চোখে সেটা পরত'।
-'তাহলে তুই বলছিস এটা সিওর মার্ডার'।
-'মোস্ট প্রোবাবলি'।
-'কাউকে মার্ক করেছ?'
-'এখনো পর্যন্ত একজনকে'।
-'কে?'
-'তুই পারোমিতার যে এক্স হাসবেন্ডের সঙ্গে ওখানে দেখা হয়ে গিয়েছিল, সেটা শুনেছিস তো?'
-'হ্যাঁ'।
-'তার অফিস কলিগ। মানে সুমন। রাজদীপ বলছে বটে ওর অফিস কলিগ পারোমিতাকে আগে থেকে চেনে না, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে অন্য কোনো ভাবে ওদের পরিচিতি হতেও পারে। রাজদীপ সেটা জানে না'।
-'আচ্ছা, আমরা ধরে নিলাম, সুমনের সঙ্গে পারোমিতার শত্রুতা ছিল। কিন্তু তোমার থিওরিটা কি?'
-'রাজদীপ বলেছে সুমন লজে ফেরার প্রস্তাব দেওয়ায় রাজদীপ রাজি হয় এবং তারপর সুমন বাইক আনতে যায়। পারোমিতাও কিন্তু আর সেখানে দাঁড়ায়নি। এবার লক্ষণীয় বিষয় এই যে বাইক রাখার জায়গাটা হয়েছিল ঠিক সেই বারান্দার পিছনে। আর বারান্দায় ওঠার জন্য ওখানেও একটা দড়জা আছে; আমি নিজে দেখেছি। সো সবাই বিয়ে দেখতে ব্যস্ত। সুমন দেখল পারোমিতা বাথরুমের দিকে যাচ্ছে। স্মার্টলি বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেল, আর পারোমিতা দরজা খোলা মাত্র পিছন থেকে হালকা একটা ধাক্কা ব্যাস! কিন্তু এটাকে ঠিক মেনেও নিতে পারছি না। কেন বলত?'
-'এটা হলে তো পারোমিতা বাথরুমের দিকে যাচ্ছে আর সুমন বাইক বার করতে গিয়ে সেটা দেখতে পেল, সেটা কাকতালীয়। অর্থাৎ সুমন খুনের মোটিভ নিয়ে আসেনি নিশ্চয়ই। আর খুন করাটা মোটেই কোনো সহজ কাজ নয়, এক যদি না সে পাশাদারি খুনি হয়। তাই ওভাবে...'
-'গুড। ঠিক এই জন্যই আমি থিওরিটাকে বাতিল করেছি। তবে সুমনকে এখনো তালিকা থেকে বাদ দিইনি। কারন লজে রাজদীপ আর সুমন দুজনেই ছিল। অথচ খবর দিয়ে যখন সবাইকে আসতে বলা হল, তখনো সুমন এল না কেন?'
মিতা বলল, 'আচ্ছা, সুমনের দিক থেকে সরে এসে আমরা যদি অন্য কারুর প্রাস্পেক্টিভ থেকে দেখি'।
-'তুই আবার কাকে টেনে থিওরি বানাচ্ছিস?'
-'বর'
-বর?
-হতেই তো পারে বরটা বর্বর!
-ঝেরে কাশ।
-দেখ। আমরা জানি পারোমিতার সঙ্গে রাজদীপের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। অ্যাম আই রাইট?
-রাইট।
-তারপর ধর পারোমিতার সঙ্গে কালকের বিয়েতে যে বর ছিল, তার সঙ্গে...
-মানে তুই বলতে চাইছিস, বিয়ে করতে এসে হঠাত করে পুরোনো সঙ্গিনীকে দেখে বাবাজি ভয় পেয়ে যায় আর সেখান থেকে অ্যাটেম্প টু মার্ডার!
-ইয়েস।
-হুম। বুঝলাম। দু টো ব্যাপারে হালকা বাধা থাকছে ঠিকই... বাট সেগুলোকেও নিঃসন্দেহে উড়িয়ে দেওয়া যায়। আর সেগুলোকে বাদ দিলে নেহাত তোর থিওরিটা খারাপ না।
-বাধাটা কোথায়?
-এজ। বর বাবাজির বয়সটা যা শুনেছি, সেটা পারোমিতার থেকে অনেকটা কম। তবে সেটা খুব একটা ফ্যাক্ট না। আর সেকেন্ডলি, বিয়ের আসরে বরের পক্ষে কখনোই মার্ডার অ্যাটেম্প করাটা পসিবেল নয়। কিন্তু এখানেও সেটা সে করতে পারে, যদি অন্য কাউকে সে এই কাজে লাগায়।
এবার বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে। ঝড়টাও বেশ বাড়ছে। জানালার পাল্লাটায় আওয়াজ হচ্ছে দুম-দাম। মিতা উঠে গেল জানালা বন্ধ করতে। জানালা বন্ধ করতে করতেই মিতা জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা ওই পারোমিতার বাড়ির লোককে ওর পাস্ট নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি?'
-'সেসব কথা তোর বাবার সাথে হয়েছে। আমি আগে চলে এসেছি। কাকু আসুক, বাকি কথা জানা যাবে'। কথাটা বলেই অংশু ভুরু কুঁচকে একটা ছবির দিকে তাকাল। তারপর আর একটা ছবি হাতে নিয়ে সেই ছবিটার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হন্যে হয়ে বাকি ছবি গুলো হাতরাতে লাগল। মিতা জিজ্ঞেস করল –কি খুঁজছিস?
অংশু কোনো উত্তর দিল না।
কৌশিকবাবু ফিরলেন প্রায় রাত আটটা, বৃষ্টি থামার পর।
-নতুন কিছু খবর পাওয়া গেছে?
-নতুন খবর বলতে পারোমিতার বাবা মায়ের থেকে যেটুকু জানা গেছে, তাতে মেয়ের সুইসাইড করার কোনো কারন তো তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তাহলে বাকি রইল মার্ডার আর অ্যাকসিডেন্ট। এবার ওর বাবা মায়ের কথা অনুযায়ী মেয়ের শত্রু তো কোনো কালে ছিলই না, উপরন্তু কোলকাতা থেকে শত্রু মেদিনীপুরে এসে খুন করবে, এ যুক্তি তো মেনে নিতে পারছে না। ইভেন আমারো এবার মনে হচ্ছে ইটস জাস্ট আ অ্যাক্সিডেন্ট।
-আচ্ছা কাকু, আমার একটা কথা সকাল থেকেই মনে হচ্ছিল, তখন বলিনি।
-কি?
-পারোমিতা কি আদৌ উপর থেকেই নিচে পরেছে? কারন বাথরুমের রেস্পেক্টে ওটা খাত হলেও আদপে তো ওটা পুকুরপাড়। হতেও তো পারে উনি ওখানে গিয়েছিলেন, দেন ওখানে কেউ...
-উপর থেকে পড়েছে কিনা সেটা তো কালকের রিপোর্ট হাতে এলেই বোঝা যাবে। বাট... সেই 'কেউ' ওনাকে কোকাতা থেকে চেস করে এখানে এসে...
-না আকস্মিক ভাবে দেখা হয়ে তো যেতেই পারে। পারে না কি...?
-তা পারে। তবে উপর থেকে পরার ফলে যেভাবে মাথা ফাটে... এক্ষেত্রেও কিনু...
-না না। সেটা তো অ্যাক্সিডেন্ট প্রুফ করার জন্য আততায়ী ইচ্ছে করেও করতে পারে?
-পারে।
-তাহলে এখন সেই 'কেউ' টাকে খুঁজে বার করাটা খুব দরকার।
কৌশিকবাবু আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, চাকরটা এসে জিজ্ঞেস করল, 'ভাত না রুটি?'
-ইয়ে অংশু, তুমি রাতে রুটি খাও?
-না ভাত। তবে কাকু, এখন একটু বেরোবো।
-না না, এখন কোথায় বেরোবে? রাত হয়ে গেছে, এটা তো কোলকাতা নয়। রাস্তা গুলিয়ে ফেললে...
-না না। আমি রাস্তা গোলাবো না।
-ঠিক আছে, তাহলে আমার গাড়ি নিয়ে যাও।
মিতা আবার বায়না ধরল সেও বেরোবে। অগত্যা, কৌশিকবাবু একজনকে অনুমতি দিয়েছেন, আর একজনকে থামান কিকরে? তবে বার বার করে বলে দিলেন দশটার মধ্যে যেন বাড়ি ফেরা হয়।  
                                         ৪
-আমরা ঠিক কোথায় যাচ্ছি? জিজ্ঞেস করল মিতা।
অংশু বলল, না জেনেই যখন বেড়িয়েছিস তখন আর না জানলেও চলবে। মিতাও আর ঘাঁটাল না। কারন ও জানে এখন অংশু কোনো জবাবই দেবে না। তাই ঘার ফিরিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে বসে রইল। মরামের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে যাওয়ার আওয়াজ আর হেডলাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরির মত গাছগুলো।
গাড়িটা একটা পুকুরের পাড়ে এনে পার্ক করল অংশু। মিতা বেশ আন্দাজ করতে পারল, এটা সেই ডেথ স্পট। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন এখানে এসে লাভটা কি? প্রশ্ন করবে না করবে না ভেবেও শেষমেশ বলেই ফেলল, এখন এখানে এলে কেন?
-ছক সাজাতে। আমি তো আর হোমস নই যে ঘরে বসে বসে সব সাজিয়ে নেব আর স্পটে এসে কেরামতি দেখাবো!
-'তা সকালে ছক সাজাতে...' অংশু মিতার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে, কথাটা শেষ করতেও না দিয়ে দুটো জলের গাড়ির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল –' লক্ষ্য করে দেখ, এদিকটায় জলের জায়গা ছিল প্লাস জেনারেটারের ব্যাবস্থাও এখানে ছিলতারমানে জেনারেটারের দায়ীত্বে যারা ছিল... মমম... না, সবসময় যে তারা থাকবে...' নিজেই কথা বলছে, বলতে বলতে আবার থেমে থেমে যাচ্ছে অংশু। সাজাচ্ছে, গুটি গুলো সাজাচ্ছে। কি যেন ভেবে একবার বিরবির করে বলল, রাজলক্ষ্মী ইলেক্ট্রনিক্স!
-'আমি কি গাড়িতে গিয়ে বসব? মশা কামড়াচ্ছে'।
-'না। আমার মোবাইল নিয়ে আসা হয়নি। জায়গাটার ছবি তুলে রাখ'।
-'নিচ্ছি'।
মিতা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি নিচ্ছে, অংশু বলল, কাল বিকেলের দিকে একবার বৃষ্টি হচ্ছিল না?
-হচ্ছিল তো!
-তাহলে এখানে ধস্তাধস্তি হলে কিন্তু মাটিতে তার ...। অংশু টর্চ জ্বেলে জায়গাটা পর্যবেক্ষণ করছে। পুকুরের পার ধরে খানিকক্ষণ হেঁটে যাওয়ার পরে হঠাত একটা জায়গায় অংশু থামল, তারপর হাঁটু গেরে বসে কিছু যেন নিরিক্ষন করল। তারপর মুচকি হেসে বলল –'অনুপ্রবেশ। বাট হু ওয়াস দ্য সেকেন্ড অ্যন্ড হোয়াই?'
মিতা বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই অংশু বলল, তোকে একটা কাজ করতে হবে। এই বাড়ির যে ছোট মেয়েটা আছে, ওর থেকে কায়দা করে কথা আদায় করতে হবে।
-কি কথা?
-চ। গাড়িতে যেতে যেতে বলব।
                                     বিকেলের দিকে ঝড় হয়ে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। মিতার গাড়িতে একটু শীত শীত করছিল বইকি। কিন্তু চাপা উত্তেজনাও ছিল। অংশু কি এমন দেখল ওখানে? তাছাড়া বিকেলে ছবিতেই বা কি এমন খুঁজে পেয়েছিল সে? –মিতা যখন এইসব ভাবছে, তখন ওকে অবাক করে অংশু বলল –'তুই নিশ্চয়ই ভাবছিস আমি বিকেলে ছবিতে কি খুঁজছিলাম?'
-'হ্যাঁ তো'।
-'শোন তাহলে, কারন তোর জানাটা দরকার। কিন্তু তার আগে বল তো, কাল পারোমিতা কি পরেছিল?'
-'শাড়ি। লাল আর হলুদের কম্বিনেশান'।
-'ঠিক এই একই কালারের শাড়ি আরো একজন পরেছিল'।
-'কে?'
-'পোরিতোষ বাবুর ভাইয়ের বড় মেয়ে। আমি যখন পারমিতার ছবি গুলো আলাদা করছিলাম, তখন একটা ছবিতে আমিও ঘোল খেয়ে গিয়েছিলাম। ওই যে তখন বললাম না.. আংশিক! সেইরকম একটা ছবি। আমি ব্যাক সাইডটা দেখে ভেবেছিলাম ওটা পারোমিতা বাট পরে অন্য একটা ছবির পুরোটা দেখে বুঝলাম ওটা অনন্যা, মানে পরিতোষ বাবুর ভাইয়ের মেয়ে'।
-'তুই কি মিন করতে চাইছিস বল তো?'
-'এটাই যে, পরিতোষবাবুর ছেলের বন্ধুর জবানবন্দি অনুযায়ী সেই রাত্রে ছাদে যে গোপোন প্রেমালাপ চলছিল, বা পুরোনো প্রেমিক প্রেমিকার বচসা, যাই বলি না কেন... সেই দুজনের একজন অর্থাৎ নারীটি অনন্যা।
-'মানে তুই বলতে চাইছিস, অনন্যার বয়ফ্রেন্ড অনন্যা ভেবে পারমিতাকে মেরে ফেলেছে। যাহ্‌। সে কেন ...তাছাড়া...'
-'তাছাড়া ছার বালিকে। যেটা বলছি, সেটা শোন। কাল আমি সকালে কোলকাতা যাব, দরকার আছে। আবার বিকেলের মধ্যে ফিরে আসব। তুই শুধু কাকুর সঙ্গে ওই বাড়ি পৌঁছে গিয়ে অনন্যার বোনের সঙ্গে কথা বলে আদায় কর, অনন্যার পাস্ট। মানে অনন্যার বিয়ের আগের ঘটনা কি ছিল?'
-'তুমি এত সিওর হচ্ছ কি করে যে অনন্যার...'
-'বিয়ের আগে বয়ফ্রেন্ড ছিল কিনা?'
-'হ্যাঁ'
-'শোন, অনন্যার বয়ফ্রেন্ড কাল্প্রিট কিনা, সে বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। বাট, তার বয়ফ্রেন্ড ছিল এবং সে সেদিন ওই বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত ছিল, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি কিছু বিয়ে বাড়িতে কিছু গেস্টদের করা ব্যাক্তিগত ভিডিও থেকে। এইধরনের ভিডিও গুলোতে এমন অনেক ধরনের ফুটেজ ধরা পরে ম্যাডাম!'
-'ঠিক আছে। আমি ঠিক কথা বার করে নেব। কিন্তু তুই কোলকাতায় যাবি কেন?'
-'পারোমিতা কাল রাতে কেন পিছনদিকের ওই পুকুরে গিয়েছিল বা কেন পুকুরপারে যাওয়ার কথা ছিল, সেটা জানতে'।
-'মানে? এই তো বলছিস ভুল করে...' 
-'কিন্তু এই ভুলের পিছনে আরো কিছু ঠিক ভুল আছে। সেগুলো যে না জানলে অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে'।
                                       ৫   
অংশু পরদিন সকালে বেড়োনোর আগেই পারোমিতার রিপোর্ট টা চলে এল। রিপোর্ট বলছে, উঁচু কোনো জায়গা থেকে পরেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, তবে মৃত্যুর অন্যতম কারন কোনো ব্লান্ড ইন্সট্রুমেন্টের আঘাত।
অংশু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল –'মাথার আঘাতটা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল ওটাই মৃত্যুর কারন, সেইজন্যেই আপনাকে বলেছিলাম হতেও পারে উপর থেকে পরে মারা যায়নি। কিন্তু এখন ব্যাপারটা যা দাঁড়াল, উপর থেকেও পড়েছে আবার নিচেও মার খেয়েছে'।
কৌশিকবাবু বললেন, মানে পারমিতার জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা হয়েছিল।
-'হুম। এবার দেখতে হবে বাঘটি কে, আর কুমিরটাই বা এসেছিল কেন?'
-'অ্যাঁ?'
-'বাদ দিন। বলছিলাম, ওই পোরিতোষবাবুর জামাইয়ের অফিসের ঠিকানাটা আজকে দুপুরের মধ্যে জেনে আমাকে এস.এম.এস করে দেবেন তো'।
-'ঠিক আছে। তা তুমি রাতের মধ্যে আবার এখানে আসছ তো'।
-'ইচ্ছে তো আছে। কারন সিনেমাটা তো আর বেশিক্ষন ঝুলিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ও ভাল কথা, রিসেপ্সশানের জায়গাটার লোকেশানটাও পাঠিয়ে দেবেন। ওখানেই ডাইরেক্ট ঢুকে যাব'।
-'বেশ। তুমি তাহলে বেড়িয়ে পর। যাবে যখন দেরি করে কাজ নেই'।

বিকেল থেকেই সাজ সাজ রব। কনে যাত্রিদের যাওয়ার জন্য গাড়ি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশরা সবাই সাধারন পোশাকে। খুব নিজেদের লোক ছাড়া এই খুনের ব্যাপারটা পারা প্রতিবেশিরা এখনো কেউ জানে না। আত্মীয়-স্বজন রাও না। পরিতোষবাবু এমনিতেই চিন্তায় আছেন, তার উপর আবার দুপুরে খাওয়ার আগে কোউশিকবাবু তাঁর জামাইয়ের অফিসের ঠিকানা পাঠাতে আরো নারভাস হয়ে পরেছিলেন উনি। এদিকে মিতা শুধু সুযোগ খুঁজছিল কি করে অনন্যার সেই ছোট বোনটিকে আলাদা করে পাওয়া যায়। অংশু বলেছে, ব্যাপারটা কনফার্ম করে দিতে আর সেই ছেলেটার ঠিকানা দিতে। মিতা এদিকে ভেবে পাচ্ছে না, অনন্যার বয়ফ্রেন্ড অনন্যা ভেবে পারোমিতাকে ফেলে দিলেও নিচে আঘাতটা করল কে? নাকি সেই ছেলেটি এতটাই সাংঘাতিক যে...। আরে, ওই তো অনন্যার বোন। ওটাই তো...হ্যাঁ, ছবি অনুযায়ী তো তাই।
-'শুনছ?' ডাক দিল মিতা।
-'আমায় বলছেন?' ঘুরে দাঁড়ায় মেয়েটি। পায়ে পায়ে এগিয়ে এল মিতার কাছে। 'বলুন'। এই তো! ঘেঁটে গেল মিতা। কিভাবে শুরু করবে? না, অংশুর কথা বলা যাবে না। বলতে হবে বাবা জানতে চেয়েছে।
-'আমি ইন্সপেক্টার কৌশিকবাবুর মেয়ে, মধুস্মিতা। বাবা আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে কয়েকটা প্রশ্ন করতে'।
-'আমাকে?'
সামান্য তোতলালো কি মেয়েটা? হুম, তাহলে মিতার এখন নরম হলে চলবে না। 'হ্যাঁ, তোমাকে। কাল তুমি পুলিশকে সব সত্যি কথা কিন্তু বলোনি'। সন্দেহটা সন্দেহ হিসেবে নয়, হাই কনফিডেন্সের সাথে কথা ছুঁড়ে দিয়েছে মিতা।
-'মানে?' এবার একটু ঘাবরেও গেছে। নাহ, এই তো মোক্ষম সময়।
-'তুমি তোমার দিদির পাস্ট নিয়ে পুলিশকে কিছু বলনি। অল রাইট, অতজনের সামনে তোমার দ্বিধা হয়েছিল নিশ্চই, আর সেই জন্যই বাবা আজকে পারসোনালি জানতে পাঠিয়েছে'।
-'সেটা পুলিশ জেনে কি করবে?'
-'দরকার আছে। তুমি সব সত্যি বলবে'।
-'দিদি জানবে না তো যে আমি বলে দিয়েছি?'
-'না জানবে না'।
-'ঠিক আছে'।
মেয়েটি যা বলল তা এইরকম –' অনন্যার সাথে ছেলেটির স্কুল লাইফের প্রেম। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় অনন্যা বাড়িতে বেকায়দায় ধরা পরে যায় এবং তারপর সাত তাড়াতাড়ি করে অনন্যার বিয়েও দিয়ে দেয়। এদিকে ছেলেটিকে বাড়ির কেউ তেমন চোখে দেখেনি। বা দেখে থাকলেও এতদিনে তা ভুলেও গেছে। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে সেই অভিক অর্থাৎ অনন্যার প্রেমিক, যে এখন ক্যাটারারিঙ্গের বিসনেস করে, তার কাছে গিয়ে পৌঁছোয় এই বিয়ের জল, ক্যাটারিঙ্গের দায়ীত্ব। ওদিকে অনন্যা বিয়ের দিন সকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে আসে এবং দুপুর বেলায় তার বাচ্চা ছেলেটার জন্য খাওয়ার আনিয়ে দিতে বললে  ক্যাটারিং এর ওখান থেকে অভিক খাওয়ারটা নিয়ে আসে। অনন্যা তাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় আর সে সবটাই বলে বোনকে। এদিকে অনন্যার বর কিছু সন্দেহ করতে পারে এই ভয়ে অনন্যা রাতে নিচে যখন সবাই বিয়ের ওখানে ব্যাস তখন চুপি চুপু ছাদে অভির সঙ্গে দেখা করে। সেই কথোপোকথনের কথাই উল্লেখ করেছে দাদার বন্ধু। তবে উপরে আদৌ কি কথা হয়েছিল তা সে জানে না। তবে অনন্যা নিছে নেমে আসার কিছু সময় পরে দিদিকে দেখে অভিকে একবার চমকাতে দেখেছে সে!'
'অভি অনন্যাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকেছে? তারমানে তো বোঝাই যাচ্ছে, অভি কালপ্রিট' ভাবল মিতা। মিতা এও ভাবল, অভি কি তাহলে ছাদে অনন্যার থেকে টাকা পয়সা কিছু চেয়েছিল ব্লাকমেল করে?

...
'ভারতবর্ষে প্রথম টকি এসেছিল ১৯৩১ সালে। যদিও তার আগে হলিউড টকি ভারতে দেখানো হয়েছে ১৯২৮ এ। বাংলায় টকি এলেও তার সাউন্ড প্রবলেম নিয়ে গুনিদের মধ্যে অভিযোগ ছিল। এম্নন সময় এলেন বি.এন.সরকার। তাঁর নিউ থিয়েটারস বলতে গেলে সেই সময় বাংলার সিনেমার জগতে একচেটিয়া মার্কেট করে নিয়েছিল। তবুও যে সব ছোট খাটো কিছু ফিল্ম প্রোডাকশান তার ফাঁকে গজিয়ে উঠেছিল, তার মধ্যে এই ' বাকধারা পিকচারস' ও একটা'। একটানা এতটা বলে থামলেন সঞ্জয়বাবু। পুরোনো প্রোডাকশানের স্টিল, ভিডিও রোল, এছাড়া অন্যান্য নথি পত্তর নিয়ে বেশ ভাল রকমের ব্যাবসা ফেঁদে বসেছেন এই সঞ্জয় ভদ্দরলোক। অংশু চায়ে ছোট্ট চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল –'সেই সময় ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে যা দেখা গেছে আর কি... মানে ওই অগ্নিকান্ডে সিনেমার রিল নষ্ট হয়ে যাওয়া...'
-'উঁহু, এইখানেই গল্প। তখনকার দিনের বেশ নামকরা এক পরিচালকের চারটে ছবি রাজনৈতিক কারনে মুক্তি পেতে পারে নি। সময়টা তা ধরুন গিয়ে চল্লিশের গোড়ার দিককার কথা। কিন্তু সেই রিল পরে বিদেশ ঘুরে নিলেম হয়ে... অবশ্যই হিস্টরিকাল ভ্যালুর দিক থেকেই... সে জিনিস এখন আমার কাছে। এবার যাকে তাকে এসব জিনিস...'
-'আসল কথায় আসুন'।
-'হ্যাঁ, বলছি। গত মাসের এগারো তারিখে পারোমিতা বসু নামের একজন প্রোফেসর আমার কাছে এসেছিলেন এই ব্যাপারে। ওনার নাকি রিসার্চের কাজে লাগবে। তা কাগজ পত্রও কিসব যেন দেখিয়েছিলেন। তবে আমার বলে ন্যাজ্য দাম নিয়ে কথা, এর মধ্যে এক শাশালো খদ্দের এলেন। বেশি দাম দিতে রাজি। আমি তবুও একবার ওনাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু পেলাম না। মহা ধন্দে পরে গেলাম। উনি এমনিতেও যে দিনে নেবেন বলেছিলেন সেদিন আসেননি। দিন পেরিয়ে গেছে। আমিও তাই সেই লোককে বেচে দিলাম জিনিস। তার পরে একদিন হঠাত করে সে মেয়ে এসে হাজির। আমি অগত্যা সেই ভদ্দরলোকের ঠিকানাই দিয়ে দিলাম ব্যাস! এইটুকুই। এর বেশি আমি জানি না'।
-সেই ভদ্রলোকের নাম?'
-'দাঁড়ান, দেখে বলতে হবে'। বলে সঞ্জয়বাবু মনিটরের দিকে চোখ রাখলেন।
                                        ৬
-খাওয়ার নিয়ে এসেছিস কিছু? গাড়ি চালাতে চালাতেই প্রশ্ন করে অংশু। মিতা পাশের সিটে বসে। জবাব দেয় –'ফোন করে বললি আর আনব না? কিন্তু তুই সকাল থেকে কিছু খাসনি কেন?'
-'আর খাওয়া? চারিদিকে দৌড়োদৌড়ি করতে করতেই তো সময় চলে গেল। বিলপত্তর, এক্সচেঞ্জ... তাও ভাগ্য ভাল পুরোনো বন্ধুর দেখা মিলেছে। নয়তো আজ আর সবটা পেতে হতনা।
মিতার চোখে মুখে উচ্ছাস। 'তারমানে তুই সল্ভ করে ফেলেছিস?'
'প্রোবাবলি'
-'তর প্রোবাবলি মানে হয়ে গেছে। বাবা জানে?'
-'কাকু কাল রাত থেকেই আমার থিওরিটা জানেন। আর আজ বিকেলে ফোন করে বলে দিয়েছি সবটা। নইলে যে সমস্যা হয়ে যাবে'।
-'সে তোর থিওরি তো আমিও জানি'।
-'তুই যেটা জানিস, সেটা অনুমান'।
-'মানে?'
-'সেদিন আমি কার ছবি দেখছিলাম? আর কিই বা খুঁজছিলাম?'
-'কেন, পারোমিতার...'
-'আরো একজন'।
-'অনন্যা'।
-'না। অনন্যার কেসটা ইম্পরটেন্ট, বাট মেন নয়'।
-'তাহলে?'
-'তাহলে, তাহলে আগে খাওয়ার দে। তুই স্টিয়ারিং ধর। আমি খাই, নয়তো ওখানে আর গল্প বলা হবে না'।

চারিদিকে সাজ সাজ রব। বরপক্ষের এখনো সবাই ব্যাপারতা জানে না। অংশু কৌশিকবাবুকে বললেন –'কাকু... বলছি, গোটা টা বলতে গেলে তো অনেক কথাই উঠবে। কিন্তু কাজটা তো এখানে না হলেই নয়'।
-'সে ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। পোরিতোষবাবুর বেয়াইয়ের সঙ্গে সব কথা হয়ে গেছে। ছাদের ঘরে ব্যাবস্থা হয়েছে। বলা হবে কনের মেকাপ হচ্ছে'।
-'আর...'
-'সব ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। তোর কাছে শুধু প্রুফ আছে কিনা বল'।
-'সব আছে'।

ঘরটা বেশ বড়। ছাদের পাশের ঘর বলতে সাধারণত যেমনটা ভাবা হয় তা নয়। ঘরের একপাশে লাইট, ক্যামেরার স্ট্যান্ড ইত্যাদি ছবি তোলার আরো কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে ক্যামেরাম্যান নারাচারা করছে। ইনি সেই মেয়ের বাড়ির ক্যামেরাম্যান। ছেলের বাড়ির ক্যামেরাম্যান নিচে ইতিমধ্যেই ভিডিও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভবত আর ইনি মেয়ের সাজার অপেক্ষ্যায়। অংশুদের ঢুকতে দেখে ঘর ছেরে দিচ্ছিলেন, কিন্তু কৌশিকবাবু বললেন –'থাক থাক আপনাকে উঠতে হবে না'। তারপর অংশু, পোরিতোষবাবু, মিতা, অনন্যা, অনন্যার বাবা-মা একে একে নিজেদের মত চেয়ার টেনে বসে গেলেন। ছেলের বাবাও উপস্থিত আছেন। অংশুই শুরু করল কথা। প্রথমেই ইষত গলা খাকরানি দিয়ে বলল –'প্রথমে কিন্তু অনন্যার মায়ের সাথেই কথা বলতে হচ্ছে'। অনন্যার মা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন অংশুর দিকে। অংশুর কোনো বিকার নেই। সে ঠান্ডা ভাবেই বলল –'আপনার মেয়ের বিয়ের আগে একটি ছেলেকে ভালোবাসতো আর তাই আপনারা মেয়েকে পুরো কলেজটা না পড়িয়েই সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলেন তাই তো!'
-'এসব...এসব কথা...'
-'চিন্তা করবেন না। আপনারা বাবা মা হয়ে অমানবিক কাজ করেছেন ঠিকই, মাপ করবেন ছোট মুখে বড় কথা, কিন্তু এটাই সত্যি। যাই হোক, আমি অতটা অমানবিক হতে পারলাম না, তাই ওর হাসবেন্ডকে এখানে উপস্থিত রাখিনি'। এই শেষ কথাটা শোনার পর আর কিছু বললেন না উনি। কেমন যেন মূষরে গেছে। শুধু বললেন, 'তার সঙ্গে...'
-'বলছি কি সম্পর্ক। তার আগে আপনি বলুন তো অনন্যা, আপনি পোরশু দিন রাতে ছাদের সঙ্গে ওই অভিক ছেলেটির সঙ্গে কথা বলছিলেন তাই না!'
-'হু'।
-'কি কথা হয়েছিল?'
-'এক রাশ অভিমান নিয়ে যা বলা যায়। তার উপর যখন দুপুর বেলা সেই আমার ছেলের জন্যে খাওয়ার এনে দিয়েছিল... তারপর আপনিই বলুন না কি কথা সে বলতে পারে?'
-'হুমকি? ব্ল্যাক্মেল?'
-'না না। এসব কি বলছেন? ও কখনোই এসব বলেনি। শুধু বাচ্চাদের মত আবদার করেছিল, আমি যেন সারারাত ছাদে দাঁড়িয়ে ওর সাথে গল্প করি। কিন্তু আমি শুনিনি। ছুটে চলে এসেছিলাম'।
-'আর আপনার ছুটে চলে আসাটাই এক গভীর ট্র্যাজেডিতে পরিনতি নিয়েছিল'।
-'মানে?'
-'বলছি। অভিক...!'
অভিক বুঝি এতক্ষন বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে ভিতরে আসতেই অংশু বলল –'আমায় যা যা বলেছ, সবাইকে তাই বল এবার। আমি যানি তুমি সত্যি বলছ। কারন তার পরের অংশটা আমার জানা'।
অভিক বলল –'সেদিন আমি ছাদে অনন্যার সাথে ছিলাম। তারপর অনন্যা ছুটে নিচে চলে যায়। কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমিও ছুটে যাই। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে দেখি সিঁড়ির পাশ দিয়েই অনন্যা কোথায় যাচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ধরতে যাই। সে একটা দরজায় ঠেলা মেরে দরজাটা খোলে। আমি জানতাম না ওটা কিসের দড়জা। আমি অনন্যা ভেবে একদম ওর পিছনে গিয়ে হাতটা ধরে টানি আর সঙ্গে সঙ্গে ...বোধ হয় ঘটনার আকস্মিকতাতেই সে ভয় পেয়ে পা পিছলে নিচে পরে যায়। আমি ভিষন ভয় পেয়ে যাই। কিন্ত আশ্চর্য, দৌড়ে ওখান থেকে সরে এসে দেখি অনন্যা দিব্যি মন্ডপে! তখন বুঝি যে পরে গেছে, সে অনন্যার মতোই শাড়ি পরায় আর পিছন থেকে দেখতেও অনেকটা একই রকম হওয়ায় আমি ভুল করেচিলাম'।
'কিন্তু ও যে শোধ নিতেই আমার মেয়েকে ঠেলে ফেলে দেয়নি তার প্রমান কি?' অনন্যার মা বলেন। কিন্তু এবার অনন্যা ঘুরে দাঁড়ায়। সে বলে 'আমি অনেক প্রমান তমায় পরে দেব মা। আগে ওনার কথা শুনতে দাও'। তার গলায় স্পষ্ট ঝাঁঝ।
এর মধ্যে ক্যামেরাম্যান তার ক্যামেরা আর স্ট্যান্ড নিয়ে উঠে বলল –'আমি তাহলে চললাম। বর বোধ হয় রেডি'। কিন্তু তার বেরোতে যাওয়ার মুখে অংশু তাকে আটকাল।
-'এক মিনিট ... আপনার নামটা যেন কি?'
-'শুভাশিষ জানা'।
-'সিওর তো!'
-'কি অদ্ভুত প্রশ্ন?'
-'বেশ। আপনি ছবি তোলার সময় কোনো সহকারি সাথে রাখেন?'
-'রাখি। কেন?'
-'তিনি ছবি তোলেন?'
-'না।
-'লাইট ধরে'।
-'কিন্তু পোরশু দিন তিনি ছবি তুলেছিলেন। আর তার তোলা সে ছবিতে আপনাকে দেখা গেছে'
-'তো?'
-'আরে তো মানে? সেখান থেকেই ত আপনার উপর সন্দেহ মশাই। ছবিতে দেখা গেছে আপনি সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন। অল্প একটূ দেখা গেছে। কিন্তু আপনি যখন ছবি গুলো কোয়ারটারে দিতে এসেছিলেন, তখন যে আপনাকে দেখে ফেলেছিলাম!'
-'কি যা তা বলছেন?'
-'আপনি এই মাত্র বলেছেন আপনার নাম বলছেন। যদিও সে নাম অস্বিকার করার ক্ষমতা আপনার নেই। যেমনটা ক্ষমতা নেই এটা অস্বিকার করার যে, আপনার কোলকাতার শোভাবাজারে বাড়ি আছে!'
-'আমি ওই মেয়েটাকে খুন করেছি? কিন্তু কেন? আমি কি পাগোল? এমনি এমনি একটা মেয়েকে মেরে ফেলব?'
-এমনি এমনি তো নয়। আপনি গতবছর ১৩ই মে সঞ্জয় মিত্রর নিলামঘর থেকে 'বাকধারা পিকচারসের' যে ছবির রিল কিনেছিলেন অন্যান্য নথির সঙ্গে, সেই জিনিস তার একসপ্তাহ আগে বুক করে গিয়েছিলেন পারোমিতা। এবার আপনি সেই জিনিস বেশি দাম দিয়ে কিনে নিলে পারোমিতা আপনার কাছে যায় সেই রিলের ছবি আপনি যেন ওনাকে অন্তত পক্ষে দেখতে দেন কারন উনি এই বিষয়এ রিসার্চ করছেন। কিন্তু আপনি তাকে সেই জিনিস দেননি। অপেক্ষা করছিলেন অন্য কোন বড় পার্টির জন্য। এদিকে বেশ কিছুদিন আগে পারমিতা আপনাকে ফোন করে জানান যে উনি আপনার দু একটা খুচরো বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত, তাই আপনার এতেই মঙ্গল- যদি রিল আপনি ওনাকে দিয়ে দেন'। শুভাশিষ কিছু একটা মৃদু প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল, অংশু বলল –'অস্বিকারের উপায় নেই। পারোমিতা মরেছে, ওর ফোন নয়। তারপর শুনুন। আপনি দেখলেন বাঁচার একটা পথ আছে, যদি আপনিও পারোমিতার কোনো উইক পয়েন্ট খুঁজে বার করতে পারেন! হঠাতই আপনার মেদিনীপুরের এজেন্সি থেকে অর্ডার এল। আপনিও নিজে ছবির কাজে এলেন, কোলকাতা থেকে পালিয়েই একরকম। ব্ল্যাকমেল কি জিনিস তাই না! যাই হোক, আপনি এখানে এসে দেখতে পেলেন পারোমিতাকে। তারপর দেখলেন এই বাড়ির পিছন দিকটা। ভেবেছিলেন ওখানে কায়দা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলবেন। প্ল্যান মত গেলেনও। কিন্তু আপনি সময়ের আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন বা পারোমিতা আপনার টোপ গিলে সেখানে যায়নি। অথচ আপনি নিরাস হয়ে ফিরে আসার আগেই উপর থেকে কি যেন একটা পরল। আপনি হাতে চাঁদ পেলেন। আপনার শিকার এরই মধ্যে অর্ধেক ক্ষত। ব্যাস! আপনিও দিলেন পাথর চাপা!' সবাই চুপ। অংশুই আবার বলল –'আপনি ঘটনাটা বিকৃত করতে চেয়েছিলেন ঠিকই... তবু সব কেমন ঘেঁটে গেল তাই না শুভাশিষবাবু!'

পরদিন সকালে আগে অংশু আর মিতা ফিরে আসে মিতার গাড়ি করে। মিতা অবশ্য একচোট ঝাল নিয়েছে অংশুর উপর, তাকে ছবির ব্যাপারটা ডিটেলে না বলার জন্য।


 ===================


অয়ন সাঁতরা
ফোন- ৯৮৩৬৬১৪০৮৪
ঠিকানা- ১৭সি, এ সি পাল স্ট্রিট। কোল-৫৭







নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩