এক চিলতে রোদ্দুর
আজ অনেকদিন বাদে নবাবি মেজাজে রোদ্দুর।মাছের বাজারে ঢুকছে একেবারে ঝলমলে মনে।ভালো মাছের স্বাদ কেমন ভুলেই গেছে।আর ইলিশ,গলদা,পমফ্রেট,পাবদা এসব মাছ কেনা ত স্বপ্ন ।
কিনবে কী করে,আকাশ ছোঁয়া দাম! বাপটা কবেই
ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে,সেই ন্যাংটো বয়সে।মা তারপর থেকে এবাড়ি সেবাড়ি কাজ করে মানুষ করেছে রোদ্দুর কে।এখন ও সারা দিনরাত টিউশন করে।এতেই মা বেটার পেট চলে।মার বয়স হয়েছে,এখন আর এবাড়ি সেবাড়ি কাজ করতে পারে না।
লোকচক্ষুর আড়ালে পকেট থেকে লাল মোদি নোট টা
বার করে একবার দেখে নেয় রোদ্দুর।ঠিক আছে দেখে আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখে।
--গঙ্গার ইলিশ,গঙ্গার ইলিশ বলে হাঁকছে বুড়ো ।
রোদ্দুর সামনে গিয়ে বলে কত করে ?
পাশ থেকে ইকবাল বলে কী ব্যাপার গো রোদ্দুর দা,কোনোদিন ত চারাপোনার ওপরে ওঠ না?
বুড়ো বলে- বারোশো করে দিয়ে দেব।
রোদ্দুর কিনতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায়।মা-র পরনের রং ওঠা সেলাই করা শাড়িটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
-- আরে রোদ্দুর বাবু যে, কী ব্যাপার আজ একেবারে
ইলিশ কিনতে?
--কেন কিনতে নেই? রোদ্দুর না ঘুরেই উত্তর দেয়।
--না তা কেন? চারাপোনা ছেড়ে একেবারে ইলিশ! বামন হয়ে চাঁদে হাত।তা হাত বাড়াবার সাহস করিস কী করে,টিউশন করে ক-টাকাই বা পাস।
--- রোদ্দুর ঘুরে দেখে শ্যাম,ওর একসময়ের ক্লাসমেট।
বরাবর অঙ্কে লাড্ডু পাওয়া ছেলে এখন বড় ব্যবসাদার! সব ই বাপের ধনে পোদ্দারি।
--- দে রে বুড়ো ইলিশ টা দে
--দিই শ্যামবাবু
--- রোদ্দুরের রোখ চেপে যায়।বলে -- দিই মানে!
আমি ত প্রথম দর করেছি।
--- না তুমি ভাবছ কী না,একটা ইলিশ ই পড়ে আছে--
কথা শেষ করতে না দিয়ে শ্যাম বলে--আরে এত দামের
ইলিশ ও নেবে কী করে,হাভাতে--
রোদ্দুর অবজ্ঞার চোখে একবার তাকায়,তারপর বুড়োকে বলে- কী রে, ওজন কর ।
-- বুড়ো ওজন করে, পুরো দেড় কেজি।
--কী গো রোদ্দুর দা নেবে?
রোদ্দুর কথা না বলে লাল মোদি নোট টা বুড়োর দিকে
ছুঁড়ে দেয়।
শ্যাম অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। রোদ্দুর কোনো কথা না বলে শ্যামের নাকের ডগা দিয়ে দেড় কেজির ইলিশ টা দোলাতে দোলাতে এগিয়ে যায়।
সকালের আলো পড়ে ইলিশ টা চিকচিক করছে, তারই এক চিলতে পড়ে রোদ্দুরের মুখ ঝলমল করে ওঠে।
আজ লটারিতে দু হাজার টাকা পেতে যে দীপ্তি চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল, এখনকার উজ্জ্বলতা তার থেকেও বেশি।
======================
সুব্রত দেব
মোল্লা হাজি বাগান,চন্দননগর, হুগলি, 712136