অণুগল্প ।। বিজয়া দেব - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Wednesday, June 17, 2020

অণুগল্প ।। বিজয়া দেব





এইসব দিনে


ব্যাঙ্কে এখন লাইন দিয়ে ঢুকতে হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে যেসব অভিজ্ঞতা হচ্ছে তা হলো লাইনের শৃঙ্খলার প্রাসঙ্গিকতায় তীব্র বাকযুদ্ধ কিংবা সমস্যাসংকুল প্রকৃতি নিয়ে জেরবার। মাথায় স্কার্ফ, চোখে সানগ্লাস ও মাস্কের সমবায়তায় করোনাযুদ্ধে সামিল সৈনিক হয়েও আত্মগর্বী হওয়ার পরিবর্তে আত্মবিশ্বাস হারানোর সম্ভাবনা বেশি হলেও প্রায় জোর করেই আত্মবিশ্বাসের সুতো টেনে ধরে চলতেই হচ্ছে। একটা সর্বব্যাপী ভয়। একটা চাপা আতঙ্ক। মানুষে ভয়, গাছ ঘিরে সিমেন্টের বাঁধানো চত্বরে ভয়, দরজার হাতলে ভয়, যে কোনও ধাতুতে ভয়। ভয় সর্বব্যাপী, ব্যাপক, বিস্তারিত। পেছনের লোকটা মুখের মাস্কটাকে খানিকটা নামিয়ে রেখেছে। নাকটা উন্মুক্ত, হালকা কাশি দিয়ে বলল - এগিয়ে যান, লাইন এগোচ্ছে। - সারার মনে হল কাশিটা তার ঘাড়ের উপর পড়ল। ভারী একটা শ্বাসও। সারা কি বলবে আপনি দূরত্ব ঠিকমতো বজায় রাখছেন না। পাশ থেকে কে একজন বলল-কবে ফিরলে? - পেছনের লোকটা - এখানেই তো। এখানেই। - মানে কি? লোকটা কি পেছন থেকে ইশারা করল? পাশের লোকটা কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। - পরিস্থিতি জটিল মনে হচ্ছে। হয়তো লোকটা বাইরে থেকে এসেছে। হয়তো চৌদ্দদিনের কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বেরিয়ে পড়েছে। হয়তো সরকারি নিয়মকানুন ফস্কে বেরিয়ে এসেছে। লোকটা আবার হালকা কাশল। লাইনটা এগোচ্ছিল। আবার স্হির। এতক্ষণে পাতলা মেঘ সূর্যটাকে ঢেকে রেখেছিল। এবার সরে গেছে। সাড়ে এগারোটার সূর্য লালচোখ দেখাচ্ছে। মাথায় বাঁধা স্কার্ফ সানগ্লাস ও মাস্কে ভারাক্রান্ত ঊর্ধ্বদেশে জুন মাসের ব্যাপক তাপ একটা বিতিকিচ্ছি তুলকালাম বাঁধানোর চেষ্টায় ছিল, নজর গেল একটি বুড়ো মানুষের দিকে। রাস্তার পাশ ঘেঁষে বসেছে, হালকা ছায়া, একটা গাছ পেছনে আছে বটে, শাখাপত্রে তেমন জোরালো নয়, লিকলিকে কান্ড, শাখাপত্রেও অনুরূপ। লোকটির নাক অব্দি একটা রুমাল বাঁধা, সেটি মাস্কের বিকল্প।খানকয়েক নাইটি, খানকয়েক স্যান্ডো গেঞ্জি নিয়ে বসেছে। পাশে আর একটি লোক। কীসব কথা বলছে। রোদ গাছের পাতার আড়াল ভেদ করে ঝিলমিল খেলছে লোকটির মাথায়। এখনও কোনও ক্রেতা চোখে পড়ে নি। একপাশে খানিকটা ঝিঙ্গে, লাউ, বরবটি আর কাঁচালঙ্কা নিয়ে বসেছে দুটি মেয়ে। মুখে মাস্ক আছে। তবে দুটিতেই খুব গল্প করছে। খুব কাছাকাছি বসে। সবজি গুলোতে কি ভাইরাস লেগে আছে? ভাবতেই সেই পুরনো আতঙ্ক। বাইরে না বেরোনোই ভালো। কী করা যায় ব্যাংকের কাজগুলো জরুরী। সবজি বিক্রি করছে মেয়েটাকে বলতে শোনা গেল - বাইরে এলে পরাণটা বাঁচে। একঘরে এতটা মানুষ। গরমে পরাণটা যায়! ধ্যাত্তেরি এই একটা-বলে অকথ্য একটি বিশেষণ লাগিয়ে দিব্যি মাস্কটাকে একটানে সরিয়ে আনল গলায়। একদমে শ্বাস টেনে নিয়ে বলল - উফফ্ বাঁচলাম। - সারা দেখল দুটো বিপরীতমুখী জীবনচিত্র পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভিন্ন স্রোতে জীবনতরীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কারোর ঘরে ভয় কারোর বাইরে।
=====০০=====

 বিজয়া দেব , 225, Purbachal Road North, Kolkata - 700078.